ব্যর্থতার দলিল মোড়া সময়
আরেকটু
পর হাফিজের জানাজা। ক্ষুধার্ত নিউমোনিয়ার হিংস্র দাঁত
যেন
বিক্ষত করল শুধু এম এস হলের হাফিজকে নয়
রাষ্ট্রীয়
ব্যর্থতাকে দলিল লিখে শিকার হয়ে গেল অবলীলায়।
বাবুল
মাতুব্বর!
চা বিক্রেতার পোড়া হৃৎপিণ্ড যেন কাঁপিয়ে দিয়ে গেল
পুরো
আকাশ। মাত্র ৫০০ টাকা চাঁদা দেওয়ার ব্যর্থতায়
দেশলাই
জ্বলে উঠলো একদল রাষ্ট্রীয় পোশাকিদের
ঘৃণ্য
কপাট খুলে। সব লেনদেন মুঠো বন্দী করে
বার্ন
ইউনিটে খুঁজে নিল অন্তিম আশ্রয়।
বিবৃতি
আর সংলাপে ফুলে ফেঁপে উঠবে টক-শো
আর
ওয়েব-শো। পরিযায়ী ফিরে যাবে ঘরে।
হাফিজ
ও বাবুলের দাফনের সিক্ত হাওয়া মেখে
একদল
স্বজন ঘরে ফিরবে কঠিন পাথর
- হৃতভূমে চাপা রেখে।
চাপা
রেখে সব ব্যথার কলহ,
নিরন্তর আহত মেঘ
বুকের
বন্দরে জমা রেখে হাফিজের বাবা শুকিয়ে নেবে অশ্রু
অটোরিকশার
তৃষ্ণার্ত বিবাগী হাওয়াতে। বাবুলের সহধর্মিণী
হিসেবের
খাতা লিখতে লিখতে চা-পাতার গোপন সৌরভে
বুকের
মধ্যে লালন করে চলবে প্রাণেশ্বরকে।
এর
পরও আমরা কিনছি ১ মিলিয়ন ডলারে সামরিক অস্ত্র
২২০
মিলিয়ন ডলারে যুদ্ধ জাহাজ,
আর পরিচর্যায় ৫৫৯ মিলিয়ন ডলার।
...তবু, আমরা
গড়ছি না পর্যাপ্ত আবাসিক হল, ভাবছি না হাফিজের
কনকনে
রাত্রির শীতকণা ঘায়েলের অস্ত্র নিয়ে। দেখছি না
পানিবন্দী
পাঠশালা শূন্য পড়ে থাকা অসহায় সময়গুলো।
মুখ
লুকিয়ে নিচ্ছি শাসক আর শোষকের ভুলে ভরা
পাণ্ডুলিপি
দেখেও। আমরা একটিবারও ভাবছি না
একটি
বটবৃক্ষের কথা,
একটি নিশ্চিত ভবিষ্যতের সোনালি পথ।
যে রাষ্ট্র দায় স্বীকার
করে না
রাষ্ট্রের জন্য মায়া জাগে। ক্রোধ ছাড়িয়ে যায় সীমানা।
একটি যথোচিত ভোরের জন্য প্রার্থনায় লীন হয়
রাতপ্রহর।
আর ক্রন্দিত সমাচার পড়তে পড়তে আকাশ লুকিয়ে
রাখে মুখ।
আশঙ্কা নিয়েই দাঁড়াই মুখোমুখি। কোনো হিসেবের খাতায়
ভুলের ঘ্রাণ মাখা ফুল। কোনো রমণী আজ আবার ঠায় দাঁড়াবে
অঙ্গনে আনত মস্তকে। যে শিশু সম্ভ্রমের সংজ্ঞা বুঝে উঠবার
বহু আগেই রক্তাক্ত মেঘ মেখে নেয় শরীরে। আর যে রাষ্ট্র
দায় স্বীকার করে না...
ফেনীর সাড়ে তিন বছরের শিশু আর কুমিল্লার
সোহাগীর জন্য
কার কাছে চাইব এক খণ্ড সুবিচার! এ লজ্জার নিবারণের জন্য
আকাশ ভেঙে পড়ুক। এক প্রলয়ঙ্কর দানবীয় ঝড়ে সব পরাভব
নিঃশেষিত হোক। অতঃপর একটি নতুন মানব সভ্যতা জাগুক
পাখিদের মতো মন আর গাছেদের মত মায়াবী হোক
এই নবগ্রহ।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন