কালিমাটির ঝুরোগল্প ১১০ |
অসহবাস
আয়োজনটা ছিল চমৎকার। খুবই রুচিসম্মত। যারা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিল, মুগ্ধ হয়েছিল। যেমন শিল্পীত প্যান্ডেলসজ্জা, তেমনই পরিপাটি আহারের ব্যবস্থা। আসলে সদানন্দবাবু তাঁর ছেলের বৌভাত উপলক্ষ্যে আয়োজিত প্রীতিভোজ অনুষ্ঠানে কোনোরকম খুঁত যেন না থাকে, সে ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ ও সচেতন ছিলেন। তাঁর কনিষ্ঠপুত্র সিজারও একান্তই আন্তরিক ছিল অনুষ্ঠান সুচারুভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে। আমন্ত্রিত প্রত্যেকেই নববধূকে দেখে তার রূপ ও সৌন্দর্যে যতটা মোহিত হয়েছিল, ততটাই তৃপ্ত হয়েছিল সুস্বাদু খাবারের স্বাদ গ্রহণ করে।
যাবতীয় বিধি ও প্রথা মেনে যখন সিজার ও নববধূ তন্নিষ্ঠা ফুলশয্যার ঘরে এলো, তখন রাত অনেকটাই গড়িয়ে গেছে। আরও কিছুটা সময় কেটে গেল বিয়েবাড়িতে সমাগত অত্যুৎসাহী কিশোরী ও যুবতীদের হট্টগোল ও হাসি-ঠাট্টায়। তারপর সদ্য সাতপাকে বাঁধাপড়া সিজার ও তন্নিষ্ঠার যখন ফুলের শয্যায় বসে নিরিবিলিতে কথা বলার সুযোগ হলো, তখন সিজারের প্রথম প্রশ্ন ছিল, তুমি কি ঠিক করেছ, কবে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাবে?
তন্নিষ্ঠা প্রশ্নটা শুনে একটু ভাবল। তারপর সহজ ভাবেই বলল, না ঠিক করিনি এখনও। আসলে আমি আগে জানতে চাই, তুমি আমাকে কবে চলে যেতে বলছ?
সিজার বলল, দেখো তন্নিষ্ঠা, আমি তোমাকে চলে যেতে কখনও বলব না। তুমি নিজেই জানিয়েছিলে, তুমি চলে যাবে। তবে কথাটা যদি আরও আগে জানাতে, তাহলে এই বিয়ের আয়োজন করার আদৌ কোনো প্রয়োজন হতো না।
তন্নিষ্ঠা যথেষ্ট অবাক হয়েছিল তার শ্বশুরবাড়িতে বৌভাত ও প্রীতিভোজের আড়ম্বর দেখে। এতটা ধুমধাম করার তো কোনো প্রয়োজন ছিল না! তার নিজের বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান নিতান্তই সাদামাটা ছিল। আসলে বিয়েটা খুব তড়িঘড়ি করে হয়েছিল। ছোটছেলের বিয়ের সম্বন্ধ করতে গিয়ে তন্নিষ্ঠাকে দেখে সিজারের মা-বাবার খুব পছন্দ হয়েছিল। সিজার মুম্বাইতে কর্মরত। খুবই কর্মব্যস্ত। মাত্র একসপ্তাহের ছুটিতে বাড়িতে এসে বিয়ে করে বৌ নিয়ে মুম্বাইতে ফিরে যেতে হবে। বিয়ের আগে তন্নিষ্ঠাকে দেখেনি সিজার। প্রথম দেখেছিল শুভদৃষ্টির সময়। তার আগে ছবি দেখে খুবই পছন্দ হয়েছিল।
তন্নিষ্ঠা বলল, আমার কোনো উপায় ছিল না সিজার। আমাকে তোমার মা-বাবা পছন্দ করার পর মাত্র কুড়ি দিনের মাথায় বিয়েটা হলো। বিয়ের তিনদিন আগে তুমি মুম্বাই থেকে বাড়িতে এসেছ। আমি খুব চেষ্টা করেছিলাম, সম্বন্ধ হবার সঙ্গে সঙ্গে তোমাকে আমার কথা জানাতে। এর আগেও দু’বার আমার বিয়ের সম্বন্ধ হয়েছিল। পাত্রপক্ষ বিয়ের জন্য ব্যস্ত হয়েও পড়েছিল। কিন্তু আমি পাত্রদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আমার কথা জানিয়েছিলাম। তারা আর এগোয়নি। বিয়ে ভেঙে গেছিল। আমার সত্যিই খুব খারাপ লাগছে, বিয়ের দু’দিন আগে তোমাকে জানাতে পেরেছি। অনেক অনেক দেরি হয়ে গেছিল।
তন্নিষ্ঠার কথা শুনে সিজার হাসল। হাসিরই কথা। তন্নিষ্ঠার পাণিপ্রার্থী দু’দুজন পাত্র কেমন ফস্কে বেরিয়ে যেতে পেরেছিল! কিন্তু বেচারা সিজার! সে বেবাক ফেঁসে গেল। আসলে সামাজিক প্রথা মেনে বিয়ে সম্পন্ন হলেও বিবাহিত জীবনযাপন করা আদৌ সম্ভব নয়। তন্নিষ্ঠা সবার অজান্তে নিজের মেডিক্যাল টেস্ট করিয়ে জেনেছিল, মারণব্যাধি এইডসে আক্রান্ত সে।
Striking anti climax
উত্তরমুছুন