কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

সোনালি বেগম

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১০



কথা ছিল

 

অন্ধকার বেশ গাঢ় হয়েছে। সমুদ্রে ভেসে যাওয়ার মতো অনুভূতি আসছে। জীবনের প্রতিটা বাঁক আলোকিত রাখার ইচ্ছেটা বরাবরই প্রবল। একটা দারুণ আবেশে শিউরে উঠলাম। এই নিঃসঙ্গ পৃথিবীতে আর তো কেউ নেই আমার! এমন সময় একটা অটো চলে এল। থেমে বলল, ‘বাবু, যাবেন নাকি?’

লাফিয়ে উঠে ফাঁকা সিট পেয়ে গেলাম। অটো ছেড়ে দিল।

আশৈশব পরিচিত রাস্তা ধরেই গেলাম বটে, কিন্তু কোথায় যেন পৌঁছে গেলাম। জ্যোৎস্নায় ভেসে যাওয়া সেই মধ্যরাত। তখন জুঁই-য়ের ডালে ডালে আশ্চর্য সুগন্ধ ভেসে যেতো বাতাসে। ‘আরে, এদিকে জোড়া পুকুর ছিল, না?’

অটোচালক ছেলেটি বলল, ‘সে তো অনেক বছর হয়ে গেল, বাবু। সেই পুকুর বুজিয়ে ফ্ল্যাট বাড়ি হয়েছে। তা, আপনি বুঝি, এ দ্যাশের মানুষ?’

‘আহা, জোড়া পুকুরের পার ধরে কত যে স্মৃতি, মনে পড়ে যাচ্ছে গো সব’

‘আমি এবার থামি। নেমে যান দেখি, বাবু। ঘর যাবো। বউটার অসুখ। কোথায় যাবেন, এখনও বললেন না তো!’

ভাড়া মিটিয়ে হাঁটতে থাকি। যদি কোনো পরিচিত মুখ নজরে আসে! সামনে রাস্তার ধারে চায়ের দোকানে, বেঞ্চে বসে থাকা লোকটাকে কেমন যেন চেনা-চেনা মনে হচ্ছে। ধুৎ, যত্ত সব মনের রসিকতা! এক ভাঁড় চা নিয়ে গল্প করতে বসি। এই রাত-বেরাতে বেড়াতে আসাটা আমার একদম ঠিক হয়নি, বেশ বুঝতে পারছি। লোকটা আমাকে আপাদমস্তক দেখে বোঝাতে চাইলো ‘তুমি কে হে? এ শহরে তোমার কে আছে?’

সত্যিই তো। আমার বুকের ধুকপুকুনিটাকে শান্ত হওয়ার নির্দেশ দিলাম। ধীরে ধীরে লোকটার চোখেমুখে একটা সন্দেহ ফুটে উঠল। হিংস্র বাঘের মতো হঠাৎ আমার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ল। দোকানে চা তৈরি করছিল যে ছেলেটি, সে চিৎকার করল, ‘বাবুকে ছেড়ে দে, ঝন্টু। মাল দিচ্ছি তোকে। খেয়ে শুয়ে পড়।’

সারারাত রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে ভোরের আলোয় নদীর ধারে পৌঁছলাম। ঐ তো নদীর ওপারে যাত্রীবোঝাই নৌকা যাচ্ছে! ভেসে যেতে মন চাইছে খুব। এই  মধ্যবয়সে তার সাথে দেখা হয়ে যায় যদি! নৌকার ভট্‌ভটি বেশ তীব্র শব্দে মাঝ নদীতে এগিয়ে যাচ্ছে। দূরে কলাগাছের বাগান, মেঠোপথে শাড়ি পড়ে মেয়েরা মাথায় কলসি নিয়ে, সরে সরে যাচ্ছে।




0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন