রিক্তার একদিন
ঘটনাটা ঘটার পরদিনই রিক্তা ফোনে জানিয়েছিল। তখন ভেবেছিলাম পরে এটা
নিয়ে কখনও লিখব। ওকে বলেওছিলাম সেটা। লেখা হয়নি। এখন দেখছি ওখানেই প’ড়ে আছে
গল্পটা। খুব সংক্ষেপে গল্পটা এই, নোয়াপাড়া থেকে মেট্রোয় উঠেছিল রিক্তা। রোব্বারের
দুপুর, ফাঁকা মেট্রো। শ্যামবাজারে একটা মেয়ে ওঠে। রিক্তার উলটো দিকেই সে বসে।
লেডিজ সীটে। এবং পুরো কালীঘাট অবধি সে প্রায় নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে রিক্তার দিকে।
অস্বস্তিতে রিক্তা চোখ ফেরায়। আবার চোখ চলে যায়। একনজরে কেউ দেখছে মনে হলে মানুষের
অপাঙ্গ এবং মাথার দু’ পাশের রগে একটা চৌম্বকশক্তি যেভাবে সেই চোখের দিকে টানে।
পরবর্তী স্টেশন সম্পর্কে ধাতব ও কেজো নারীকন্ঠের পূর্বাভাস, প্লাটফর্মে ট্রেনের
থামা, স্বয়ংক্রিয় দরজার খোলা, যাত্রীদের যুগপৎ নামা-ওঠা ও তজ্জনিত শব্দ, দরজার
বন্ধ হওয়া, কিছুই এ মেয়েটিকে বিচলিত করে না। ফলত রিক্তাকেও ভাবতে হয়, কে এই মেয়ে? এক্স স্টুডেন্ট? থিয়েটারের
চেনা কেউ? কোনও রিলেটিভ সোর্স? কালীঘাটে রিক্তা নেমে গেলে, মেয়েটিও নামে। ডানদিকে
ফেলা আড়চোখে রিক্তা টের পায়। সিঁড়ির কাছাকাছি পৌঁছলে, একটি মিহি আধুলি মেঝেতে পড়লে
যে চিকন শব্দ তোলে, সেরকম আওয়াজে মেয়েটি ডাকে, ‘স্কিউজ মি’। রিক্তা ঘাড় ফেরানোর সঙ্গে সঙ্গে দেখতে পায় মেয়েটি তার দিকেই শ্লথ রান-আপে ছুটে আসছে
এবং নিজের বাম হাত ও ডান হাত দিয়ে রিক্তার ডানদিকের ঘাড় ও বামদিকের কাঁধ যুগপৎ
জড়িয়ে ঠোঁট ও জিভের সঙ্ঘবদ্ধ সংশ্লেষে একটি সার্থক চুম্বন সম্ভব করে। আশপাশে
দাঁড়িয়ে থাকা গুটিকয় মাত্র নির্ভেজাল পুরুষ রবিবাসরীয় দ্বিপ্রাহরিক এই দুর্ঘটনার
আকস্মিক পাতে টোলপাঠ্য সবকিছু ভুলে যায় এবং আহা কি দেখিলামসুলভ সেই বিহ্বলতাজনিত
কারণ ও সুযোগের পূর্ণ সদ্ব্যবহারে মেয়েটিও মাথা নিচু ক’রে উলটো দিকের সিঁড়ি ধ’রে
শহরের পাতাল থেকে যেন জন্মজন্মান্তরের মতো বেরিয়ে যায়। রিক্তাও ‘একমুহূর্তও
আর এখানে নয়’ ভেবে দেরি না ক’রে বেরোয়। রুমালে ঠোঁট মুছতে মুছতে। এবং নিজের ঘামের
গন্ধ থেকে সে এরপর সারাদিন বুঝতে পারে তার শরীর থেকে বেরুচ্ছে রিক্তার নিজের নয়,
ওই মেয়েটির গন্ধ। এক বিছানায় দু’জন মানুষ ঘন আদরসন্নিবদ্ধ থেকে, শেষে উঠে গেলে
যেভাবে বালিশে, চাদরে এবং সেই মানুষ দু’টির গায়ে একে-অপরের গন্ধ রয়ে যায়, বেশ
কিছুক্ষণ। আশ্চর্য এই, সেদিন রাতে, বিছানায়, রিক্তার বর কৃষ্ণেন্দু, অনেকদিনের
চেনা এক গন্ধ হঠাৎ ফিরে পেয়ে আরও সর্বগ্রাসী হয়ে ওঠে।
আশ্চর্য
উত্তরমুছুন