কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

সোমবার, ১ অক্টোবর, ২০১৮

সুমী সিকানদার




কথা দেবো কেমন করে

ঘর অন্ধকার করে বসে অন্ধকারেই দূরে সরে যাচ্ছিলো মাসুদ
অন্যমনস্ক সন্ধ্যা চলে যাচ্ছে মীড়েমাসুদের কষ্ট হচ্ছে, তা কি কেঁদে ফেলার জন্য নাকি কান্না নিয়ন্ত্রণ করতে পারল না তাই! দীপ্তি চলে যাচ্ছে ক্রমশঃ সমস্ত আকাশ মাথায় নেমে তুমুল  আসছে, কবুতরেরা শব্দ করে অনাস্থা প্রকাশ করছে
রোজ ভোরেই বাকবাকুমের ঘর খুলে দেয়া তার প্রিয় কাজ। গুটি গুটি পায়ে শব্দ করতে করতে সাদাগুলো ঘর ছেড়ে উড়তো। কেউ শব্দ করে আনন্দ প্রকাশ করতো এ আতাশরিফা গাছের ছ্যাংগার বাসা দিনভর বাতাসে দোলে । গাছেদের পাশে বসে একা একা বকবক করে সে। এরা দীপ্তির বন্ধুর মতো মাটিতে শলা দিয়ে দাগ কেটে খেলে কাটাকুটি।

দশ বছর আগে তারা কেউ আজকের দিনের কথা ভাবেনি
খেয়ালি মনের মেয়েটা ঠিক সংসারী না কিছুটা পাগলাটে, ছেলেমানুষ, মেজাজী আবার ক্যাসেট ছেড়ে বাড়ির বাচ্চাদের নিয়ে নাচ করছে।

মানুষ আসলে বেশি দিন কারো আঙ্গুল ইশারায় চলাতে পারে না। পালাতে চায়
প্রেম থেকে কবিতা থেকে আস্থা থেকেও পালাতে চায় মাসুদ, দীপ্তি কেউ কারো পরিবারকে রাজী করাতে না পেরে নিজেরাই রেজিস্ট্রি করেছিলো। সমস্যা শুরু হয় প্রথম দিন থেকেই।

মন রেখে দীপ্তি চলে যাচ্ছে
দুপুরের পর থেকে থেকে ফুরিয়ে এসেছে তারস্বর চিৎকার জনিত তান্ডবভাংচুর থামার পর কাচেরা ছত্রভংগ, কিছুটা অবাক বোকাটে পড়ে আছে মেঝেতে। ঘরে পালা পশুগুলোও চুপ। মানুষের মন খারাপে তাদের কেন মন খারাপ হয়! তারা তো আর মানুষ না!

গৃহপ্রবেশের সময় হাতে থাকে হাত
, চোখে একরাশ মায়া, সানাই সুর চলে যাবার সময় শুরু হয় টানাপোড়েন। উতলা  সুর বারবা র সম খুঁজে জেনে শুনে কাছের মানুষটাকেই ফেলে যাওয়ার নামই ভান

ফিরে যেতে পেরে খুশি দীপ্তি। নিজের পায়ে দাঁড়ানো সে আটকায়। বাবা-মা অপমান ভুলে বুকে করে মেনে নিয়েছেন অনেক আগেই। শ্বশুর শাশুড়ি তাদের ছেলেকে ফের  বিয়ে দেবে দিক। ১০ বছরে সন্তান হয়নি তার একার দোষ?
সুটকেস গোছানো শেষ, ধীরে ধীরে ঘর ছেড়ে বারান্দায় আসে নাহ কেউ তার পথ আগলে দাঁড়িয়ে নেই। মাসুদের ঘর অন্ধকার। টাইগার মনে হয় উঠোনে ঘুরপাক খাচ্ছে গাড়ির ব্রেক কষার শব্দ হলো গেটের বাইরে।
মাসুদ উঠে জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। ইচ্ছে করছে দীপ্তিকে দৌড়ে হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসে উচিত। মানুষ ভুল সমেত নিজের কাছেই ফেরে, নিজের কাছেই আত্মসমর্পণ করে

যাবার সময় সে ধীরে ধীতে হাঁটছে। উঠোনে পর পর ইট বিছানো। জলকাদায় পায়ে নোংরা না লাগে তাই এই ব্যবস্থা। এক এক ইটের উপরে পা রাখছে যেন এক এক বছর চলে যাচ্ছে। যেন এই বাড়ির সদর দরজাটা বছর খানেক দূরে। হঠাৎ কোত্থেকে মিমিন্তি এসে তার পায়ের কাছ শাড়ি আঁচড়াতে থাকে। যাবার আগে এক বিড়ালটাই দৌড়ে এলো মেয়ের মত। মিমিন্তিটাকে একটু মাছের কাঁটা খাইয়ে গেলে হতো।
Top of Form


1 কমেন্টস্: