কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

জয়িতা ভট্টাচার্য

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৯




মি টু

"বড়ো সাইজ হলেই রস বেশি তা নয়। ছোটোতে রস বেশি হয় অনেক সময়"। ঘর্মাক্ত পর্ণার ক্লান্ত জবাবে মিশিকালো দাঁতে হাসল ফলওয়ালা লোকটা। আপেল ৬০/-টাকা, হাফ ছোটো ৫০/-কিলো। অতএব রাস্তা পেরিয়ে এপারে পর্ণা। গোল লাল ছোটো ছোটো আপেল। কিনে ফেলে হাফকিলো। মাঝে কালো জলভরা কাদাটে খন্দ। পথ। হাফ গেরস্থ পর্ণার হঠাৎ মনে পড়ে মূর্তি নদীর কথা। স্বচ্ছতোয়া। ওপারে গভীর অরণ্য।

মুখ্যমন্ত্রীর হাসিমুখ সহ সুলভ শৌচালয় পেরিয়ে পর্ণা পৌঁছল তার টু বি এইচ কে ফ্ল্যাটে।

টেবিলে কাচের বোলে যত্নে রাখে ওদের। পাশে কলা। কাঁঠালি।এখন নরম। একটু ঘেঁষাঘেঁষি হয়ে গেল। পর্ণা গান ছেড়েছে ফ্ল্যাটময় ছড়িয়ে পড়ছে সুরের তরঙ্গ এফ এম অন করে ছাল ছাড়ায়। শায়া আর অন্তর্বাস ঝুলে পড়ে রডে। শাওয়ারের জল পড়ে। মনে ভয় কী যেন। গুন গুন গান। পর্ণার বস আদিত্য রাতে আসবে।

এবাড়িটা শান্ত। আর কেউ বোধহয় থাকে না। ওরা পাশাপাশি বসে আছে। ছটা আপেল চারটে কলা একছড়া আঙুর।

ওরা জন্মেছে অন্যের খাদ্য হবে বলে। সেই দূর দূরান্তের পাহাড় থেকে সমতলে আসতে আসতে অনেকে হাত দিয়ে়ছে। পাশে যারা তারা অন্য গাছের, শেষপর্যন্ত অবশ্য একই পরিণতি। পিট পিট করে দেখছে। এখন আর নগ্ন নেই। ভুর ভুরে গন্ধ, স্বচ্ছ নাইটি। সুরেলা বেল বাজতেই লম্বা চওড়া পুরুষ ঢোকে। ওরা চেয়ে আছে। কী হয়! ঠোঁটে হাল্কা চুম্বন। এগিয়ে আসছে সুঠাম লোকটা। দাঁত বসিয়ে দিয়েছে নিটোল শরীরে। লাল টুকটুকে আপেলের গায়ে।

মেয়েটা আড়ষ্ট। বোধহয় প্রথম। লোকটি আপেলে কামড় মেয়েটা নার্ভাস। নানা কথা বলছে। অপ্রাসঙ্গিক। অফিসের কথাও। লোকটি ঘুরে ঘুরে দেখছে ঘর। রান্নাঘরের থেকে সুবাস ফলের গন্ধ ছাপিয়ে মসলার। আপেল সতর্ক। রাত বাড়ছে। ক্রমশ বাইরের আওয়াজ কমছে। রাস্তায় মিটমিট আলো। একটা মথ উড়ছে। এ দেওয়াল থেকে সে দেওয়াল। হঠাৎ বোলের ভেতর। একেবারে গায়ে। গা ঘিন ঘিন।

মেয়েটা সরতে চাইছে। ভুল করে ডেকেছিল... ভুল হয়ে গেছে... জড়িয়ে ধরবে এবার। মেয়েটা এতটা জানে না। এদের মতো জেনে শুনে আসেনি। এতটা ভাবেনি।

ওরাও ছোটোবেলার হিমেল হাওয়ায় অন্যরকম ভেবেছিলো। মেয়েটা রান্নাঘরে এসে কান্না চাপছে। খাবার চাপা দিচ্ছে।

একটা মাত্র চাকরি একটু বেশি মাইনে একটু ভালো করে বাঁচার লোভে... সবুজ পাতার আবরণে ছায়াবৃতা... থাকা হয়নি ওদের। বৃন্ত থেকে উৎপাটিত  হওয়া নিয়তি... মেয়েটা প্রতিবাদ করছে মেয়েটা সমর্পণ করতে চাইছে না, শেষ মুহূর্তের পেছিয়ে আসার আর্তনাদ। "না আআআ..."

দরজাটা খোলা আছে। এখন মধ্যরাত। বিছানায় কান্না, এলোকেশ পরাজয়ের চিহ্ন। এক কোণে পড়ে আছে আধখাওয়া এঁটো আপেলটা।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন