কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

শনিবার, ১৩ আগস্ট, ২০২২

সম্রাট লস্কর

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১০


স্বর্গচ্যুত

 

“আমরা আবার ফিরব, বুঝলে? আমাদের রাজনৈতিক আদর্শ মিথ্যা হতে পারে না। ওটা বিজ্ঞানের মতোই পরীক্ষিত সত্য।”

এর উত্তরে আমার কিছু বলার নেই। বাবার মতামতের সঙ্গে আমার মতামত মিলবে না। আর, ভিন্নমত বাবা সহ্য করতে পারে না। অল্প সময়ের জন্য এসেছি ঝামেলা বাড়াতে ইচ্ছে হয় না। চুপ করে রইলাম।

তা চুপ করে থাকাও বুড়োর সহ্য নয়।

“চুপ করে রইলে কেন? আজকাল তো বাড়িতে আসাও ছেড়ে দিয়েছ। এত কম আস কেন?”

এর সহজ উত্তর, তোমাকে ঘেন্না করি। তুমি যে মা বেঁচে থাকতেই বাড়ির আয়ার  সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলে! তুমি, হে স্বনামধন্য লেখক, যে মা মারা  যাওয়ার দু’মাসের মধ্যেই সেই মহিলাকে বিয়ে করে নিয়েছিলে! তোমার আরো কীর্তির কথা কি আমার অজানা? অনেক কথাই কানে এসেছে। আমি চুপ করেই থাকি। কিছু বলি না।

“একটা আত্মজীবনী লিখছি বুঝলে। অনেক কথা লিখতে হবে। আমার রাজনীতি নিয়ে, লেখা নিয়ে, সংগ্রাম নিয়ে…”

“আর তোমার লাম্পট্য নিয়ে, বদমায়েশি নিয়ে, ধান্দাবাজি নিয়ে…?” অবশ্যই কথাগুলো আওয়াজ হয়ে বেরোয় না।

“চোখে দেখি না, ভালো। জানো নিশ্চয়ই। মুখে বলি, মেয়েটা লেখে। কী লেখে কে জানে? পড়াশোনা ভালো করে শিখল না। দেখতেও হয়েছে তেমন। হবে না কেন মা তো আয়ার কাজ করত…”

আমার থেকে সাতাশ বছরের ছোটো সৎবোন চা নিয়ে ঢোকে। কথাগুলো নিশ্চিত ওর কানে গেছে। শুধু ওর কানে কেন, পাশের রান্নাঘরে থাকা ওর মায়ের কানে  যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। চা নিতে গিয়ে মেয়েটার চোখের দিকে তাকালাম। চোখের দৃষ্টি অনুভূতিহীন। অথচ লজ্জায় আমার কান গরম হয়ে গেছে। নিজের মেয়েকে যে এ’রকম করে বলতে পারে… আমার কি এখনই চলে যাওয়া উচিত নয়?

“পুরনো কথা লিখব, বুঝলে! কী দিন ছিল সব, বুঝলে? স্বর্গ, স্বর্গ! আর এখন…”

“তুমি বুড়ো স্বর্গও বিশ্বাস কর,” বলাই বাহুল্য এ কথাগুলোও মনের বাইরে এল না।

আমি কিন্তু উঠলামও না। বিদঘুটে তেতো চা খেতে খেতে স্বর্গের কথা শুনতে থাকলাম।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন