কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

জয়িতা ভট্টাচার্য

 

বর্ণমালার সাতকাহন

 


পর্ব ১৭

 

ছিন্ন শিকল পায়ে...

 

একটা সময় ছিল যখন মনিমেলা হতো বিকেলে। একেবারে শৈশবে অস্পষ্ট স্মৃতিতে এখনও উজ্জ্বল হয়ে আছে সেই অপরাহ্নের মনিমেলা। অঞ্চলের সব শিশুরা জড়ো হতো থাকতেন বড় দাদা ও দিদিরা, হাল্কা শারীরিক কসরত, ব্যায়াম, নানা মজাদার খেলা করাতেন, সবই সমবেত ভাবে। সবাই মিলে একটি ঘরে বসে গল্প শুনত, ছবি আঁকত, বিশেষ দিনে মার্চপাস্ট খুদে শিশুদের নিয়ে। মনিমেলা মানুষের মধ্যে ঐক্য স্থাপনের ভিত্তি ছিল। পরস্পরের ভেতর আত্মিক যোগাযোগ সৃষ্টির, আমিও ছোটবেলায় করেছি কিছুদিন। বিকেল হলেই মনিমেলা। নাটক হয়েছিল "পিলপিলি সাহেবের টুপি" গোর্কি সদনে। প্রসঙ্গত জাতিয়তাবোধ ও ঐক্য ভাবনার অনুসারী ছিল "ব্রতচারী" মনিমেলার ভাবনা হয়ত সেই এস্তক। ব্রতচারীর প্রতিষ্ঠাতা গুরুসদয় দত্ত। আমার দিদিমা ছিলেন তাঁর ছাত্রী। দীর্ঘদিন তিনি যুক্ত ছিলেন ব্রতচারীর দলে বাল্যকালে, এবং সেই ট্রেনিংএর ফল আমরা দেখেছি তাঁর দীপ্ত চরিত্রে, সংকটে দৃঢ় থাকার মধ্যে, সবাইকে নিয়ে চলার মধ্যে, নিজের থেকে পর হিতের ভাবনার মধ্যে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। আমাদের ছোটোকালে মনিমেলায় বিকেলের পড়ে আসা রোদে আমরা গাইতাম "উঠো গো ভারত লক্ষ্মী...", "চল কোদাল চালাই ভুলে মানের বালাই ছেড়ে অলস মেজাজ হবে শরীর ঝালাই”, "ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা আমাদের এই বসুন্ধরা...",একদিকে কালো  জল পুকুর আর একদিকে দুটি বড় বড় বকুল গাছ, মাঝে খুদে খুদে বিশ ত্রিশটা বাচ্চা সার বেঁধে দাঁড়িয়ে গাইত এসব। অতক্ষণ দাঁড়িয়ে, সেটাই ছিল নিয়ম। আজও তার রেশ থেকে গেছে, যখন গাই, ওমা তোমার চরণ দুটি বক্ষে আমার ধরি..." বুকের ভেতর কাঁপন, চোখ দিয়ে অজান্তে অশ্রু গড়িয়ে যায়।

এখন ভারতবর্ষ বদলে গেছে। এখন শিশুরা একা একা বড় হয়। মা বাবারা চান ছোট শিশুটি কখনও দুষ্টুমি করবে না, একটা নম্বরও কম পাবে না, ঘড়ির কাঁটার মতো তারা বড় হবে তাদের চোখের সম্মুখে। দেশে অপরাধ বেড়েছে। লোভ লালসা বিচ্ছিন্নতাবোধ বৃদ্ধি পেয়েছে। মা বাবার সঙ্গে উচ্চবিত্ত ঘরের শিশুরা সাঁতার শিখতে যায়, খেলা শিখতে যায়, সঙ্গে ফিরে আসে, নিয়মের নড়চড় নেই। ক্রমশ স্বার্থপরতা স্থায়ী বাসা করে নিয়েছে মনের চিলেকোঠায়। আমার ছোটবেলায় গ্রামের ছেলেদের সঙ্গে পথে খেলা করেছি, আমরা তারপর আর আমাদের সন্তানদের এই অভিন্নতার শিক্ষা দিতে পারিনি, চোখের আড়াল করতে পারিনি, উচ্চ নিচ বৈষম্য বেড়েছে, কমেনি। সমাজ অনেকটা পাল্টে গেছে অনুপ্রবেশে।

ঋতু তার নিজের মত পরিবর্তন হতেই থাকে। পাখি আবার ডানা মেলল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে। আমাদের চারটি মেয়ে বাকি সব ছেলে। তারমধ্যে দুজন আসত না। আশুতোষ বিল্ডিংএ তিনতলার বাঁদিকের ঘরে ক্লাস হতো। আধো অন্ধকার করিডর। প্রাচীন কাঠের লিফ্ট, সিঁড়ি বিশাল উঁচু উঁচু ঘর। রাজনীতি, লেখা,  কফি হাউসে এবং জলের পাশে কেটেছে বেশি সময় যত না ক্লাস। প্রাথমিক যৌনতৃষ্ণা মিটে মানসিক বন্ধন ক্রমশ আলগা, কথায় কথায় রুচির ফারাক ভাবনার ফারাক, বর্ষার জলচ্ছাসের মত বেড়েই চলেছে, যেভাবে জ্যোৎস্নাকে দিন ভেবে কাক ডেকে ওঠে সেভাবে অবোধ মন প্রতিটি যৌন মিলনকে দাম্পত্য ভেবে ওড়াউড়ি শুরু করে একটু পরে আবার নিজের ভ্রান্তি বুঝে নিস্তরঙ্গ গ্রামের অন্দরের অকিঞ্চিৎকর সরু নদীটির মতো কোনোমতে গতি বজায় রাখছে।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্দরে অন্ধকার তখনও লুকিয়ে ছিল। মাস্টার্স পরীক্ষার ফাইনালে ইনভিজিলেটররা সংখ্যালঘুত্বের সংকোচে আসতেন সংকুচিত হয়ে। আমাদের একজন ব্যাচমেট আমাদের তৎকালীন  এইচ ও ডি র নবাবপুত্র ছিল। প্রতিদিন পরীক্ষার হলে তার জন্য সব নিয়ম নাস্তি। প্রতিদিন বিভাগের প্রফেসররা এসে তার সব অসুবিধে সর্বতোভাবে দূর করার প্রয়াস করতেন মৌখিক সহায়তা থেকে লিখিত। আমরা ওই চার ঘন্টায় একেকটি বৃহৎ সংহিতা লিখে ফেলতে খাবি খেতাম আর কড়িকাঠের দিকে তাকিয়ে থাকতাম। বস্তুত উচ্চ এম কম ফাইনাল পরীক্ষা ছাড়া আর কোনও পরীক্ষা অতোটা কঠিন লাগেনি। হিসাবশাস্ত্রে সাম্মানিক নেওয়ার পরে এম কমে ফাইনাল করেছি বাজারতন্ত্র তথা মারাকেটিং ম্যানেজমেন্টে কারণ ওই বিষয়টি অনেক বেশি আকৃষ্ট করেছিল আমায়। তবে আমার ছাত্রজীবনে সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের দিনগুলো আলাদাই ভূমিকা নিয়েছিল। একটি কাদার তালকে কুমোরের চাকে ফেলে ফেলে যেন ছাঁচে ফেলার  কাজ হলো। নাটকের রিহার্সাল চলত। ছাত্র জীবনের মাধূর্যই আলাদা।

সেন্ট জেভিয়ার্সএ পড়াকালীন অনেক গানের শো হয়েছে, গান, গীটার, সবুজ মাঠ... ফাদার ফেলিক্স...

কলেজ থেকে বেরিয়ে অপর পারে সুপ্রীম বাড়িটি নিচে সিঁড়ির নিচের ঘুপচি চা দোকানে ভিড় করতাম। বন্ধুরা স্বমেহন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ মত বিনিময় করত, কয়েকটি ছাত্রী পকেটমানির জন্য শুয়ে রোজগার করত। একবার আমরা ডি.কে. লোধের সাক্ষাৎকার নেবার পরিকল্পনা করেছিলাম। বলা বাহুল্য সেন্ট জেভিয়ার্স ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বাংলা শব্দ ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে। যে জন জানে সেই শুধু জানে। এসব শব্দ একান্তই সাংকেতিক এবং গোদা ভাষায় যাকে প্রাচীনরা স্ল্যাং বলে থাকেন।

পার্ক স্ট্রিট সেই যে আপন হলো সেই নস্টালজিয়া আজও। ফ্রি লানস হিসেবে লিখতাম একটি জনপ্রিয় সংবাদপত্রে। মাঝে মাঝে সেই সূত্রে কলেজ ও কাজ ফাঁকি দিয়ে শিয়ালদহ থেকে ট্রেন চড়ে চলে যেতাম অজানা কোনো ছোট্ট স্টেশনে রিপোর্টার হয়ে। দূর গ্রামের আলপথে হেঁটে গেছি। আক্ষরিক অর্থেই চাষা ভুসোর বাড়ির মাটির দাওয়ায় বসে মুড়ি বাতাসা জল খেয়েছি। শহরের মেকি ভদ্রতা তখনও গ্রাস করেনি তাদের।

রঙিন ছিল দিন। রাত কাটত পড়াশোনায়। কখনও জৈবিক অভ্যাসে।

কিন্তু দিন এমনি করেই কাটল না।

আসলে, আমরা এত নিমজ্জিত ছিলাম ব্যক্তিগত ক্রোধ, সমস্যা, অভিমান, আনন্দ-উল্লাস সব কিছু নিয়ে, আমরা খেয়ালই করিনি যে প্রথম গ্রাসটা তুললে ভয়ানক বিষম লাগে তাঁর। জানতেন বাবা, আমার শশুর।

ততদিনে সাংসারিক অশান্তি চরমে। ঠিক তার ছয়মাস আগে, এক প্রখর গ্রীষ্মের দুপুরে অল্প বয়সের তীব্র খিদে পেটে গৃহে প্রবেশ করার সঙ্গে সঙ্গে আমার শাশুড়ি বললেন, "এক দানা চাল নেই। কিছুই নেই, তোমরা বাপু আলাদা এবার থেকে"। অতিশয় যত্নে প্রতিপালিত কিশোরীটি সেই মধ্যাহ্নে তিন মহলা বাড়িটির  ঘুলঘুলিটি তাকিয়ে দেখল চড়াই পাখিদের সংসার থেকে ঝড়ে পড়ছে ছেঁড়া পালক। তবুও জীবন অদম্য।

যেদিন একটি জ্বরের ট্যাবলেট খেতে গিয়ে গলায় আটকে রইল তিনদিন সেদিন বাবার মনে হলো আমাকে বলার কথা। প্রথম কাজটার সুবাদে বেশ কিছু প্রখ্যাত ডাক্তারের স্নেহের পাত্রী হয়ে গেছিলাম, আরো অনেক সেলিব্রিটি ধরনের লোক যাঁরা প্রাথমিকভাবে ভাবতেন ওখানকার জনসংযোগ ম্যানেজার আমার সক্রিয়তা ও স্বেচ্ছায় নানা কাজে সহায়তা করার কা্রণে। বাবাকে নিয়ে গেলাম ডঃ কল্যাণ চৌধুরীর কাছে। বায়োপ্সি  প্রভৃতি যা যা হয়, না, সঙ্গে আর কেউ যায়নি কারণ বাবার মস্তিষ্কের টিউমার এবং ব্রংকোনিউমোনিয়া, ক্রমশ একেবারেই অস্বাভাবিক স্তরে। বায়োপ্সির পরে ডাক্তারবাবু বলে দিলেন। তারপর দিন কমতে লাগল। বাড়তে লাগল যন্ত্রণা যার কোনো উপশম করতে পারিনি আমি। সংসারের দণ্ড উঠে এল সেই কাঁচা যৌবনে। স্বাধীনতা মুলতুবি রেখে সংসার সমুদ্রে ঝাঁপ। সেখানেও নানা ঘটনার মালা। ক্রমে স্বেচ্ছা নির্বাসন, লেখা বন্ধ, নাটক বন্ধ, ছাত্রজীবন সাময়িকভাবে ছেদ পড়ল তখন সদ্য সরকারি চাকরিতে পা।

এরপর কেটে গেছে অনেক বছর। এবং অনেক বছর পর এমনই এক কালবৈশাখি ঝড়ের মাঝে পার্ক স্ট্রিটে মুখোমুখি হয়ে গেলাম জীবনের। সেই যে জীবন, আবেগ আর উত্তেজনার, অনেক কিছু করে ফেলার, চারদিকে গমগম করে বেজে উঠল "বিকজ আই লাভ ইউ টু মাচ..."লাইফ...। সেইসব প্রাচীনতার সুবাস নিয়ে যুবক থেকে বৃদ্ধ হয়ে যাওয়া ওয়েটার, পার্ক স্ট্রিট, লাল জলে ম্যাপল পাতা ভাসার গান, একাদেমির সিঁড়ি, সিগারেটের ধোঁয়া, চকিত চুম্বনে জীবন আরক্ত হয় পুনর্বার। অক্ষরের মালা গাঁথা হয়, আবার শুরু হয় পড়াশোনার পথে যাত্রা, এই পর্বে লেখা মুখ্য হয়, তবু যেখানেই যাওয়া যাক গোধূলি একই রং, মায়ের ঘাটে বসে একা একা দেখি প্রবাহ, সমস্ত আবর্জনা জীবনের, যত বাহুল্য তীব্র স্রোতে ভেসে যাচ্ছে, দূরে স্টিমারের চলাচল, মাঝ বরাবর ঠিক যেখানে লালচে রং পড়ে আছে, ওখানে গভীর, শান্ত উদ্বেগহীন জীবন। জীবন তার নিজস্ব স্রোতে ঠিকই পথ করে নেয়। দিন থেমে থাকে না। চক্রাকার সময়।

সেই যে পঁচিশ বছর বয়সে আমার বৈবাহিক পিতা সংসারের চাবিটি অনায়াসে সঁপে দিলেন, একবারও ভাবলেন না আমার অপরিণামদর্শিতার সম্ভাবনা, অভিজ্ঞতার কথা, পুত্র নয় সে বাড়ির সমস্ত ভার অর্পণ করে তাঁরা দিব্যি চলে গেলেন কয়েক বছরের ভেতর। যাওয়া হলো না আমার কোথাও আর। পায়ে পড়ল বেড়ি। কিন্তু আবার বহু বছর পরে সে শৃঙ্খল আপনি আলগা হয়ে পথ করে দিল, আরো একবার বাঁক বদল হলো। তবে তার আগে আছে অনেক রাত, অনেক কুয়াশার কথা দিন পেতে গেলে যা সহন করতেই হবে।

এর মধ্যেই একদিন খান পঞ্চাশেক লোক ঘিরে ফেলল বাড়ি। আমার স্বামীকে তাদের হাতে ছেড়ে দেবার জন্য। সে রাত কিভাবে উদ্ধার হয়েছিল তা জীবন জানে। কুকীর্তির খেসারত দিতে নিচে নেমে জোড়হস্ত তার বৃদ্ধ মা বাবা এবং পেছনে আমি তিনজন তাদের মুখোমুখি এবং উনি দোতলার ঘরে পেছনের ঘরে লুকিয়ে রইলেন। তারপর আরও বহু বার, নানা কীর্তির সাক্ষী হতে হলো, হয়ত বাঁচার মন্ত্র ছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধো অন্ধকার লবি, চারঘন্টা পরীক্ষার পর আঙুল ব্যথা, অথচ যুদ্ধ জয়ের ফিলিং, সেন্ট জেভিয়ার্সের সবুজ মাঠ, গীটার, কবিতার বইগুলো... স্রোত। জীবন আমাকে  অনেক বিষ দিয়েছে, তবু ধ্বংস করতে পারেনি এখনও।

সেই দুর্দম কষ্ট লাঘব করার নিষ্ফল প্রচেষ্টায় রাত ভর বুকে হাত বুলিয়ে দিতে গিয়ে শ্রী রামকৃষ্ণের কথা মনে হতো। তাঁকেও এই কষ্ট  সহ্য করতে হয়েছিল। নাম করতাম। জপ করতাম। যদিও বেদনা এতে কমে না।  কষ্ট করে আয়া রাখা হয়েছিল। চাকরি করে ফিরে শুনতাম তাকে ছুঁতে দেননি "বউ এসে দেবে"...এই মা, একদিন সদ্য বিয়ের পর ধ্বংসস্তুপের মত বাড়িটি বিদ্যুৎহীন এক সন্ধ্যায় একাকী সেই বাড়িতে এই বিবাহ হেতু মাতৃদেবী গ্রাম্য রীতিতে একতাল সিঁদুর মেখে এলো চুলে ভয় দেখানো, একটি প্রায় কিশোরীর মনের সেই ভয় সেই আতংক নিজের মা বাবার জন্য সেই সব কান্নার কথা।

তারপর বেশিদিন বাঁচেননি। একরাতে হাত জোড় করে মাফ চাইলেন। একদিন দুপুরে ইসারায় গান গাইতে বললেন, গাইলাম, "একা মোর গানের তরী ভাসিয়েছিলেম..." কিন্তু বেশি গাইতে পারিনি গলা টিপে ধরেছিল ভয়ঙ্কর বেদনা আর চোখ বেয়ে জলের ধারা। এক সন্ধ্যায় মা গেলেন। জীবনে তীব্র আঘাত করে মৃত্যু। তেমন আর কিছুতে নেই। কত রাত ঘুমোতে পারিনি। কতদিন ধরে সেই অবসাদ। অবচেতনেই কাঁচের গাড়িটা ধরে বলেছিলাম "আবার এসো মা", ঠিক এই কথাটা, না, কিছুই ভেবে বলিনি, কিচ্ছু নয়, হৃদয়ের অন্তস্থল থেকে উঠে আসা একটি কথা।

কোনো গল্প নয় উপন্যাসের মতো ব্যাপক নয় অথবা মেলোড্রামার অনেক গুণ বেশি এই নগ্ন জীবনপাঠ। পাতায় পাতায় যার সম্ভাবনা অথচ এক ঘেঁয়ে বিষণ্ণতা পরের পাতা ওল্টাতে অনীহা কিন্তু পড়তেই হবে আর যে কোনও পাতায় অপেক্ষা করে থাকা চমক। এভাবেই মৃত্যু পথযাত্রী সারাজীবন বঞ্চিত ব্যক্তিত্বহীন  এক নারীর সঙ্গে সারা জগতের আপত্তি উপেক্ষা করে হৃষিকেশে একদিন খরস্রোতা অলকানন্দার পাড়ে আমরা দেখলাম হিমালয়ের উচ্চতা সৌন্দর্য আর নিঃসঙ্গতা, সমতলের খুঁটিনাটি যেখানে কী অর্থহীন হাস্যকর হয়ে যায়! যতবার হিমালয়ের কাছে ততবার মলিন মন শুদ্ধ হয়ে গেছে। আমার শাশুড়ি ভয় পেতেন মাথা নিচু করে স্বামী শাশুড়ির অত্যাচার না সইলে ঘর ছাড়া হতে হবে, আজ মৃত্যুর দরজায় দাঁড়িয়ে এই বিপুল পর্বতের দিকে চেয়ে সূর্যের আলোয় তাঁর সব ভয় আর গ্লানি মুছে গেল। তাঁর সান্নিধ্যে অভাব সারাজীবন অনুভব করেছি, মা নয়, শাশুড়ি নয় একসময় দুজন সহচরী হয়ে গেছি। দুটি হতভাগ্য নারী। তফাত কেবল এই দ্বিতীয়ত জন মেনে নেয়নি নিয়তি "to be or not to be that is the question:whether 'tis nobler in the mind to suffer the slings and arrows of outrageous misfortune.

Or to take Arms against a sea of troubles

And by opposing end them:to die,to sleep."

(ক্রমশ)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন