কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

শুক্রবার, ১৬ ডিসেম্বর, ২০২২

সুজিত পাল

 

বেগুনকোদর রেলস্টেশনে এক সন্ধ্যেবেলা    



               

বেগুনকোদর পুরুলিয়া জেলার ঝালদা থানার অন্তর্গত একটি প্রান্তিক রেল স্টেশন। এটি দক্ষিণ পূর্ব রেলওয়ের রাঁচি রেলওয়ে বিভাগের অন্তর্ভুক্ত। ১৯৬০ সালে স্টেশনটি তৈরি হয়। ১৯৬৭ সালে স্টেশনের এক রেলকর্মী জানান স্টেশনে একটি প্রেতাত্মার ছায়া দেখেছেন। দুর্ভাগ্যবশত সেই রেলকর্মী ও তার পরিবারের মৃত্যু হয় সেই স্টেশনেই। তারপর থেকেই রটে যায় বেগুনকোদর ভৌতিক স্টেশন। দীর্ঘ বছর প্রতীক্ষার পর ২০০৯ সালে আবার রেল স্টেশনটি চালু হয়।

বহু বছর থেকেই শুনেছি এটি ভৌতিক স্টেশন। ইউটিউবের দৌলতে আমরা অনেকেই জেনেছি এই স্টেশনের কাহিনি। পুরুলিয়া সিধো-কানহো-বিরসা বিশ্ববিদ্যালয়ে অফিসিয়াল কাজের সূত্রে মাঝেমধ্যেই আমাকে যেতে হয়। বেগুনকোদর যাওয়ার পরিকল্পনা অনেক আগে থেকেই ছিল। ২৪.১১.২০২২ বৃহস্পতিবার সুযোগ হল।  বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ শেষ করেই অধ্যাপক মিলনকান্তি সৎপথী, অধ্যাপক আদিত্য কার্যি রওনা দিলাম ভৌতিক স্টেশনের উদ্দেশে। আদিত্যর গাড়িতে করেই তিনজনে গিয়েছিলাম। মিলন ও  আদিত্যের তেমন আগ্রহ ছিল না। ওঁদের বক্তব্য স্টেশনটিতে কিছুই নেই, ফালতু যাওয়া হচ্ছে। আমার জেদেই যেতে হল।

পুরুলিয়া শহর থেকে প্রায় চল্লিশ কিলোমিটার দূরত্ব। বিকেল চারটের দিকে রওনা দিলাম। আমি অবশ্য বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি নিবাস থেকেই যোগ দিয়েছিলাম। গোধূলিবেলায় স্টেশন পৌঁছলাম। বেশ কয়েকজন ব্যক্তি সেখানে ঘোরাফেরা করছে। আমাদের দেখেই বুঝেছে ভূত দেখতে এসেছি। ফাঁকা মাঠ। চারিদিকে গাছের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে বেগুনকোদর স্টেশনকে কখনোই ভূতের আবাস বলে মনেই হল না। 

একটি সুন্দর চায়ের দোকান বেশকিছু মানুষের আনাগোনায় পরিপূর্ণ। পাড়ার বাচ্চা ছেলেরাও খেলা করছে স্টেশনে। সন্ধ্যা নেমে এলেও ভূতের কথা কেউ বলেনি। বরং আমরা জিজ্ঞেস করতেই স্থানীয় মানুষেরা রেগে গেছে। তাদের বক্তব্য ভূত  কোনোদিনই ছিল না। একটা ভীতির বাতাবরণ রটিয়ে চাকরিরতরা বদলির বাহানা করতো। এখানে বিশেষ কোনো ট্রেনও থামে না। কাজও নেই। রেলকর্তৃপক্ষও বহুবছর স্টেশনটিকে পরিত্যক্ত অবস্থায় ফেলে রেখেছিল।

এই স্টেশনের ভৌতিকসত্তা বিষয়ে নানারকম মিথ প্রচলিত। একটি প্রথমেই বলেছি। আরো একটি শুনলাম। যেটি স্টেশনের একটি কুঁয়োকে কেন্দ্র করে। রাত নামলেই নাকি সেই কুঁয়ো থেকে পচা দুর্গন্ধ বের হয়। স্টেশনের যে কর্মরত অফিসার ও তার স্ত্রী মারা যায়, একটি কুঁয়োতে তাদের লাশ পড়েছিল। গভীর রাতে রেললাইন বরাবর একটি মহিলার কণ্ঠস্বর শোনা যায়। অনেকেই বলেছেন সাদা পোশাক পরিহিতা এক নারী রাতে ঘুরে বেড়ায়। স্থানীয়রা  কিছুই কেউ স্বীকার করেনি।  আমরা দেখলাম শুধু সন্ধ্যার সূর্য ডুবে যাওয়া। কিছু মানুষের লালমাটি ধরে হেঁটে যাওয়া।



অবশেষে ফেরার পালা। কিছু ছবি তোলা। সেই সাথে কুমার শানুর গানে ঠোঁট মিলিয়ে রিল্‌স বানিয়ে আবার বিশ্ববিদ্যালয়ের অতিথি নিবাসে আসা। বহু বছরের ইচ্ছে পূরণ হয়েছে। বেগুনকোদর ভৌতিক স্টেশন নয়। তবে প্রচলিত মিথ ভেঙে বেরিয়ে আসাও কঠিন। গভীর নির্জন রাতে একাকী ভয় লাগতেই পারে। সেটা যে কোনো নির্জন স্থানে হতেই পারে।


4 কমেন্টস্:

  1. স্যার, পড়ে খুব ভালো লাগলো... 🙏ভূতের খবর জানলাম...😅 আমরা না গিয়েও আপনার চোখে ভৌতিক স্টেশনকে দেখলাম। আপনাকে সশ্রদ্ধ প্রণাম জানাই🙏🙏🙏

    উত্তরমুছুন
  2. খুব সুন্দর স্যার🙏

    উত্তরমুছুন