কালিমাটি অনলাইন

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

ত্রয়োদশ বর্ষ / দ্বিতীয় সংখ্যা / ১২৯

বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ, ২০২৫

সুকান্ত পাল

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১৩৩


বুলিং

দরজা ভিতর থেকে আটকানো ছিল। অনেক ডাকাডাকির পরও উজ্জয়িনী দরজা খোলে না। এতো দেরি করে সাধারণত উজ্জয়িনী ঘুম থেকে ওঠে না। একেই কর্পোরেট হাউসের চাকরি, তার উপর ছুটিছাটা নেই বললেই চলে। কিন্তু আজকে তো ওর ছুটি নেই! গতকাল রাতেই বলেছিল আজকে অফিসে তাড়াতাড়ি যেতে হবে। তাহলে এখনো কেন ঘুম থেকে উঠছে না? প্রশ্নটা উজ্জয়িনীর মা পারমিতা এবং বাবা সৌমেনের মনে দেখা দিল। একটা অজানা ভীতি তাদের মনকে গ্রাস করে ফেলেছে। তাহলে কি...

একই ফ্লোরের অন্যান্য ফ্ল্যাটবাসীদের না ডেকে উপায় ছিল না। বিভিন্নজন বিভিন্ন মন্তব্য এবং প্রতিক্রিয়া ইতিমধ্যেই দিতে শুরু করেছে। কেউ বলছে, হয়তো অনেক রাত করে ঘুমিয়েছে তাই ঘুম ভাঙতে দেরি হচ্ছে। কেউ বলছে, খবরের কাগজে চাকরি করে তো হয়তো একটু নেশাটেশা করেছে। কেউ বলছে, একটু বেশি রেস্ট নেওয়ার জন্য হয়তো একটু কড়া ঘুমের ডোজ নিয়েছে। উজ্জয়িনীদের লাগোয়া ফ্ল্যাটের নাকউঁচু বলে যার এ তল্লাটে বেশ খ্যাতি আছে সেই সেনগুপ্তবাবু বলেই ফেললেন, আজকাল যা সব হচ্ছে কিছুই বলা যায় না; কে যে কোথায় কি কুকুর্ম করে বসে ঠিক নেই। আমার মতে পুলিশকে এক্ষুনি ইনফর্ম করা উচিত।

নাকউঁচু সেনগুপ্তবাবুর কথায় পারমিতার বুকে ধড়াস ধড়াস শব্দের তীব্রতা সে নিজেই অনুভব করতে পারে।

-- এসব কি যা তা বলছেন! প্রতিবাদ করে উঠলেন উজ্জয়িনীদের বিপরীত দিকের ফ্ল্যাটের গোস্বামীদা।

পুলিশের কথা উঠতেই  উজ্জয়িনীর বাবা পকেট থেকে মোবাইল ফোনটা বের করতে গিয়ে এক টুকরো ভাঁজ করা কাগজ পেলেন। কাগজটা খুলে পড়তে শুরু করলেন,

বাবা, তোমাকে বেশ কয়েকদিন আগেই বলেছিলাম অফিসে কাজের চাপ আমার কাছে তেমন কিছুই না। সেই কাজের চাপ আমি অনায়াসেই সামলে নিতে পারি। আই হ্যাভ দ্যাট এবিলিটি। কিন্তু কর্মক্ষেত্রে যে পরিবেশ তা এতটাই হিংস্র যে সবসময় একটা প্যানিক মস্তিষ্কের কোষে কোষে, হৃদয়ে, ফুসফুসে বিষের মতো প্রবেশ করিয়ে দিচ্ছে ম্যানেজমেন্ট।

আত্মসম্মানের উপর সবসময় আঘাত করে করে আমাদের প্যানিক অ্যাটাকের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে। এর ফলে মানসিক অবসাদে ভুগছে ভারতবর্ষের প্রায় ছিয়াশি শতাংশ সরকারি-বেসরকারি কর্মচারী। এখন প্রত্যেকের কাছে একটাই মন্ত্র, ফাইট- অর - ফ্লাইট। তা না হলে কেউই টিকে থাকতে পারবে না। এটা পুরোটাই বুলিং কালচারের ফল। কত চাকরিজীবী যে এই বুলিং সহ্য করতে না পেরে নিজেদের ‌শেষ করে দিচ্ছে প্রতিদিন তার কোনো সুনির্দিষ্ট পরিসংখ্যান নেই।

এই পর্যন্ত পড়েই সৌমেন বাবুর হাত থরথর করে কাঁপতে থাকে।

ইতিমধ্যে পুলিশ এসে গেছে।

ওরা দরজাটা ভেঙেও ফেলেছে।


3 কমেন্টস্: