কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

রবিবার, ১ জুলাই, ২০১৮

খোসে আগুস্তিন গোইতিসোলো




প্রতিবেশী সাহিত্য


(José Agustín Goytisolo) খোসে আগুস্তিন গোইতিসোলো’র কবিতা                     

(অনুবাদ : জয়া চৌধুরী) 



 


কবি পরিচিতিঃ

কবি প্রাবন্ধিক খোসে আগুস্তিন গোইতিসোলো জন্মগ্রহণ করেন ১৯২৬ সালে বার্সিলোনায়। কাতালুনিয়ার রাজধানীতে জন্মেও তাঁর মুখের ভাষা কাতালান নয়, বরং স্প্যানিশ ছিল। যদিও তিনি কাতালান জানতেন খুব ভাল। ছোটবেলায় জেনারেল ফ্রাঙ্কোর সেনা বারসিলোনাশহরে বোমা বর্ষণ করলে তাঁর মা জুলিয়া গে-র বোমার আঘাতে মৃত্যু হয়। এ ঘটনা দারুণ নাড়িয়ে দিয়েছিল তাঁকে। তাঁর শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থের নামও মায়ের অনুসরণেই ‘পালাব্রাস পারা খুলিয়া বা জুলিয়ার  জন্য কিছু শব্দ। তাঁর কবিতাগুলি যে কেবল ফ্রাঙ্কোর ধনতন্ত্রের বিরুদ্ধেই ছিল তা নয়, সেটি নব্য মানবতার খোঁজেও ছিল। সেজার পাভেসে, পাওলো পাসোলিনি ইত্যাদি লেখকের লেখা কাতালান ও ইতালিয়ান ভাষা থেকে তিনি স্প্যানিশে অনুবাদ করেন। ১৯৯৯ সালে বার্সিলোনাতেই তাঁর প্রয়াণ ঘটে।


Palabras para Julia (জুলিয়াকে কিছু কথা)

তুমি পিছন ফিরতে পারো না
কেননা জীবন তোমায় ধাক্কা দিয়ে দিয়েছে
এক অনিঃশেষ চিৎকারের মত।

খুকী আমার অন্ধ দেওয়ালের সামনে
কাঁদার চেয়ে ঢের ভাল বেঁচে থাকা
মানুষের আনন্দ সমূহ নিয়ে।

খোঁয়াড়ে আটকে গেছ তুমি ভাববে এমন
কিংবা হারিয়ে গেছ অথবা একাকী
হয়তো ভাবতেও পারো যদি না-ই জন্মাতে।

খুব ভাল করেই জানি আমি ওরা তোমায় বলবে
যে জীবনের কোনো উদ্দেশ্য নেই
যে ব্যাপারটা একটা অসুখী বিষয় মাত্র।

তখন বরাবর তুমি মনে করো
একদিন তোমাকে যা লিখেছিলাম আমি
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে ঠিক যেমন এখন ভাবছি।

জীবনটা সুন্দর, দেখে নিও
এতসব বোঝা থাকা সত্ত্বেও
তোমার বন্ধু থাকবে, ভালবাসাও।

একাকী পুরুষ, একাকী নারী
এভাবেই নেশাগ্রস্ত, একের থেকে অন্যের ভেতরে
ওড়া ধুলোর মত, আর কিচ্ছু না।

তবে যখন আমি তোমার কথা বলি
যখন এসব কথা তোমায় লিখি
আমি অন্য মানুষের কথাও ভাবি।

তোমার নিয়তি বাকীদের ওপরেই
তোমার ভবিষ্যৎ তোমার নিজের জীবনটাই
তোমার মহিমা তো সকলেরই।

অন্যেরা অপেক্ষা করে যাতে তুমি বাধা দাও
যাতে তোমার আনন্দ তাদের সাহায্য করে
তাদের গানের ভেতরে তোমার গান।

তখন বরাবর তুমি মনে করো
একদিন তোমাকে যা লিখেছিলাম আমি
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে ঠিক যেমন এখন ভাবছি।

কখনও আত্মসমর্পণ করো না তুমি, বিচ্ছিন্নও হও না
পথের লাগোয়া, কখনও বলবে না তুমি
আর পারছি না আমি, এখানেই রইলাম।

জীবনটা সুন্দর, দেখে নিও
এতসব বোঝা থাকা সত্ত্বেও
তোমার বন্ধু থাকবে, ভালবাসাও।

বাকীদের জন্য কোনও নির্বাচন নেই
আর এই দুনিয়া ঠিক
হবে তোমারই সবটুকু ঐতিহ্য।

মাফ করো, তোমায় বলতে জানি না আমি
বেশি কিছুই না তবে তুমি বুঝে নাও
যে আমি এখনও পথেই রয়েছি।

আর বরাবর বরাবর মনে করো তুমি
একদিন তোমাকে যা লিখেছিলাম আমি
তোমার কথা ভাবতে ভাবতে ঠিক যেমন এখন ভাবছি।


El aire huele como humo (বাতাসে ধোঁয়ার গন্ধ)

এই এত স্বচ্ছ রাতের
স্মৃতি নিয়ে কি হবে
যখন সবকিছু শেষ হয়ে যাবে?
তৃষ্ণা যদি পড়ে তবে কী আর করা
এটা জেনে যে ঝরনাটা দূরে আছে
যেখান থেকে জল পান করেছিলে তুমি?

এই কামনা নিয়ে কী করা যাবে
অসংখ্যবার শেষ হওয়াকে
আবার ফিরে দেখা?

কী করা যায় যখন দুঃখের একটা মন্দ
বাতাস তাকে অভিশাপের মত
একই ভাবে মুড়ে দেয়। 

শরতের নিচে কী করা যাবে
যদি বাতাসে ধোঁয়ার গন্ধ ভাসে
আর বারুদ এবং চুম্বনেও?

কী করা যায়? কী করা যাবে? তুমি প্রশ্ন করো
পরপর যে এখনই আছে তার
ভাগ করে দেওয়া সৌভাগ্যগুলিকে।


অনুবাদক পরিচিতি :  
  
জয়া চৌধুরী রামকৃষ্ণ মিশন, গোলপার্কে স্প্যানিশ ভাষার শিক্ষক। গত কয়েক বছর ধরে তিনি অনুবাদ চর্চায় রত। মূলত স্প্যানিশ-বাংলা-স্প্যানিশ ভাষায় অনুবাদ করেন তিনি। প্যারাগুয়ে দূতাবাস থেকে ২০১৩ সালে একটি উপন্যাস ও একটি কাব্যগ্রন্থের দুটি অনুবাদ বই প্রকাশিত হয়েছে। এ ছাড়াও ছোটগল্প সঙ্কলন ও নাটকের অনূদিত দুটি বই গত বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছে। বেশ কিছু  সাময়িকী, সংবাদপত্র আনন্দবাজার পত্রিকা’, ঢাকা থেকে প্রকাশিত ভোরের কাগজইত্যাদিতে তাঁর বেশ কিছু অনুবাদ ইতিমধ্যেই প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন মঞ্চে নিয়মিত নাটক করেন তিনি, বাংলা ও স্প্যানিশ দুই ভাষাতেই।  সম্প্রতি মৌলিক কবিতাও কয়েকটি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়েছে।

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন