কালিমাটির ঝুরোগল্প ৯৩ |
ভয়েস মেসেজ
ইনান্না নামটি ইলিনার খুব পছন্দ হয়ে যায়। সদ্য কন্যাশিশু জন্মের পর নামকরণ একটা বিশাল গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শ্বশুর শাশুড়ির সঙ্গে এক অন্নে থাকে না। বাবা-মাকে ছেড়ে বেশি দূর যায় নি। একই বাড়ির দোতলায় ইলিনারা একতলায় মা-বাবা থাকে। রূপকুমারের মা বিধবা সমাজকল্যাণমূলক কাজ করে। আর ইলিনার বাবা এখনো রোজগারক্ষম। ইলিনারা প্রেম করবে কী ঐ দুজন গুরুজনের প্রেম দেখতে দেখতে হালুয়া টাইট হয়ে গেল। বাবার মোবাইলে মেসেজে ভুল বানানের আতিশয্যে ধরা পড়েছিল তাদের আবেগ। ইলিনার বিয়ের পরপরই ঘনিষ্ঠ আত্মীয়দের সাক্ষী রেখে বিয়ে হয়ে গেল। অতএব আঙ্কল আন্ট ডাকার প্রয়োজন নেই। মা বাবা বলেই ডাকে। ইলিনার হানিমুন হয়েছিল একটা সেটা আর অতটা রোমান্টিক ছিল না কারণ বিয়ের আগেই হিল্লি দিল্লি রূপকুমারের সঙ্গে ঘুরে বেড়িয়েছে অফিসের কাজের নামে। বোঝা গিয়েছিল যে নারী স্বাধীনতা আর মুখের কথা নেই।
ইলিনার বর্তমান মা অবশ্য একটু ঠাকুরঘেঁষা প্রাণী। নাতনিকে আদর করে কমলেকামিনী, কাত্যায়নী, জগদম্বা বলে থাকেন। আর ওরা সেই সব কুসংস্কারও মানেন না যে সন্তান জন্মের আগে কাঁথা তৈরি করে রাখা যাবে না। অতএব অর্ডার দিয়ে বড় ছোট কাঁথা তৈরি করে রাখলেন। যাইহোক বেয়াই বেয়ানের সম্পর্ক তো ঠাট্টা তামাশার বন্ধুত্বের। অতএব সেটাই বেশ উন্নত জিডিপি গ্ৰোথের মত শক্তিশালী বন্ডেজ হল।
সমাজের যেটুকু প্রগতিশীল নর্ম্ ধ্যানধারণা সেটাকে ব্যঙ্গ করে অনেকে কমেডি গল্প লিখতে পারে। কিন্তু ইলিনার সেটা পছন্দ না। যা প্রচলিত তার বিপরীতে কিছু করতে হিম্মত তার আছে বলেই। অতএব শ্বাশুড়িকে বোঝাতে হলে কী করা দরকার।
আইডিয়া! মাকে অ্যাপার্টমেন্টের সেক্রেটারির দ্বিতীয় নং অ্যাসিস্ট্যান্ট করে দেওয়া যাক।
“দেখুন মা, ইনান্না নামটা মোটেও বাজে নয়। খুবই মিষ্টি। আর এই নামটা ঠাকুর দেবতারা। প্রাচীন আসিরিয় সভ্যতার দেবী তিনি। ঠাকুমার আন্নাকালী নামের সঙ্গে বেশ মিল আছে ধ্বনির। নামটি আপনিই রেখেছেন প্রচার করা হবে। এতে আপনার বিদ্যাবত্তা ও বুদ্ধি প্রশংসা কুড়োবে। আর অমত করবেন না। ইনান্না নামটি বাইরের জগতের প্রচলিত হোক” -- ভোরে ঘুম ভাঙতেই হোয়্যাটসঅ্যাপে এই মেসেজটি পেলেন আন্নাকালী দেবী।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন