ঝুল-বারান্দায় দীপেনবাবু
ছেলেগুলো প্রতিদিন পার্কের পাশে ল্যাম্পপোস্টের নিচটায় জটলা
করে। একজন এগিয়ে এলো, --জ্যেঠু, ক’টা
বাজে?
দীপেনবাবু ঘড়ি দেখে বললেন। ওদের কাছে ঘড়ি নেই, হতেই পারে না! তবু জানতে চাইল কেন, সেটা ভাবছিলেন, এগোচ্ছিলেন। ছেলেগুলো নিজেরা কথা বলছিল,
--কী বোরিং... সময় শালা কাটেই না! যাই, বাড়ি কাটি।
--বাড়িতে গিয়েই বা কী করবি? আরও বোর রে...!
এলাকাটায় নতুন বসতি। খামচা খামচা টাকের মতো খালি প্লট।
গাছের পাতা ঝরে প্রাকৃতিক রিলাক্সন। কুকুরদুটো কুণ্ডলি পাকিয়ে জড়ামড়ি ঘুমোচ্ছে। রাত
বাড়লে, দল বেঁধে পিশাচের মতো
চেঁচায়। আসলে শীত করে বেচারাদের।
মশারি টাঙিয়ে শুয়েছেন দীপেনবাবু। পইপই করে বলে গেছে সুপ্তি। চারদিকে নাকি ম্যালেরিয়ার মশা ঘোরে। ডিমের মতো ডীমলাইট।
সন্ধ্যে পার হয়েছে মাত্র। কাজ নেই, তন্দ্রায় চোখ বুজেছেন, সুপ্তির ফোন।
--হ্যালো কী করছ? খেয়েছ? ওষুধ? বোর
হচ্ছ তো? দেখ তাহলে, সারাদিন আমি একা একা কীভাবে বোর হই
বনবাসে...! নিজেই বোঝ, কোন্ তেপান্তরের মাঠে বাড়ি করেছ!
রোজ এইসব হাবজাবি... প্যাঁচ কেটে যাওয়া কল। গেছে তো আরামে
থাকুক দু’একহপ্তা
দাদার বাড়ি... তা নয়, ঘ্যানর ঘ্যানর! মিনিট পাঁচেক পর
আবার ফোন, দিয়ার।
--বাবা, ঠিক আছ? মা কবে ফিরবে? প্রচণ্ড বোর হচ্ছ, না? আমিও
তাই। দেখ না, এখনও ক্লাস শুরু হয়নি, ট্রেনিং চলছে একটা
প্রিলিমিনারি। তিনদিন তাও নেই। তেমন
চিনি না কাউকে...। শপিং করেও বোর হচ্ছি।
ঘুমটা এরকম দু’বার তাড়া খেয়ে পালালো। দীপেনবাবু ঝুল বারান্দায়
গিয়ে বসলেন। ঘুটঘুটে অন্ধকার,
কারেন্ট গেছে বোধহয়। একতলায় গ্যারেজ, একটা খুপরি, আর বাথরুম। কতজন বলেছিল, রিটায়ারমেন্টের
পর লাইফ সাঙ্ঘাতিক বোর। সময়টা বিরাট বোঝা হয়ে
দাঁড়াবে... বিনা ওষুধে ঘুম হবে না। কত আর বই-কাগজ পড়া যায়! ছ’টা
মাস পেরিয়ে গেল, এখনও যাথার্থ্য উপলব্ধি হয়নি... বরং মুক্ত-মুক্ত অনুভূতি।
ঝিঁঝিঁগুলো চেঁচিয়ে রাত বাড়াচ্ছে। দীপেন ভাবছিলেন, সকলে সব সময়ে এত ‘বোর’ হয়, অথচ তিনি কেন যেন তেমন...! দিব্যি আছেন।
সেজন্যেই সুপ্তি বলে, ‘আবোধা’। হবেও তাই। আরে বাবা, এটা
ভাবে না, সকাল-দুপুর-বিকেল-রাত্তির ভাগ করাই থাকে –
চব্বিশঘণ্টা। এর থেকে লম্বা কি আর একটা দিন? ব্যস্, দিনের মতো দিন নিঃশব্দে বয়ে,
পার হয়ে যায়। অনেক কাজকর্ম করার থাকলেও দাঁড়ায় না, না করার থাকলেও না। খবরের কাগজ
ছাড়া, বইটই পড়ার খুব একটা অভ্যেস নেই। পাড়ার প্রবীণবৃদ্ধ ও সদ্যবৃদ্ধেরা মিটিং
করে, দু’বেলা গজল্লা করে – দু’একদিন গিয়েছিলেন, আর যান না।
অন্ধকার ক্রমশ বিশাল জালের আকারে ছড়িয়ে গেছে পুরো এলাকায়।
দীপেনবাবুর ঘোর লেগেছে। জালের মধ্যে ছোট ছোট ফাঁক সুতোর
বুনটে। তার মধ্যে কি ফুটেছে? তিনি চশমা খুলে নিলেন। এইবার একেবারে স্পষ্ট। উনিশ’শ চুয়ান্ন...
তারিখ-বার- মাস-বছর সব স্পষ্ট।
বাঃ! আরও খুলে যাচ্ছে – আরও অনেক কুটিকুটি লেখা তারিখ। আগের ও
পরের। নেচে নেচে সামনে আসছে, যাচ্ছে। সব যে পড়া যাচ্ছে, তাও নয়। চুনোমাছের ঝাঁক
এবার কোটি কোটি জোনাকির মতো চিকচিক। দারুণ উপভোগ করছেন দীপেনবাবু।
ঘুম ভাঙালো পুবের ঝুল বারান্দায়
রোদ্দুর। খানিক আগে ছিল রাত্তির, আবার পালটে গেল। কী করে লোকে বোর হয়,
দীপেনবাবু এখনও বুঝে উঠতে পারলেন না। চলার নামই তো সময়।
ভয় পাইয়ে দিলেন একটু। আমার হাতে আর আড়াই বছর। তবে আমার বাড়িটা একদম হাইওয়ের ওপরে, এইটাই ভরষা।
উত্তরমুছুনআপনার চিন্তা কি? লেখা - পড়া - পড়া -লেখা...
উত্তরমুছুনশ্রাবণী। :D
Dimer moto dim light.. ami kintu chhotobelay sotyi e bhabtam,- dimer moto bolei oke dimlight bola hoy :D.. bhalo laglo..
উত্তরমুছুন-Alokparna