কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

বিমান মৈত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২৯




টার্নওভার

জয়ন্ত বেরিয়েছে অনেক সকালে, সরযুর ফোস্কা পড়া  চায়ের দোকানে ভিড়, বৃষ্টি নেমেছে -- ঋতুর স্বাভাবিক ক্ষরণ, পাখিসব গাছের আশ্রয়ে, তাদের কম্পিত উদ্বেগ, জল থামার কোন লক্ষণ নেই, মাটি আর জলের সংগমে সবুজ প্রাণীকুল বাড়ে। বিস্কুটের কুকুরেরা একটাও কাছেপিঠে নেই। এইসকল  এস-বিস্কুটেরা এখন কী করবে, এ পথে ঘোড়া আজকাল আসে না। আসবেন সুশীলকাকু, এই এলেন বলে, যে কালে তার বিস্তর জমিজমা ছিল, তখন অনেকটা বেঁটে ও স্বাস্থ্যবান। চায়ের ব্যবসা, অথচ নিজের চারধারে একটি নো-টি জোন। মাথায় চুল কিছু কম, টাকের বাজার রমরমিয়ে চড়ছিল, তৎসহ কালোচুল ফিকে হবারও। ফিকে চুলকে জব্দ করার নানান ফিকির আজকাল সর্বত্র কিনতে পাওয়া যায়, আর টাক বড় বালাই। তাই সে তাকে মেরামত করার যথাযথ চেষ্টার কোন ত্রুটি রাখেনি। হাতেগোনা কিছু চুলগুচ্ছ মাথার সামনে এদিক সেদিক করে ছিটানো। আমরণ তাকে বাঁচিয়ে রাখার প্রয়াস টের পাওয়া যায় -- নবজাত চুল গজানোর বিজ্ঞাপনের পেপার কাটিং আর গাদা গাদা লিফলেটের থৈ থৈ -- সুশীলকাকুর ঘরে ঢুকলেই।

ইতিমধ্যে তিনি এসে যান, গোনা গাঁথা লম্বা চুল, যত্ন আর সতর্কতার চূড়ান্ত জ্ঞাপন; উদভ্রান্ত আর বিক্ষিপ্ত, অবশ্য এখন নয়, বরং সযত্নে টেরিকাটা কপাল ছাড়িয়ে মাথারম্ভেই একটা অপ্রাকৃতিক গর্ত, তাকে ভরাট  করে তবে তার নিশ্চিন্তি।

কাকু‌র অ্যাসিস্ট্যান্ট জয়ন্ত। এসেই তার দিকে তাকিয়ে সরযুকে বললেন, "বড় ভাঁড়ে চা ও দুটো ঘোড়ার বিস্কুট"। হ্যাঁ জয়ন্তবাবু, বেরিয়েছ তো অনেক সকালে, এর মধ্যে ক’টা বাড়ি কমপ্লিট হল, মানে ক'টা বাকি রইল? আর একটু জিরিয়ে, ক'টা আদায় হল, টাকাপয়সা? জয়ন্ত বলে, হনলুলু। হনলুলুর অর্থ আমরা সঠিক জানি না, কিন্তু যারা চারপাশে ছিল, প্রত্যেকের মুখে একপ্রকার খই খই হাসি ছড়িয়ে পড়ে। ইতিমধ্যে দুটো  ফ্রক, বাঁ হাতে বই-এর গোছ, গতরের মত শরীর দিয়ে আগলে রাখা: বাবু, মান্থলি ফুরিয়ে গেছে কুড়িটা  টাকা দাও।‌ এরই মধ্যে? হ্যাঁ রে কি বলিস, এই তো সেদিন... কথা শেষ হওয়ার আগেই দুটো হলুদ মান্থলি টিকিট সুশীলের চোখের সামনে ভাসতে থাকে।

সুশীল জয়ন্তর মুখের দিকে তাকাল।  জয়ন্ত কিছু বলতে গিয়েও ঢোক গিলে একখানা কুড়ি টাকার নোট আর দুটো টিফিন আধুলি দিয়ে দেয়। অথচ ওরা কে সেটা নিয়ে সঞ্জয়ের বক্তব্য পাড়ার লোক বিশ্বাস করে না এবং এ নিয়ে চর্চারও শেষ নেই।

এ = জয়ন্ত, চব্বিশ বৎ; বি = সুশীল বৈরাগ্য, সাতান্ন বৎ; সি =\= ঘোড়ার বিস্কুট জানা নাই বৎ; ডি = সুশীলের চেয়ে আটত্রিশ বছরের ছোট পনির-বৌ; এক চুমুকেই চোঁয়াঢেকুর ওঠে সুশীলের। এগুলো চায়ের ঘরোয়া আসরের আসাম-দার্জিলিং ব্লেন্ড।

মানুষের বেদম কুয়াশায় ফ্রক দুটো হারিয়ে যায়।

সঞ্জয়ের মনে সেই বিখ্যাত গান বাজে, "এই রোকো, রোকো রোকো, পৃথিবীর গাড়িটা থামাও, এ গাড়ি যাবে না আমি অন্য গাড়িতে যাব"

গান থামেনি, গাড়িও নয়।


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন