কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

অভিজিৎ মিত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১০


বেলুন


আমি বেলুন নিয়ে রিসার্চ করি। লোকেরা ভাবে কন্ডোম নিয়ে করি। কিন্তু মাইরি বলছি, আমি বেলুন নিয়েই রিসার্চ করি।

একটা বেলুন কতভাবে ফোলানো যায়, কী কী আকৃতিতে, ফেটে যাবার আগে বেলুনের শেপ কী হয়, ফুলতে শুরু করার পর বেলুনের রং কীভাবে হাল্কা হয়, কোন কোন গ্যাস বেলুনের জন্য স্বাস্থ্যকর, কত ওপর অব্ধি বেলুন পৌঁছতে পারে, মানুষের জীবনে বেলুন আশীর্বাদ না অভিশাপ - এরকম হাজারো টুকটাক। অবশ্য হ্যাঁ, আমি মহিলা ও বেলুনের সাদৃশ্য এবং বৈপরীত্য নিয়েও রিসার্চ করি। গ্যাস খেলে দুজনেই কেমন ফোলে, পিন দিলে একজন ফাটে, অন্যজনের লাড্ডু ফোটে। মহিলা ও বেলুনের পারস্পরিক রূপভেদ নিয়েও সদ্য কাজ শুরু করেছি।

এইতো সেদিন, বেশ কিছু পাতা লেখা হয়ে গেছে, বউকে সোহাগ করে বললাম, ‘একবার এসো না, তোমার পেটে একটু গ্যাস ভরি’। ইচ্ছে ছিল নারীদেহে বেলুন  গ্যাসের প্রভাব স্টাডি করব। কিন্তু বউ দাঁত মুখ খিঁচিয়ে এসে বলল, ‘বুড়োর দেখছি ভীমরতি হয়েছে! সাতসকালে মাথায় অন্ড চেপেছে। যাও, বাজার থেকে  মাছ আনো!’ আমি দুঃখিত হয়েই চলে এলাম। কী বললাম আর কী বুঝল! এজন্য বেলুন আমার ফেভারিট। চটকাও, চাপো, আদর কর, দু’পায়ের ফাঁকে  রাখো, ফাটার আগে অব্ধি শুধু চঁকচঁক ছাড়া আর কিছু বলে না। এমনকি সেদিন বউয়ের মুখঝামটা শোনার পর মেছোবাজার থেকে মাছের সাথে আঁশ এনে বেলুনের সারা শরীর ঢাকলাম, তাও চুপচাপ। তারপর সেটার গ্যাস হঠাৎ বের করে দিলে কীভাবে ঘর নোংরা হয়, সেটা স্লো-মোশনে নোট করলাম।  

 গতকাল আরেক ধাপ এগিয়ে আমার বন্ধু সুবীরের ২৫তম বিবাহবার্ষিকীতে গেলাম ২৫টা আলাদা রঙের বেলুনের প্যাকেট হাতে। সুবীর একটু মুখচোরা, শুধু জিজ্ঞেস করল ‘এটা কি’? বললাম ‘বেলুন। আমিই হিলিয়াম পুরে ফুলিয়ে আনব  ভেবেছিলাম। পরে মনে হল, তুই আর বৌদি যদি একসঙ্গে ফুঁ দিয়ে নাইট্রোজেন ভরিস, তাহলে কলেজ লাইফের মত আনন্দ পাবি’। আমার কথায় সুবীরের  কলেজ পড়ুয়া মেয়ে মুখ নামিয়ে অন্যদিকে চলে গেল, আর আমাদের বন্ধুরা এসে কীভাবে যেন সবার বয়স কমিয়ে দিল।  

শুধু আজ সকালে খানিক মুশকিল হল। বেরিয়েছি ১৫ আগস্ট লেখা হিলিয়াম  ভরা গুচ্ছ বেলুন নিয়ে। তারপর সারা সকাল একেক লাফে সায়েন্স সিটি থেকে বুড়িগঙ্গা, প্রিন্সেপ ঘাট থেকে খিদিরপুর, মা ফ্লাইওভার থেকে ভিক্টোরিয়া। বাধ সাধল পার্ক সার্কাস সেভেন পয়েন্ট। ব্রিজের হিজিবিজিতে বেলুন জড়াজড়ি। ওদের কেটে দিতে হবে, নইলে স্বাধীনতা আসবে না। কিন্তু পকেটে মাত্র ১০ টাকা।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন