কালিমাটি অনলাইন

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

একাদশ বর্ষ / দশম সংখ্যা / ১২০

শনিবার, ১৫ জুলাই, ২০২৩

মিষ্টি মিত্র

 

কালিমাটির ঝুরোগল্প ১২০


রাজরানির রূপকথা 

রিতু কলেজ থেকে দ্রুত গেটের দিকে এগোয়। ঘড়িতে বিকেল পেরিয়ে সন্ধে প্রায় হব-হব। একটা ফার্স্ট প্যাসেঞ্জার আছে, ঠিক কটায় যেন? চট করে মোবাইল অ্যাপের দিকে চোখ রাখে। হাতে মোটামুটি আর আধঘন্টা-টাক সময় আছে। টোটোয় বসে মোটামুটি একটা ছক কষে নেয়। স্টেশনে নেমেই সে টাকা তুলবে, এককাপ দুধচা, সকালের পর একবারো চা খাওয়া হয়নি, তারপর স্ট্রেট প্লাটফর্ম। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির মধ্যে এত কিছু করেও রিতু আরো কিছুটা এক্সট্রা সময় পায়, ট্রেন প্রায় ১০ মিনিট লেট। ট্রেনে জানলার ধারে বসে বৃষ্টির ফোঁটা দেখতে দেখতে ওর মনে পড়ে কলকাতার কথা, কলেজের দিনগুলো। এইভাবে ট্রেন ধরা, কলেজ যাওয়া। মনে মনে হেসে ওঠে। ভাগ্যের চাকা আবার সেই চেনা পুরনো ট্র্যাকে। অবশ্য ফোকাস এখন আর সে নিজে নয় – ছেলে।

কপাল ভাল, ট্রেন আজ ছাড়তে খুব একটা লেট করেনি। ট্রেন ছাড়তেই পুরনো অভ্যেস – কিছু একটা খেতে ইচ্ছে করছে। অবশ্য আজ সকাল থেকে বিশেষ কিছু খাওয়াও হয়নি। সামনের ছোলা বাদাম চিঁড়েওয়ালার কাছ থেকে এক প্যাকেট সাদা চিঁড়ে নেয় সে। মশলাহীন। চল্লিশ পেরোনোর পর আজকাল ক্যালরি মেপে খাওয়া, এমনকি চালশে পর্যন্ত। রিতু ব্যাগ থেকে দামী ফ্রেমের প্রগ্রেসিভ লেন্সের চশমা বের করে। একটা কবিতার বই – ‘জানি তারো পথ দিয়ে বয়ে যাবে কাল / কোথায় ভাসায়ে দেবে সাম্রাজ্যের দেশ বেড়াজাল / জানি তার পণ্যবাহী সেনা / জ্যোতিষ্কলোকের পথে রেখামাত্র চিহ্ন রাখিবে না’। কুড়ি বছর আগের কথা মনে পড়ল। সব সত্যিই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। ট্রেনের হাওয়া পাতা ওল্টায়। সাগর থেকে ফেরা – ‘হাওয়া বয় শন্‌শন্‌ তারারা কাঁপে / হৃদয়ে কি জং ধরে পুরনো খাপে?’ সামনে এক রাজার ছবি, যাকে ও রোজ ছুঁয়ে যায়। হঠাৎ মনে হল আশেপাশের লোকেরা ওর দিকেই চেয়ে আছে। 

নির্ধারিত সময়েই ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছে গেল। টোটোস্ট্যান্ড। এক চেনা টোটো আছে, কিন্তু আজ অচেনা টোটোয় উঠতে ইচ্ছে করছে। বৃষ্টিভেজা হাওয়ায় রিতুর শ্যাম্পু করা চুল এলোমেলো, আরো অগোছালো। ওর গোপন দুঃখ আর অভিমানগুলো এলোমেলো চুলে, স্মার্ট সিটির সেজে ওঠা আলোর মালায়, টোটোর ঝাঁকুনিতে ওপরে উঠে আসছে। ও চোখ বন্ধ করে। এভাবে রূপকথা লেখা যায়? রাজা আছে। রাজপুত্র, রাজকন্যাও আছে। কিন্তু রানি কই? রাজরানি?

টোটোওয়ালার ডাকে ঘোর ভাঙে। ‘দিদি, উর্বশী পেরিয়ে গেছি, সত্যজিৎ সরণি দিয়ে যাচ্ছি। কোথায় নামবেন বলে দেবেন’। পার্স থেকে টাকা বের করে রিতু নামে। পায়ে পায়ে আবার হাঁটা। চল্লিশ পেরোনো রূপকথার রাজা রানিরা কি জীবনের এ প্রান্তে এসে এক হতে পারে?

সামনের দিন টোটোয় উঠে উত্তরটা খুঁজে ফেলতে হবে।  

 


0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন