চুম্বন - একটি অফবিট ফিচার
Kiss
নানা ঘটনার ঘনঘটায় ভরা এই ব্যাপারটির সূত্রপাত হিসেবে টেক্সাসের A & M বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক Vaughn Bryant জানিয়েছিলেন, মূলত নিজের সংগ্রহ করে আনা খাবার নিজের সন্তানদের মুখে তুলে দিতেই প্রথম চুম্বনের উৎপত্তি। মোটামুটি ভাবে বলা হয়, খৃস্টের জন্মেরও প্রায় ১৫০০ বছর আগে শুরু হয়েছিল বহুল চর্চিত এই বিষয়টি এবং এই বিষয়টির উল্লেখ প্রথম পাওয়া যায় সংস্কৃত সাহিত্যে। মহাভারতেও আমরা পাই এই বিষয়ের উল্লেখ। এরপর এই বিষয়টি নিয়ে তুমুল হইচই শুরু হয় আরও অনেক বছর পরে, যখন বাৎস্যায়নের কামসূত্র জনসমক্ষে নিয়ে আসে বিষয়টিকে। বলা হয়, কামসূত্রের রচনাকাল সম্ভবত ৬ষ্ঠ শতাব্দী। সেই সময়কালীন পটভূমিতে দাঁড়িয়ে বাৎস্যায়ন বর্ণনা করেছিলেন আট প্রকারের চুম্বনের বিশদ বিবরণ। ১। নিমিত্তক চুম্বন ২। স্ফূরিয় চুম্বন ৩। ঘটিত্মক চুম্বন ৪। সমচুম্বন ৫। প্রতিবোধ চুম্বন ৬। দ্যূত চুম্বন ৭। রাগ সন্দীপক চুম্বন ৮। সমউস্থ চুম্বন। রোমানরা ছিল এ বিষয়ে অগ্রণী। রোমান সাহিত্যেও ভিন্ন তিন প্রকারের চুম্বনের উল্লেখ পাই আমরা। Osculum (গালে চুম্বন) (ঠোঁটে চুম্বন) এবং Savollium (ইংরেজিতে যাকে smooch বলে অর্থাৎ গভীর চুম্বন। এই রোমানরাই কিন্তু প্রথম এই বিষয়টি নিয়ে রীতিমতো চর্চা করে এবং বাস্তব জীবনে তাকে প্রয়োগও করে। আজকের এই কুড়ি বাইশের ফুটন্ত যৌবনরাও কিন্তু সেই কস্মিন কালের রোমানীয় চুম্বন পদ্ধতি মেনেই ঠোঁটে ঠোঁট অথবা চিবুকে ঠোঁট রাখে। বিবাহ ছাড়াও ব্যবসায়িক নীতি সফল হলেও গালে আলতো উষ্ণ চুম্বন এঁকে দেওয়া কিন্তু প্রথম শিখিয়েছিল এই রোমানরাই।
Kissing under the mistoletoe
আজকে না হয় আমরা অনায়াসে এই ব্যাপারটা স্বীকার করে নিয়েছি, কিন্তু আজ থেকে প্রায় ১৪০০ বছর আগে এটা ছিল ঘোর অপরাধ। বাৎস্যায়ন তথা অন্যান্য কাম শাস্ত্রকারদের মতে, চুম্বনের উদ্দ্যেশ্য হলো কামাবেগকে আরও বাড়ানো বা সোজাসুজি ভাবে বললে শরীরবাস (love making) সহজ করা। তবুও আমি বিশ্বাস করি, চুম্বন নিছকই কামাবেগ জড়িত নয়। মা যেমন তার সন্তানদের চুম্বনে ভরিয়ে দেয়, তেমনই ধর্মভীরু মানুষ বারংবার মন্দির চার্চ বা মসজিদের মাটি চুম্বন করে। আসলে চুম্বন হলো একটা প্রতিক্রিয়া, আমাদের আবেগ আমাদের উপলব্ধির বাহ্যিক প্রকাশ।
What an incredible smell !
আমরা যখন একে অন্যের গালে গাল ঘষি, আলতো চুম্বনের ছোঁয়া দিই, তখন এস্কিমোরা একে অপরের ঘ্রাণ নেয় চুম্বনের সাথে সাথে। আসলে চুম্বন এবং তার বাহ্যিক প্রতিক্রিয়া মূলত নির্ভর করে পারিবারিক এবং সামাজিক পরিস্থিতির ওপর, আর এ বিষয়ে এখনও পাশ্চাত্য অনেকটাই এগিয়ে প্রাচ্যের থেকে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ তখন সদ্য শেষ হয়েছে। নিউ ইয়র্কের Times Sqaureএ তোলা একটি ছবি হুলুস্থুল ফেলে দেয় আপামর বিশ্বে। আসলে 'চুম্বন' শব্দটির সাথে ৯০ শতাংশ মানুষই সহবাস করেন। কেউ জনসমক্ষে আবার কেউ বা নিভৃত কুঞ্জে।
কিন্তু কেন চুম্বন?
এক কথায় কাজ সারতে গেলে সবাই বলবেন, ভালো লাগে তাই! আবার যাঁরা গবেষণা করতে বসবেন, তাঁরা হয়তো বলবেন সম্পূর্ণ বিপ্রতীপ কথা। সেসব বিতর্কে আমরা নাই বা গেলাম! একটুই না হয় বলি যে আমাদের স্নায়ুপেশীগুলির সঙ্গে তীব্র যোগাযোগ রয়েছে ঠোঁট এবং জিভের। আর তাই এই দুটি প্রত্যঙ্গ যখন উত্তেজিত হয়, তখন আমাদের স্নায়ুপেশীগুলি আরও বেশি মাত্রায় সক্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে সেই গা শিরশিরে ভাব!
I have yet to be kissed
in a manner
so passionate and incandescent
that it has yet to leave my lips,
never to be forgotten.
‘অপেক্ষা’ শব্দটি বড্ড কেজো, দ্যোতনাহীন; তাই ‘প্রতীক্ষা’ শব্দটি বরং থাকুক ওষ্ঠে চুম্বনের তীব্র অভিপ্রায় নিয়ে।
(শিরোনামের নিচে পরিবেশিত ছবিটির নাম কিস (kiss)। ঊনবিংশ শতাব্দীতে ছবিটি এঁকেছিলেন ফ্রান্সেস্কো হেয়েস (Francesco Hayes)। ঊনবিংশ শতাব্দীর আগে পর্যন্ত চুম্বন বিষয়টি তেমন ভাবে দেখা যায় না পাশ্চাত্য শিল্পকর্মে। পরে অবশ্য অনেক বেশি শারীরিক হয়ে ওঠে পাশ্চাত্য শিল্প।)
দুর্দান্ত লেখা
উত্তরমুছুনkhub valo ekti lekha
উত্তরমুছুন