কবিতার কালিমাটি ১০৩ |
শেষপর্যন্ত দেখা গেল কোনো ত্যাগই তার মাধুর্য পেল না
শেষপর্যন্ত দেখা গেল কোনো ত্যাগই তার মাধুর্য পেল না
দীর্ঘ তমসার মধ্যে হেঁটে গেল সামনে অনন্ত অন্ধকার
বস্তু আছে অনুভূতি আছে অথচ কোনো সাক্ষী নেই
বা হয়তো বলা ভুল হবে সাক্ষী আছে, প্রকাশ নেই
আমি আমাকে দেখতে পারছি না, ছুঁতে বা শুনতে
কিন্তু অনুভব করছি
আর কিছু না হলে অন্তত তোমার বুকের ভিতর
আনমনে যখন তুমি হাত রাখো নিজের বুকে জেগে ওঠে বৃন্ত
আমার শীর্ণ ঠোঁটে ফোঁটা ফোঁটা অমৃত পড়ে
ঠিক তারপর কান্না আসে দু’চোখ ফুটে
জল বইছে, আগে তো কোনোদিন এমন হয়নি
আগে তো নিজেকে নাস্তিক বলেই সমাজে প্রতিষ্ঠিত
তাহলে আজ ঐ কষ্টি পাথরের দিকে তাকিয়ে কী হয়েছে
কথাগুলি বুকের মধ্যে এক রোমন্থন
শেষপর্যন্ত কোনো ত্যাগই কি তার ত্যাগের মাধুর্য পেল না
চোখের জলের সাথে বয়ে চলা, সন্তুষ্টি বা বিনয়
না বয়স বাড়ে না, দেবতার বয়স বাড়ে না, কারণ তিনি
এক দীর্ঘ নিদ্রায় যান অনন্ত কাল একই বয়সে বেঁচে থাকার
এক সহজ পন্থা
সকলে পারে না যে পারে সে পারে
পারে তো দেবতা, আপনি আমি সে ও তিনি পারে না
মন চঞ্চল হয়ে ওঠে, অন্যের কষ্টে দুলে ওঠে
অথচ আপনি ভাবেন আপনার কষ্টে তার মন গলে না কেন
তবে কি সেও দেবীতে পরিণত, ঘুমিয়ে পড়লো অনন্ত যৌবন ধরে
রাখার জন্য
একদিন গভীর রাতে দেখলেন এক মোমবাতির শিখা
আপনি এগোতে চাইছেন অথচ কিছুতেই পারছেন না
সময়কল ওখানে ঘুরে চলেছে আপনি ভাবছেন
তার গতি কি মন্থর করা সম্ভব বা পিছনের দিকে ঘোরানো
যেতে পারে
যেটুকুর জন্য সারাজীবন জল পড়লো তা ফিরে পেতে পারেন
শীতলতম রাতের গভীর ঘুমের ভিতর
যেখানে আপনি এক কম্পন অনুভব করেন প্রতিরাতে ভাবেন এই
হয়তো মৃত্যু
যা তার অক্ষয় যোনি থেকে কিছু ছায়ার জন্ম দিয়ে চলেছে
আর কিছু বোহেমিয়ান আত্মা খুঁজে বেড়াচ্ছে সেই ছায়া
শরীর
মধুসূদনের কাছে থেকে উড়ে আসা ধুলোয় যা লেখা ছিল
যা আপনার চুলদাড়ির রুক্ষতায় রেখে গেছে এক সাধন প্রীতি
জড় অজড় নিয়ে ভাবছেন তাই সময় কাটছে ভালো
আজকাল সময় কাটাতে সঙ্গী নয় নিঃসঙ্গ এক করিডোর দরকার
বন্ধ কয়েকটি দরজা, ওপাড়ে নিশ্চিহ্ন নিঃশ্বাসের ভিতর
হারিয়ে যাওয়া কয়েকটি
অপরিচিত মানুষের জড়
ভাবছেন
পদার্থ যত মৌলিক হয় তত নিঃসঙ্গতার দিকে এগোয়
আর কিছুই ছড়িয়ে পড়ে না যার দিকে উড়ে আসা পায়রা ঘুট
ঘুট শব্দে দানা খেতে বসবে
সমাজকে মৌলিক কিছু দেওয়া হল না ভাবছেন আর এক সমাজ
তৈরি হচ্ছে
একা এতটাই যে পিণ্ডদান করার কেউ নেই
এ তার ও কারোর এইভাবে এক একটি পরবর্তী প্রতীক্ষা
তাহলে কোনো ত্যাগই কি...
আপনার কথা, তাঁর কথা, তাকে যে হাসি হাসি একদিন শহীদ
বেদির উপর পা রেখেছিল
বলেছিল ধর্ম এখানে খাঁড়িতে বয়ে চলা ভেলা নয় উজানে
তাকানো দাঁড়
বৃদ্ধ এক মাঝি আর তাঁর নাবালক সহকর্মী
শ্যামা মায়ের পায়ের তলায় দেখছও না কীভাবে বালক শ্যামাচরণ
সে আর কিছু পারে না, সে শুধু পুজো করে
সুপ্রকাশ তার হাত ধরে এগিয়ে আসে, আসন পাতে, পুকুরে
নাইতে যায়
সে তার মনের ভিতর নাটমন্দির বানায়
বাঁশি প্রাণ ভোলানো বাঁশি
আদিবাসী গ্রাম থেকে অনেক দূরে
অনেক দূর জয়চণ্ডীর পায়ের গোড়ায় বসে থাকে
কলেজে না গিয়ে পড়তে না গিয়ে এমন কি পরীক্ষা দিতে না
গিয়ে
স্টেশনে দাঁড়িয়ে দেখে, ঐ তো দেখা যাচ্ছে ঐ তো ওখানে
কয়েক পা
চল সুভাষ, সুভাষ আবার একটি নাম না করলেই হত
তাহলে আরও একটি কুয়ো খুলে গেল, তলায় কালো জল
এখন সামান্য বাইরে থেকে দেখছি পৃথিবীকে
নীল গ্রহ, তারপর মঙ্গল থেকে দেখছি একটু ছোট হয়ে এল
তারপর বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুন, আর দেখা
যাচ্ছে না
অদৃশ্য পৃথিবীর শরীর, তাহলে আপনার ত্যাগ বা প্রতীক্ষা
এখন আপনি ফের সেই আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন