কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

বুধবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৪

১৬) অপর্ণা গাঙ্গুলী


আয়না

খুব আউটগোয়িং মেয়ে উড়নিl সল্ট লেকের আই টি সেক্টর-এ কাজ পাবার পর  তাকে আর পায় কে? ক্লাবস্‌ পার্টিস্‌ ডান্সিং ফ্লোর বন্ধুবান্ধব বয়ফ্রেন্ডস এই নিয়ে  জমজমাট জীবন... গভীর ভাবে কিছু চিন্তা ভাবনা করার সময় নেই উড়নির... জীবনটা যেন পাখির ডানায় ভর করে উড়ে চলেছে... স্পা, বিউটি পার্লারে  রোজগারের একটা বড় অংশ খরচ করে... অসাধারণ রূপসী এবং লাস্যময়ী সুন্দরী হযে ওঠা এখন ওর জীবনের একমাত্র উদ্দেশ্য... বড়লোক বাবার একমাত্র মেয়ে উড়নির তাই মাটিতে আর পা ঠেকে না... আয়না তাকে ঠকায় না, তাই নার্সিসাসের  তো আয়না দেখা তার অসুখl

সেদিন অফিসে কার্ড পাঞ্চ করে সবে ঢুকেছে, অরিন এসে আলাপ করিয়ে দিল মেয়েটির সাথে, সুমনা... বড্ড বেশি মোটা আর গায়ের রং বেশ চাপা... কিন্তু রিনরিনে মিষ্টি গলা আর ব্যবহার ভালো... মনে মনে নাক সিটকে উঠলো উড়নির...  যা রূপের ধ্বজা, ওই নিয়ে পিপল হ্যান্ডলিং করবে, তবেই য়েছে!

সুমনা দেখা গেল বেশ সপ্রতিভ এবং কাজের...  প্রথম দিনেই সে সবার বেশ কাছের মানুষ হযে উঠেছে... উড়নিকে যে সবাই তেমন করে খুব পছন্দ করে, তা নয়...  এইচ আর- থাকলেও সে খুব নিজের মধ্যেই থাকে... সুমনার এই পপুলারিটি উড়নির একটু অসন্তোষের কারণ যে হলো না, তা নয়... তবু একটাই স্বান্তনা... যা দেখতে, কালোবস্তা একখানা... ইসস!

সেই রাতে একটা দ্ভু স্বপ্ন দেখল উড়নি... অফিসের আফটার পার্টির পর একটু  রাত হযেছিল ফিরতে, সে একাই থাকে তার এপার্টমেন্টে। স্বপ্ন দেখল, তার চেহারা  একদম বদলে গেছে... ঘুমটা ভেঙ্গেই গেল... অস্বস্তি,  কী বাজে স্বপ্ন রে বাবা...  অনেকক্ষণ উসখুস করার পর, তার মনে হলো যাই গিয়ে নিজেকে আয়নায় দেখেই আসি না হয়’... আলো জ্বেলে আয়নার কাছে যেতেই... কাকে দেখছে উড়নি...  সুমনা... না না হতেই পারে না... কী কুৎসি, দুহাতে ঢাকলো নিজের মুখ... আবারও খুলল, আবার সেই এক প্রতিচ্ছবি... সুমনা...

কী করবে সে এখন... ভাবতে ভাবতে মোবাইল ফোনটা ছুড়ে দিল আয়নার দিকে...   বিশাল একটা ফাটল হলো বটে,  কিন্তু প্রতিচ্ছবি গেল না... ওই তো রাত-জামা পরা কুরূপা সুমনা'... ওর দিকে তাকিয়ে আছে!

যা আছে ঘরে, সব ছুড়তে লাগলো আয়নার দিকে... তার সাধের আয়নাটি,   বেলজিয়ান গ্লাসের... কত সাধ করে বানানো... অথচ এই আয়্নাটিকে যতবার জিজ্ঞাসা করেছে,  ‘Who is the fairest of all?’ আয়না উড়নিকেই তো দেখিয়েছে... কালি মাখালো আয়নাতে... লাইটার দিয়ে প্রতিবিম্ব জ্বালাতে গেল একসময়, কোনো ফল নেই!

পরদিন কাগজে খবর, উড়নি বিশ্বাস নামের এক আই টি কর্মরতা ত্রিশোর্ধ মহিলা...   গতকাল রাতে তার নিজের এপার্টমেন্টে suicide করেছে... কারণ, অফিসের অসম্ভব স্ট্রেস এবং একাকীত্ব...

সুমনা অফিসে আসতেই তাকে জানানো হলো, সে খুবই দু:খিত... আর উড়নির পোস্টে শেষ পর্যন্ত সেই বহাল হয়ে গেল... তারপর থেকে...

0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন