কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

অর্ক চট্টোপাধ্যায়

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৯




কয়েননামা

একটা স্ক্রিন গিলে ফেলার আগে আধুলির ধুলো ঝেড়ে নিচ্ছিল নিরাময়। তারপর দেখল, অপয়া পয়সাখান কোথায় যেন গায়েব হয়ে গেছে! আজকের রাতটা সন্ধ্যা থেকেই কেমন হারিয়ে যাচ্ছিল! এক টাকার কয়েনে মাঝে মাঝে যেমন সেলোটেপ লাগানো থাকে। যতদিন না পাওয়া যাচ্ছে সেই ১ টাকা। আধগলা সে ধাতব মুদ্রাকে কে বা কারা পুড়িয়ে ফেলেছিল? ইলেকট্রিক চুল্লি থেকে ল্যাজারাস হয়ে ফিরে এসেছিল সে মুদ্রা। কিছুটা গলে গিয়েছিল বটে কিন্তু তাও সার্কুলেশনে ছিল। হাত চালাচালি, এ পকেট থেকে ও পকেট, এ ওয়ালেট থেকে ও ওয়ালেট, দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিল। প্লাস্টিক সার্জারির মতো সে গলা পচা পয়সাখান কেউ একজন নিরাময়কে দিয়েছিল। সে নিশ্চিত ছিল এই পয়সাটা কেউ নেবে না। তাও একদিন রাতে নেহাতি অকারণে ওয়ালেট খুলে দেখলো, অপয়া গায়েব হয়ে গেছে।

কী যে কখন ব্যবহারযোগ্য থাকে আর কোন জিনিস কখন অচল হয়ে যায়, তা এখনো ভালো করে বুঝতে  শেখেনি নিরাময়। ওর ধারণা ছিল ওর ব্যাগ থেকে কোথায় আর যাবে আধগলা কয়েন, কিন্তু সেও চলে গেল! চিনিয়ে দিল টাকার স্বরূপ। টাকা মানেই তো ঘুরঘুর করবে, যতদিন না নিরাময় ক্যাশলেস ইকোনমি হয়ে উঠছে। ধুস এখনো তো UPI-ই ব্যবহার করে উঠতে পারলো না! ব্যবহার শব্দে গোলযোগ লেগে  আছে। নিরাময়ের বরং আরেকটা কয়েনের কথা মনে পড়ছিল যেটায় সেলোটেপ লাগানো ছিল। মুদ্রা এবং অর্থ সম্ভবত এভাবেই ভেঙে পড়ে! সে মালটা-ই বা গেল কই? কাকে দিল, নিলই বা কে?

ডিফেক্টেড খুচরো পয়সার মতোই হারিয়ে গেল রাত। সন্ধ্যা হতে না হতেই দিনের আলো ফিরে এল। নিরাময়ের মেধার জীবনে মৃত্যুর দ্বিত্বের মত ঐ সেলোটেপ লাগানো কয়েন আর তার ভাই আধা-গলা কয়েন। কিন্তু ওরা মৃত্যুর চুল্লি থেকে ফিরে এসেছে বাণিজ্যে। নিরাময় ফিরতে পারছে না। সারাদিন সারারাত মাথার ভিতর চুল্লি জ্বলছে। এতদিন যাকে চিতার আগুন ভেবেছিল এখন মনে হচ্ছে তা চিন্তার আগুন। তার চিন্তার জগতে কি তবে মৃত্যু ঘটে গেছে? সেলোটেপ যেমন নিমেষেই পুড়ে যায় আগুনে? ডিফেক্টেড কয়েন সার্কুলেশনে ফিরে আসে অথচ অসম্ভব তীক্ষ্ণ মেধা নিয়ে মানুষ এক মুহূর্তে কোথায় যে চলে যায়, কিছুতেই আর ফিরে আসে না! তাও তো কিছু মুছে যায় না। শেষ হয় কিন্তু মুছে যায় না। চিন্তার প্রাখর্য চিতার আগুন হয়ে জ্বলতে থাকে কারুর না কারুর মাথায়। যেমন এখন নিরাময়ের মাথায় জ্বলছে। কত ধুলো মাখা আধুলি সে আগুনে তাপ সেঁকে নিচ্ছে। এরপর অন্য কেউ অন্য কোনোখানে!

এখানেই শেষ। পরমুহূর্তেই একটা স্ক্রিন গিলে ফেলে নিরাময়কে। রাতের প্রেতশহরে ট্রাম চলতে থাকে। মাল্টিভার্সের ট্রামকে থামায় কোন সরকার? কার ঘাড়ে কটা মাথা! ছায়াট্রামে করে মাঝরাতে বাড়ি ফেরে সেলোটেপে মোড়া আর আধগলা ধাতব মুদ্রার জড়মন্ডল।

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন