কৃষ্ণজীবন
এই মুহূর্তে পৃথিবীর সেরা গল্প বলিয়ে কে?
উত্তর, ইলেকট্রনিক মিডিয়া।
এই মুহূর্তে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ বিরক্তিজনক উৎস কি?
বরুণ সেই একই উত্তর দেবে, অর্থাৎ ইলেকট্রনিক মিডিয়া।
সংক্ষিপ্ত ঘটনা সংক্ষিপ্ত আকারে বলে নেওয়াই ভালো। বরুণের এই মুহূর্তে একটা গল্প
চাই। একেবারে টাটকা ও বিশ্বাসযোগ্য এবং যা এখনো ঘটেনি; একটু পর যেটা ঘটতে যাচ্ছে। এবং যেটা ঘটতে ঘটতে ঘটনাকে পালটে দিচ্ছে,
একটা সেই রকম গল্প। বরুণ প্রথমে ভাবল। বরুণ দ্বিতীয়বার ভাবল। বরুণ তৃতীয়বার ভাবতে ভাবতে আবার ভাবল, যেটা
ঘটেনি যেটা কখনো ঘটবে না সেটাকে ঘটিয়ে ফেলতে
হবে এবং ঘটে যাবার পর পরই আবার সেটা বদলে যাবে। তবেই সেটা এই মুহূর্তের একটি অপ্রকাশিত গল্প
হবে; একেবারে চরমতম লেটেস্ট।
সে গোটা রাত গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে রইল। গোটা রাত সে ঘুমোল না। কুকুরের নাম সুন্দরী। কালু আয়, কালু খাবি আয় বললে, কালু রুটির টুকরো খেতে
আসবে না। দূর থেকে তাকিয়ে দেখবে। সুন্দরী আয়, সুন্দরী খাবি আয় বললে, কালু দিব্বি
এসে রুটি খেয়ে নেবে। কোনো টেনশন নেই। বরুণ ভাবল এটা একেবারে এই মুহূর্তের গল্প হলো। একেবারে লেটেস্ট। কিন্তু গল্পের ক্লাইম্যাক্স কি থাকল? কিংবা সমাপ্তির ব্যঞ্জনা? পাঠকের মনের
মধ্যে শেষে গুনগুন করে কি বাজবে গল্পটা? সেরকম কিছু থাকল কি?
বরুণ ভাবল আর বেশি ভাবলে এটা এই মুহর্তের গল্প থাকবে না। সুতরাং একটু সাজিয়ে গুছিয়ে এখনই এটাকে চালান করে দিতে
হবে।
গলার নিচে পাতলা একটা চুমু দিয়ে রঞ্জু নাইটি ঠিক করতে করতে বলল, সারা রাতই
তো ঘুমোলে না। ছটফট করলে কেবল। চলো, মন্দির থেকে ঘুরে আসি, ভোর পাঁচটা বাজছে।
বরুণ মন্দিরে গেল। দেখল ভগবানের মূর্তিকে আপাদমস্তক পদ্মফুল দিয়ে সাজানো
হয়েছে। লালপদ্ম সাদাপদ্ম গোলাপিপদ্ম। ভগবানের আজ পদ্মবেশ। চারিদিকে দারুণ ভিড়। বরুণ এত ভিড়েও সুন্দরীকে হারিয়ে যেতে দিচ্ছে
না। যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব আজ অফিসে গিয়ে ক্যামেরার অনিন্দ্যকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তার একটা
নেড়িকে ধরে গল্পটা পাবলিককে খাইয়ে দিতে হবে। তার ব্যস্ততা রঞ্জুকে কিছুতেই খুলে বলতে পারল
না। চোখ বন্ধ করে রঞ্জু প্রণাম করছে।
এই অবসরে বরুণের মনে হলো, তার গল্পটা একটু অলৌকিক হয়ে গেছে। অর্থাৎ কোনো
মানুষের গল্প হয়নি। তা হোক, মানুষের মানুষগিরির গল্প বরুণের বলতে ইচ্ছে হয় না ।
মানুষেরও শুনতে ভালো লাগে না। মানুষের পশুগিরির গল্প তাও চলছে। তবে এর বাজারও পড়ে
আসছে। খুন ধর্ষণগুলো ঘটলেই বলছে সব নাকি মিডিয়ার তৈরি। সত্যি নয়। মানুষের দেবতাগিরির গল্প কস্মিন কালে ছিলও না, আর ভবিষ্যতেও
হয়তো হবে না।
এই সময় ভিড়ে একটু ধাক্কাধাক্কি হলো। ভগবানের পদ্মবেশ মিডিয়া সবাইকে জানিয়ে দিয়েছে। তবে ক্যামেরা ঢোকা মানা বলে ছবিটা দিতে পারছে
না। ফলত ভিড় আরো বাড়ছে। বরুণদের চ্যানেলে এসময় ক্যাপশন দিচ্ছে, শ্রীভগবানের পদ্মবেশ দর্শন করবার জন্য সারিবদ্ধ
দর্শনার্থীদের মধ্যে আছে পুনর্জন্মপ্রাপ্ত বিষধর সাপও। বরুণ দাঁতে দাঁত চাপল। সিওর এটা অনিমেষ! ঝোপ বুঝে কোপ মেরে দিয়েছে। সমবেত ভক্তমন্ডলী হরিধ্বনি দিয়ে ছুটে চলেছে, রঞ্জুও বায়না
ধরল সাপ দেখতে যাবে।
দাঁত খিচিয়ে বরুণ বলল, লেটস্ মুভ!
পরোয়া না করে নিমেষে ছুটে গেল রঞ্জু ভিড়ের মধ্যে।
জনস্রোত টপ করে গিলে নিল রঞ্জুকে। এবং পরিস্থিতি যেভাবে বদলে যায়, দুর্ঘটনা এড়াতে আধামিলিটারির সিকিওরিটি অ্যালার্ম
বেজে উঠল তীব্র শব্দে। সত্যি নাকি একটা সাপ বেরিয়েছে! একজন এরই মধ্যে পদপিষ্ট।
নিঃশ্বাস বন্ধ করে বরুণ ভাবল, এই মুহূর্তের একটা
অপ্রকাশিত গল্পের জন্য সে কি আর একটু অপেক্ষা করবে?
লিখেছিস বটে একখানা । ঝুরোগল্প ব্যাপারটা যে ঠিক কী অ্যাদ্দিন বুঝতে পারছিলুম না ।
উত্তরমুছুন