সিনেমা সিনেমা
আলো জ্বলেছিল, অথবা জ্বলেইনি। কখনো এমন হয়। সন্ধ্যে নামছে ইত্যঅবসরে। আকাশে
একটা একটা করে জ্বলে উঠছে অপ্রয়োজনীয় তারা। পাখিদের দিকে তাকিয়ে
অস্ফুটে কী যেন বলছিল মাধবী। সেই ১৯৬8তে
সে ছিল কুড়ি। সে বছরই রিলিজ করল চারুলতা। শ্যাম মন্ডলের রাসমঞ্চে
এলেন তিনি। ঘটি হাতা ব্লাউজ, চোখে ইয়া বড় রোদ চশমা, মুখে হাসি। খুব
নামডাক তখন তার। পুঁটিরাণী দেখেছিল আগুন, বৃষ্টি অথবা অন্য কিছু... পুঁটিরাণী নাম বদলে হলো মাধবী। সাজুগুজু, পমেটম, কাজল, রোদচশমা। সে তো ভরা বর্ষার সময়! নদী ফুঁসছে, প্লাবন। আর যা হয়! এক ঢ্যাঙাকে দেখে
তারও ভালো লাগল, ঢ্যাঙারও। মাধবী
নামের সাথে ঢ্যাঙাদের এক অদ্ভুত যোগ। তিনকুলে তেমন কেউ ছিল না, এক দূর সম্পর্কের পিসি ছাড়া। তিনিই চার হাত
এক করে দিলেন। ঢ্যাঙার সিনেমা ভালো লাগত, সিনেমার নায়ক, নায়িকা, মদ খাওয়া, মাতলামি সব। কিন্তু মাধবীর তা ভালো নাও লাগতে পারে! ক’দিনের
মধ্যেই চড়াই কাকের বসা বন্ধ হলো টালির ঘরের ছাদে।
ততদিনে মাধবী নির্মাণ করেছে– ‘যে ভালোবাসে ব্যথা বোঝে’, কুরুশ দিয়ে বুনেছে, কাপড়ে, সেও তো নির্মাণই! বাঁধিয়ে আনলো ঢ্যাঙা। ফোটোফ্রেম
জড়িয়ে খুব কাঁদল, হ্যাঁ পেটে টনিক
ছিল ভরপুর, সকাল গেল
সন্ধ্যে তখন হব। উঠে মাল ভ্যানিস।
ঘরফেরতা পাখিদের কিচিরমিচির শুনলে খুব রাগ হয় হয়তো তার। ‘ঘরে ফেরা’ শুনলে খুব হাসি পায়। ‘ঘর’ শুনলেও! হাসতে হাসতে মাটিতে লুটিয়ে
পড়ে সে, চোখ যায় মাটিতে শুয়ে
তারাদের দিকে, আরো দু’চারটে অপ্রয়োজনীয় ফুটে উঠছে একে একে। চোখ লাল হয়। গলার
সুর ফুলে ওঠে। ‘তারা’ বলে আবার খিলখিলায়। আসলে ফোকলা দাঁতের হাসিটা দেখা যায়, শব্দ কি কানে আসে?
ঢ্যাঙা চলে গেলে উদয় হলো এক বেঁটের। এ
না'কি দূর সম্পর্কের মামাশ্বশুর! রসিক মানুষ। কলাটা
মূলোটা রেশমি চুড়ি, সিল্কি শাড়ি, পেটিকোট সব আনে। সেও তো মানুষ। লোভ হয়। খুব লোভ। সে সময়
চারুলতা রিলিজ করেছে। ভূপতির অনুপস্থিতি ও
অমলের উপস্থিতি, দুটিই
প্রাসঙ্গিক খুব। চোখ ছোট করে সে ফেরিওয়ালাদের দেখে। লোভ বিক্রি করছে। পেছন
থেকে অমল ঠেলে, আর তার পৃথিবী দুলে ওঠে। অমল মানে ইয়ে ওই... দুধ ফুসলোয়, মামাশ্বশুরও। চারুদের বেরোনো হয় না। হঠাৎ কী যেন হয়! হাইফেন বড়, ফুঁপিয়ে কান্না।
আর ভূপতি, সরি ঢ্যাঙার
জন্য মন কেমন। চেষ্টা তো কম করেনি! একে বলা, তাকে বলা, শেষে ‘বাবা তারকনাথ’ সাতের দশকের শেষে, নিউতরুণ সিনেমা হলে। -তুমি
কি পাথর না’কি প্রাণ দাও প্রমাণ, আজ তোমার পরীক্ষা, ভগবান...
১৩ বছর পর ও গেছিল তারকেশ্বর, হেঁটেই। পা ফেটে রক্ত পড়েছে অনেক। শিবের মাথায় জল ঢেলেছে। আসেনি, আসে না যে...
সন্ধ্যের এ অশান্ত অবসরে সে এসেছিল সন্ধ্যে দিতে, প্রদীপ জ্বালতে। এ সময়েই তো... আলো জ্বেলে অপেক্ষা, ঠিক ৫১ বছর... কানে শোনে না, মুখ দিয়ে কথাও
নেই। ফোকলা দাঁত দিয়ে থুতু বেরিয়ে আসে। আজ একটু বেশিই অস্থির। পাখিদের দুষেছে, তারাদেরও। বুকের কাছে এক হাতে জড়িয়ে
রেখেছে - ‘যে ভালোবাসে, ব্যথা বোঝে’। চোখেরও তো বয়স হলো অনেক। আকাশটা কেমন সিনেমার পর্দার মতো। আরও এক অপ্রয়োজনীয় তারা ফুটলো সিনেমার পর্দায়। বুকে ব্যথা, তাই মাটিতে শুয়েই এখন সে হাসছে। চিনতে পেরেছে ঠিক। এ নিশ্চিত ঢ্যাঙাটা। বিড়বিড় করে
কি বলছে।
এ বড় সুখের রাত। এখানে রাতই সব, আলো না নিভলে আবার সিনেমা হয় না’কি! এতবড় আকাশটা জুড়ে যেন
শুটিং চলছে ধুম ধাড়াক্কা। ঢ্যাঙাটা ক্যামেরায় এক চোখ রেখে, দেখে নিচ্ছে সব, এবার - এ-ক-শ-ন-ন-ন...
পুঁটিরাণী চোখে বড় রোদচশমা, ঘটিহাতা ব্লাউজ পড়ে এগোলো শট দিতে...
অপেক্ষা শেষ। আকাশে অপ্রয়োজনীয় আর একটি তারা ফুটছে। সিনেমায় যেমন হয় আর কী! ক্যামেরা এখন
ফ্রেম করছে ওই কুরুশনির্মাণ– ‘যে ভালোবাসে, ব্যথা বোঝে’... জুমিং... ফ্রেম আউট আপাতত।
কাল সকালে একাধিক ক্যামেরা
ফ্রেম করবে এই দৃশ্য। ৫৩ বছর... কী টানটান স্টোরিলাইন হবে!
তমাল কি ভালই না লাগলো!জিতা রহো মেরে ভাই!
উত্তরমুছুনতমাল কি ভালই না লাগলো!জিতা রহো মেরে ভাই!
উত্তরমুছুন