তরিবৎ
লীলাবৌদি
হাঁসফাঁস করছিল। যেভাবে শরীর অস্থির করে, পাগল পাগল লাগে এক সাইজ ছোট জামা পরলে,
কাঁধের কাছটা চেপে আসতে চায়, বুক ধড়ফড় করে ওঠে, সেইভাবেই।
সম্পর্কটা সাইজে
ছোট।
বেঁচে থাকতে পারে
না লীলাবৌদি। পালাই পালাই করে তাই। যত চেপে বসে তাকে সোয়ামির সন্দেহবাতিক, আটকে
রাখার রোগ।
সেলাই জানে তো,
সেলাই খুলতেও চায়, তাইই। কবে পারবে সব সেলাই খুলতে, কে জানে!
অস্থির অস্থির।
তাই, এক রাত্তিরে, জামাটা কাঁচি দিয়ে কুচি কুচি করে, নিজের চুলগুলোকেও। পাগলিনীর মতো।
সকালে উদোম গায়ের
ওপর ভোর রাতের কুয়াশার মতো সাদা শাড়ি জড়িয়ে সে কুল কলঙ্কিনী হলো। কপালে চন্দনের অলকা তিলকা কেটে, বেধবার সাজে,
খোঁচাখোঁচা চুল সে, একদিন পাড়ি দিল অন্য
কোনো দিকে।
পলাতকা লীলাবৌদির
জামাকাপড়ের মধ্যে গুটিয়ে ছিল সাপের মতো সুতোগুলো শুধু। লাল, নীল, বেগুনি। বোতামের
মতো চকচকে চোখে, অপেক্ষা করছিল ওর পোষা বেড়াল।
পোশাকের মাপ সে পালটে পালটে খেলতে জানে।
এখন লীলাবৌদি নেই
তাই সোয়ামির পাতের পাশে ঘুরঘুর করে।
অমিয়াসুন্দরী
জীবনকে বেঁচে নিচ্ছে এক পলা মাপের তেলের শিশির মতো। কাফ সিরাপের শিশি, কালচে, সরু ধারায় তেল
গড়ায়। দিন আনে, দিন খায় লোকের মাফিক, এক
পলা তেল রোজ রান্নার জন্য কেনে সে ওই শিশিটি দোকানে নিয়ে। এক পো চাল, অল্প আলু আর
পেঁয়াজের সঙ্গে সঙ্গে।
জীবন ওরকম,
চুঁইয়ে পড়ছিল, যতটা চোঁয়ানো যায় তেল, পুরোটা গড়িয়ে নিতে হয় কড়ায়ের ওপর। রান্নার
সময়। ডালে ফোড়ন দেবার পর, বেগুনের কুমড়োর ঘন্টটুকু সাঁতলাতে সাঁতলাতে।
বেঁচে বেঁচে
বেঁচে একসময় বাঁচাও ফুরিয়ে যাবে তেলের মতোন। বুকে কষ্ট, তিল থেকে তাল হয়ে ওঠা।
তেলের ধারা দেখতে
দেখতে অমিয়াসুন্দরী মরণের কথা ভাবে।
কদবেলের আচার
খেতে ইচ্ছে যায়। টিউমারটিও প্রায় ওই সাইজের।
গ্রীষ্ম বিকেলের
শীতল তক্রটি হব।
নবীনা নায়িকার মতো
নলিনীসুন্দরী ভেবেছে।
বেলের পানা
ঘুঁটেছে আজ। সারা সন্ধে মাখো মাখো বেলের গন্ধে। ঠান্ডা দুধের সঙ্গে সে বেলের পানা
মিশিয়ে এক দলা গুড় ঘুঁটে নিয়ে গেছে অলকবাবুর জন্য।
গ্রীষ্ম বড়
তেজালো আজ।
আর শ্রীফলের
গন্ধটিও তাজা।
অলকবাবুর মন
অন্যদিকে ধায়। শ্রীফল শ্রীফল করে।
তবু। ফল নয়, তক্র
হব। সরবৎ।
হু হু হেসে ভাবে
নলিনীসুন্দরী। টাকা সরিয়ে রাখে, নতুন গড়িয়ে দেওয়া দুল জোড়া আর বালাজোড়া, সরিয়ে
রাখে।
হাতপাখাটি নাড়তে
নাড়তে নথনাড়া দেয়, আর বলে, ওগো, আরো চিনি দেব?
জপিয়ে নিতে হবে
সমস্তটাই। বাবুটি বড় নাজুক। বড় হাঁদাগঙ্গারাম কিনা!
ভালো রে ভা্লো। এই তো বাঁচার তরিবৎ।
মর্মস্পশী। দু'বার পড়লাম। এই তো বাঁচার তরিবৎ। আসলেই।
উত্তরমুছুন--আলতাফ হোসেন। বহু আগে গুগলে ছিল 'রবীন' নামটি।
ধন্য বন্ধু
মুছুন