কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮

অরুণিমা চৌধুরী




গোপনে বড় হচ্ছে ফাটল


ফিরে এসো উত্তাল সমুদ্রের মতো
পুরনো অবয়বে আর কতক্ষণ  দাঁড়িয়ে থাকব!

নিশানাথ! শিকল কেটে গেলে
আমিও উড়ে যেতে পারি, একথা জানো!

প্রতিদিন দ্বন্দ্বের মধ্যে গোপনে বড় হচ্ছে ফাটল
ইদানীং টেপফ্রক চুঁইয়ে রক্ত নামে
যাদের যাদের নিয়ে কখনো লিখিনি, তারা  স্বপ্নে আসে!  

আমিও তেমন ভাবে মুখ ফিরিয়ে থাকি, যেভাবে খুন হয়ে যাওয়া লাশের মুখে খেলা করে উদাসীন নির্লিপ্তি!

কী হবে লিখে! রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয়
ব্যক্তিগত অসুখের কিছুই পাল্টায় না
গত সাত বছর অরাজকতার ভিতর
গুমরে গুমরে উঠেছি
তুমিও কি বলতে পেরেছ ভালো নেই!

মা’কে খুব মনে পড়ে
দ্যাখো একে একে খসে গেছে হাত পা
বয়সের মাপেমাপে আরো কিছু খড়কুটো ইত্যাদি প্রভৃতি
বুকের মধ্যে  ঢিপঢিপ করে

আমাকে কবিতার কথা বোলো না, স্ফুলিঙ্গের
মতো হঠাৎ কয়েকটি অক্ষর  জ্বলে উঠে নিভে গেছে। ওরা কি সাহিত্য ছিল!

গরম চাটুতে জলের শব্দ ছাড়া একটি বাক্যও তুমি পুরোটা শোনোনি। অথচ
তুমি মৃত্যুর কথা বলেছ, দাস ক্যাপিটাল, যৌথ খামার... বিবাহ বহির্ভূত অকল্যাণের কথাও

আমাদের বিবাহ হয়েছে, প্রেম হয়নি
নাকি উল্টোটা নিশানাথ!

কোথায় কী ঘটে কার্যকারণ খুঁজিনা
মাথা থাকলেও ব্যথা নেই হে

তেমন করে কখনও কি ভালবেসেছি বলো!
কীভাবে বলবো অসুখের মধ্যেও একটা ঠান্ডা করতল ছুঁয়ে দিক আমার রাহুগ্রস্ত জীবন! 

কেন লিখব, এই ভেবে ভেবে দিন থেকে রাত, রাত থেকে দিন অলস বসে থাকি!
রাতগুলো ছিঁড়েখুঁড়ে দাও,  কিসের এত রাগ নিশানাথ! মাথা কুটেও উত্তর মেলেনি
আমি শুধু 'কেন' জমিয়ে রাখি
ঢোঁক গিলতে গিলতে একটা গোটা সংসার
গহ্বরে নেমে গেলো

নিশানাথ! কবিদের সংসার হতে নেই,
জড়ো করে রাখা আমার টুকরোগুলো ছড়িয়েছিটিয়ে সঙ সার হয়, হলুদের দাগ লাগা সংসার!
আর আমি! আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতে তালি দিই আরও একটা দিন বেঁচে আছি ভেবে
অহংকারী হয়ে উঠি
আমার ভিতরে উইয়ের বাস, আমার অভ্যন্তরে কুরুক্ষেত্র তেমনই নড়াচড়া করে...

পুরনো অবয়ব ফিরিয়ে দেবে আমায়! দ্যাখো ছুঁয়ে দ্যাখো!  কী যেন হারিয়ে গেছে...

একটা ঠাণ্ডা হাত অবিরাম অদৃশ্য  ছুঁতে চায়... বলো নিশানাথ এর থেকে   পরিত্রাণ  নেই!

সামান্য  ছায়া দরকার, একটা মৃত্যু ছেড়ে আরেকটা মৃত্যুর দিকে চিরটাকাল এই বেঁচে থাকা, এও কেমন  অসহ্য হয়ে উঠেছে!  উত্তাল সমুদ্রের মতো ফিরে এসো একবার, বেঁচে ওঠার জন্যে মৃত্যুটাও যে বড্ড জরুরি।



ছায়াশরীর  


মুখ নয় মুখের আদল ঘোরেফেরে
মানুষের পাশ থেকে উঠে যায় ছায়া,
তারও আছে দাঁত নখ এতখানি শ্লেষ ও কুয়াশা।

আয়নায় ভর করে প্রেত  বুকের ভেতর থেকে খালি হয় বিষবাষ্প বড় শ্বাস কৃচ্ছ্র লাগে।
কাকে! আর কার কাঁধে মাথা রাখে শোক!

আমি সব বিশ্বাস খুলে রেখে আড়েদিঘে মাত্র আড়াই হাত কাফন খুঁড়েছি।



সম্পর্ক


তুমি তার ছিলে না কখনো
সেও তোমার নয়

যারা চলে যায়, পিছু ফিরে ডাকে না আবার,
তুমি শুধু  চেয়ে দেখো জাহাজের মাস্তুল, 
কীভাবে সে মুছে দেয় ডাকনাম 
অন্য অন্য সব ছেদ যতি।

জটিল.. বড় জটিল এ পৃথিবী

তবুও মুখের পরে কার যেন চুল এসে পড়ে
স্তনভার উথলে ওঠে, কাজ ফেলে উঠে যায় দুপুরের একলা বিষাদ ঘ্রাণ
অথচ সে পিছু ফিরে ডাকেনি তোমায়

সমস্ত সম্বোধন অতীত হলে, তুমিও কতখানি স্পর্শকাতর 
তুমি তার ছিলে না আদৌ অথবা সে বুক জুড়ে এইখানে, ঠিক এইখানে বাসী হয়ে গেছে...


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন