কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

বুধবার, ২৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২০

পৃথা রায় চৌধুরী




লবণ হ্রদ, ৪৪তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলা ও জনৈকা নিন্দুক






শারদ সংখ্যাগুলোর পাতার ফাঁকে আঙ্গুল রেখে রেখেই অপেক্ষা শুরু হয় প্রতি বছরের বইমেলার। বইমেলা তো শুরু হয়ে যায় নানা জায়গায় শীতের শিরশিরানি আসতেই, কিন্তু অধীর আগ্রহে আমার মতো বইখোরেরা অপেক্ষা করে কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার। বাঙালিদের কাছে দুর্গা পুজোর মতোই এও এক উৎসব। অবশ্য এসব নতুন কথা নয়। নতুন কথা হল, আমাদের বইমেলা নিয়ে নিজস্ব অনুভব।

গত বছর একটিবারের জন্যও বইমেলা যাওয়া হয়ে ওঠেনি। কলকাতায় থেকেও এই যে বইমেলায় না যেতে পারা, তা বড়ো কষ্টকর। যেতে যে পারিনি, তার মূখ্য কারণ আমার ক্ষেত্রে, সাম্প্রতিক বইমেলার অবস্থান। সে এক সময় ছিল, বাবা-মা’র সাথে নতুন নতুন বই কেনার উত্তেজনা আর উৎসাহ নিয়ে প্রতি বছর  ধানবাদ থেকে কলকাতা আসতাম, ঘণ্টার পর ঘণ্টা হেঁটে চষে ফেলতাম ময়দানের একের পর এক বইয়ের স্টল। কতশত বই কিনে ভারী ব্যাগ নিয়ে ফিরতাম গেস্ট-হাউসে। পরের দিন কিছু ঘোরাঘুরি করে, বা পরের বারের জন্য  সেসব মুলতুবি রেখে ফিরে যেতাম ধানবাদ। এখন ভাবি, শুধু বইমেলার জন্য, বইয়ের নেশায় মা-বাবা দুজনেই আমাকে আর ভাইকে নিয়ে বইমেলা আসতো,  ওই অতখানি দূরত্ব পেরিয়ে!

মাঝখানে প্রায় বছর দশেক আর বইমেলা যাওয়া হয়নি। বছর গড়িয়েছে,  কলকাতা আসা হয়ে উঠত না। কখনও দিল্লি, কখনও হায়দ্রাবাদ ঘুরেটুরে আবার যখন ফিরে এলাম কলকাতায়, তারপর থেকে টানা ২০১৭ পর্যন্ত প্রতি বছর বইমেলায় না গিয়ে থাকিনি। ২০১৮য় নানা কাজের ব্যস্ততা এবং মিলন মেলা প্রাঙ্গন থেকে বইমেলাকে সল্ট লেকের সেন্ট্রাল পার্কে স্থানান্তরিত করা সত্ত্বেও, কোনোরকমে সেখানে একটা দিন যেতে পেরেছিলাম। কিন্তু এসব বাধা পেরিয়ে গত বছর আর বইমেলায় যাওয়া হয়েই ওঠেনি। এবারেও এসব বাধা কাটিয়ে যে উপস্থিত হতে পারবো, তা ভাবতেও পারিনি। ২০১৮য় আমার যে বই বেরোয়, তাকে স্টলে বসে থাকতে দেখেছি, কিন্তু ২০১৯এর প্রকাশিত বইকে আর নিজের চোখে বইমেলায় দেখতে পাইনি। শুভানুধ্যায়ীরা ছবি তুলে পাঠাতে, দেখে পুলকিত হয়েছি মাত্র।
এবারেও ভেবেছিলাম সাম্প্রতিকতম প্রকাশিত বইটি বুঝি মেলায় গিয়ে আর দেখা হল না, কিন্তু হঠাৎ সে সুযোগ মিলে গেল কিছুক্ষণের জন্য। ২রা ফেব্রুয়ারি, ২০২০ গেছিলাম দক্ষিণেশ্বর, আর ফেরার পথে মেলার মাঠে পৌঁছে গেলাম দুপুর দুপুর। উদ্দেশ্য, আগে থেকেই ভেবে রাখা বেশ কিছু বই ঝটিকা সফরে বইমেলা থেকে কিনে বাড়ি ফিরবো। গতবারে বইমেলায় না থাকতে পারার ক্ষেদ কিছুটা তো মিটবে! সে না হয় পৌঁছলাম, তখন ঘড়িতে বাজে বেলা একটা বেজে দশ মিনিট। গাড়ি থেকে নেমে কন্যা ও কন্যার বাবার সাথে মেলায় ঢুকছি,  মনে পড়লো, গেটে তো চেকিং হবে। বই কিনবো বেশ কিছু, সেই জন্য কাঁধে বেশ বড়সড় এক পোঁটলা সদৃশ ব্যাগ নিয়ে গেছিলাম সেদিন। তাতে প্রায় গোটা আটেক চেন, গোটা তিনেক বোতাম। মহিলা সিকিউরিটির সামনে দাঁড়িয়ে সেসব খুলে দেখাবার তোড়জোড় করছি, দেখি তিনি চেয়ারে বসে এক হাতের ইশারায় আমাকে ভেতরে ঢুকে যেতে বললেন। তাঁর অন্য হাত তখন স্মার্টফোনে ব্যস্ত। যাকগে, আমার আর কী, অতশত চেন আর বোতামের সাথে যুদ্ধ করে সময় নষ্টর হাত থেকে বাঁচলাম।

যেসব স্টলে যাবার কথা, সেসবের নম্বর মোবাইলেই নোট করে গেছিলাম। তাই সেসব খুঁজে পেতে বেগ পেতে হচ্ছিলো না। আর তাছাড়া, দেখি ভিড়ও নেই তেমন কোথাও। ভাবলাম, ভরদুপুর বলে বুঝি লোকজনের সংখ্যা কম। একটা স্টলে ঢুকে বই কিনে ফেলেছি, বিক্রেতা ছেলেটির কাছে খুচরোর অভাব। সে বেচারা কাঁচুমাচু মুখে আমাকেই তার স্টলে বসিয়ে খুচরো আনতে ছুটল। ইতিমধ্যে আমাকে সেই স্টলে দেখতে পেয়ে হাঁকডাক করে এসে জড়িয়ে ধরেছে ফেসবুক থেকে পাওয়া এক খুব আদরের বোন, শুভ্রা। আনন্দে আত্মহারা দুজনেই আমরা। সে বায়না করে আমার সাথে ‘সেলফি’ তুলল একখানা। নেহাত সেই নিজস্বীটা থেকে গেল, না হলে এতই তাড়াহুড়োয় ছিলাম, বইমেলায় একখানা ছবি তোলার কথাও মাথায় আসেনি। তখন শুধু বইগুলো কেনার কথা মাথায় ঘুরছিলো।
লেখালিখির জগতে হঠাৎ ঢুকে পড়েছি ২০১২ সাল থেকে। এরপর ছোট পত্রিকাদের সাথে সম্পর্ক গড়ে ওঠা, নিজের বেশ কিছু কবিতার বই প্রকাশিত হতে থাকা, সব মিলিয়ে বইমেলার আকর্ষণ বেড়েছে বই কমেনি। বইমেলায় যেমন বই কিনতে যাই, আবার নানা কারণে নতুন বইগুলোর সাথে পরিচয় পর্ব সেরে আসি, পরে কলেজ স্ট্রিট থেকে কিনে নেবার জন্য। একথা সত্যি, বইমেলায় ছাড় হিসেবে খুব বেশি হয়তো ১০% পাওয়া যায়, সেখানে কলেজ স্ট্রিট থেকে এইসব বই অন্তত ২০% ছাড়ে পাওয়া যায়। এবারেও তার অন্যথা হয়নি। তবু, কলেজ স্ট্রিট যেতেও সময় লাগবে, সেই সময় আবার কবে বের করে উঠতে পারবো দৈনন্দিন ব্যস্ততার মাঝে, এইসব সতেরো-পনেরো ভেবে লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নে বেশিরভাগ ছোট পত্রিকাগুলো আগে খরিদ করে ব্যাগায়ত্ত করলাম। কিছু ছোট পত্রিকার সম্পাদকেরা তখনও রাস্তার নানাবিধ অসুবিধে, বাধা কাটিয়ে পৌঁছোতে পারেননি দেখে ইতিউতি স্টলগুলোয় ঢুঁ মারলাম, কিছুমিছু কিনেও ফেললাম। ভাবছি কী করা যায়, কারণ আমার বাড়ি ফেরার খুবই তাড়া ছিল। যেসব শ্রদ্ধেয় সম্পাদকেরা এসে পৌঁছননি, তাঁদের ফোন করতে গিয়ে বেশ টের পেলাম, জ্যামারাসুরের কবল থেকে নেটওয়ার্কের ফাঁকফোকর গলে আসা যাওয়া কত কষ্টের। তাঁদের আসার অপেক্ষায় শেষমেশ ঠিক করলাম, একটু ঘুরেই দেখি আর কোন কোন স্টলে কী কী বই রয়েছে।

যথারীতি ছোট ছোট স্টল প্রায় ফাঁকা, এদিকে ইতিমধ্যেই জমে উঠছে বড়ো বড়ো প্রকাশনীর স্টলে ভিড়। খারাপ লাগছিলো। ফেসবুকের দৌলতে এই বইমেলার আগে কত নতুন নতুন প্রকাশিতব্য বই বা ছোট পত্রিকার কথা জানতে পারি। প্রকাশকেরা অথবা লেখক/লেখিকারা অথবা সম্পাদকেরা জানাতে থাকেন বারংবার নানা পোস্টের মাধ্যমে। আমিও ব্যতিক্রম নই, আমিও প্রতি বছর বইমেলার আগে নিজের নতুন পুরনো, সব বইয়ের খবর বারবার পোস্টের মাধ্যমে চেষ্টা করি সবার মধ্যে ছড়িয়ে দিতে। এইসব জানান দেবার প্রক্রিয়া নিয়েও নানা জন ব্যঙ্গাত্মক মন্তব্য করে থাকেন লেখকদের প্রতি। তবু এসবের বিরাম নেই। প্রত্যেকটি কলম চায় একটু স্থান করে নিতে সাহিত্যের আঙিনায়। আর্থিক দিক থেকে লাভবান হবার আশা বেশিরভাগ লেখক অথবা সম্পাদকের কাছে প্রায় থাকেই না, থাকে একটাই আশা, প্রকৃত সাহিত্যকে পাঠক ভালোবেসে টেনে নিন নিজের কাছে। কিন্তু এই যে এত কথা বলছি, প্রকৃত সাহিত্য আর প্রকৃত পাঠক, একে অপরকে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হয় খুঁজে পান না, না হয় কষ্ট করে, অযথা আর্থিক অপচয়ের কথা ভেবে পাঠক নতুন কোনও উচ্চমানের সাহিত্যকে আপন করে নেন না। পরিচিতির ওপর, অথবা একে অপরের সাথে ‘হেঁ হেঁ’ সম্পর্ক বাঁচিয়ে রাখতেও কিছু বই অবশ্যই স্টল থেকে  বেরিয়ে কোনও ব্যাগে করে চলে যায় ব্যাগ মালিকের বাড়ি। এই যে এত বড়ো বড়ো কথা লিখে ফেললাম, মোটেও ভাববেন না, আমার মধ্যে প্রকৃত সাহিত্য বা প্রকৃত পাঠককে খুঁজে পাবেন। আমি সোজা সাপটা খাইদাই, সংসার করে সামান্য কলম চালাই, আর ইয়ে, পড়ি কিছুটা। কলম দিয়ে যা বেরোয়, তাই লিখে ফেলি, আর হাতের কাছে পছন্দমতো বইয়ের ব্যবস্থা করে রাখি। তাই তো বইমেলা নিয়ে এত কথা বলছি।

যেসব লোকজন পৌঁছে গেছেন বইমেলায়, তাঁরা বই কিনছেন কম, হইহই করে এমন আদিখ্যেতা আরম্ভ করেছেন পরিচিতদের দেখে, যেন বছর পঞ্চাশেক পর কুম্ভমেলায় হারিয়ে যাওয়া সহোদর বা সহোদরার সাথে দেখা হয়েছে। সেসব বাদ দিলে আরও বেশ নজরে এল, বইমেলার আনাচেকানাচে প্রেমের ছড়াছড়ি। নাহ্‌, বড্ড বাজে বকে ফেলছি। এই আমার মতো সেকেলে মানসিকতার আধাবৃদ্ধার যে সমালোচনা ছাড়া আর কিছুই আসে না, তার প্রমাণ এইসব বিরক্তিকর সমালোচনা।
বইমেলা শেষে খবরের কাগজে দেখলাম বইমেলায় প্রচুর টাকার বই বিক্রি হয়েছে, বেশ ভালো লাগলো খবরটা পড়ে। কিন্তু এটা মানতেই হবে, লোকে বই কেনার থেকে খাওয়ায় অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ… সাবলীল… উৎসাহী। না না, আমার এ ব্যাপারে প্রমাণ দেবার কোনও প্রয়োজন দেখি না। যারাই বইমেলায় গেছেন, তারা প্রত্যেকেই দেখতে না চাইলেও দেখেছেন, নিদেনপক্ষে গন্ধ শুঁকে বুঝে নিয়েছেন জিভে জল আনা খাদ্যসামগ্রী বেচাকেনার উৎসগুলো। বিশ্বাস হচ্ছিলো না আমার, এমন বুভুক্ষার দেশ থেকে লোকজন বইমেলায় আসে! আহারে, ওদের দেখে এক এক সময় বড্ড মায়া হচ্ছিলো। কত যুগের পরপারে এসে তাদের সামনে কেউ খাবার নিয়ে উপস্থিত হয়েছে, তাই তো তারা… আহা!

এবার বইমেলায় একদিন বৃষ্টিতে সকলের নাজেহাল অবস্থার কথা তো সকলেই জানেন। দোষারোপ চলল, চলল আরও নানা কিছুর উত্তাল সমুদ্দুর। তবে হ্যাঁ, ওই যে বলছিলাম না, প্রকৃত পাঠকের কথা… প্রকৃত বইপ্রেমী কিন্তু আজও রয়েছেন। কলকাতার বাইরে থেকে শুধুমাত্র বইমেলা থেকে বই কেনার তাগিদে ছুটে আসা মানুষের সাথে আলাপ হল এখানে। বিদেশী দম্পতির অবাক হয়ে বলা, “Heard about the fair, but never thought this was actually so grand!” তা এসব শুনে আহ্লাদ হয় বইকি! আরও আহ্লাদ হয় যখন দেখি বই  কিনলে বেশ রান্নার তেলটেল একেবারে ফ্রি-ফ্রি-ফ্রি! ভালো লাগে না? আমার তো দারুণ লাগলো। আবার বড়ি, ধূপকাঠি, এসবও দেদার বিকোচ্ছে। বিকোচ্ছে জপের মালাও। এত কিছুর মধ্যে একটা স্বস্তির ব্যাপার ছিল, গাঁকগাঁক করে টিভি চ্যানেলগুলোর স্টলের অনুষ্ঠান শুনতে হয়নি এবার।

গ্যালন খানেক ধুলো নাকে ঢুকিয়ে যখন হাঁচির ঝড় শুরু হবার মুখে আমি, তখন বুঝলাম আর বেশিক্ষণ না। এবার পলায়ন করতেই হবে। তবে তার আগে গেলাম ত্রিপুরা পাবলিশার্স গিল্ডের স্টলে। সেখানে আমার এই বছরের  নতুন কবিতার বইয়ের (বইয়ের নাম – মুরাল তন্ত্র; প্রকাশক – নান্দীমুখ প্রকাশনী, আগরতলা, ত্রিপুরা) কিছু কপি আমার জন্য রাখা ছিলো, তা নিতে গেলাম। এই বইয়ের কিছু কপি বেশ কিছু পাঠক বন্ধু আগাম চেয়ে রেখেছিলেন, তাদের দেবার জন্যও বেশ কিছু কপি নিয়ে নিলাম। লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নে যে কটা পত্রিকা নেওয়া  বাকি থেকে গেছিলো, সেসব নেবার জন্য আবারও গেলাম। এখানে দেখা করলাম ‘ক্লেদজ কুসুম’ পত্রিকার সম্পাদক কবি প্রণবকুমার চট্টোপাধ্যায় দাদার সাথে, ‘শহর’ পত্রিকার সম্পাদক সাহিত্যিক অজিত রায় স্যারের সাথে, ‘কিঞ্জল’ পত্রিকার সম্পাদক বিশিষ্ট লেখক চন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায় দাদার সাথে, ‘দুর্বাসা’ পত্রিকার সম্পাদক বিশ্বজিৎ বাগচী দাদার সাথে এবং ‘শৈলী’ পত্রিকার সম্পাদক লেখক অমলেন্দু চক্রবর্তী দাদার সাথে। দেখা হলো ‘তিতির’ পত্রিকার সম্পাদক মাননীয় সঞ্জয় সাহার সাথে। গেছিলাম ‘ভাষা সংসদ’-এর স্টলে, দেখা হলো সম্পাদিকা ও লেখিকা বিতস্তা ঘোষালের সাথে। এই যে সব দেখা হওয়া, এগুলোয় রয়ে গেল অপরিসীম এক ভালো লাগা, যা বলে বোঝাতে পারবো না। কিন্তু অনেকের সাথে দেখা করতে পারলাম না, যারা বারবার আমাকে ফোনে বা হোয়াটস্যাপে জানতে চেয়েছেন, কবে আসবো বইমেলা, তাদের নিশ্চিত ভাবে জানাতেও পারিনি কবে যাবো, বা আদৌ যেতে পারবো কিনা, এই সব না দেখা হওয়াগুলোর জন্য একরাশ মন খারাপ থেকে গেল।

লিটল ম্যাগাজিন প্যাভিলিয়নে এবং কিছু স্টলেও জানতে পারলাম, বই কেনার থেকে বই চুরি করার ধুম বেশি। তাই সারাক্ষণ বইপত্তরের পসরাকে চোখে চোখে রাখতে নাজেহাল অবস্থা টেবিল/ স্টল মালিকের। প্রতিবারের মতো এবারেও চোখে এবং কানে পড়লো— “আমি কবি অমুক, আসুন আমার নতুন বই এই স্টলে আছে, মেসেঞ্জারে আপনাকে জানিয়েছিলাম…”; “আয় আয়, এই টেবিলে পাবি আমার বই… আচ্ছা তুই কাল আমাকে দুটো কবিতা মেল করে দিবি, আমি অমুক পত্রিকার সম্পাদককে খুব ভালো করে চিনি…”! কন্যার দিকে তাকালাম, কন্যার বাবার দিকেও তাকালাম, কারণ এই নির্লজ্জতা তাদেরও গোচর হয়েছে। ওরা হাসল, নিজের দিকে তাকালাম, আমিও তো কলম ধরি, নয় নয় করে আটখানা বই তো আমারও রয়েছে, এমনটি কেন বলতে পারি না? বলা ভালো, এমনটি বলতে ইচ্ছেও করে না কেন আমার? থাক সে কথা, ফিরি আমার বইমেলার কথায়। বই পত্তরের ভারে তো কাঁধ ব্যথা, কিছু বই ধরিয়েছি মেয়েকেও, মেয়ের বাবাকেও। বেশ কিছু বই কেনা বাকি থেকে গেল তবু। হাতের সময় আর পকেটের রেস্ত তলানিতে ঠেকেছে দেখে ফেরার পথ ধরলাম। ‘Exit’-এর দিকে এগোতে এগোতে বইমেলার দিকে মুখ করে একবার দাঁড়ালাম, ভালো করে তাকালাম, আর মনে মনে বললাম, পরের বছর আবার আসবো গো বইমেলা… তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করবে তো?


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন