ভালোবাসার কথা বলতে এলাম
: প্রাণের মানুষ ৫
কুটুমবাড়ি পৌঁছতে প্রায় রাত সাড়ে দশটা বাজল। সক্কলে বসার ঘরে অপেক্ষা করছিল। আমি যেতেই আদর আপ্যায়ন, এটা খাও ওটা খাও। ওদের বাড়িতে সরস্বতীর প্রভাব স্পষ্ট।
বিক্রম
আর শীলার দুটি মেয়ে শ্রদ্ধা আর সমীক্ষা। খুব যত্ন করে মানুষ করেছে মেয়ে দুটিকে। হাইস্কুলে
পড়াকালীন দুজনেই ন্যাশনালসাইন্স ওলিম্পিয়াডের গোল্ড মেডালিস্ট, চমৎকার ভারতনাট্যম নাচে
আর সবচেয়ে বড় কথা, বিদ্যাজনিত অহমিকা নেই। দুজনেই MIT থেকে কেমিক্যাল ইন্জিনিয়ারিং
পাশ করেছে। ওই যেটা বলছিলাম... দুজনেরই বিদ্যাদম্ভ থাকার যথেষ্ট উপাদান ছিল, তবে আধারটি
উৎকৃষ্ট, তাই ঔদ্ধত্য দাঁত ফোটাতে পারেনি। কর্ণাটকের গ্রামের বাড়িতে ওরা কেমন ওদের
আত্মীয় পরিজন, নারকেলবাগান, পুকুরঘাট, মাটি, বাতাসের সঙ্গে মিশে যায় তা আমি দেখেছি...
আর দেখে মুগ্ধ হয়েছি।
সমীক্ষা শুধোল, 'You must be very tired. Would you like some tea? Some dessert perhaps?' মিষ্টির কথা শুনে মনটা একটু উদাস উদাস হলেও ঠিক সময়ে সামলে নিলাম। 'Just a glass of water will be fine. May I go to my room for a bit?'
'Oh
certainly. Let me take your things to your room.'
মার ঘরে যাবার তাড়া দেখে ওরা বোধহয় ভাবল প্রকৃতির ডাক। তা নয়! আসলে সেদিন ছিল বিক্রমের জন্মদিন। তাই চটপট ঘরে গিয়ে ওদের জন্য যে সব উপহার এনেছিলাম সেগুলি নিয়ে এলাম। আসার আগে বিক্রমের জন্য শার্ট, শীলা আর সমীক্ষার জন্য শাড়ি, শ্রদ্ধার জন্য সুগন্ধ আর ঋজু আর মোহিতের জন্য জামা সুটকেসে গুছিয়ে নিয়েছিলাম। মোহিত আর শ্রদ্ধার বিয়ে হয়েছে বছর দুয়েক আগে। এখানে আসার আগে জানতে পেয়েছিলাম যে মোহিত আর শ্রদ্ধাও এই সময় সিরাকিউসে থাকবে। সোনায় সোহাগা যাকে বলে আর কী!
পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলো সর্ষে ফোড়ন দেওয়া টাটকা নারকোলের চাটনির গন্ধে। শীলা অসাধারণ দোসা বানায়। ও জানে যে ওর হাতের দোসা খেতে আমি খুব ভালোবাসি। তাই সকাল সকাল রান্নাঘরে খুটখাট আর মনমাতানো সুবাস। সারাটা দিন কাটলো ছেলেপুলেদের সঙ্গে। আমার মতো বিক্রম আর শীলাও ওদের সান্নিধ্য উপভোগ করছিলো রসিয়ে রসিয়ে। আমরা নানারকম বোর্ডগেম খেললাম, হারা-জেতা নিয়ে প্রচণ্ড তর্ক করলাম, সকলে মিলে আসে পাশের সবুজপ্রান্তর হেঁটে বেড়ালাম, রংবেরঙের পাখি দেখলাম, দেখে এলাম গ্রীনলেকের সবুজ পান্নার মতো জলের রঙ।
দুটো দিন যে কোথা দিয়ে কেটে গেলো কে জানে। শীলা বানালো ডাল, মাছ, মুরগি, তরকারি... তাতে কর্ণাটকের রান্নার আদল। আমি রাঁধলাম সজনে ডাঁটা দিয়ে পাঁচমিশালি তরকারি আর আলু দিয়ে ডিমের ডালনা। ছেলেমেয়েরা স্যালাড, ফল কাটা, টেবিল সাজানো, পরিষ্কার করা এইসব কাজে নিযুক্ত ছিল। শীলা বিক্রমের একজামাই পাঞ্জাবী আর একজামাই বাঙালী। রান্নাঘরে বেশ একটা সমন্বয়ের ভাব।
‘পঞ্জাব
সিন্ধু গুজরাট মরাঠা দ্রাবিড় উৎকল বঙ্গ
বিন্ধ্য
হিমাচল যমুনা গঙ্গা উচ্ছল জলধিতরঙ্গ’
এর মধ্যে মোহিত জানিয়েছে যে আমার শিকাগোতে হোটেলে থাকা একেবারেই চলবে না। ওখানে ওর বাবা মা থাকেন। আমি যেন ওদের সঙ্গে একদিন থেকে তবেই যাত্রা শুরু করি।
'But
Mohit, they do not know me at all. I have not yet met them. How can I just land
there?'
'You
are Ayushman's mom and that is introduction enough. You are going on this very
long trip alone and that is intriguing enough. Please, you must stay the night
with them. My parents are looking forward to your visit.'
এরপর
আর কথা সরে না। ওই যে পামেলাকে বলেছিলাম, 'আমার সঙ্গে থাকেন ছত্রধর। তিনিই সব ব্যবস্থা
করে দেন।' একটা অচেনা শহরে, একটা অচেনা পথের শুরুতে দুজন অচেনা মানুষের সন্ধান পাওয়া
গেল, যারা আমাকে এমন করে ডাক পাঠালেন।
'তুমি ডাক দিয়েছ কোন্ সকালে কেউ তা জানে না,
আমার
মন যে কাঁদে আপন-মনে কেউ তা মানে না।।
ফিরি
আমি উদাস প্রাণে, তাকাই সবার মুখের পানে,
তোমার
মতো এমন টানে কেউ তো টানে না।।
বেজে
ওঠে পঞ্চমে স্বর, কেঁপে ওঠে বন্ধ এ ঘর,
বাহির
হতে দুয়ারে কর কেউ তো হানে না।
আকাশে
কার ব্যাকুলতা, বাতাস বহে কার বারতা,
এ
পথে সেই গোপন কথা কেউ তো আনে না’।
লেক-শোর লিমিটেডে সিরাকিউস থেকে ছাড়বে রাত ৯:৫০এ। সেদিন জুলাই ৩... আমার চলে যাবার দিন। সকলকে জড়িয়ে ধরে বললাম, 'Take care. We will meet soon.'
'Yes
we will.'
সকলের
চোখ বলল, 'Please be careful. We are worried about you.'
ঋজু আর বিক্রম আমাকে ট্রেনে তুলে দিতে স্টেশনে এলো। প্ল্যাটফর্মে অপেক্ষা করছি আমরা তিনজন। আমেরিকার স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে সন্ধ্যে থেকেই চারিদিকে বাজি ফাটছে। আকাশে আলোর রোশনাই। দূরে ট্রেনের আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। আলো দেখা যাচ্ছে। ঋজুর মুখে চিন্তার ছাপ। বিক্রমও তথৈবচ। ওরা আমার ছত্রধরকে চেনে না, তাই স্বাভাবিকভাবেই চিন্তিত। আমি অকুতোভয়। বিক্রমকে বিদায় জানালাম। ঋজুকে আদর করে মাথার চুলটা ঘেঁটে দিয়ে বললাম, 'আসি রে... চিন্তা করিস না।'
তারপরে
ট্রেন, তারপরে ঢিপ করে প্ল্যাটফর্মে পেন্নাম। তারপরে সব ঝাপসা।
रथारूढो गच्छन् पथि मिलित भूदेव पटलैः
स्तुति प्रादुर्भावम् प्रतिपदमुपाकर्ण्य सदयः ।
दया सिन्धुर्बन्धुः सकल जगतां सिन्धु सुतया
जगन्नाथः स्वामी नयन पथ गामी भवतु मे ॥
যার রথ পথের ধূলায় এসে মানুষের সাথে মিলিত হয়, যার পায়ে স্তুতিগান করে সকল ভক্তবৃন্দ, করুণার সিন্ধু যে ঈশ্বর আমাদের করুণার সন্ধান দেন... সেই মহাপ্রভু জগন্নাথ যেন চিরদিন আমার নয়নে বিরাজ করেন...
ঘরোয়া সুগন্ধি মাখানো বাতাস পাই প্রতি বার আপনার লেখায়, বেশ সাবলীল
উত্তরমুছুনধন্যবাদ জানবেন। আপনাদের ভালোলাগায় লেখার তাগিদ…
মুছুনWonderful, as always. Warm depiction of family life.
উত্তরমুছুনThank you so very much…
মুছুনCasino Slots, Slots, Table Games, Poker, Bingo, Live Casino
উত্তরমুছুনCasino Slots, Slots, Table Games, Poker, Bingo, Live Casino Game 구리 출장안마 Shows - 2021 · Slots Machines - Slots Machines · Casino 밀양 출장마사지 Games - Slots Machines - Casino Games 동두천 출장안마 - Slots Machines - Casino Rating: 4.6 · 17 의정부 출장마사지 reviews 파주 출장안마 · Price range: $0