কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

সোমবার, ১৪ অক্টোবর, ২০২৪

প্রণব চক্রবর্তী

 

সমকালীন ছোটগল্প




এক খাবলা কমলীর আকাশ

মন বিষয়টা বড়ই গোলমেলে। কখন কি ভাব উথলে উঠবে বলা খুবই মুশকিল। যেমন এই হাড় জিরজিরে সন্ধ্যের ছাদে দু-এক পা এদিক ওদিক করতেই কমলীর বেগ উঠলো। অন্ধকারের এমন শুনশান ছাদে হঠাৎই চাগিয়ে উঠলো অন্ধকারের এক ঘনবেগ। না, মোতাবেগ, হাগুবেগ একেবারেই নয়। অবিয়ে, অপ্রেম, অরক্ষণীয়া কমলীর ৩৮ শরীরের এক ধাতুবেগ। বরং একে নখাবেগ বললেই সহজে বোঝানো যাবে। বাপ মরার পর সবাই যখন বাপের মুদিখানা দোকানটা দেখিয়ে যেমন তেমন এক পাত্র ধরে বিয়ে দিয়ে দিতে খেপে উঠেছিলো, কমলী সটান জানিয়ে দিয়েছে, বিয়ে সে করবেই না। বাড়িতে বুড়ি মাকে একা রেখে সে কোথাও যাবে না। বাপের দোকান সে নিজেই চালাবে। ব্যাস, সেই থেকে কমলী এই দোকান আর বুড়ি মা নিয়ে লড়ে যাচ্ছে। আর কেউ বিয়ে বিষয়ক দালালী করতে এ তল্লাটে ভেড়ে না। দোকানটা সে যত্ন নিয়েই করে। গ্রামের দরিদ্র মানুষেরা ধারে দেনায় তার দোকানে জড়িয়ে থাকায়, খরিদ্দারও দোকান খুললেই পায়ে পায়ে ভিড়ে দাঁড়িয়ে যায়।

কমলী কালো, কাঠের উনুনে রান্না করা ভাতের হাঁড়ির তলাপোড়া কালির মতো কালো, মুখের ওপরের পাটির দাঁতগুলো কিছুটা ঠিকরে বাইরে বেরিয়ে থাকায়, তার মুখটা হ্যাংলা নায়কের হা-কোরে তাকিয়ে থাকার মতো সুন্দর নয়। তাই বিয়ে দিতে পারেনি তার বাপ। কমলী এখন বিয়ের কথা শুনলেই মুতে দেয়। কিন্তু বেগ বড় বালাই, বিয়ে না করলে তো আর মৈথুনেচ্ছা সিন্দুকে তালা আটকে রেখে দেয়া যায় না, তাই নখাবেগেই প্রীত থাকে কমলী। ভালোবাসার জানালায় মোমবাতিও ধ্রুবক তার।

সম্প্রতি নানা রঙের ভোটপার্টির দিনরাত চোঙাবাজিতে এ এলাকার শান্তি কেলিয়ে পড়েছে। কতরকম বাওয়াল, হুজ্জুতি-- এলাকা গরম। মুখোমুখি দুইপার্টির চোঙা চলে এলে, কতরকম শ্লোগান, সঙ্গে তীব্র চেঁচানি। তার মধ্যে থেকেই ভেসে আসে "ভোট তোর গাঁড়ে ঢুকিয়ে দেব" অন্যপক্ষের কিছুটা রাগী গলায় পাল্টি আসে, "তোদের অমুককে মায়ের 'ইয়েতে' ঢুকিয়ে দেব"... মোটামুটি কমলীর ছাদ এসব হল্লা থেকে দূরে নাহলেও অনেকটাই আড়ালে। একটা ভাঙা দেয়ালে হেলান দিয়ে কাপড় কিছুটা তুলে হাত যখন ইগলু গরমে ব্যস্ত, হঠাৎই কোথা থেকে এসে হামলে পড়লো খাবলা। একেবারে মুখোমুখি, ভ্যাবাচ্যাকা কমলী। ওরকম ঠ্যাঙ ফাঁক, কাপড় তোলা, হাত ভেতরে কমলীকে দেখে খাবলা চোখ গোলগোল করে তাকিয়ে আছে--

-- কি করো গো কমলীদিদি ?

-- চুলকাই। থাইটা চুলকাচ্ছে খুব।

-- ও। আমি ভাবলাম তুমি কি যেন লুকায়ে রাখছো।

-- থাক, তুই কি ভাবছিস আমার জানার দরকার নাই। এখন এখানে এলি কেনো?

-- তাড়া খেয়ে। দুই পার্টির মধ্যে মারামারি হচ্ছে, তাই দেখতে গেছিলাম। কে যেন কাকে গুলি করে দিয়েছে। অনেক লোক বড় বড় অস্ত্র নিয়ে ঘুরছে, এ তাকে তাড়া করছে। হঠাতই বড় গাড়ি কোরে পুলিশ এসেই কোনকিছু না শুনেই লোকজনকে মারতে শুরু করলো বড় লাঠি দিয়ে। আমি দাঁড়ায়ে দেখছিলাম, আমাকেও দিলো এক বারি।  এই দেখো, বলেই পরনের হাফপ্যান্টটা তুলে দেখাতে থাকলো তার দাফনাটা লম্বা হয়ে রক্ত জমে গেছে লাঠির বারিতে। আবারও বললো, বারি খায়েই কোনদিকে না তাকায়ে কলাবাগানের মদ্দি দিয়ে বাড়ি ঢুকি এখানে চলে এয়েছি।

-- বেশ করেছিস।  খাবলার ব্যাথা জায়গায় হাত বুলাতে বুলাতেই কমলির মাথায় একটা গুপ্তবুদ্ধি পাখনা মেললো। কায়দা করে তার জন্মদণ্ডটাও একবার পরখ করে নেবে কমলী। ধাতুবেগের ঘোর তার এখনও কাটেনি। এদিকে অর্গ্যানিক এসিডের প্যাঁচে পড়ে বেচারা শরীর সে তো নড়েচড়ে উঠবেই। কমলীদিদির নরম আঙুলের ছোঁয়ার সুড়সুড়ি তার উরু-জঙঘায় যেন বজ্রপাত ঘটাতে চাইছে। খাবলা তার প্যান্টের নীচের জলকামান নিয়ে বিপদে পড়ে গেছে।  খাবলা আবারও এখান থেকে ঝেরে দৌড় মারবে কমলী জানে। তাই দেরি না করেই সেও সুড়ুৎ করে খাবলার পুরুষযন্ত্রে একবার সপাট মুঠো ছুঁইয়ে নিয়ে ততটাই দ্রুততায় হাত সরিয়েও নিয়ে আসে। কিন্তু মুহূর্তের এই হাতস্পর্শটুকুতেই খাবলা কেমন ইলেক্ট্রিক শক খাবার মতই কেঁপে ওঠে।

-- কি রে, ব্যাথা পেলি?

খাবলা কথা না বলে কেমন একদৃষ্টে কমলীর দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে। তারপর একটু সাহস সঞ্চয় কোরে বলে, আমায় আর একটু আদর করে দেবা?

কমলির বুঝতে অসুবিধে হয়না, খাবলার সদ্য বয়ঃপ্রাপ্ত শরীরের গোপন ও নিষিদ্ধ অঙ্গে তার মেয়েলী করতলের স্পর্শে কিভাবে আগুন জ্বলে উঠতে পারে। খাবলা যখন আরও একটু আদর করে দেবার আবদার জানায়, কমলীর মাথায় এক শয়তান এসে বাসা বাঁধে। সে ঠিক করে নেয়, খাবলা নামের এই সদ্যযুবকটিকে আজকেই সে একটা ব্যাটাছেলে বানিয়ে দেবে। তার নিজের মধ্যেও যেন আবার ফিরে আসতে থাকে সন্ধ্যার প্রতিহত ধাতুবেগ। ছেলেটার কথামতোই এবার সে ব্যাথাস্থানে আদরের ছলে তার করতল প্রসারিত কোরে সরাসরি সে এবার তার জন্মদন্ডটাকেই মুঠোবন্দী করতে গিয়ে বোঝে এটি ইতিমধ্যেই এক পরিণত পুরুষদন্ড হয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। কমলি পলকের মধ্যেই সেটাকে ছেড়ে দিয়ে সটান দাঁড়িয়ে পড়ে এবং খাবলার মুখটাকে তার বুকের মধ্যে সপাট জড়িয়ে ধরে আদর করতে করতে বলে--

-- তুই মার খেতে কেন ওখানে গেলি, বল তো ? তোর কিছু হলে আমাদের কে দেখবে?  আর যাবি নাতো, বল!

আগুনের মতো খাবলার রক্তে দাউদাউ জ্বলে উঠতে থাকে দ্রুত ঘটে যাওয়া স্পর্শ ও সংলাপের তীব্র কোলাহল। সেও যেন এক পরম নির্ভরতায় দুহাত তীব্র কোরে কমলীদিদিকে সজোরে জড়িয়ে নিতে চায় তার শরীরের মধ্যে। কমলীদিদির বড় বড় বুকদুটো কী নরম! খাবলা আর লজ্জা পায় না। বুঝতে পারে তার প্যান্টের মধ্যে ক্রমেই শক্ত হয়ে ওঠা এক গরম উল্লম্ফন। ইচ্ছে করে এক্ষুণি সে গিঁথে ফেলে কমলীদিদির তলপেট। কমলিও যেন এই প্রথম এক পুরুষ শরীরকে এত তীব্র এক নিবীড়তায় দুহাতের মধ্যে ধরতে পেরেছে। খাবলা তার বুকের মধ্যে ক্রমাগত ঘষে যাচ্ছে মুখ যদিও ব্লাউজ-ব্রেসিয়ারের পর্দা আছে দর্জা ধরে অটুট। খাবলা এখনও এই নিষিদ্ধ খেলার রীতিনীতি কিছুই জানেনা তাই হিচড়াহিচড়ি টানাটানি কিছুই ঘটে না। বরং ৩৮ বছরের কমলীর শরীরে, আঠেরোর এক সদ্য যৌবনপ্রাপ্ত তরুণের এই গরম স্পর্শ, কমলীকে কেমন পাগল করে তোলে।

যেহেতু সন্ধ্যা তখন অন্ধকার, কেউ কারো চোখ ভালো করে দেখতে পাচ্ছে না, কমলীর ইচ্ছে হয় সমস্ত পোষাক ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে খাবলার মুখোমুখি নগ্ন দাঁড়াতে। হঠাৎই টের পায় খাবলা দুহাতের দুমুঠোয় তার স্তণ দুটো চিপে ধরতে চাইছে, জোরে। টের পেতেই কমলীর কী হয় কে জানে, হয়তো ভয়, হয়তো এযাবৎ অনুশাসিত কোনও অপরাধ বোধ, হয়তো কোন সুপিরিয়রিটি কমপ্লেক্স, হয়তো... ! কমলী বিদ্যুতের শক খাবার মতো ছিটকে সরে এসে দুহাতে সরিয়ে দেয় নিজের স্তনের ওপর থেকে খাবলার থাবা দুটো। একমুহূর্ত দেরি না কোরে দ্রুত পায়ে অন্ধকারে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে যায়। খাবলা কমলীদিদির এই আকস্মিক পরিবর্তনের কারণ বুঝতে পারে না। কিছুক্ষণ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে, আর এই প্রথম টের পায় সেও যেন বাবার মত হয়ে গেছে। মায়ের মত কাউকে তার এখন প্রয়োজন। তার হাত অজান্তেই নাভির নীচের সেই গুপ্তকক্ষের সমস্ত আগল ছিন্ন কোরে হাতের মুঠোয় তুলে নেয় বিদ্ধতার উল্লাসে উন্মত্ত তার ধারালো বল্লম। আকাশ বাতাস ফাটিয়ে যেন তার প্রতিটি স্নায়ু-ধমণী শব্দহীন চেঁচিয়ে যাচ্ছে একটানা-- কমলীদিদি... কমলীদিদি... আর হাতের মুঠোয় তীব্র এক হুলুস্থূল। ছিটকে যাওয়া শিহরণ থেকে যেন সে স্পষ্ট টের পায় কোন মধুবল্লার চাক থেকে উড়িয়ে দিয়েছে হাজার হাজার মৌমাছি। আনন্দ ছড়িয়ে পড়তেই দেয়ালে পিঠ রেখে যখন একটু ঝিমিয়ে পড়েছে-- তার কানে যায়, কমলীদিদি নীচ থেকে তাকে জোরে জোরে ডাকছে।

এখানে বলে রাখা দরকার, খাবলা এক বাপ-মা মরা ছেলে। ছেলেটার যখন সাত-আট বছর বয়স, অনাথ হয়ে যাওয়া ছেলেটাকে হাত ধরে বাড়িতে নিয়ে এসেছিলো কমলী। ছেলেটাকে দেখবার মতো কেউ আর ছিলো না। কমলীর বাবা তখন বেঁচে ছিলো। খাবলা ছেলেবেলা থেকেই কমলীর খুব ন্যাওটা। তাকে ছেড়ে এক মুহূর্তও থাকতে পারে না। স্কুলেও যাবে না। বেশি বকাঝকা করলেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে এমন করে কাঁদতো, মায়া হতো কমলীর। তার মায়ের কথামতো কমলীর বাবাই ঠিক করলো, একটু বড় হলেই ছেলেটাকে তাদের মুদির দোকানে কাজে লাগিয়ে দেবে। কমলী সেই অবসরে বাড়িতেই ওর প্রাথমিক পড়াশুনোটা করিয়ে দিয়েছে। এর মধ্যেই কমলীর বাবাও একসময় মারা গেছে। অতঃপর কমলীর দোকান পর্ব। তার একান্ত সহযোগী এই আঠেরো হয়ে ওঠা খাবলা। খুব খাটিয়ে। ছুটে ছুটে সব কাজ করে। দোকানের সব জিনিষের দাম থেকে কোন মালটা শেষ হয়ে যাচ্ছে আনতে হবে, সমস্ত ব্যাপারটাই ছেলেটার নখদর্পণে। কমলী দোকানে বসে শুধু ফর্দ করে আর পয়সা বুঝে নেয়। বাকিটা খাবলার কাজ। খাবলার একটাই দোষ, মাঝে মাঝেই এসে ঘুরে ঘুরে জিজ্ঞেস করবে, “কমলীদিদি তুমি যে ক্যান বিয়্যা করোনা, আমি বুঝি না? আমি কিন্তু সময় হইলেই করুম, আমারে পয়সা দিবা।’’

খাবলার কথাগুলো শুনে কমলীর খুব মজা লাগে। ওর ভাবতে ভালো লাগে, ছেলেটা বুঝে গেছে বিয়ে করতে পয়সার দরকার হয়। দ্বিতীয়ত, এটাও সে জিজ্ঞেস করে জেনে নিয়েছে, খাবলা একেবারে কর্কশ ভাবে জানে, "বউ পুষতে পয়সা লাগে। বউ কি এমনি এমনি তোমায় করতে দেবে?" কমলী কথাটা শুনে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু কোরে কিছুক্ষণ চুপ করে ছিলো। এই কথাগুলো আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগের কথা। মানে ছেলেটার তখন তেরো-চোদ্দ বছর বয়স। সম্ভবত বাড়ির পরিবেশ থেকেই এ সব শিখে এসেছিলো খাবলা। যাই হোক, কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে থেকেই একটু দম নিয়ে, কমলী ছেলেটাকে কাছে ডেকে খুব আস্তে করে ওর কাছে জানতে চায়—“পয়সা দিলে বউ কি করতে দেবে রে”? ছেলেটা একদম বিব্রত না হয়ে, সোজাসাপটা বলে দিলো, “ওই যে, বাবা-মা রাত্রে যা করতো, তাই”!-- কমলী কথাটা শুনে কেমন নিজেই থতমত খেয়ে যায়। খাবলা কিন্তু থামে না। সে বলে চলে, “হ্যাঁগো, আমি নিজে চোখে দেখিছি, মা কষ্ট পায়ে কেমন গোঙায়ে উঠতো, বাবা কিন্তু কিছুতেই তারে ছাড়তো না”!

-- ঠিক আছে, থাম, কাজে যা, দেখ হাবলা কাকুর কি মাল লাগবে? কমলী আর কথা বাড়ার সুযোগ না দিয়ে খাবলাকে দোকানমুখি করলেও, খাবলার সরলতাটুকুকে তার মনে হয়েছিলো দুহাতের মধ্যে নিয়ে যত্ন কোরে গুছিয়ে রাখবে। আর সেদিন থেকেই খাবলার প্রতি তার কেমন যেন এক দুর্বলতাও তৈরি হয়ে উঠছিলো।

কিন্তু আজকের ছাদের এই নতুন রকম ঘটনাটাকে নিয়ে কমলী কতরকমভাবে বোঝাতে চাইছে নিজেকে। লজ্জা, অপরাধবোধ, খাবলার মুখোমুখি কিভাবে সে দাঁড়াবে ইত্যাদি। একসময় এও ভেবে নেয়, খাবলার মালিক তো সেই। খাবলাকে নিয়ে যা খুশি সে করতেই পারে। খাবলা তার কর্মচারী। হঠাৎই মনে পড়ে যায় রাতের ওষুধটা মাকে খাবলা নিজের হাতেই খাইয়ে দেয়, মা সেটা খুব পছন্দ করে। আজ তো খাওয়ানো হয়নি! সব ভাবনাচিন্তা উবুর খাতায় দিয়ে, সে খাবলাকে সিঁড়ির নীচে দাঁড়িয়েই ডাকতে থাকে। ডাক শুনে খাবলাও হৈচৈ করে নেমে আসে। এসেই কমলির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে, যদিও চোখ দুটো কমলির বুক থেকে যেন নড়ছেই না, ব্যস্ততার সাথে বলে ওঠে--

-- কি, অত জোরে ডাকছো কেন? আমি ভাবলাম বুড়িমার বুঝি কিছু হয়েছে?  বুড়িমা বলতে কমলীর মাকে খাবলা বুড়িমা বলেই দিনরাত খুনসুটি করে। রাতেও মাকে জড়িয়ে ধরে শুয়েও থাকে খাবলা। যদিও ঘুমের ওষুধ খাওয়া ঘুমে মা পড়ে থাকে অসাড়ের মতো।

-- বুড়িমাকে নিয়ে যদি এতই চিন্তা, তাকে ওষুধ খাওয়াতে হবে, মনে নেই? পাকা ছেলে। প্যান্টে কি লাগিয়েছিস?  যা, ওটা বদলে আয়।

-- কোথায়, কিছু না তো!  কথাটা বলেই খাবলা নিচু হয়ে দেখে, প্যান্টটা কেমন ভিজে আছে। বুঝতে পারে কমলীদিদির কাছে সে ধরা পড়ে গেছে। দুহাতে প্যান্টটা ঢেকে তাড়াতাড়ি পাশ কাটিয়ে পালিয়ে যেতে চায় কমলীর সামনে থেকে। কমলী আবারও ওকে ডেকে বলে, শোন, মাকে ওষুধ খাইয়ে আমার কাছে আসবি। তোর ব্যাথাটায় সেঁক দিতে হবে, নইলে রাত্রে ঘুমোতে পারবি না। খাবলা মুখ দিয়ে খুব আস্তে করে 'আচ্ছা' বলে বেরিয়ে যায়।

প্যান্ট বদলে, বুড়িমাকে ওষুধ খাইয়ে, খাবলা কমলীর কাছে আসে। কমলী ওকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে তার দাফনায় লাঠির বারিতে ফুলে থাকা অংশটায় ব্যাথা কমানোর একটা মলম নিয়ে ভালো করে ঘষে দিয়ে বলে, শুয়ে থাক, আমি হেরিকেনটা জ্বালিয়ে নিয়ে আসি, সেঁক দিতে হবে।

খাবলা যেন কমলীদিদির হাতে মালিশ নিতে নিতে কেমন অসাড় হয়ে গেছে, কেমন নেতিয়ে পড়েছে কমলীদিদির গায়ের গন্ধমাখা বালিশটায় মাথা দিয়ে শুয়ে। মনে হয় যেন কিছু আগের কমলীদিদির বুকের মধ্যে মুখ ডুবিয়ে সে ক্রমাগত তার বুকের নরম আদর খেয়ে যাচ্ছে। সে কথা ভাবতেই আবারও তার মধ্যে সেই চঞ্চলতা, প্যান্টের মধ্যে সেই নড়াচড়া তাকে কেমন বেয়ারা করে দেয়। সে বিছানায় শুয়ে এদিক ওদিক এপাশ ওপাশ শুধু ছটফট করতে থাকে। এর মধ্যেই কমলী ঘরে ঢোকে। হাতে চারভাঁজ করা ন্যাকড়া একটা, আর অন্যহাতে একটা লন্ঠন জ্বালিয়ে নিয়ে। তারপর বিছানার পাশে বসে খাবলার ব্যাথা পা টাকে তার কোলের উপর তুলে আস্তে আস্তে সেঁক দিতে গিয়ে খাবলাকে তার এক অনুগত ও বশ্য ক্ষুধার্ত পুরুষ মনে হয়। কমলীও তার যাবতীয় সামাজিক ও ব্যক্তিগত নিয়ন্ত্রণ যেন হারিয়ে ফেলে। নিজের এযাবৎ অবদমিত মেয়ে শরীরের সমস্ত আগুন যেন আজ দাউদাউ জ্বলে উঠেছে এই কোলের উপর ছড়িয়ে থাকা আঠেরোর সমর্পিত যুবকশরীরটাকে অবলম্বন কোরে। একলাফে উঠে মায়ের ঘরের আলোটা নিভিয়ে দিয়ে দুঘরের মাঝের দরোজাটা টেনে দিয়ে প্রথমেই শায়াশাড়ির আড়াল থেকে সে নিজেকে বার কোরে আনে। ঘরের আলোটা নিভিয়ে, লন্ঠনটাকে আরো কমিয়ে, সে খাবলার পাশে এসে দাঁড়ায়। খাবলাকে বিছানা থেকে তুলে তার সামনে দাঁড় করিয়ে দেয়। নীচু হয়ে বসে খাবলার প্যান্টটা খুলে নেয় তার পরণ থেকে। খাবলা কেমন সম্মোহিতের মতো, হালকা আলোয় দেখা কমলীদিদির নগ্ন শরীরটার দিকে, অপার বিস্ময়ে চোখ গোলগোল কোরে তাকিয়ে থাকে--

-- দে, তোর হাত দুটো দে।  খাবলা কেমন বিশ্বাস করতে না পারা কিছুটা ভয়, ঘটে যাওয়া ঘটনার দ্রুততায়, ভুতে পাওয়া বালকের মত হাত দুটো তুলে দেয় কমলীদিদির দিকে। কমলী সেই হাতদুটো সোজা তার দুই স্তনের উপর রেখে বলে ওঠে, তোর যেমন কোরে খুশি কমলীদিদিকে আজ ব্যবহার কর। আজ রাতে আমি তোর হয়ে গেলাম, তুইও আজ তোর বাবার মতো হয়ে যা।

খাবলার কানে কমলীদিদির কোন কথা যেন ঢুকছে না আর। সে কিছুটা এগিয়ে গিয়ে ভালো করে বুঝে নেয় সে স্বপ্ন দেখছে কিনা। তারপর আপ্রাণ সেই নগ্ন কালো কমলীদিদির মৃত্তিকাশরীরে, সদ্যযৌবনপ্রাপ্ত আঠেরোর যুবক আগুন নিয়ে মিশে যেতে থাকে আদিম বন্যতার কোনো অগ্নি-অবগাহনে...

 

 

 

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন