কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯

দেবযানী বসু




ভ্যালেন্টাইন বিড়াল

নিজের গাড়িতে উঠে আগে দু’হাত কপালে ঠেকায় মিলন দত্ত চৌধুরী। আজ প্রণামটা  
একটু বেশি সময় ধরে চলল কারণ ঘুমভাঙা থেকে তার ঘরণী ঘ‌্যানঘ্যান করে একই
কথা বলে চলেছে। মিলন দত্তের মনে পড়ছে কালকেতু ফুল্লরার কথা। বাংলা সিরিয়াল দেখে
দেখে বনানীর মাথাটা একেবারে গেছে। নায়ক নায়িকার বিপদ দেখে সে দুশ্চিন্তাগ্ৰস্ত
হয়ে পড়ে। সকালের চা তৈরি করতে করতে মাঝেই মাঝেই বলে ওঠে, ঠাকুর ওদের  
গন্ডগোল মিটিয়ে দিও। কিংবা ওরকম শাশুড়ি হলে আমি ঘর করতাম না। অথবা কোনো
চরিত্রের মতো হয়ে যেতে ইচ্ছে করে তার। কারো মতো চুলের ছাঁট দিতে ইচ্ছে করে।
ওদের পরিহিত শাড়ি পছন্দ করে আর কিনে দেবার জন্য বায়না করে। মিলন এসব কায়দা
করে এড়িয়ে যায়। 

বাংলা সাহিত্যের উপন্যাসভিত্তিক একটা সিরিয়াল বনানীকে একবারে পাগল করে দিয়েছে।
মিলনও ঐ বিশেষ সিরিয়ালটি বিশেষ আগ্ৰহ নিয়ে দ্যাখে। মিলনের হামবড়ামি আছে তাদের
অতীত জমিদারি নিয়ে। দেওয়ালের হরিণের শিং প্লাস্টিকে মুড়ে রেখেছে ধুলো বাঁচাতে।
জমিদার বংশের গরিমা স্মরণ করে মিলন হাফ ওড়াওড়ি করে থেমে গিয়েছে। নায়কের
তিনটে বিয়ে বিগত শতাব্দীতে এমন কিছু ব্যাপার না। এখানে নায়ক যেন ব্রক্ষ্মচর্য
পালন করছে প্রথম বৌ হারিয়ে যাওয়ায়। তবে এখন এই একটা করে বিয়ে করার দৌলতে
মেয়েরা দু’য়েকটা সত্যিকারের মিতবর পেয়ে যায়। মিলন ও বনানীর সঙ্গম ঘরকা মুরগি  
দাল বরাবর হয়ে এসেছে প্রায়। বনানীর গন্ডা বিশেক তুতোদাদা আর ভাই আছে মাতৃপক্ষ
পিতৃপক্ষ মিলিয়ে। সে কথা ভেবে পানপাতা চিরে রক্ত বার করে মিলন। 

ওরা একে অপরের মোবাইলে উঁকি ঝুঁকি মারে। মিলন মোবাইলের কললিস্ট খুলে
দেখায় মাত্র কয়েকটা মহিলার নাম। এতে কি হবে! ব্যস! ঠান্ডা যুদ্ধ জারি থাকে। বনানী
স্বপ্ন দেখে মিলন সিরিয়ালের সতীনবৌ চরিত্রগুলোর একটাকে বিয়ে করে বাড়িতে এনে
তুলেছে। ঠিক ওরকম গা ভর্তি গয়না আর আদুড়গায়ে শাড়ি। একবারে বমকাই চমকাই
প্রেম করছে ওরা। প্রথমের দিকে বনানী প্রচলিত উপেক্ষা ও উদাসীনতায় যেন টিভি শো
দেখছে বলে তা গায়েই মাখল না। হঠাৎ ওদের হাফপোষা পাশের বাড়ির হুলো বিড়ালটা
বনানীর গায়ে ঝাঁপিয়ে পড়তেই বনানী বিকট রেগে গিয়ে মিলনকে তেড়ে গালাগালি
দিতে লাগল। মিলন জড়ভরত ওদিকে। সারা পৃথিবীর হাওয়া বধির বনানী এত হাত পা
ছুঁড়ে চিৎকার করছে। 

স্বপ্নের অসহায়তা বুঝে বিড়ালটিও পালিয়ে গেছে।
                                                      

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন