কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / পঞ্চম সংখ্যা / ১২৫

রবিবার, ১৪ এপ্রিল, ২০১৩

রুচিস্মিতা ঘোষ

যে গল্পটা হয়ই নি
রুচিস্মিতা ঘোষ



জ্যোৎস্নার রাত। আকাশে ছোট ছোট সাদা মেঘে রহস্যের বিছানা। রিডিংল্যাম্প... বই-খাতা... ল্যাপটপ... গরম কফি। আপনা আপনিই সময় কেটে যায়। পড়তে যাই, লিখতে চাই। হয় না। ভাবনাগুলো ভূমিকম্পের বারোতলায় দোলে। রাত গভীর। সেখানে অজস্র মুখ। ঘটনারা –- একের পরে এক ঢেউয়ের মতো।

কেউ এলো।

ঝাঁকরা চুল –- তামাকের গন্ধ –- উদাস চাহনি। একেবারে কাছে। বিছানায়। নিঃশ্বাসের মৃদু শব্দ। দুজনেই কথা বলে উঠি। আর কেউ শুনতে পায় না সেসব কথা। অতীত দুলে ওঠে ভূমিকম্পের বারোতলায়।

--‘এসেছি’। সে বলেনি, তাও শুনতে পাই।

--‘কেন এলে? আমি তো চাইনি’।

--‘চেয়েছ। এখনও চাইছ’।

নিঃশ্বাস দ্রুত। তামাকের তীব্র পুরুষালি গন্ধ; বিভোর।

রিডিংল্যাম্পটা নিভিয়ে দিই। অন্ধকার ঘন। কয়েক সেকেন্ড। পল-অনুপল অনুভবে মাপি।

--‘এত তো চাই, চাই; নাও এখন’!

--‘না’।

অন্ধকারে চোখ জ্বলে ওঠে। সেই বিদ্যুতের দৃষ্টি চিরে ফেলে অন্ধকার।

--‘তাহলে এতদিন ধরে রেখেছ কেন?’

--‘যখন চেয়েছি, তখন আসোনি’।

--‘এখন তো এলাম। নাও!’ সে দু’হাত বাড়িয়ে কাছে টেনে নেয়।

নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। তার নিঃশ্বাস ঘন। অন্ধকার কেঁপে উঠল। যত কাছে টানছে, তত ঠান্ডা হয়ে আসছে শরীর। গাল বেয়ে দু’ফোঁটা জল।

--‘কাঁদছ কেন?’

--‘মুক্তি চাই’।

--‘মুক্তি দিতেই তো এলাম’।

কথায় কথায় সময় পার হয়ে যায়। এত কাছে –- বারবার ছুঁয়ে দেখি। নিজেকেও খুঁজি। বিশ্বাস হয় না। আরও কি বাঁধা পড়ে গেলাম! না, এমনি করে মুক্তি হয়! চাওয়ার থেকে মুক্তি পেতে চাই-ই বা কেন! চাওয়াটা তো কত কিছুর সঙ্গে মিশে ছিল। একান্ত সময়, কবিতা, অজানা-অচেনা সেই ভালোবাসা!



হাত বাড়িয়ে ল্যাম্পটা জ্বালালাম। মৃদু আলোয় ভরে উঠল ঘর। মনে হলো, বিছানা ছেড়ে কেউ উঠে চলে গেল।

কফির মগ উলটে গেছে। চাদরে দাগ। বইয়ের পাতা উড়ছে। খাতা খোলা। ল্যাপটপের আলো জ্বলে উঠল।

অতীত নেই। স্মৃতি নেই। খাতা টেনে নিলাম। কলমও। ফ্লাস্ক থেকে কফি। নির্ভার লাগছে। কেউ নেই। পোড়া তামাকের গন্ধটা জ্বালাচ্ছে।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন