কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

বিদ্যুৎলেখা ঘোষ

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৯




ড্রয়ার ও সুপারনোভা তারাটি

গাল পেড়ে যাচ্ছেন সকাল থেকে তিনি। এতদিনের জমানো রাগ ক্ষোভ একসাথে বেরিয়ে আসছে রজতবাবুর মুখ থেকে।

সেদিন ডাক্তারদের আশ্বাসের উপর নির্ভর করে প্রৌঢ়া স্ত্রীকে হাসপাতালে রেখে বাড়ি ফিরেছিলেন। পরের দিন মর্গ থেকে দেহ সনাক্ত করতে গেলে দায়িত্বে থাকা কর্মী দুজন ড্রয়ারগুলো খানিকটা টেনে মৃতদেহের পা দেখে সনাক্ত করতে বলে। ওঁর স্ত্রীকেও সেদিন আবার নতুন করে চিনলেন উন্মুক্ত পা দুটো দেখে। ড্রয়ার আরও খানিকটা টানার পর দেখা গেল পরনের ম্যাক্সি গুটিয়ে গিয়েছিল। ম্যাক্সিটা টানটান করে ড্রয়ার পুরো খুলে সুনন্দাকে দেখালো ওরা। হ্যাঁ এই তো চিরচেনা তার স্ত্রী সুনন্দার ঘুমন্ত মুখখানি। কেন এমন করে চলে যেতে হয় মানুষকে! ডাক্তার কি কিচ্ছু বুঝতে পারেনি! যে মানুষ আগের দিন দিব্যি কথা বলছিলো, হাসপাতালে বাইরে পড়ে না থেকে রজতবাবুকে বাড়ি থেকে একটু জিরিয়ে নিয়ে আসতে বললো, সেই মানুষকে পরের দিন মর্গ থেকে বার করে নিয়ে যেতে হচ্ছে! ছেলেমেয়ে কেউ কাছাকাছি থাকে না। তারা আসবে তারপর দাহ হবে, ততক্ষণ পর্যন্ত মৃত স্ত্রীর দেহ আগলে বসে থাকা।

এর মধ্যে মনে মনে এই ভাবনাও জাগছে, সুনন্দা যদি জানতে পারতো তার স্বামী ভিন্ন অন্য লোকেও তার গায়ের ম্যাক্সি টেনে ঠিক করে দিয়েছে, তাহলে সুনন্দা লজ্জায় আরেকবার মরে যেত। ছি ছি মুখ লুকানোর জায়গা থাকতো না বেচারির। আর এখন এসব ভেবে কী হবে, মানুষটাই যে আর নেই। তাই লজ্জাও তার  নিঃশ্বাসের সঙ্গে শেষ হয়ে গেছে। সন্তানের চিন্তায় দিন কাটতো তাদের। যৌনতা কতজনেরই বা অবশিষ্ট থাকে প্রৌঢ়জীবনে। তার উপর সুনন্দা ছিলেন খুব আটপৌরে সাধারণ গৃহবধূ। ছেলেমেয়ে হাইস্কুলে যায়, সেই সময় থেকেই ঠাকুর দেবতা বার ব্রত নিয়ে থাকতে পছন্দ করতেন। রজতবাবুও ওই সবের মধ্যে ধীরে ধীরে সুনন্দার ইচ্ছেতেই তৃপ্তি পেয়েছেন।

বিয়ের পর প্রথম প্রথম কত যে সাধ্যি সাধনা করে দাম্পত্য জীবনের ওই মধুর স্বাদ তার থেকে আদায় করতে হয়েছে, এখন ভাঙা বুকে সেইসব স্মৃতিগুলো নির্মম হাতুড়ির ঘা মারছে।

সুনন্দা নেই। ছেলেমেয়েরা পারলৌকিক ক্রিয়া সেরে আবার দূরে দূরে নিজেদের সংসারে। এদিকে হাসপাতালে খুন হয়ে গেছে মহিলাডাক্তার। প্রতিদিন খবরের কাগজে সন্দেহের তালিকায় থাকা ডাক্তারদের, আর কিছু পুলিশের হাড় হিম করা বিকৃত কীর্তিকলাপ বেরিয়ে আসছে। ওরা মৃতদেহের সঙ্গে যৌনকর্ম করেছে, ওরা মৃত বলে রেয়াত করেনি, মৃতদেহ ফুঁসে উঠে প্রতিবাদ করতে পারবে না, তাই হাসপাতালে ঘটতে থাকা  দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ওই মহিলা ডাক্তারটিকে আগে মেরে ফেলে তার কোমল নরম সুগন্ধী শরীরটার উপর কতগুলো পিশাচ... ওঃ আর ভাবা যাচ্ছে না…। সুনন্দা প্রৌঢ়া, কিন্তু মর্গে ড্রয়ারের ভিতরে তারও তো যৌনাঙ্গ অবধি গুটিয়ে গিয়েছিল ম্যাক্সিটা...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন