নীরব আমার সখা
গোলাপ
পদ্ম -- পলাশ ডালিয়া -- কিছুটি নয়। আমাকে টানে
বকুল। চোখ নাক -- প্রাণমন শুষে নেয় একেবারে। তখন আমরা বেলগাছিয়ার ভাড়াবাড়িতে থাকতাম।
বাড়ির কাছেই ছিল লেডিজ পার্ক। পার্কটি ছিল বকুল গাছে ভর্তি।
খুব
ভোরে ঠাকুরদার সাথে গিয়ে রাশি রাশি বকুল জড়ো করতাম। তারপর বাড়ি ফিরে সেই বকুল দিয়ে
ঠাকুরের মালা গাঁথা। ঠাকুর দেবতায় তো কোনোদিন মন-মতি নেই আমার। কিন্তু ছেলেবয়সে বকুলের
মালা গাঁথতে বসে কেমন একটা বাড়তি মনোযোগ আর নিষ্ঠা আসত। আমার এই বকুলপ্রেম দেখে কলেজ
জীবনে জুটে যাওয়া বান্ধবের দল কত যে হাসাহাসি
করত!
একদিন
এক বন্ধু কলাপাতায় বেশ কিছু বকুল এনে আমায় উপহার দিয়ে ফেললে। একদম ঝপ করে। সে মুহূর্তেই
আমার প্রেম ছিটকে গেল চারদিকে। বৃষ্টি পড়ছিল
বলে বকুলগুলো ভিজে গিয়েছিল। ভেজা বকুল বাস ছড়াচ্ছিল আর আমারও তার প্রতি প্রেমের ঝোঁক তীব্র হচ্ছিল। গন্ধ
যখন মিলিয়ে গেল, দেখি প্রেম কখন ছুটি নিয়ে
চলে গেছে! ঝপের জিনিষ টপ করে খসে যায় -- এ তো চিরন্তন! বলো?
বকুলমত্ততা
একবারে তুঙ্গে উঠেছিল বিয়ের বাজার করতে গিয়ে। বায়না ধরলাম বকুল রঙেরই বেনারসি চাই।
বহু খুঁজে মা সেই বকুলরঙা বেনারসিতেই সাজিয়েছিলেন তাঁর উন্মাদিনী কন্যাকে। রঙটা আজো
মনে ধরে আছে আমার। বেনারসির ভেতরটা বকুল চন্দনে
মাখামাখি -- পাড়টা রাঙাজবা।
মানুষপ্রেমিকে
তেমন ভরসা না থাকলেও বকুলে প্রেম কি সহজে যায় গো? ঠাকুরদা একটি বকুল গাছ পুঁতলেন আমাদের
সল্টলেকের বাড়িতে। আঙিনার সেই গাছ বড় হল। বাদলে চক্কর মেরে দীর্ঘ হতে লাগল সুগন্ধী
বাতাস। গাছটি কাটাও পড়ল একদিন। ছেলেবেলার বন্ধুটা পট করে মরে মাটিতে পড়তে লাগল দমাশ
দমাশ।
আজ
দেখি -- পাশের নিমগাছ থেকে ঝগড়াটে শালিকটা বকুলের গুঁড়ির গোল কাটা অংশটা হাঁ করে দেখছে।
ফাঁকা জায়গাটায় বড় এক প্যাকেট আবির ঢেলে দিয়েছি গো! মালী বলেছে বড় গাছ থাকার জন্য ও
জায়গায় ছোট্ট প্রাণ জন্মাবে না।
রঙটা
থাক।
চাঁদ
এসে লাল মাখুক।
লাল
চাঁদে শিশু খেলুক।
লাল খেয়ে পিঁপড়ে মরুক
বকুল গন্ধের বন্যা এল যে এই ভরা ভাদ্রেও।
উত্তরমুছুন