কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শুক্রবার, ১ মার্চ, ২০১৯

শুভলক্ষ্মী ঘোষ




মাছের ঝোল


সেই ছোট থেকে শিমূলের মাছ ছাড়া ভাত মুখে রোচে না দুবেলা দু’ পিস মাছ, গরম ধোঁয়া ওঠা ভাত, সাথে ধনেপাতা, পোস্ত বা কয়েদবেল মাখা... এই দিয়েই শিমূলের দিব্বি খাওয়া হয়ে যায় মেয়ের বিয়ে নিয়ে শিমূলের মা’র ভারি চিন্তা ছিল, কোন ঘরে শিমূলের বিয়ে হবে, সেখানে গিয়ে মেয়ে  ঠিক মতন খেতে পরতে পাবে কি না! তা বিয়ের পর শিমূলের মায়ের সেই চিন্তা কতকটা হলেও ঘুচেছে শিমূলের বর রতন, শহরে বড় গ্যারাজে  কাজ করে মাস গেলে ওদের মোটামুটি ভালোই চলে যায়     

খাওয়া পরার কষ্ট না থাকলেও বিয়ের পর শিমূলের জীবনে হুজ্জতির অন্ত ছিল না রতন লোকটা ছিল পাড় মাতাল গলা অবধি মদ গিলে শিমূলকে মারধোর করাটা রতনের অভ্যেস হয়ে দাঁড়িয়েছিল এক প্রস্থ মেরে মাঝ  রাত্তিরে হুঁশ ফিরলে, রতনের শরীরের টা উথলে উঠত! ঘরের কোণায় পড়ে থাকা শিমূলকে হ্যাঁচর প্যাঁচর করে মাদুরে তুলে ওর নারকোলের মালার মতো বুকদুটো প্রাণপণ ডলতে ভারি সুখ হত রতনের তারপর শাড়ি শায়া জোর করে খুলে শিমূলের পাছাখানা রতন খামচে কামড়ে ধরত  যখন, শিমূল যন্ত্রণায় ককিয়ে উঠত রতন তাতে কেন জানি খুশী হত খুব, দাঁত বার করে খিক খিক করে হাসত... ব্যথায় শিমূলের আর জ্ঞান থাকত না

***  

সেদিন দুপুরবেলা, শিমূল সবে ভাত খেতে বসেছে, এমন সময়ে পাশের বাড়ির সাবিত্রী কাকীমা ছুটতে ছুটতে বাড়ি এসে ঢুকলেন চোখ দুটো লাল, মুখ থমথমে, গলা ভাঙা
-“মা রে, তোর কপালখানা পুড়ল রে মা... শিগগির শহরে চল, রতনের  গ্যারেজে কি জানি কি হয়েছে, মাথা-টাথা ফেটে, আমাদের রতনটা যে আর...” কাকীমা ডুকরে কেঁদে উঠলেন শিমূল কেন জানি চুপ করে রইল! 
-“কী রে? বলি ও মেয়ে, কানে ঢুকছে আমার কথাখানা? বুঝতে পারছিস,  কি বলছি?” শিমূলকে মাছের ঝোলের বাটিখানা ভাতের পর উপুড় করতে দেখে কাকীমা খেঁকিয়ে উঠলেন
-“শোক তাপে পাগল হয়ে গেলি নাকি রে আবাগী? ইইহ, রতনটাকে গিলে এখন আয়েস করে মাছের ঝোল ভাত খাচ্ছে, দেখে গা জ্বলে যায়!”
শিমূল এবারেও কোন উত্তর করল না
-“কী আশচজ্জি! এ মেয়ের তো কোন ধম্মজ্ঞান নেই গা! সোয়ামীটা  মরেছে, আর এ এদিকে এখনো কেমন ঘট হয়ে বসে আছে দেখ!”   
শিমূল মাথা গোঁজ করে একমনে ভাত মাখছিল
-“আচ্ছা উদো মেয়েমানুষ তো! ওরে, ও আর তুই মুখে তুলিস নে, মাছ খাওয়া তোর এজম্মের মত ঘুচেছে, বুঝলি হতচ্ছাড়ী?” 
ফ্যাকাসে শূন্য চোখ, ঠোঁটের পাশে কালশিটে, পাতের ওপর জিরে-লঙ্কা বাটা চারাপোনার ঝোল... শিমূল অবাক হয়ে সাবিত্রী কাকীমার দিকে মুখ তুলে চাইল... হাতে একদলা ভাত, সে আর খাওয়া হল না




2 কমেন্টস্: