কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

শুক্রবার, ১৪ মে, ২০২১

প্রদোষ ভট্টাচার্য্য

 

হেমেন্দ্রকুমার রায় ও কোনান ডয়েলের শার্লক হোমস




 

অবতারণা


আশা গঙ্গোপাধ্যায়ের মূল্যায়নে, ‘ভাষার সাহিত্যিক সৌন্দর্য্যে এবং গল্প [জমিয়ে তোলবার] কুশলতায়’ হেমেন্দ্রকুমার রায় বাংলা শিশু-সাহিত্যে এইচ জি ওয়েলস এবং স্যার আর্থার কোনান ডয়েলের দ্বৈত ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।[1] অবশ্য, শ্রীমতী গঙ্গোপাধ্যায় এই উক্তি করেছেন যে দু’টি উপন্যাসের পরিপ্রেক্ষিতে, সে দু’টিই সমালোচিকার ভাষায়, ‘বৈজ্ঞানিক ফ্যান্টাসিয়া’ একটির বিষয়, মঙ্গল গ্রহের বাসিন্দাদের পৃথিবী-আক্রমণ (মেঘদূতের মর্তে আগমন),[2] অপরটিতে কাহিনীর কুশীলবেরা এসে পড়েছে প্রাগৈতিহাসিক জীবজন্তু অধ্যুষিত এক দ্বীপে (ময়নামতীর মায়াকানন)।[3] এর পরে হেমেন্দ্রকুমার অনুপ্রেরণা নেন কোনান ডয়েলের সবচেয়ে অবিস্মরণীয় সৃষ্টি, শার্লক হোমসের চরিত্রায়ন থেকে।

 

হেমেন্দ্রকুমার ও শার্লক হোমস


জয়ন্ত-মাণিক-সুন্দরবাবু ত্রয়ীর প্রথম অভিযান জয়ন্তের কীর্তি, লেখকের ভাষায়, ‘আধুনিক বৈজ্ঞানিকের অপরাধের কাহিনী, এবং বাংলা ভাষায় সম্পূর্ণ-রূপে নতুন।’[4] জয়ন্ত-মাণিককে উপস্থাপনার সময় লেখক তাদের বিদেশী গোয়েন্দা কাহিনী পড়ার কথা বলেছেন এইভাবেঃ

এডগার অ্যালেন পো, গেবোরিও, কন্যান ডইল ও মরিস লেবলাঙ্ক প্রভৃতি বিখ্যাত লেখকদের কাহিনী তো তারা একদম হজম ক’রেই ফেলেছিল … কিন্তু তাদের কাছে উপাস্য দেবতার মতন ছিলেন কন্যান ডইল সাহেব দ্বারা সুপরিচিত ডিটেকটিভ শার্লক হোমস। (১৩)


জয়ন্তের কীর্তি মৌলিক রচনা বলেই মনে হয়। প্রকারান্তরে, ‘ব্রহ্মরাজের পদ্মরাগ’ গল্পে জয়ন্ত চোর-যাদুকর বিধুভূষণ বসুকে দিয়ে, সে মোহন মল্লিকের কাছ থেকে ব্রহ্মদেশের শেষ রাজা থীবোর যে পদ্মরাগ মণি চুরি করেছিল, সেটি সে কোথায় লুকিয়েছে জানবার জন্য যে কৌশল অবলম্বন করেছিল – বিধুর ঘরে smoke rocket ছুঁড়ে আগুন লাগাবার ভান করে – তা আমাদের হোমসের ১৮৯১ সালের কাহিনী ‘A Scandal in Bohemia’ মনে করাবে।[5] কিন্তু হেমেন্দ্রকুমার তো এখানেই থেমে থাকেন নি! এই পুরো কৌশলটির উৎস-কাহিনী তিনি জয়ন্তর মুখ দিয়ে সুন্দরবাবুকে শুনিয়েছেন। প্রাচীন গ্রীসে বারনারী ফ্রাইন (শিশু-কিশোর পাঠকদের – এবং তাদের অভিভাবকদের – রেয়াত করে হেমেন্দ্রকুমার ফ্রাইনকে শুধু ‘ভুবনবিখ্যাত পরমাসুন্দরী মেয়ে’ [২৪৯] বলেই ক্ষান্ত দিয়েছেন!) ভাস্কর প্রাক্সিতেলেসকে শিল্পীর প্রিয়তম মূর্তি কোনটি তা প্রকাশ করাতে এই অগ্নি-পরীক্ষারই ব্যবহার করেছিলেন! আবার বজ্রভৈরবের মন্ত্র গল্পের শুরুতে দস্যু চুয়াং-এর হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করতে জয়ন্ত যা আচরণ করছে তা আমাদের ১৮৯৩-এর ‘The Final Problem’ গল্পে প্রোফেসর মোরিয়ার্টির সম্ভাব্য আক্রমণের আশঙ্কায় হোমসের অবস্থা মনে পড়ায়।[6]

ফিরোজা মুকুট রহস্য আর নেতাজীর ছয়মূর্তি- হলো যথাক্রমে ‘The Beryl Coronet’ (১৮৯২) ও ‘The Six Napoleons’ (১৯০৪) নামের দুটি ছোট গল্পের সরাসরি, অনুবাদ নয়, রূপান্তর। প্রত্যেকটিতে আছে একেকটি মূল্যবান রত্নালংকার, মূল কাহিনী-দুটিতে যথাক্রমে বহুমুল্য ‘বেরিল করোনেট’ আর  ইটালির বোর্জিয়া পরিবারের কালো মুক্তো ।[7] হেমেন্দ্রকুমার দুটিকে পরিণত করেছেন দুটি ভারতীয় ঐতিহাসিক  নিদর্শনেঃ এক মহারাজার নিরেট সোনা দিয়ে তৈরি রত্নমুকুট যার ওপর চল্লিশটি ফিকে-নীল ফিরোজা বসানো আছে, আর মমতাজ বেগমের কালো মুক্তো। দ্বিতীয়টির ক্ষেত্রে হেমেন্দ্রকুমার একটি সংক্ষিপ্ত ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটও দিয়েছেনঃ সম্রাট শাহ-জাহান মমতাজকে নাকি এই মুক্তো উপহার দেন, এবং নাদির শাহের ভারত আক্রমণের সময় এটি হারিয়ে গিয়ে পরে অজানা উপায়ে ভারতের প্রতাপপুরের মহারাজার হস্তগত হয়।[8] দুটি ক্ষেত্রেই বস্তু-দুটির নাম সরাসরি অনূদিত হয়েছেঃ beryl coronet – ফিরোজা মুকুট, black pearl – কালো মুক্তো, শুধু ইটালির বোর্জিয়াদের থেকে, অনুবাদ-তত্ত্বের ভাষায়, semiotic transformation লাভ করে হয়েছে শাহ-জাহান কর্তৃক মমতাজ বেগমকে প্রদত্ত রত্নালংকার। বোর্জিয়াদের কথা উঠলেই মনে আসে চক্রান্ত আর গুপ্তহত্যার একাধিক ঘটনা। তুলনায় প্রিয় বেগমের জন্য অমর সৌধ তাজমহলের প্রতিষ্ঠাতা শাহ-জাহানের দেওয়া উপহার অনেকটাই ইতিবাচক। বোর্জিয়াদের মুক্তো লুকোনো হয়েছিল নেপোলিয়নের মতো ক্যারিস্ম্যাটিক হলেও ব্রিটিশদের প্রতিপক্ষ এক চরিত্রের মূর্তির মধ্যে। অতএব, মূল কাহিনীতে মূর্তি ভাঙার পেছনে কোন উগ্র ব্রিটিশ জাতীয়তাবাদী monomaniac বা বাতিকগ্রস্ত ব্যক্তির কথা ওয়াটসনের মুখে শোনা গেছে। সেখানে হেমেন্দ্রকুমার এনেছেন, জয়ন্তের ভাষায় “বরেণ্য নেতাজীর” (১৫৮) মূর্তি, যদিও মুক্তোলাভের জন্য এই ব্যক্তির প্রতিকৃতি কিন্তু জয়ন্ত হাতুড়ির ঘায়ে চূর্ণ-বিচূর্ণ করতে দ্বিধা করে নি!

হোমসের ছোট গল্প ছাড়াও দেব সাহিত্য কুটীরের ‘বিচিত্রা সিরিজে’র জন্য হেমেন্দ্রকুমার যে চারটি বিদেশী উপন্যাসের রূপান্তর ঘটিয়েছিলেন, তার মধ্যে দুটি হোমসেরঃ নিশাচরী বিভীষিকা হলো The Hound of the Baskervilles (১৯০১-২), আর চতুর্ভুজের স্বাক্ষর যে কোন উপন্যাসের (১৮৯০) রূপান্তর তা নিশ্চয় বলে দিতে হবে না! হোমস এখানে ভারতকুমার (উপন্যাসের পরের দিকে এবং নিশাচরী বিভীষিকা-য় ভারতভূষণ) চৌধুরী এবং তার অভিন্নহৃদয় বন্ধু ও কাহিনীদ্বয়ের কথক ওয়াটসন হলো পেশায় ডাক্তার ভাস্করচন্দ্র সেন।

ঐতিহাসিক নিদর্শনের বিশেষভাবে চমকপ্রদ রূপান্তর হেমেন্দ্রকুমার ঘটিয়েছেন চতুর্ভুজের স্বাক্ষর-এ।[9] কোনান ডয়েলের মূল উপন্যাসেও কিন্তু এই কাহিনীর কেন্দ্রে যে গুপ্তধন, তা কোন ইউরোপীয় বস্তু নয় – যা ছিল ‘The Beryl Coronet’ ও ‘The Six Napoleons’-এর মূল্যবান বস্তু দুটি –  বরং উত্তর ভারতের এক নামহীন সুবিধাবাদী রাজার – যে সিপাহী বিদ্রোহের সময় একদিকে সিপাহী আর অপরদিকে বিদেশী শাসক, দুই পক্ষের সঙ্গেই সুসম্পর্ক রেখে চলত, যা সে সময় অনেক রাজা-জমিদারই করেছিল। নিজের গচ্ছিত সোনারূপো এই রাজা নিজের প্রাসাদে লুকোয়, আর দামী পাথর তার এক বিশ্বস্ত অনুচরকে দিয়ে আগ্রার কেল্লায় পাঠিয়ে দেয়। এই পাথরগুলি নিয়েই উপন্যাসের যাবতীয় টানাপোড়েন। হেমেন্দ্রকুমারের আখ্যানে এই গুপ্তধন পরিণত হয়েছে উত্তর প্রদেশের বীরাঙ্গনা রাণী দুর্গাবতীর রত্নসিন্দুকে, যা তিনি মোগল সম্রাট আকবরের বিরুদ্ধে যুদ্ধযাত্রার আগে এক বাগানবাড়ীর ভেতরে মাটির তলায় পুঁতে রেখে যান। এই ধনের আংশিক উত্তরাধিকারিণী চিত্রা বলছেঃ

‘… আমার বিশ্বাস ওই গুপ্তধনের উপরে আছে রানি দুর্গাবতীর অভিশাপ … কোনও অনধিকারী তা হস্তগত করতে গেলেই মারা পড়ে … মহিয়সী বীর ললনা রানি দুর্গাবতী, ভারত-নারীর মুখ যিনি উজ্জ্বল করে গিয়েছেন, সেই প্রাতঃস্মরণীয়া নারীর নিজস্ব সম্পত্তি আজ আমরা চাইছি চোরের মতন দখল করতে!’ (১৯৪)

মূল উপন্যাসে এক প্রবঞ্চকের গুপ্তধন অধিকার করে আরেক প্রবঞ্চক আর অবশেষে মূল খল চরিত্র তা বিসর্জন দেয় টেমস নদীর গর্ভে। উত্তরাধিকারিণী মেরি মর্স্টন তা জানার পর শান্তভাবে শুধু বলেন, “The treasure is lost.”[10] তুলনা করুন হেমেন্দ্রকুমারের রূপান্তরে মহিমান্বিত এই ধন সম্বন্ধে চিত্রার উক্তিঃ ‘রানি দুর্গাবতীর গুপ্তধন গ্রহণ করলেন মা গঙ্গা! গুপ্তধনের এর চেয়ে সদ্গতি আর কিছুই হতে পারত না!’ (১৯৬) অনুবাদ-তত্ত্বে ফিরোজা-মুকুট ছিল beryl coronet-এর সমার্থক, অতএব semiotic transformation-এর উদাহরণ। কিন্তু নেপোলিয়নের মূর্তির মধ্যে বোর্জিয়াদের মুক্তো আর নেতাজীর আবক্ষ-প্রতিকৃতির মধ্যে প্রেমিকা-বেগম মমতাজকে দেওয়া শাহ-জাহানের কালো মুক্তো, আর নামহীন শঠ রাজার আহরিত রত্নের বিপরীতে রাণী দুর্গাবতীর পবিত্র রত্নসিন্দুক এবং সে রত্নসমূহের পরিণতি, দুক্ষেত্রেই উক্ত transformation-এর ফলে উৎস-বস্তুর সঙ্গে যে সমতা বা equivalence দেখা যায়, তার অনেক ঊর্দ্ধে চলে গেছেন হেমেন্দ্রকুমার, তাঁর উদ্ভাবনী কল্পনাশক্তির মাধ্যমে।

এই উদ্ভাবনী কল্পনার আরেক উপভোগ্য – পূর্ণভাবে সফল না হলেও – নিদর্শন দেখা যায় নিশাচরী বিভীষিকা-র হন্তারক জীবটির মধ্যে।[11] পাঁচকড়ি দে তাঁর রূপান্তরে – মৃত্যু বিভীষিকা [12]– কুকুরকে কুকুরই রেখেছেন। কিন্তু ১৯২৭-এ প্রেমাঙ্কুর আতর্থী জলার পেত্নী-তে জীবটিকে করেছেন এক জ্বলন্ত ষাঁড়![13] এরপর আসে ১৯৫১ সালে অজয় কর পরিচালিত ছায়াছবি জিঘাংসা, যাতে জলার পেত্নী-রূপে মঞ্জু দে তো আছেনই, যদিও হত্যাগুলি খলনায়কের নির্দেশে করছে মিশরীয় মমির মুখোশ পরা, এবং বোবা আর ঢ্যাঙা, রেলস্টেশনের কুলি। ঐ পঞ্চাশের দশকেই সম্ভবত প্রকাশিত হয় সুধীন্দ্রনাথ রাহার অভিশপ্ত বংশ – যেখানে কুকুরের জায়গায় এসেছে সার্কাসের ট্রেনার-দ্বারা শিক্ষিত বাঘ[14] - আর হেমেন্দ্রকুমারের নিশাচরী বিভীষিকা । এখানে হেমেন্দ্রকুমার তাঁর উৎস কোনান ডয়েল এবং প্রতিটি বাংলা উত্তরসূরির থেকে ভিন্ন পথে হেঁটেছেন। প্রথমে দেখা যাক মূল উপন্যাসে কিম্বদন্তীর সেই হাউন্ড কীভাবে বর্ণিত হয়েছেঃ

… standing over Hugo, and plucking at his throat, there stood a foul thing, a great, black beast, shaped like a hound, yet larger than any hound that ever mortal eye has rested upon. And even as they looked the thing tore the throat out of Hugo Baskerville, on which, as it turned its blazing eyes and dripping jaws upon them, the three shrieked with fear and rode for dear life … [15]

 

পরে এই ভয়ানক জীবটির ডাক শোনা যাবে, এবং কাহিনীর শীর্ষবিন্দুতে আমরা তার দেখাও পাব। কিন্তু কাহিনীতে তার এই প্রথম বর্ণনায় সে কিন্তু নীরব। হেমেন্দ্রকুমার প্রথম দর্শনেই তাকে সরব করেছেনঃ

কিংবদন্তি বলে, ঠিক সেই সময় জলাভূমির মধ্যে জাগ্রত হইয়া উঠিল প্রচণ্ড শঙ্খধ্বনির মতো অদ্ভুত এক রোমাঞ্চকর শব্দ … অন্ধকার ফুঁড়িয়া উঠিল দুটি ভয়ঙ্কর হিংস্র ও জ্বলন্ত চক্ষু এবং কয়েকটি ক্ষুধিত ও করাল দন্ত! তাহার পরেই আকাশ, বাতাস ও দিগ্বিদিক কম্পিত হইয়া উঠিল আবার এক তীব্র শঙ্খরবে এবং পরমুহূর্তেই পল্লিপথের সূচিভেদ্য অন্ধকারের মধ্যে আত্মপ্রকাশ করিল এক অসম্ভব, অপার্থিব ও বিভীষণ ও অতিকায় মূর্তি – কেবল তার ক্রুদ্ধ চক্ষু দুইটাই বুভুক্ষু অগ্নিকণা বৃষ্টি করিতেছিল না, তাহার সমগ্র মুখমণ্ডলই দপদপ করিয়া জ্বলিতেছিল উল্কার মতো! দেখিলেই মনে হয় এই বীভৎস ও বিশালকায় মূর্তিটা এইমাত্র যেন কোন দুঃস্বপ্নের নরক ছাড়িয়া নিশীথের অন্ধকারের মধ্যে আবির্ভূত হইয়াছে …

পরদিন প্রভাতে সেইখানে পাওয়া যায় হীরেন্দ্রবাবুর ক্ষতবিক্ষত ও রক্তাক্ত মৃতদেহ। কাহার নিষ্ঠুর দংশনে তাঁহার কণ্ঠনালি ছিন্নবিচ্ছিন্ন হইয়া গিয়াছে! (১৩৯)

কোনান ডয়েলের সঙ্গে সমানে-সমানে টক্কর দিয়েছেন হেমেন্দ্রকুমার। পাশ্চাত্য পৌরাণিক কাহিনী ও লোককথায় একাধিক ভয়ঙ্কর সারমেয়দের কথা শোনা যায়, গ্রীক পুরাণে নরকের দ্বাররক্ষক ত্রিমস্তকবিশিষ্ট Cerberus থেকে বিভিন্ন দেশের লোককথার Hellhound-দের, যেমন উত্তর ইংল্যান্ডের Barghest। প্রাচ্য পুরাণ-লোককথায় কুকুরদের এতটা প্রাধান্য বোধহয় নেই। কোনান ডয়েল তো তাঁর উপন্যাসে কিংবদন্তির কুকুরটির প্রত্যক্ষ আবির্ভাব বর্ণনা করার আগে এক আতঙ্কগ্রস্ত মেষপালকের মুখে ‘hound of hell’ শব্দগুলিও বসিয়েছেন (16)। সে জায়গায় হেমেন্দ্রকুমার উপস্থাপিত করেছেন এক অনির্দিষ্ট, এবং সেইজন্যই আরো ভীতিপ্রদ এক রহস্যময় জীবের, যাকে বর্ণনা করতে গিয়ে  তিনি হয়তো অনুপ্রাণিত হয়েছেন মূল উপন্যাসে ওয়াটসনের দ্বারাঃ

Never in the delirious dream of a disordered brain could anything more savage, more appalling, more hellish be conceived than that dark form and savage face which broke upon us out of the wall of fog. (168-9)[16]


সাম্প্রতিক অপঘাতে মৃত বীরেনবাবুর দেহের কাছে তাঁর চিকিৎসক ফণীবাবু দেখেছিলেন অদ্ভুত কিছু পদচিহ্ন যা মানুষের তো নয়ই, এমন কি স্থানীয় কোন জীবজন্তুরও নয়। গ্রামের কিছু নির্ভরযোগ্য লোক ফণীবাবুকে বলেছে মুখে অগ্নিময় রেখা-সংবলিত এক ‘উদ্ভট আর অলৌকিক’ জীবের কথা, যাকে চাঁদের আলো থাকলে কখনো দেখা যায় না, এবং যে আবির্ভূত হলে শোনা যায় গগনভেদী শঙ্খধ্বনি। তাকে ডাকা হয় ‘উল্কামুখী শঙ্খচূর্ণী’ নামে; সহাস্য ভারত বলে, ‘চলতি ভাষায় আমরা যাকে বলি শাঁখচুন্নি; - অর্থাৎ সাধ্বী নারীর প্রেতাত্মা!’ (১৪৫)। স্বভাবসিদ্ধভাবে পাশ্চাত্য অলৌকিকতাকে প্রাচ্য রূপ দিয়েছেন হেমেন্দ্রকুমার। অলৌকিক না হলেও, রামহরির কাছে উদ্ভট, টেরোডাক্টিলকে নাম দেওয়া হয়েছিলো ‘গরুড় পাখি’ আর তাদের বিচরণ ক্ষেত্র যে প্রাগৈতিহাসিক দ্বীপ তাকে ঐ রামহরিই ভূষিত করেছিল ‘ময়নামতীর মায়াকানন’ নামে![17] বিভীষণের জাগরণ উপন্যাসে[18] এই পাশ্চাত্য-থেকে-প্রাচ্য রূপান্তরে যে কি অসাধারণ মৌলিকত্ব হেমেন্দ্রকুমার দেখিয়েছেন, তা অন্যত্র আলোচিত হয়েছে।

অবশ্য, নিশাচরী বিভীষিকা-র শেষে এই উল্কামুখী জীবের যে ব্যখ্যা আমরা পাই, তা কতটা বাস্তবগ্রাহ্য সে বিষয়ে প্রাণীবিদের মতামত প্রয়োজন! জীবটি আদতে একটি ‘প্রায় পাঁচ ফুট লম্বা’ (১৯৫) ভাল্লুক! ভাল্লুকের গলা থেকে নাকি শাঁখের মতো আওয়াজ বেরোয়। তার এক মাস বয়স থেকে চক্রান্তকারী তাকে পালন করেছে আর তাকে ব্লাডহাউন্ডের মতো লোকের ব্যবহার করা জিনিস শুঁকিয়ে সেই গন্ধ্রের অনুসরণ করতে শিখিয়েছে। স্বয়ং ভারত এটা যে এক ভাল্লুকের পক্ষে কতটা সম্ভব তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে! প্রভুকে ছাড়া অচেনা যে-কোন লোক দেখলেই ভাল্লুকটা তাকে আক্রমণ করতো। হত্যাকারী তাই জমিদারীর শেষ বংশধর হিতেনের ওপর জন্তুটিকে লেলিয়ে দিয়েছিল।

এখানে পাঠকদের স্মরণ করিয়ে দিই যে নিশাচরী বিভীষিকা-র অনেক আগে, The Hound of the Baskervilles-এর মূল উপাদানগুলি প্রায় অক্ষত রেখে কোনান ডয়েলের মূল উদ্দেশ্য – আপাত অলৌকিকতাকে বাস্তবতার স্তরে উপনীত করা – সম্পূর্ণ উল্টে দিয়েছিলেন হেমেন্দ্রকুমার। অন্যত্র প্রকাশিত অমাবস্যার রাত উপন্যাসের[19] বিশ্লেষণ এখানে পুনর্বার উল্লেখ করছিঃ

·        শহর থেকে দূরে এক অঞ্চলে এক আপাত-অলৌকিক জীবের আবির্ভাব (কুকুরের বদলে বাঘ)

·      এক তদন্তকারী জুটির মূল চরিত্রের আপাত অনুপস্থিতিতে সেই জুটির দ্বিতীয় জনের অকূস্থলে যাওয়া (হোমস-বিমলের বদলে ওয়াটসন-কুমার)

·  ডয়েলের অপরাধীর মূল লক্ষ্য ছিল বিপুল পারিবারিক সম্পত্তি গ্রাসের উদ্দেশ্যে এক অলৌকিক কিংবদন্তিকে ব্যবহার। হেমেন্দ্রকুমারের অপরাধীরও মূল নজর অপহৃতা নারীদের বহুমূল্য গয়না।

·     কিন্তু ডয়েলের সঙ্গে হেমেন্দ্রকুমারের পার্থক্য এখনেই যে অলৌকিকতাকে তিনি নানা ইঙ্গিতের মাধ্যমে বাস্তবের জগতে প্রতিষ্ঠিত করে তারপর পাঠককে বলছেন, “এবার অবিশ্বাস করতে হলে করতেই পারো।” হোমসনিষ্ঠ পাঠক মনিষী-ডিটেকটিভের বাণী স্মরণ করুনঃ কোনো সমস্যার সম্ভাব্য সমস্ত সমাধান একে-একে পরীক্ষা করে প্রতিটির অন্তর্নিহিত ত্রুটির জন্যে সেগুলিকে বাতিল করার পর, যে সমাধানটি অবশিষ্ট থাকবে, সেটি যতই অবিশ্বাস্য হোক, সেটিই গ্রহণীয়। এখানে মোহনলালরূপী বিমলের বিশ্লেষণে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে যে ভুলু ডাকাত আর পটলবাবু অভিন্ন; কিন্তু এও অনিবার্যভাবে জ্ঞাপিত হচ্ছে যে মানসপুরে আবির্ভূত হয়েছিলো কোন মায়া-ব্যাঘ্র। উপন্যাসের ৭৭-৭৮ পৃষ্ঠার প্রতি সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

বিষয়ান্তরে যাবার আগে স্বীকার করি যে ক্যারিস্ম্যাটিক শার্লক হোমসের বাঙালী রূপান্তর হিসেবে ভারতকুমার/ভূষণ খানিকটা হলেও নিস্প্রভ। সে অবশ্য পাঁচকড়ি দের গোবিন্দরাম, সুধীন্দ্রনাথ রাহার শ্যামসুন্দর, বা অজয় করের স্মরজিৎ-এর ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।



পরাভর

বিদেশী গোয়েন্দা কাহিনীর, মোটামুটি চেনা যায় এমন, রূপান্তর – দুটি ছোট গল্প, দুটি পূর্ণাঙ্গ উপন্যাস, বিদেশী গল্প থেকে কিছু ‘ট্রোপ’ ব্যবহার করে মৌলিক কাহিনী – দুটি ছোট গল্প - এবং ধ্রুপদী গোয়েন্দা গল্পের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়মকে একই সঙ্গে ব্যবহার করে ও উল্টে দিয়ে হেমেন্দ্রকুমার কিভাবে নিজস্ব সৃষ্টির একটা জগৎ তৈরি করেছেন, তা দেখা গেল। খেয়াল রাখতে হবে যে এখন অবধি আলোচিত প্রতিটি গল্পে, বিশেষ করে যে তিনটিতে অলৌকিকতা উপস্থাপিত হয়েছে, একটি নীতি কখনো লঙ্ঘিত হয় নি, যা হলো ratiocination বা সঠিক যুক্তিসম্মত চিন্তা-প্রক্রিয়া।

আমাদের অন্তিম পাঠ্যতে এই সমস্ত কিছুকে subvert করে নিজেরই সৃষ্ট জয়ন্ত-মাণিক বা ভারত-ভাস্করদের যারা অবিবেচকের মতো নকল করতে যায়, তাদের নির্মল হাসির খোরাক করে তুলেছেন লেখক তাঁর ‘প্রাইভেট ডিটেকটিভ’ নামক ছোট গল্পটিতে।[20] এই গল্পের হবু-শার্লক হোমস বিধু দিনরাত শুধু গোয়েন্দা কাহিনী পড়ে, ইস্কুলের বই তার চক্ষুশূল। জয়ন্ত-মাণিক আর ভারত-ভাস্করও সাগ্রহে ডিটেকটিভ বই পড়ত বটে, কিন্তু বিধুর মতো ম্যাট্রিক পাশ করেই লেখাপড়া ছেড়ে দিয়ে প্রাইভেট ডিটেকটিভ হবার অসাধারণ উচ্চাভিলাষ তাদের কারোরই ছিল না। জয়ন্ত-মাণিক কলেজে পড়াকালীন ‘নন-কো-অপারেশন’ আন্দোলনের ফলে তাদের অধ্যয়নে ছেদ পড়ে। পৈতৃক সম্পত্তির দৌলতে তারা অর্থনৈতিক দিক দিয়ে স্বাধীন। ভারত-ভাস্কর দুজনেই এম এ পাশ, তদোপরি ভাস্কর আরো কয়েক বছর মেডিকাল কলেজে পড়ে এম ডি ডিগ্রী লাভ করে ডাক্তারিকে পেশা করেছে। এ ছাড়াও এই যুগল জয়ন্ত-মাণিকের মতোই প্রভূত পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারী – চতুর্ভুজের স্বাক্ষর-এর শেষে তো ভাস্কর বিয়ে করে সংসারী পর্যন্ত হচ্ছে।[21] আর ভারত হেমন্ত চৌধুরীর মতো অপরাধতত্ত্ব নিয়েও পড়াশুনা করত। শৌখিন গোয়েন্দা হিসেবে তার আদর্শ কিন্তু শার্লক হোমসের মতো কোন কাল্পনিক চরিত্র নয় (জয়ন্তর ক্ষেত্রে এই কাল্পনিক আদর্শ তার গোয়েন্দা হয়ে ওঠার বিশ্বাসযোগ্যতাকে খানিকটা ব্যাহতই করেছে), বরং আমেরিকার অ্যালান পিঙ্কার্টন, যাঁর প্রতিষ্ঠান, আমেরিকায় সরকারী পুলিশ বাহিনীর উদ্ভবের আগে, দেশে শান্তিরক্ষার দায়িত্ব পালন করতো।

আমাদের বিধু অবশ্য শুধু গোয়েন্দা গল্প পড়েই তার নিজের চোখে বাংলাদেশের প্রথম শার্লক হোমস হয়ে গেছে, অপেক্ষা শুধু স্বীকৃতিলাভের! গল্পের কথক – তার নাম আমরা জানব কাহিনীর শেষে – বিধুর গুণমুগ্ধ, অতএব বিধু তাকে অবধারিতভাবে ‘ওয়াটসন’ অভিধা দেয়!

ওয়াটসনের বাড়ীতে এক চুরির ব্যর্থ প্রচেষ্টা হতেই বিধু সক্রিয় হয়ে ওঠে। চোর যে কোটটি ফেলে গেছে, সেটি পরীক্ষা করে বিধু, তার আদর্শ ডিটেকটিভের মতোই, কথককে চমৎকৃত করে জানায় যে কোটের মালিক “পান খেতে ভালোবাসে, সে বড়োলোক নয়, সে দেহে খুব লম্বা-চওড়া,” এবং সে চিনেবাদাম খায় (২৫)! তার সিদ্ধান্তের পক্ষে সে উপস্থাপিত করে যথাক্রমে কোটের পকেট থেকে পাওয়া দোক্তা, একটি আধলা এবং ‘পাসিং শো’-র মতো সস্তা সিগারেটের প্যাকেট, কোটের গলা, ছাতি আর ঝুলের মাপ, এবং পকেটে বাদামের খোসা।

এই অবধি হয়তো সব ঠিকই হতে পারত। কিন্তু এর পরেই অভিজ্ঞতার অভাব এবং অপক্ক বুদ্ধির খেলা শুরু হয়। দিনের পর দিন আদর্শ গোয়েন্দার মতো পথে-পথে ঘুরে এই যুগল হঠাৎ দেখা পায় এক দীর্ঘদেহী ব্যক্তির, যার পরনের কোট ঠিক যেন কথকের বাড়ীতে চোরের ফেলে যাওয়া কোটটির জোড়া! বিধু-হোমসের মনে হলো না যে, যে চোরকে সে বড়লোক নয় মনে করেছে, তার কোটের মত দামী পরিধেয় আরেকটি থাকা কতটা যুক্তিযুক্ত। বর্তমান ব্যক্তি আবার চিনেবাদাম কিনতে বিধু আরো উৎসাহিত বোধ করে। এবার কিন্তু পানওয়ালার দোকানে আগন্তুককে বিধু কিনতে দেখে ‘গোল্ড ফ্লেক’-এর মতো দামী সিগারেট! দুজনে যে ভুল করেছে তার এই ইঙ্গিতের পরেও বিধুর দমে যাওয়া দূর করতে আসরে নামে তার যোগ্য শিষ্য (?) ওয়াটসনঃ “বেটা বোধহয় অন্য কোথাও চুরি করে হঠাৎ বড়োলোক হয়ে পড়েছে!” (২৭) । তথাকথিত চোরকে এরপর একটি বাড়ীতে ঢুকতে দেখে বিধু সিদ্ধান্ত নেয় যে সেদিন রাত বারোটায় ঐ বাড়ীতে ঢুকে সে ও কথক কোটটি হস্তগত করে চোরের কোটের সঙ্গে তার মাপ মিলিয়ে “কেল্লা ফতে” (২৭) করবে! একাধিক ব্যক্তির কি একরকম কোট থাকতে পারে না?

এরপর যা ঘটে তা আমাদের যকের ধন উপন্যাসে (রচনাবলী, ১ম খণ্ড) বিমল আর কুমারের করালীর বাড়িতে রাতে ঢুকে অপহৃত মড়ার মাথা উদ্ধারের কথা মনে করাবে। সেখানেও ভীত-সন্ত্রস্ত কুমারকে উৎসাহ দেয় বিমল, এখানেও কথককে সাহস যোগায় বিধু। যকের ধন-এ কার্য-উদ্ধার হলেও শেষ মুহূর্তে কুমার হেঁচে ফেলায় বিপদ ঘটে। এখানে ঢোকার পরে-পরেই বাড়ীর লোক টের পেয়ে যায় আর আমাদের প্রত্যুৎপন্নমতি বিধু সহযোগীকে নিয়ে আশ্রয় নেয় একটি ঘরে, যেখানে আত্মপ্রকাশ করেন তাদের ইস্কুলের হেডপণ্ডিতমশাই! বিধুর মাথায় নামে তাঁর খোট্টাই গাঁট্টা! কথক ভাঙা জানলা দিয়ে লাফিয়ে নীচে পড়ে, চোট খেয়ে পালায়। পরের দিন বিধু – তার আত্মবিভ্রম এবং অহমিকা এখনও অক্ষত –  কথককে জানায় যে যাকে তারা চোর বলে সন্দেহ করেছিল, তিনি পণ্ডিতমশাইয়ের ভাই! কাহিনীর শেষে আমরা জানতে পারছি যে কথক তার ওয়াটসন-অভিধা ত্যাগ করে তার আসল সত্ত্বাকেই আলিঙ্গন করছেঃ সে প্রেমলাল মিত্র!

 

উপসংহার

 

বিদেশী অনুপ্রেরণা ছাড়া বাংলায় গোয়েন্দা-কাহিনী হতো না। যা দেখাবার চেষ্টা করা হয়েছে তা হলো যে এই উৎসের সঙ্গে নিজস্ব উদ্ভাবনী কল্পনা মিশিয়ে হেমেন্দ্রকুমার ভিন্ন-ভিন্ন স্বাদের আখ্যান রচনা করেছেন যার শীর্ষে রয়েছে পাশ্চাত্য অলৌকিকতাকে ভারতীয় প্রেক্ষাপটে রূপান্তরিত করে তার সঙ্গে গোয়েন্দা কাহিনীর সংমিশ্রণ,[22] কিন্তু এ ছাড়াও বিশেষ করে শার্লক হোমসের গল্পের রূপান্তর বা সেগুলি থেকে কিছু উপাদান নিয়ে মৌলিক কাহিনী রচনাতেও তাঁর পারদর্শিতা প্রকট।

 

 



[1] আশা গঙ্গোপাধ্যায়, বাংলা শিশু-সাহিত্যের ক্রমবিকাশ (১৮০০-১৯০০) (ডি এম লাইব্রেরী, কলকাতাঃ ১৩৬৬ (1959-60]) ২৮১।

[2] হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী, সম্পাদনা গীতা দত্ত, ১ম খণ্ড (এশিয়া পাবলিশিং কোংঃ কলকাতা, ১৯৭৪, ৫ম মুদ্রণ ১৯৮৪) ।

 

[3] হেমেন্দ্রকুমার রায়, ছোটদের অমনিবাস (এশিয়া পাবলশিং কোং, কলকাতাঃ ১৯৯৭, পুনর্মুদ্রণ ২০০০) ।

 

[4] জয়ন্তের কীর্তি, হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী, ১০ম খণ্ড, সম্পাদনা গীতা দত্ত ও সুখময় মুখোপাধ্যায় (এশিয়া পাবলিশিং কোম্পানি, কলকাতাঃ ১৯৮৭) ৯-১০০। উদ্ধৃতি ৯১ থেকে।

 

[5] পরে, ১৯০৩ সালে ‘The Norwood Builder’ গল্পে হোমস এই একই কৌশল ভিন্নভাবে ব্যবহার করবেন। ‘ব্রহ্মরাজের পদ্মরাগ’ গল্পটি পাওয়া যাবে হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী, ৪র্থ খণ্ড, সম্পাদনা গীতা দত্ত (এশিয়া পাবলিশিং কোংঃ কলকাতা ১৯৮০) ২৩৮-২৪৯ পৃষ্ঠায়, সব সেরা গল্প নামক সঙ্কলনের মধ্যে।        

[6] বজ্রভৈরবের মন্ত্র, হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী, ১৬শ খণ্ড, সম্পাদনা গীতা দত্ত ও সুখময় মুখোপাধ্যায় (এশিয়া, কলকাতাঃ ১৯৯৭), ১৫৯-১৯৮।

[7]  ফিরোজা মুকুট রহস্য, হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী, ১৫শ খণ্ড, সম্পাদনা গীতা দত্ত ও সুখময় মুখোপাধ্যায় (এশিয়া, কলকাতাঃ ১৯৯৫), ১৮৫-২০৬।

[8] নেতাজীর ছয়মূর্তি, হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী, ২৪শ খণ্ড, সম্পাদনা গীতা দত্ত (এশিয়া, কলকাতাঃ ২০০৯), ১৪১-১৬০।

[9] চতুর্ভুজের স্বাক্ষর, হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী, ২১শ খণ্ড, সম্পাদনা গীতা দত্ত (এশিয়া, কলকাতাঃ ২০০৬), ১৩৭-১৯৭।

[10] Sir Arthur Conan Doyle, The Sign of the Four (1890), https://sherlock-holm.es/stories/pdf/a4/1-sided/sign.pdf, 16 Feb. 21, p. 41.

 

[11] নিশাচরী বিভীষিকা, হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী ২২শ খণ্ড, সম্পাদনা গীতা দত্ত (এশিয়াঃ কলকাতা, ২০০৭) ১৩১-২০০।

 

[12] প্রকাশকাল প্রবন্ধকারের অজানা। লেখকের প্রয়াণ ঘটে ১৯৪৫ সালে, আর বাংলায় শার্লক হোমসকে ‘গোবিন্দরাম’ নামে তিনি আত্মপ্রকাশ করান ১৯০৫-এ। মৃত্যু বিভীষিকা, পাঁচকড়ি দে রচনাবলী, ৫ম খণ্ড, সম্পাদনা বারিদবরণ ঘোষ (করুণা প্রকাশনীঃ কলকাতা, ১লা বৈশাখ, ১৪২২, [2015]) ১৭৩-২৭০।

 

[13] বৈশাখ ১৩৩৪, অর্থাৎ এপ্রিল ১৯২৭ থেকে জলার পেত্নী এম সি সরকার এন্ড সন্স-এর মৌচাক পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হয়।

[14] সুধীন্দ্রনাথ রাহা, অভিশপ্ত বংশ, প্রহেলিকা সিরিজের ৬ ডিটেকটিভ উপন্যাস, ৯ নং সংকলন (দেব সাহিত্য কুটীরঃ কলকাতা্‌, ২০১০) । জলার পেত্নীঅভিশপ্ত বংশ বই দুটির কথা জানতে পারি প্রথিতযশা ইতিহাসবিদ এবং আমার স্নাতক সময়ের শ্রদ্ধেয় অধ্যাপক শ্রীরজতকান্ত রায়ের কাছ থেকে।

[15] Sir Arthur Conan Doyle, The Hound of the Baskervilles (1902), Chapter 2 ‘The Curse of the Baskervilles’, https://www.pdfdrive.com/the-hound-of-the-baskervilles-e32573870.html 15 February 2021, p. 17.

[16] উপরে ১২ নং পাদটীকা দেখুন।

[17]  ময়নামতীর মায়াকানন, হেমেন্দ্রকুমার রায়, ছোটোদের অমনিবাস (এশিয়া পাবলিশিং কোংঃ কলকাতা ১৯৯৭, পুনর্মুদ্রণ ২০০০) । এই উপন্যাসে কোনান ডয়েলের আরেক স্মরণীয় সৃষ্টি, প্রোফেসার চ্যালেঞ্জারের প্রথম অভিযান, ১৯১২ সালে প্রকাশিত The Lost World-এর খানিকটা প্রভাব আছে। এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আমার ‘হেমেন্দ্রকুমার রায় ও বাংলা কল্পবিজ্ঞান’-এ প্রকাশিতব্য।

[18] হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী, ১৬শ খণ্ড, সম্পাদনা সম্পাদনা গীতা দত্ত ও সুখময় মুখোপাধ্যায় (এশিয়া, কলকাতাঃ ১৯৯৭) ১৯২-২৪২।

[19] অমাবস্যার রাত, হেমেন্দ্রকুমার রায় রচনাবলী, ২য় খণ্ড, সম্পাদনায় গীতা দত্ত (এশিয়া, কলকাতাঃ ১৯৭৬, ৫ম মুদ্রণ ১৯৮২) ৯-৮৩। শ্রীঅভিরূপ মাশ্চরক সর্বপ্রথম আমাকে বোঝান কিভাবে বিলিতী supernatural explained-এর ধারাটি – আপাত অলৌ্কিককে আসলে মানুষের কারসাজি বলে প্রতিপন্ন করা, যার উৎকৃষ্ট উদাহরণ কোনান ডয়েলের Hound of the Baskervilles –হেমেন্দ্রকুমার উল্টে দিয়েছেন অমাবস্যার রাত উপন্যাসে।

 

[20] রচনাবলী, ২৭শ খণ্ড, সম্পাদনা গীতা দত্ত (এশিয়াঃ কলকাতা ২০১৩) ২৪-৩০। এই গল্পটির কথাও আমাকে মনে করান শ্রীঅভিরূপ মাশ্চরক।

[21] অবশ্য, মিসেস ওয়াটসন তবু দু-একবার দেখা দিয়েছেন, কিন্তু বিয়ের পর নিশাচরী বিভীষিকা-তে চিত্রা দেবী একেবারে অদৃশ্য!

 

[22] এ নিয়ে অন্যত্র বিস্তৃত আলোচনা করেছি।

5 কমেন্টস্:

  1. নিজের দুটি ভুল সংশোধন করতে চাইঃ ১। The Hound of the Baskervilles থেকে প্রথম ইংরেজী উদ্ধৃতির পর দ্বিতীয় বাক্যে 'কিন্তু' শব্দটি ২ বার লেখা হয়েছে; যে-কোন একটি বাদ যাবেঃ 'কিন্তু কাহিনীতে তার এই প্রথম বর্ণনায় সে কিন্তু নীরব।'
    ২। 'নিশাচরী বিভীষিকা'-র হন্তারক জীবটির বর্ণনায় লেখা হয়েছেঃ 'তার এক মাস বয়স থেকে চক্রান্তকারী তাকে পালন করেছে আর তাকে ব্লাডহাউন্ডের মতো লোকের ব্যবহার করা জিনিস শুঁকিয়ে সেই গন্ধ্রের অনুসরণ করতে শিখিয়েছে।' 'গন্ধ্রের' নয়, 'গন্ধের' হবে।

    উত্তরমুছুন
  2. Hemendrakumar-ke niye ei dhoroner lekhay amra kramagata samriddha hoye cholechi.

    উত্তরমুছুন
  3. 16 নং পাদটীকায় ওপরে 12 নং পাদটীকা দেখতে বলা হয়েছে। সঠিক পাদটীকার নম্বর হবে 15।

    উত্তরমুছুন
  4. অবশ্য, নিশাচরী বিভীষিকা-র শেষে এই উল্কামুখী জীবের যে ব্যখ্যা আমরা পাই,
    'ব্যখ্যা' নয়, 'ব্যাখ্যা' হবে।

    উত্তরমুছুন