কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮

আনিস পারভেজ




আঁধার ও রোদ্দুর


আঁধারে অহর্নিশ বৃষ্টির জল
সূর্য হারিয়েছে বহু আগে
তবুও স্মৃতিতে আলো হঠাৎ দেখা দেয় কারো কারো
যারা মৃত বহুদিন আগে
তাদের স্মৃতি শরীর থেকে শরীরে যারা জীবিত

রাজ্য জুড়ে আকাল
দিনমান বৃষ্টিতে সূর্য নিভে আছে কতকাল
আলোর অদেখায় খেতে ফসল নেই
জলে ডুবে আছে জনপদ।

এর ভেতরেই সংসার মানব জীবন
মায়ার কান্নায় আজ এখানে শোরগোল
ভেলুয়া স্বামী বাড়ি যাবে, নতুন সংসার  
আঁধার আর জলের ভেতর কেবলই দুখের গান

শাড়ির আঁচলে ভেলুয়া কিছু মেঘ বেঁধে নেয়
বাবার আদর মায়ের বকুনি আঁধারের পাখির বিলাপ
আর পাড়ার স্বজনের গোঙানি
সে মেঘে আটকে আছে, স্বামীর বাড়িতে
তাতে সে কান্না ধুয়ে নেবে স্বদেশের মেঘে

এ এক অন্যরকম দেশ স্বামীর বাড়ি
হাজার বছর ধরে বৃষ্টি নেই, ধূসর প্রান্তর
মজা পুকুর, শূন্য ফসলের ক্ষেত।
সর্বপ্রহর আকাশ জ্বলছে সূর্যতাপে
উনপেটে কান্নার রোল।

জল নেই শুধুই রোদ্দুর।

পাড়ার লোক আসে ভেলুয়াকে দেখতে
নতুন বউ এসেছে আঁধারের জলজ দেশ থেকে
তারা আঙ্গিনাতে হুমড়ি খায়
চোখ খুলে ভেলুয়াকে দেখবে সে শক্তি নেই
বহুদিনের উপোসে কাতর শরীর

অনন্ত আঁধারের ভেলুয়া 
জ্বলন্ত রোদে হাড় জিরজিরে মানুষ দেখে
অনাহারে যারা বাকহারা, আরেক অনাহার
তখন ভেলুয়াকে জলের ধাক্কা দেয়
যা তার বাবার দেশে।

জল আর রোদ্দুরের এ কেমন বিচ্ছেদ!
একের বিরহে অপর এমনই ক্রূঢ়

ভেলুয়া সামনে তাকায়, রোদ্দুর, এখানে আকাল
পেছনে আঁধার আকাল সেখানেও।

শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছতে গিয়েই
ভেলুয়ার আঁচল থেকে উড়ে এসে মেঘ
রোদ্দুরকে ছায়াঘন করে, করে জলজ
পাললিক যুগের পর এদেশে এখন বৃষ্টি

কিষাণেরা বীজ বুনে, গাছে গাছে সবুজ পাতা ও ফল।
ভেলুয়াকে দেখতে এসে আঙ্গিনায় যারা হুমড়ি খেয়েছিল
তারা চেতন ফিরে পেয়ে উলু দেয়
দূর্বা বেলপাতা আর সোনালি ধান দিয়ে
ভেলুয়াকে করে বরণ

দিন যায়, ভেলুয়ার সংসারে ফুল ফল ও পাখি
তারপরেও একটা দীর্ঘশ্বাস ভেলুয়ার বুকে ঘুরে ফেরে
আঁধারের জলজ দেশ তাকে টানে। 
স্বজনের বিলাপ ও দেশের আকাল
ভেলুয়ার মন যেন মাঝ দরিয়ার বিক্ষুব্ধ ঢেউ।

ভেলুয়া বাবার বাড়ি নাইওর আসে
এবার ভেলুয়ার শাড়ির আঁচলে বাঁধা কিছুটা রোদ্দুর।

বাড়ির দরোজায় টোকা দেয়ার আগে
আঁচল খুলে ভেলুয়া রোদ্দুর ছেড়ে দেয় আঁধারের হৃদপিণ্ডে
সহসা আঁধার পেরিয়ে আলো আসে
যেন ধমনীর রক্ত পৌঁছে যায় শরীরের অলিতে-গলিতে

কিষাণেরা বীজ বুনে সবুজ পাতা ও ফল
পাখি গান গায়, ফুল ফোটে
রমণীরা শিঙ্গায় ফুঁ দেয়, রাজ্যভর উলুধ্বনি।

জল ও রোদ্দুরের সহবাসে জেগে ওঠে একটি দিগন্ত
আকাল কেটে যায়
আঁধারে মানব মানবিকে উষ্ণতায় জড়িয়ে রাখে
রোদ্দুরে তাদের ফসলের হয় আবাদ।



0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন