চারানা আটানা
২৯) চুটকি
চুটকি, পিজে যাই
বলো, তারও এখন বেশ ভ্যালু আছে। গোপাল ভাঁড়ের বা মোল্লা নাসিরুদ্দিনের কিছু কিছু
গল্পে যেমন প্রবল বুদ্ধিমত্তার ছাপ ছিল, এসব পিজেতে হয়তো তা নেই। আবার হয়তো আছেও।
শ্রদ্ধেয় তারাপদ রায়
তাঁর দুই ছেলে ডোডো আর
তাতাইয়ের নামে যে অবিস্মরণীয় মণিমাণিক্য আমাদের দিয়ে
গেছেন, তার দাম কি কম? আনন্দমেলা পেলেই ডোডো তাতাইয়ের জন্যে মুখিয়ে থাকতাম এক সময়।
তবে এখন স্ট্যান্ডাপ
কমেডিয়ানদের দৌলতে এর স্বীকৃতি বেড়ে গেছে আরো। টিভির রিয়েলিটি শো থেকে শুরু করে
পাড়ার বারোয়ারি অনুষ্ঠানে এই সব কমেডিয়ানদের রমরমা। মৃদুল ভট্টাচার্যর কাত্তিকদা
আর ঢক্কন সবারই খুব পরিচিত চরিত্র।
আমিও এই ব্যবসায় জমে
আছি গত পাঁচ ছ’ বছর। এখানে যেগুলো লিখছি,
জ্ঞানত তার সবগুলোই আমার নিজের সৃষ্টি। এগুলো সবই ফেসবুকে পোস্ট
করা আছে এবং আমার পোস্ট করার পরে আমি এগুলোর অনেককে অন্যের টাইমলাইনে, হোয়াটস্যাপে
দেখেছি এমনকি মীরাক্কেলের স্টেজে বলতেও শুনেছি। সে যাক, টোকাটুকি হচ্ছে, হবেও, ধানাই পানাই ছেড়ে এদের
রাজ্যে ঢুকে পড়া যাক।
এক
প্রথম গল্পটা অবশ্য
আমার নিজের না। বাড়ি গিয়ে স্যারের মুখে শুনলাম এই গল্পটা। উনিও আর এক স্যারের কাছেই
শুনেছিলেন এটা। আমি আমার মতো করে লিখে দিচ্ছি।
তিন বন্ধু চিকিৎসকের মধ্যে বিবাদ বেধেছে, কে কত বড় ডাক্তার, তাই নিয়ে। ওদের একজন হোমিওপ্যাথ, একজন কবরেজ, আর একজন সার্জেন।
হোমিওপ্যাথ তার অ্যাচিভমেন্ট বলার তর সইতে পারছে না। সুযোগ পেতেই বলে উঠল, জানিস, সেদিন ওপাড়ার ন্যাপলার ছেলে আমাকে ইয়া বড় এক দশসের ওজনের কাঁঠাল দিয়ে গেল।
কাঁঠালের সঙ্গে চিকিচ্ছের কী সম্পর্ক বুঝতে না পেরে যখন বাকি দুজন এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে, তখন সে বোমাটা ফাটালো। আরে, গত বছর ভরা ভাদ্দরে রাত তিনটেয় দারুণ বিষ্টির মধ্যে ন্যাপলা আমার কাছে এসে পা চেপে ধরলো। ডাক্তারবাবু, শীগ্রি চলুন, বাবার এখন তখন অবস্থা। কী আর করি, ছাতা মাথায় দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। চরম দুর্যোগের রাত, অঝোর বৃষ্টি, অন্ধকার রাস্তা, তাতে হাঁটু অবধি কাদা। বাড়ি যখন গিয়ে পৌঁছালাম তখন ওখানে কান্নাকাটি শুরু হয়ে গিয়েছে, গঙ্গাজলটুকু যা মুখে দেওয়া বাকি। নড়বড়ে তক্তাপোষে শুইয়ে রাখা ন্যাপলার বাবাকে, বোধহয় ওটাতে করেই শ্মশানে নিয়ে যাবে। আমি আর কীই বা করতে পারি, কোনোরকমে ঠোঁটদুটো ফাঁক করে ঢেলে দিলাম দু’ফোঁটা।
ন্যাপলার বাবা এখন দিব্যি দোকান চালাচ্ছে। ওর মুখে যে দু’ফোঁটা ঢেলেছিলাম, তার একফোঁটা মুখের ভেতরে যায়নি, কষ বেয়ে নেমে এসেছিল তক্তাপোষে। সাতপুরুষের কাঁঠাল কাঠের তক্তাপোষ, ওষুধ পেয়ে জ্যান্ত গাছ হয়ে গেল। বছর না পুরতেই তাতে ধরে গেল ইয়াব্বড় বড় সব কাঁঠাল। তারই একটা সেদিন ন্যাপলা আমাকে –
এ আর এমন কী, বাধা দিয়ে কবরেজমশাই বলে উঠল, এই যে আমার গায়ে সোয়েটারটা দেখছিস, তোদের বৌদি বানিয়ে দিয়েছে, কীসের জানিস?
কবরেজমশাই বলে চললেন, আমাদের পাড়ার হাঁদু সোঁদরবনে যায় মধু আর মোম আনতে। গতবার আমাকে বললো, যাবেন? আমি ভেবে দেখলাম সুযোগ মন্দ না। ওখানে আমাদের কাজের গাছ-গাছড়াও নিশ্চয় পাওয়া যাবে। গেলাম ওর সাথে। কিন্তু ভাগ্য মন্দ। হাঁদু গাছে উঠে মৌচাক ভাঙছে, আমি ওপরে তাকিয়ে আছি, এমন সময় চোখের সামনে হলুদ কী একটা চমকে উঠল। সেকেণ্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যে আমি বুঝে নিলাম একটা বাঘ লাফ মেরে আমার ঘাড়েই পড়তে চলেছে। তাগড়া চেহারার মানুষখেকো বাঘ, আমার চেহারা তো দেখতেই পাচ্ছিস। বাঘটা বিশাল একটা হাঁ করলো, আমার মাথাটা ওর মুখের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার ঠিক আগে আমি উপায় না পেয়ে পকেট হাতড়ে ছুঁড়ে দিলাম এক হজমিগুলি ওর জিভের ওপরে।
আমার মাথা টাচ করার আগেই বাঘটা হজম হয়ে গেল। পড়ে থাকলো লেজের একগুচ্ছ লোম। সেটা দিয়েই তোদের বৌদি এই –
বুঝলাম, খুবই লোমহর্ষক ঘটনা। সার্জেন বলে উঠল। বাকিরা ওর কাহিনী শোনার জন্যে মুখিয়ে আছে, ও ব্যাটা মুখই খোলে না। অনেক পীড়াপীড়িতে সে বলল, সেদিন ভোরবেলা পদ্মবিলের ধার দিয়ে আসছি। একটা বাচ্চা ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে যাচ্ছে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে রে? সে বলল, একটা লোক রেলে কাটা পড়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, কোথায়? সে হাত দিয়ে একদিকে আঙুল দেখিয়ে দিল।
হাতে কাজ অনেক, কিন্তু একটা লোক কাটা পড়েছে যখন, ভাবলাম গিয়েই দেখি। রেললাইনে পৌছে দেখি, পুরো আধখানা হয়ে গেছে, কোমর থেকে নিচের অংশটা খুঁজেই পাওয়া গেল না। বোধ হয় শিয়ালে কুকুরে খেয়ে নিয়েছে।
রেলের লাইন চেক করার কতগুলো লোক রেললাইনের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। ওদের জিজ্ঞেস করলাম বাকি অংশটা দেখেছে কিনা। ওরা বলল, না, কিন্তু মাইলখানেক আগে একটা গরুও কাটা পড়েছে, ওরা দেখে এসেছে।
কী আর করি। লোকটার টপ আর গরুটার বটম সেলাই করে দিলাম গুণসূঁচ দিয়ে। এখন সেই লোক দিব্যি টেরি কেটে অফিসে যায়, আবার চার-পাঁচসের দুধও দেয়।
তিন বন্ধু চিকিৎসকের মধ্যে বিবাদ বেধেছে, কে কত বড় ডাক্তার, তাই নিয়ে। ওদের একজন হোমিওপ্যাথ, একজন কবরেজ, আর একজন সার্জেন।
হোমিওপ্যাথ তার অ্যাচিভমেন্ট বলার তর সইতে পারছে না। সুযোগ পেতেই বলে উঠল, জানিস, সেদিন ওপাড়ার ন্যাপলার ছেলে আমাকে ইয়া বড় এক দশসের ওজনের কাঁঠাল দিয়ে গেল।
কাঁঠালের সঙ্গে চিকিচ্ছের কী সম্পর্ক বুঝতে না পেরে যখন বাকি দুজন এ ওর মুখ চাওয়াচাওয়ি করছে, তখন সে বোমাটা ফাটালো। আরে, গত বছর ভরা ভাদ্দরে রাত তিনটেয় দারুণ বিষ্টির মধ্যে ন্যাপলা আমার কাছে এসে পা চেপে ধরলো। ডাক্তারবাবু, শীগ্রি চলুন, বাবার এখন তখন অবস্থা। কী আর করি, ছাতা মাথায় দিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। চরম দুর্যোগের রাত, অঝোর বৃষ্টি, অন্ধকার রাস্তা, তাতে হাঁটু অবধি কাদা। বাড়ি যখন গিয়ে পৌঁছালাম তখন ওখানে কান্নাকাটি শুরু হয়ে গিয়েছে, গঙ্গাজলটুকু যা মুখে দেওয়া বাকি। নড়বড়ে তক্তাপোষে শুইয়ে রাখা ন্যাপলার বাবাকে, বোধহয় ওটাতে করেই শ্মশানে নিয়ে যাবে। আমি আর কীই বা করতে পারি, কোনোরকমে ঠোঁটদুটো ফাঁক করে ঢেলে দিলাম দু’ফোঁটা।
ন্যাপলার বাবা এখন দিব্যি দোকান চালাচ্ছে। ওর মুখে যে দু’ফোঁটা ঢেলেছিলাম, তার একফোঁটা মুখের ভেতরে যায়নি, কষ বেয়ে নেমে এসেছিল তক্তাপোষে। সাতপুরুষের কাঁঠাল কাঠের তক্তাপোষ, ওষুধ পেয়ে জ্যান্ত গাছ হয়ে গেল। বছর না পুরতেই তাতে ধরে গেল ইয়াব্বড় বড় সব কাঁঠাল। তারই একটা সেদিন ন্যাপলা আমাকে –
এ আর এমন কী, বাধা দিয়ে কবরেজমশাই বলে উঠল, এই যে আমার গায়ে সোয়েটারটা দেখছিস, তোদের বৌদি বানিয়ে দিয়েছে, কীসের জানিস?
কবরেজমশাই বলে চললেন, আমাদের পাড়ার হাঁদু সোঁদরবনে যায় মধু আর মোম আনতে। গতবার আমাকে বললো, যাবেন? আমি ভেবে দেখলাম সুযোগ মন্দ না। ওখানে আমাদের কাজের গাছ-গাছড়াও নিশ্চয় পাওয়া যাবে। গেলাম ওর সাথে। কিন্তু ভাগ্য মন্দ। হাঁদু গাছে উঠে মৌচাক ভাঙছে, আমি ওপরে তাকিয়ে আছি, এমন সময় চোখের সামনে হলুদ কী একটা চমকে উঠল। সেকেণ্ডের ভগ্নাংশ সময়ের মধ্যে আমি বুঝে নিলাম একটা বাঘ লাফ মেরে আমার ঘাড়েই পড়তে চলেছে। তাগড়া চেহারার মানুষখেকো বাঘ, আমার চেহারা তো দেখতেই পাচ্ছিস। বাঘটা বিশাল একটা হাঁ করলো, আমার মাথাটা ওর মুখের মধ্যে ঢুকে যাওয়ার ঠিক আগে আমি উপায় না পেয়ে পকেট হাতড়ে ছুঁড়ে দিলাম এক হজমিগুলি ওর জিভের ওপরে।
আমার মাথা টাচ করার আগেই বাঘটা হজম হয়ে গেল। পড়ে থাকলো লেজের একগুচ্ছ লোম। সেটা দিয়েই তোদের বৌদি এই –
বুঝলাম, খুবই লোমহর্ষক ঘটনা। সার্জেন বলে উঠল। বাকিরা ওর কাহিনী শোনার জন্যে মুখিয়ে আছে, ও ব্যাটা মুখই খোলে না। অনেক পীড়াপীড়িতে সে বলল, সেদিন ভোরবেলা পদ্মবিলের ধার দিয়ে আসছি। একটা বাচ্চা ছেলে হাঁপাতে হাঁপাতে দৌড়ে যাচ্ছে দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, কী হয়েছে রে? সে বলল, একটা লোক রেলে কাটা পড়েছে। জিজ্ঞেস করলাম, কোথায়? সে হাত দিয়ে একদিকে আঙুল দেখিয়ে দিল।
হাতে কাজ অনেক, কিন্তু একটা লোক কাটা পড়েছে যখন, ভাবলাম গিয়েই দেখি। রেললাইনে পৌছে দেখি, পুরো আধখানা হয়ে গেছে, কোমর থেকে নিচের অংশটা খুঁজেই পাওয়া গেল না। বোধ হয় শিয়ালে কুকুরে খেয়ে নিয়েছে।
রেলের লাইন চেক করার কতগুলো লোক রেললাইনের ওপর দিয়ে যাচ্ছিল। ওদের জিজ্ঞেস করলাম বাকি অংশটা দেখেছে কিনা। ওরা বলল, না, কিন্তু মাইলখানেক আগে একটা গরুও কাটা পড়েছে, ওরা দেখে এসেছে।
কী আর করি। লোকটার টপ আর গরুটার বটম সেলাই করে দিলাম গুণসূঁচ দিয়ে। এখন সেই লোক দিব্যি টেরি কেটে অফিসে যায়, আবার চার-পাঁচসের দুধও দেয়।
এই গল্পটার ওই যে
একটা চরিত্রের নাম লিখলাম হাঁদু, এই নামটা আমার খুব পছন্দ হয়ে গেল। হাঁদু, আর ওর
বোন পুঁটি। ওদের নিয়েই আমার বাকি গল্পগুলো, থুড়ি চুটকিগুলো সৃষ্টি হলো, নিজস্ব
মস্তিষ্কপ্রসূত।
দুই
বলছিলাম কি, আমাদের
পাশের বাড়ির ওই হাঁদু, সে বরাবরের 'ধর্মভীরু'। ছোটবেলা থেকে দেখছি তো। সাতসকালে উঠে চান করে ঠাকুরের ফটোর
সামনে দাঁড়িয়ে বিজ বিজ করে মন্ত্র পড়ে তবে ও জল খায়। কোনোদিন এর অন্যথা হতে
দেখিনি।
ওর বোন পুঁটি, বিজ্ঞান টিজ্ঞান পড়ছে তো, এসব ওর আদিখ্যেতা মনে হয়। পুঁটির বেশি মনোযোগ টিভি সিরিয়ালে আর সিনেমার পর্দায়। একদিন হাঁদু যথারীতি ওর আরাধ্য দেবতার ছবির সামনে চোখ বন্ধ করে পেন্নাম নিবেদন করছে, এমন সময় পুঁটি ওকে জিজ্ঞেস করলো, “বল তো দাদা, যুদ্ধক্ষেত্রে, অরণ্যে আর জলাশয়ে বিপদে পড়লে কোন অভিনেতার নাম না করাই ভালো?”
হাঁদু এসব ক্যুইজ মোটেই পছন্দ করে না। সে বললো, “পুঁটি, ইয়ার্কি মারবি না। যা ভাগ এখান থেকে”।
পুঁটি বললো, “পারলি না তো। জানি তো পারবি না। ‘অলোক নাথ’ রে, তোর ঠাকুরের দুশমন”।
তিন
লটারির টিকিটের
লাস্ট দুটো ডিজিট মিলে যাওয়ায় হাঁদু পাঁচশো টাকা পেয়েছে। তার ফূর্তি দ্যাখে রাস্তায়
যেতে যেতে তার ঘ্রাণেন্দ্রিয়ে কিসের একটা সুবাস যেতেই সে একটা
দোকানে ঢুকে গিয়ে বললো, “এক প্লেট চিকেন দিন”।
দোকানদার খেঁকিয়ে উঠলো, “কানা নাকি? দেখছিস না এটা জুতোর দোকান?”
হাঁদু বললো, “বাইরে লেখা দেখলাম, বাটা। আমার বাটার চিকেনই চাই তো”।
এটা পুরনো গল্প। আমিই লিখেছিলাম এটা আগে, অন্য একটা ফর্মে। তো হলো কী, দোকানদার খচে গিয়ে হাঁদুকে বের করে দিলো। “ব্যবসার সময় যত উটকো ঝামেলা!”
হাঁদু ঠিক করলো সে নিজেই ব্যবসায় নামবে। খোঁজখবর করে জানলো বাঙালিরা ব্যবসায় পটু না। সেই রবি ঠাকুরের দাদা জাহাজের ব্যবসা করতেন, সুবিধে করতে পারেননি। হাঁদু ভেবে দেখলো, জাহাজের ব্যবসার আইডিয়াটা খারাপ না।
পাঁচশো টাকা পকেটে নিয়ে হাঁদু এশিয়ার সবচেয়ে বড় বিগ বাজারে গেলো জাহাজের খোঁজ করতে। সেখানেও সেম কেস। সেখানেও জাহাজ পাওয়া যায় না, কিন্তু বাটার দোকানের মতোই ব্যাটারা কথা শুনাতেও ছাড়ে না। “আদার ব্যাপারী জাহাজের খোঁজ কচ্ছে!”
বেচারি হাঁদু কথাটার মানে না বুঝলেও এটুকু বুঝলো, আদা নিয়ে ব্যবসা করলে হয়তো ভালো হবে। কিন্তু প্রথমেই এখানে ওখানে হুট করে ঢুকে লাভ নেই, লোকে শুধু ঘাড়ধাক্কা দেয়। আদা নিয়ে প্রচুর পড়াশোনা করলো সে। গুগল, উইকিপিডিয়া, এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা থেকে শুরু করে এমনকি জিঞ্জার হোটেলেও খোঁজ নিলো, আদা সম্বন্ধে আর কী জানা যেতে পারে। হাঁদু সত্যিকারের একজন আদাবিশেষজ্ঞ হয়ে গেল।
কে একজন পরামর্শ দিল এর সাথে একটা ভালো এগ্রিকালচার ইনষ্টিটিউট থেকে ডিগ্রী নিতে পারলে লাভ আছে। সেখানে গিয়ে শুনলো, একটু দেরী হয়ে গেছে। মাত্র একটাই সীট পড়ে আছে। সেটা ও বি সি-দের জন্যে সংরক্ষিত।
হাঁদু আদার ব্যাপারে আদ্যোপান্ত সব জেনে এসেছে। কিন্তু আদার ব্যাকওয়ার্ড ক্লাশটা যে কী, সেটা বুঝতেই পারলো না।
চার
পরীক্ষায় প্রশ্ন
এসেছেঃ লিঙ্গ পরিবর্তন করো – চিত্রার্পিতা।
হাঁদু লিখে এলো চিত্রার মাতা।
হাঁদু লিখে এলো চিত্রার মাতা।
পাঁচ
- এই
হাঁদু, জিওগ্রাফি পড়েছিস?
- হাঁ, সার।
- বলতো, পৃথিবীর সবচেয়ে নদীমাতৃক মহাদেশ কোনটা?
- দক্ষিণ আমেরিকা সার।
- কেন?
- ওখানে সার ওদের সবচে’ লম্বা নদীকে আম্মাজান ডাকে।
- হাঁ, সার।
- বলতো, পৃথিবীর সবচেয়ে নদীমাতৃক মহাদেশ কোনটা?
- দক্ষিণ আমেরিকা সার।
- কেন?
- ওখানে সার ওদের সবচে’ লম্বা নদীকে আম্মাজান ডাকে।
ছয়
শিক্ষক –হাঁদু,
ট্রানশ্লেসন কর দেখি, পান খেয়ে দশজন মরে গেল।
হাঁদু –Sir, pun in ten dead!
হাঁদু –Sir, pun in ten dead!
সাত
একটা লোক, দেখে মনে
হচ্ছে অসুস্থ, একটা শপিং মলের গেটের সামনে বসে নাক চেপে ধরে
ওয়াক-থু ওয়াক-থু করছিল। হাঁদু আর ওর বোন
পুঁটি ওর পাশ দিয়ে যাচ্ছিল সেই সময়। কেউ লোকটার দিকে
ফিরেও চাইছে না দেখে ওদের কেমন মায়া হল। লোকটার কাছে গিয়ে কী জিজ্ঞেস করতে গেল, লোকটা অমনি
ভির্মি খেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেল।
এ অবস্থায় ফেলে যাওয়া যায় না। চোখে মুখে জল ছেটাতে জ্ঞান ফিরে এল। ইঙ্গিতে বোঝালো সে জল খেতে চায়। একটা এক লিটারের মিনারেল ওয়াটারের বোতল দিতে চোঁ চোঁ করে সবটা খেয়ে নিয়ে বলল, আরো চাই। অবাক কান্ড, এক এক করে আট লিটার জল খেয়ে নিল লোকটা।
পুঁটি বলল, দাদা, কী বুঝছিস?
হাঁদু বলল, অসুস্থ লোক আট লিটার জল খেয়ে নিল রে! নির্ঘাৎ ill-liter-8!
জলটল খেয়ে বিশাল একটা ঢেকুর তুলে শপিং মলের গেটে লোকটা আবার নাক চেপে ওয়াক-থু ওয়াক-থু চালু করে দিল। পুঁটি বলল, এ কী, এ রকম করছেন কেন?
লোকটা বলল, করব না? বাজে গন্ধ!
পুঁটি বলল, কই বাজে গন্ধ? আমি তো পাচ্ছি না?
লোকটা বলল, পাচ্ছ না? এই জায়গাটা তো মল-দ্বার !
পুঁটি হাঁদুকে বলল, দাদা, একে তুই ইল্লিটারেট বলছিস? এ ভারি ঘোড়েল লোক মনে হচ্ছে।
হাঁদু লোকটাকে বলল, বাজে গন্ধ তো এখান থেকে সরে গেলেই পারেন। এখানে এসব করতে কে মাথার দিব্যি দিয়েছে?
লোকটা বলল, অন্য জায়গায় এত মানুষ কই?
পুঁটি নরম গলায় জিজ্ঞেস করল, মানুষের কী দরকার আপনার?
লোকটা সেই একই খ্যানখেনে টোনে বলল, ও তোমরা বুঝবে না হে। বড় একা লাগছে যে।
পুঁটি বলল, আমরা আছি তো আপনার সঙ্গে। একা লাগছে কেন?
লোকটা দার্শনিকের ভঙ্গিতে বলে উঠলো, তোমরা তো আছই। কিন্তু বাড়ি করার জন্যে এত বেশি লোন নিয়ে ফেলেছি, কিছুতেই শোধ হচ্ছে না। তাই বড্ড লোনলি লাগছে।
হাঁদু বেশ ইন্টারেস্ট পেয়ে গেছে এতক্ষণে এর কথাবার্তায়। জিজ্ঞেস করল, আপনার বাড়িতে কেউ নেই? ছেলে মেয়ে?
- এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
- কার সাথে?
- জামাইয়ের।
- উফ। তার বাড়ি কোথায়?
- জামাইদের বাড়ি যেখানে হয়।
- কোথায় সেটা?
- একটা মনোরম দ্বীপে। জামাই-কা।
- আচ্ছা দারুণ তো!
- সেই জন্যেই তো রোগে পড়ে গেছি বাবা।
- কী রোগে?
- এই যে দেখছ, বহুমূত্র।
আট লিটার জল খেয়ে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলা এমন কিছু ব্যাপার না। তাও হাঁদু বলল, এই রোগ কোত্থেকে আমদানি করলেন?
- কোন রোগ?
- এই যা এক্ষুণি বললেন?
- ওহো ডায়াবেটিস? যার দু’ দুটো বেটি, তার ডায়াবেটিস না হয়ে যায়?
- হে হে হে। কিছু খাবেন? খিদে পেয়েছে?
- একটু চা পেলে মন্দ হতো না।
চা এসে গেল। চা না খেয়ে লোকটা চায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
পুঁটি বলল, কী করছেন?
- এই তোমাদের সাথে যা করছিলাম।
- কী সেটা?
- ঘনিষ্টতা।
- চায়ের সঙ্গে? কী রকম?
- ওই যে in tea, may see! তাই তো করছি।
- বেশ, করুন।
- কী?
- আপনার অবস্থা বেশ করুণ-ই। আমাদের কিচ্ছু করার নেই। চল দাদা।
এ অবস্থায় ফেলে যাওয়া যায় না। চোখে মুখে জল ছেটাতে জ্ঞান ফিরে এল। ইঙ্গিতে বোঝালো সে জল খেতে চায়। একটা এক লিটারের মিনারেল ওয়াটারের বোতল দিতে চোঁ চোঁ করে সবটা খেয়ে নিয়ে বলল, আরো চাই। অবাক কান্ড, এক এক করে আট লিটার জল খেয়ে নিল লোকটা।
পুঁটি বলল, দাদা, কী বুঝছিস?
হাঁদু বলল, অসুস্থ লোক আট লিটার জল খেয়ে নিল রে! নির্ঘাৎ ill-liter-8!
জলটল খেয়ে বিশাল একটা ঢেকুর তুলে শপিং মলের গেটে লোকটা আবার নাক চেপে ওয়াক-থু ওয়াক-থু চালু করে দিল। পুঁটি বলল, এ কী, এ রকম করছেন কেন?
লোকটা বলল, করব না? বাজে গন্ধ!
পুঁটি বলল, কই বাজে গন্ধ? আমি তো পাচ্ছি না?
লোকটা বলল, পাচ্ছ না? এই জায়গাটা তো মল-দ্বার !
পুঁটি হাঁদুকে বলল, দাদা, একে তুই ইল্লিটারেট বলছিস? এ ভারি ঘোড়েল লোক মনে হচ্ছে।
হাঁদু লোকটাকে বলল, বাজে গন্ধ তো এখান থেকে সরে গেলেই পারেন। এখানে এসব করতে কে মাথার দিব্যি দিয়েছে?
লোকটা বলল, অন্য জায়গায় এত মানুষ কই?
পুঁটি নরম গলায় জিজ্ঞেস করল, মানুষের কী দরকার আপনার?
লোকটা সেই একই খ্যানখেনে টোনে বলল, ও তোমরা বুঝবে না হে। বড় একা লাগছে যে।
পুঁটি বলল, আমরা আছি তো আপনার সঙ্গে। একা লাগছে কেন?
লোকটা দার্শনিকের ভঙ্গিতে বলে উঠলো, তোমরা তো আছই। কিন্তু বাড়ি করার জন্যে এত বেশি লোন নিয়ে ফেলেছি, কিছুতেই শোধ হচ্ছে না। তাই বড্ড লোনলি লাগছে।
হাঁদু বেশ ইন্টারেস্ট পেয়ে গেছে এতক্ষণে এর কথাবার্তায়। জিজ্ঞেস করল, আপনার বাড়িতে কেউ নেই? ছেলে মেয়ে?
- এক মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে।
- কার সাথে?
- জামাইয়ের।
- উফ। তার বাড়ি কোথায়?
- জামাইদের বাড়ি যেখানে হয়।
- কোথায় সেটা?
- একটা মনোরম দ্বীপে। জামাই-কা।
- আচ্ছা দারুণ তো!
- সেই জন্যেই তো রোগে পড়ে গেছি বাবা।
- কী রোগে?
- এই যে দেখছ, বহুমূত্র।
আট লিটার জল খেয়ে প্যান্ট ভিজিয়ে ফেলা এমন কিছু ব্যাপার না। তাও হাঁদু বলল, এই রোগ কোত্থেকে আমদানি করলেন?
- কোন রোগ?
- এই যা এক্ষুণি বললেন?
- ওহো ডায়াবেটিস? যার দু’ দুটো বেটি, তার ডায়াবেটিস না হয়ে যায়?
- হে হে হে। কিছু খাবেন? খিদে পেয়েছে?
- একটু চা পেলে মন্দ হতো না।
চা এসে গেল। চা না খেয়ে লোকটা চায়ের দিকে তাকিয়ে থাকলো।
পুঁটি বলল, কী করছেন?
- এই তোমাদের সাথে যা করছিলাম।
- কী সেটা?
- ঘনিষ্টতা।
- চায়ের সঙ্গে? কী রকম?
- ওই যে in tea, may see! তাই তো করছি।
- বেশ, করুন।
- কী?
- আপনার অবস্থা বেশ করুণ-ই। আমাদের কিচ্ছু করার নেই। চল দাদা।
আট
শিক্ষক পড়াচ্ছেন, ক্লাশে - রামায়ণ আর মহাভারত হচ্ছে আমাদের দুই
মহাকাব্য। রামায়ণে প্রচুর শ্লোক। মহাভারত তারও ডবল, শ্লোক এক লক্ষের মতো।
এদিকে হাঁদু পুঁটির চুল ধরে টানছে।
শিক্ষক – এই তোরা দুষ্টুমি করছিস কেন? কথা কানে যাচ্ছে না? কী পড়াচ্ছি?
পুঁটি – মহাভারত রামায়ণ সার।
এদিকে হাঁদু পুঁটির চুল ধরে টানছে।
শিক্ষক – এই তোরা দুষ্টুমি করছিস কেন? কথা কানে যাচ্ছে না? কী পড়াচ্ছি?
পুঁটি – মহাভারত রামায়ণ সার।
শিক্ষক – গুড। কি পড়ালাম
এতক্ষণ?
পুঁটি - মহাভারতে একলক্ষ শ্লোক, রামায়ণে তার আদ্ধেক।
শিক্ষক - - গুড। মহাভারত কে লিখেছিল জানিস?
পুঁটি – জানি সার। ব্যাস।
হাঁদু আবার পেছন থেকে পুঁটির চুল ধরে টানতেই শিক্ষকের নজর গেল সেদিকে।
শিক্ষক - দাঁড়া দ্যাকাচ্চি মজা। বল, রামায়ণ কে লিখেছিল?
হাঁদু – ব্যাসার্দ্ধ সার।
পুঁটি - মহাভারতে একলক্ষ শ্লোক, রামায়ণে তার আদ্ধেক।
শিক্ষক - - গুড। মহাভারত কে লিখেছিল জানিস?
পুঁটি – জানি সার। ব্যাস।
হাঁদু আবার পেছন থেকে পুঁটির চুল ধরে টানতেই শিক্ষকের নজর গেল সেদিকে।
শিক্ষক - দাঁড়া দ্যাকাচ্চি মজা। বল, রামায়ণ কে লিখেছিল?
হাঁদু – ব্যাসার্দ্ধ সার।
নয়
- এই
হাঁদু, গন্ডগোল কচ্চিস কেন? বল কী
পড়াচ্ছিলাম?
- শব্দার্থ সার।
- বল সংস্কৃতে ‘দেখা’ কোন ধাতু?
- পশ্ধাতু সার। পশ্যতি পশ্যত পশ্যন্তি।
- গুড। বল দেখি, তাহলে অসূর্যস্পশ্যা কথাটার অর্থ কী হওয়া উচিত?
- যে নারী অসুর আর যমকে স্বচক্ষে দেখেছে সার।
- শব্দার্থ সার।
- বল সংস্কৃতে ‘দেখা’ কোন ধাতু?
- পশ্ধাতু সার। পশ্যতি পশ্যত পশ্যন্তি।
- গুড। বল দেখি, তাহলে অসূর্যস্পশ্যা কথাটার অর্থ কী হওয়া উচিত?
- যে নারী অসুর আর যমকে স্বচক্ষে দেখেছে সার।
দশ
হাঁদু ওর বোন
পুঁটিকে প্রেজেন্ট কন্টিনিউয়াস টেন্স শেখাচ্ছে। পুঁটির মাথায় অনেক বুদ্ধি, সে চটপট সব
শিখে নিতে পারে।
খানিকক্ষণ পরে হাঁদু বলল, বুঝে গেলি তো? আচ্ছা, এবার জানালার বাইরে তাকিয়ে দেখ কে কী করছে। তাই দিয়ে একটা সেন্টেন্স লেখ দেখি। পুঁটি একঝলক দেখে নিয়ে গোটা গোটা করে লিখে দিল - Two cows are singing.
বোনের এ হেন সৃজনীশক্তিতে চমৎকৃত হাঁদু বাইরে তাকিয়ে দেখল দুটো গরু এ ওর দিকে শিং বাগিয়ে গুঁতোগুঁতি করছে।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন