ভোর হলো দোর খোল
এক হাতে তেলের শিশি আরেক হাতে মানচিত্র নিয়ে হেঁটে চলেছে খুকু।
সাবধানতায় মানচিত্র মাটিতে পড়েছে। কিছু টুকরো মিশে গেছে। খেয়াল হয় নি।
পাহাড় গড়িয়ে গেছে তেরোটা জন্মদিনের পর। মা বলেছিল, নদীকে সামলে রাখিস। খুকু
আগলে রেখেছে দু’পাড়। ফিরিয়ে দিয়েছে প্রথম ব্রীজের প্রস্তাব। সেই নিঃশব্দ কান্না
ক্যানভাসে ফুটিয়ে তুলেছে। জলের রঙে। নৌকার বিশ্বাসে। গন্ধটুকু রুমাল চেপে বেসিনে
ধুয়ে ফেলেছে। নদী গতিপথ বদলায় নি একচুল। যথারীতি ভাসিয়েছে ধানক্ষেত। আপাতত
গ্রামগুলি। ভাসিয়ে দেওয়া নিয়ে সবার গর্ব থাকে। খুকুরও ছিল। নদীতে চান করে গেছে
ভিড়। একজন হয়ে উঠতে পারে নি কেউ। নদী গ্রাম ছেড়ে শহরে আসে। দুইপাশে বাগান সাজে।
মায়ের কথা ভুলে যায় খুকু। দুপুর আর পাখির দেখা হয় নদীর বাগানে। ছটফটানি ছড়িয়ে পড়ে।
খুকু হাততালি দেয়। খুলে পড়ে পাহাড়। আওয়াজ করে নদী। খুকু মানচিত্রে দাগ নিয়ে ঘরে
ফিরে আসে। যুদ্ধের দাগ। খুকু তেলের শিশি সামনে ধরে। আড়াল করে দাগ। মা সমুদ্রের কথা
বলে খুকুকে। খুকু কেঁদে ফেলে। ভক্তি হয় সমুদ্রের জন্য। অপেক্ষা অভ্যাস করে সে।
খুকু জানে না চিতাকাঠ সাজানো থাকে মোহনায়। চন্দনের গন্ধে ভিড় আসে। বাবা কাঁদে। মা
নিজেকে শক্ত করে অভিজ্ঞতা দিয়ে। নদী সমুদ্রে গিয়ে মেশে। সানাই বেজে ওঠে। মানচিত্রে
ফুল লাগানো হয়। রাত নির্দিষ্ট হয়। রাজা অধিকার নেয়। খুকু মানচিত্র মানে দেশ ভাবে।
রাজা নদী আর পাহাড় ছাড়া কিছুই দেখতে পায় না। ছিঁড়ে ফেলে জাতীয় পতাকা। খুকুর কান্না
পায়। সমানভাবে রাজার হাসি পায়। নদীকে অভিশাপ দেয় খুকু। শিশি ভেঙে ফেলে খুকু।
সন্ধের সূর্য গড়িয়ে পড়ে। রাজা নাচতে নাচতে পিছল খায়। খুকু হাসে। চাঁদ দেখে ঘুমোতে
যায়।
আমরা খুকুকে ফুল পাঠাই তার শেষ
জন্মদিনে।
দুর্দান্ত একটা লেখা । দৈনন্দিন জীবনের অনুভূতিকে অক্ষরের শরীরে সংযতভাবে বেঁধে ফেলা হয়েছে ।
উত্তরমুছুন