কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮

কাজল সেন




অপেক্ষা


সবার বসার জন্য চেয়ার রাখা ছিল না। চেয়ারের সংখ্যা কমই ছিল। রমেনবাবু  ইচ্ছে করেই কম চেয়ার আনিয়েছেন ডেকোরেটরের কাছ থেকে। কী হবে বেশি চেয়ার এনে? কে কে আসবে জানা নেই। আর এলেই যে সবাইকে বসতে দিতে হবে তার কী মানে আছে! অনেক কিছু দেখে অনেক কিছু শুনে অনেক কিছুই বুঝে গেছেন রমেনবাবু। সব শালা হারামী। মজা লুটতে আসে শুধু।

ঘরের ভেতর থেকে কল্যাণীর কান্নাটা সমানেই ভেসে আসছে। কান্না নয়, গোঙানি। রমেনবাবুর কান্নাটা এখন পাথর হয়ে নিশ্চলভাবে শুয়ে আছে বুকের ভেতর। তাঁর একেবারেই ইচ্ছে ছিল না এই প্রচলিত অনুষ্ঠানের আয়োজনে। কিন্তু তবু নিয়ম মেনে করতে হয়েছে শ্রাদ্ধানুষ্ঠানের যাবতীয় ব্যবস্থা। উনুনে রান্নার হাঁড়ি কড়াই চাপানো হয়েছে দুপুরের ব্রাক্ষণভোজন ও সেইসঙ্গে শ্মশানবন্ধু আর কুটুম্বভোজনের জন্য। বাড়িতে বাড়িতে অনুরোধ জানাতে যেতে হয়েছে তাদের অনুগ্রহ করে শ্রাদ্ধের প্যান্ডেলে উপস্থিত হয়ে উদর পরিপূর্ণ করার জন্য।

নিজের মেয়েকে তিনি আর কত দোষারোপ করবেন! ভাবলে রাগে ও হতাশায় গা রি রি করে ওঠে। মেয়েটা সত্যিই এত বোকা ছিল! এভাবে কেউ নিজের শরীর  বিলিয়ে দেয় কাউকে! না, তিনি কিছুতেই মেনে নিতে পারেন না, তাঁর মেয়ে বিদ্যেবুদ্ধিতে এতটা মেধাবী হয়েও এই মারাত্মক ভুলটা কীভাবে করল!

মেয়ের ভুলের ব্যাপারটা রমেনবাবু হয়তো জানতেও পারতেন না, যদি ছেলেটা তাঁর মেয়ের বিশ্বাস ও ভরসার মর্যাদা দিত। কিন্তু ছেলেটি বিশ্বাসঘাতকতা করল। যে কোনো কারণেই হোক তাঁর মেয়ের অনাবৃত শরীরের ভিডিও একটু একটু করে ছড়িয়ে পড়ল সেই ছেলেটির বন্ধুমহলে। আর তারপর সংক্রামক ব্যাধির মতো পাড়া প্রতিবেশী থেকে ক্লাবের রোয়াক, চায়ের ঠেক, ফুটবল গ্যালারী, অটোস্ট্যান্ড সর্বত্র। নির্বোধ মেয়েটির কামাগ্নির ভিডিও যেন উসকে দিল সেইসব দর্শকদের কামরসআর মেয়েটি হঠাৎই যেন অন্তর্দৃষ্টি লাভ করে তার চারিদিকে  তাকিয়ে দেখল, প্রত্যেকটি পুরুষের অন্তর্বাসের ভেতর ক্রমশই আরও ঋজু ও দৃঢ়  হয়ে উঠছে তাদের বিশালাকার উত্থিত লিঙ্গ। 
মেয়েকে একটা কথাও বলেননি রমেনবাবু। কী বলবেন! বাবা হয়ে মেয়েকে তিনি এব্যাপারে কীই বা বলতে পারেন! কিন্তু কল্যাণী নিজেকে কিছুতেই সামলাতে পারেননি। তিনি প্রায় ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন মেয়ের ওপর। মেয়ে এতটাই বিহ্বল হয়েছিল যে, মায়ের হাতের চড় ঘুষি কিছুই সে যেন অনুভব করতে পারেনি। বাবার দিকে তাকিয়ে সে বুঝতে পারছিল না, বাবা কি আদৌ বেঁচে আছে আর!

সেদিন সকালবেলা রমেনবাবুর বাড়ির বাইরে জড়ো হয়েছিল প্রচুর মানুষ। মর্গ থেকে শরীরটা নিয়ে আসার পর সবাই নাকি একবার দেখতে চায় মেয়েটির মুখ। শ্মশানেও খুব ভিড় হয়েছিল। বৈদ্যুতিক চুল্লিতে শরীরটা ঢুকে যাওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত তারা সবাই পাহারায় ব্যস্ত ছিল।

সবার বসার জন্য চেয়ার ভাড়া করে আনার কোনো প্রয়োজন মনে করেননি রমেনবাবু। কে কে আসবে বা আসবে না তা নিয়ে কোনো ভাবনাই ছিল না তাঁর  মাথায়। তিনি শুধু অপেক্ষায় আছেন একজনের জন্য। সেই ছেলেটির জন্য। তিনি ছেলেটিকেও নেমন্তন্ন করেছেন। ছেলেটি কখন আসবে? 


1 কমেন্টস্: