শান্ত্বনু, তোমাকে
কাজল সেন
আলোর সভায় আজ এসেছে মৌপিয়া। আলো। চারদিক ঘিরে আলো। চারপাশ ছড়িয়ে আলো। মৌপিয়ার মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত হামলে পড়েছে আলো। অনেক অনেক আলো। সেই আলোয় বিভ্রান্ত না হয়ে মৌপিয়া আজ কিছু বলতে চায়। উচ্চারণ করতে চায় কবিতার মতো কিছু পংক্তি। গানের মতো কিছু বাণী।
অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেল, তার পাশে নেই শান্ত্বনু। কোথায় হারিয়ে গেল শান্ত্বনু? কোথায়? খুঁজতে খুঁজতে প্রায় সারা দেশটাই চষে ফেলেছে মৌপিয়া। কিন্তু না, খুঁজে পায়নি কোথাও। বিদেশে গিয়েও খোঁজার কথা ভেবেছিল। কিন্তু আর কত খুঁজে বেড়াবে মৌপিয়া? অথচ তার খোঁজাও তো শেষ হয়নি আজও! এবং আজ এই আলোর সভায় এসেও মৌপিয়া খোঁজার চেষ্টা করে শান্ত্বনুকে। এত আলোতেও যদি খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে কোন্ অন্ধকারে খুঁজে বেড়াবে সে!
শরীরের খুব কাছাকাছি শান্ত্বনুকে পেয়েছিল মৌপিয়া। খুব কাছাকাছি। মৌপিয়া তাকে টেনে নিয়েছিল আরও কাছে। টানটান তরতাজা শরীর ছিল শান্ত্বনুর। প্রতিটি মাংসপেশী থেকে ঠিকরে বের হতো উজ্জ্বল পৌরুষ। শান্ত্বনুর ঘামের গন্ধেও ছিল এক অদ্ভুত মাদকতা। সেই গন্ধে কেমন যেন উন্মাদ হয়ে যেত মৌপিয়া। টিপ টিপ করে জ্বলে উঠতো তার শরীর ও মনের সমস্ত দীপ। সর্বাঙ্গে আলো জ্বেলে তখন মৌপিয়া নিজেই যেন এক উজ্জ্বল আলোর সভা। সেই আলোর সভায় শান্ত্বনু উচ্চারণ করতো কবিতার মতো কিছু পংক্তি। গানের মতো কিছু বাণী।
আজকের এই আলোর সভা শুধুমাত্র মৌপিয়ার জন্য। আজ তার একক অনুষ্ঠান। আলোর বৃত্তের বাইরে থাকা অসংখ্য মানুষ তার শ্রোতা। দর্শক। আর একটু পরেই মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত অনাবিল আলোর সব ঐশ্বর্য নিয়ে একটু একটু করে নিজেকে উন্মোচিত করবে মৌপিয়া। কিছু কথা, কবিতার মতো কিছু পংক্তি, গানের মতো কিছু বাণী। অথচ শান্ত্বনু আজ পাশে নেই। আত্মউন্মোচনের এই দিনে যদি শান্ত্বনু এখন পাশে থাকতো!
কিন্তু তার প্রকৃত উন্মোচনপর্ব তো কবেই হয়ে গেছে! সেই কবে! উন্মোচনকারী ছিল স্বয়ং শান্ত্বনু। তার আগে কি আদৌ নিজের কাছে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছিল মৌপিয়া? নিজেকে চিনতে পেরেছিল? বুঝতে পেরেছিল? এমন কী নিজের শরীরটাকেও কি কখনও নিভৃতে নীরবে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত উদার করে দেখেছিল? বরং শান্ত্বনুই প্রথম তাকে করেছিল উন্মুক্ত। তার শরীর। রূপ। সৌন্দর্য। মন। ব্যক্তিত্ব। অস্তিত্ব। সবকিছু। শান্ত্বনুর আলোতেই সেদিন প্রথম নিজের বাইরে ও ভেতরে আলো জ্বেলেছিল মৌপিয়া। আর সেই আলোতেই সে একটু একটু করে উপলব্ধি করেছিল তার নারীসত্ত্বার সবটুকু।
আজ এই আলোর সভায় এসে মৌপিয়ার চোখ খুঁজে বেড়ায় শান্ত্বনুর চোখ। যে চোখে চোখ রেখে মৌপিয়া একদিন খুঁজে পেয়েছিল কবিতার মতো কিছু কিছু পংক্তি। গানের মতো কিছু কিছু বাণী। কিন্তু শান্ত্বনু এখন কোথায়? আর একটু পরেই এই আলোর সভায় উন্মোচিত হবে একটি বই। একটি কবিতার বই। মৌপিয়ার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই। যে বই থেকে কিছু কবিতা উচ্চারণ করবে আজ মৌপিয়া। আর কবিতার মতো, গানের মতো উচ্চারণ করবে তার একান্ত গভীর নির্জন কিছু কথাও। এই বইয়ের প্রতিটি কবিতার প্রতিটি পংক্তিতে অন্তর্লীন হয়ে আছে শান্ত্বনু। অন্তর্লীন হয়ে আছে মৌপিয়া নিজেও। আর বইয়ের উৎসর্গ পাতায় যাবতীয় আলো এবং অন্ধকার জড়ো করে বসে আছে দুটি শব্দ – ‘শান্ত্বনু, তোমাকে’।
কাজল সেন
আলোর সভায় আজ এসেছে মৌপিয়া। আলো। চারদিক ঘিরে আলো। চারপাশ ছড়িয়ে আলো। মৌপিয়ার মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত হামলে পড়েছে আলো। অনেক অনেক আলো। সেই আলোয় বিভ্রান্ত না হয়ে মৌপিয়া আজ কিছু বলতে চায়। উচ্চারণ করতে চায় কবিতার মতো কিছু পংক্তি। গানের মতো কিছু বাণী।
অনেকগুলো বছর পেরিয়ে গেল, তার পাশে নেই শান্ত্বনু। কোথায় হারিয়ে গেল শান্ত্বনু? কোথায়? খুঁজতে খুঁজতে প্রায় সারা দেশটাই চষে ফেলেছে মৌপিয়া। কিন্তু না, খুঁজে পায়নি কোথাও। বিদেশে গিয়েও খোঁজার কথা ভেবেছিল। কিন্তু আর কত খুঁজে বেড়াবে মৌপিয়া? অথচ তার খোঁজাও তো শেষ হয়নি আজও! এবং আজ এই আলোর সভায় এসেও মৌপিয়া খোঁজার চেষ্টা করে শান্ত্বনুকে। এত আলোতেও যদি খুঁজে না পাওয়া যায়, তাহলে কোন্ অন্ধকারে খুঁজে বেড়াবে সে!
শরীরের খুব কাছাকাছি শান্ত্বনুকে পেয়েছিল মৌপিয়া। খুব কাছাকাছি। মৌপিয়া তাকে টেনে নিয়েছিল আরও কাছে। টানটান তরতাজা শরীর ছিল শান্ত্বনুর। প্রতিটি মাংসপেশী থেকে ঠিকরে বের হতো উজ্জ্বল পৌরুষ। শান্ত্বনুর ঘামের গন্ধেও ছিল এক অদ্ভুত মাদকতা। সেই গন্ধে কেমন যেন উন্মাদ হয়ে যেত মৌপিয়া। টিপ টিপ করে জ্বলে উঠতো তার শরীর ও মনের সমস্ত দীপ। সর্বাঙ্গে আলো জ্বেলে তখন মৌপিয়া নিজেই যেন এক উজ্জ্বল আলোর সভা। সেই আলোর সভায় শান্ত্বনু উচ্চারণ করতো কবিতার মতো কিছু পংক্তি। গানের মতো কিছু বাণী।
আজকের এই আলোর সভা শুধুমাত্র মৌপিয়ার জন্য। আজ তার একক অনুষ্ঠান। আলোর বৃত্তের বাইরে থাকা অসংখ্য মানুষ তার শ্রোতা। দর্শক। আর একটু পরেই মাথার চুল থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত অনাবিল আলোর সব ঐশ্বর্য নিয়ে একটু একটু করে নিজেকে উন্মোচিত করবে মৌপিয়া। কিছু কথা, কবিতার মতো কিছু পংক্তি, গানের মতো কিছু বাণী। অথচ শান্ত্বনু আজ পাশে নেই। আত্মউন্মোচনের এই দিনে যদি শান্ত্বনু এখন পাশে থাকতো!
কিন্তু তার প্রকৃত উন্মোচনপর্ব তো কবেই হয়ে গেছে! সেই কবে! উন্মোচনকারী ছিল স্বয়ং শান্ত্বনু। তার আগে কি আদৌ নিজের কাছে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছিল মৌপিয়া? নিজেকে চিনতে পেরেছিল? বুঝতে পেরেছিল? এমন কী নিজের শরীরটাকেও কি কখনও নিভৃতে নীরবে সম্পূর্ণ উন্মুক্ত উদার করে দেখেছিল? বরং শান্ত্বনুই প্রথম তাকে করেছিল উন্মুক্ত। তার শরীর। রূপ। সৌন্দর্য। মন। ব্যক্তিত্ব। অস্তিত্ব। সবকিছু। শান্ত্বনুর আলোতেই সেদিন প্রথম নিজের বাইরে ও ভেতরে আলো জ্বেলেছিল মৌপিয়া। আর সেই আলোতেই সে একটু একটু করে উপলব্ধি করেছিল তার নারীসত্ত্বার সবটুকু।
আজ এই আলোর সভায় এসে মৌপিয়ার চোখ খুঁজে বেড়ায় শান্ত্বনুর চোখ। যে চোখে চোখ রেখে মৌপিয়া একদিন খুঁজে পেয়েছিল কবিতার মতো কিছু কিছু পংক্তি। গানের মতো কিছু কিছু বাণী। কিন্তু শান্ত্বনু এখন কোথায়? আর একটু পরেই এই আলোর সভায় উন্মোচিত হবে একটি বই। একটি কবিতার বই। মৌপিয়ার প্রথম প্রকাশিত কবিতার বই। যে বই থেকে কিছু কবিতা উচ্চারণ করবে আজ মৌপিয়া। আর কবিতার মতো, গানের মতো উচ্চারণ করবে তার একান্ত গভীর নির্জন কিছু কথাও। এই বইয়ের প্রতিটি কবিতার প্রতিটি পংক্তিতে অন্তর্লীন হয়ে আছে শান্ত্বনু। অন্তর্লীন হয়ে আছে মৌপিয়া নিজেও। আর বইয়ের উৎসর্গ পাতায় যাবতীয় আলো এবং অন্ধকার জড়ো করে বসে আছে দুটি শব্দ – ‘শান্ত্বনু, তোমাকে’।
0 কমেন্টস্:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন