ভাবনাপ্রেক্ষিত
রাস্তা শেষ তবু ভ্ৰমণ রয়েছে... এই কথাটা মনের মধ্যে
গুঞ্জন তোলে, যখন শতাব্দী শেষের একটি ফেলে আসা দশকের দিকে চেয়ে থাকি আনখ
শিখর। এই রকম একটি দশক, যখন
বিভিন্ন দিক থেকে তাৎপর্যময়, যখন সামাজিক, অর্থনৈতিক, রাষ্ট্রীয় ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি দেশ ও
সমাজের প্রথাবদ্ধ ঘটনা ও সংস্কারে, বড়ো অংশে দ্বন্দ্ব তৈরী
করে, অনেক ক্লিশে মূল্যবোধে আঘাত হানে নতুনতর সম্ভাবনা তার
দিক দিশা নিয়ে উপস্থিত হয়। কোনো দশকই পূর্বাপর
- বিরহিত নয়, বিশেষ করে যখন আমার আলোচ্য বিষয়, কবিতা,
তখন সমসাময়িক কাব্যিক চর্চার আবহাওয়ামন্ডলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ
বাতাস নিয়ন্ত্রিত করে অনেক চর্চাকেই।
নব্বইয়ের কবিতার প্রেক্ষা সব অর্থেই, ব্যাপ্তি, বৈচিত্রে এতো দিকদিশাময়, বহু রৈখিক, বহু কৌণিক, বহুত্ববাদী। আবহমান, সংহত,
বিদ্যুৎপৃষ্ঠ ট্রান্স থেকে ছন্দের ঘেরাটোপে চমকপ্রদ পংক্তির কবিতা
চর্চা, লিরিকপ্রিয়তা, আত্মকেন্দ্রিক
যাপনের অনাবিল চিত্রকল্পে প্রেম যৌনতা কামনা বাসনা বেকারত্ব অসফলতা ও সমাজ
রাষ্ট্রের পুঁজিবাদপ্রিয় স্তাবক রাষ্ট্রের অন্তঃসারশূন্য উল্লাসের বিরুদ্ধে কবির
তীর্যক কবিতা, শুদ্ধকবিতা,আবার মাটির
কাছাকাছি থেকে মুখের সরল ভাষায় নিজের নৈসর্গিক অস্তিত্ববাদী কবিতা, সাম্রাজ্যবাদী চিন্তা-চেতনা থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত
যুক্তিকেন্দ্রিক আধুনিক কবিতার ব্যক্তিকেন্দ্রিকতা থেকে মুক্তি পাবার জন্য, আমি
হীন, বিদিশাময় নির্দিষ্ট বিষয়বর্জিত বা অধুনান্তিকতায় বিশ্বাসী কবিতা, প্রতিকবিতা, নিজের চেতনা চল ও শব্দ উৎসকে বা ব্যক্তিহীন
বস্তুর বস্তুগুণকে চিনে নিয়ে নিজের অনুভূতির গভীরে আলো ফেলে তার
বিভিন্ন প্রকরণ ও ভাবনাকে আনন্দময় করার প্রয়াসে কোনো expectationকে stakeকে অপ্রাসঙ্গিক
ভেবে ব্যক্তির চেয়েও বেশি গুরুত্ব নৈব্যক্তিক ওই অবিমিশ্র অনুভূতিকে ক্রল ক'রে ক'রে স্পিটন দিয়ে ice axe দিয়ে
বিভিন্ন রকম ফেরে এই ভ্রমণ বা উৎসের
উৎসবকে দেখা যা অতিচেতনার কবিতা, বা আবহমান ও নতুন ধারার
মাঝে সমান্তরাল প্রচল ও অপ্রচল শব্দ
ব্যবহারে এক বহুরৈখিক
প্রতিকবিতার মতো কখনো অবয়বকবিতা আবার কখনো দৃশ্য-শ্রাব্য গুণের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে
কবিতার বহুগামিতা ও তাৎপর্যকে আবিষ্কার করার নেশায় আরেক সম্ভাবনার কবিতা... এরকম
আরো আরো নিয়েই বহু স্তরীয় জটিলতায় জ্বলজ্বল করছে নব্বইয়ের কবিতার আকাশ।
এর কারণও আছে। আছে সময়ের অনিয়ন্ত্রিত অভিঘাত। আশির দশকটিতে যখন ভেঙে পড়ছে পূর্ব ইউরোপের বোরখা ঢাকা সমাজতন্ত্র, ভাঙছে বার্লিন প্রাচীর, রোমানিয়ার রুখা-সুখা মাটি কাদা হচ্ছে নররক্তে এবং যীশুর মহিমাকীর্তন শব্দ, যুগপৎ অনুষঙ্গে। ইস্কনের সাধুসন্তরা মস্কোভার আকাশ উদ্দীপ্ত করছে গ্লাসনস্ত এবং টেকো-জিহোভার অসীম বৈপ্লবিক সৌজন্যে। বিভিন্ন দেশে জাতি দাঙ্গা। মধ্যপ্রাচ্যে তেলের খনি অবাধে লুঠ করার জন্য বিদেশি পুঁজি ও ডলারকে অগ্নিমূল্য দেবার জন্য সুপরিকল্পিত ভাবে ধর্মভিত্তিক গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে অস্ত্র বিক্রির দেদার বাজার তৈরী করা। অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহের উদার অর্থনীতির অভ্যুত্থান। নব্বইয়ের যুবক শৈশব দেখেছে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে না ওঠা ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের বাইরে, বাংলামাধ্যম স্কুলে গিয়ে অমল শৈশব। রেডিওই তখন একমাত্র বিনোদন। তখনো গ্রাম শহর মফস্বল ভরে আছে স্থানীয় গ্রন্থাগারে। তখনো টিকে আছে বিস্ময় নামক সেই বিস্মিত শব্দ, প্রান্তর পৃথিবী আর জনশূন্য আকাশের নিচে। তখনো সমাজে আর্থিক মানদণ্ড দিয়ে বন্ধুত্বের মেরুকরণে প্রভাবরহিত, সামাজিকতা। নব্বইয়ের যুবকের মধ্যে তাই কাঁটাতারহীন এক অদৃশ্য সীমারেখা। একটা দ্বন্দ্ব, দ্বিধা, মূল্যবোধের টানাপোড়েন। নব্বইয়ের আগে কিছুটা ভেঙে পড়া একান্নবর্তী পরিবার ছিলো, তখনো। সেখানে ধীরে ধীরে বন্ধ কারখানার জমি দখল করে,পুকুর বুজিয়ে আস্তে আস্তে জায়গা করে নিলো ফ্ল্যাট কালচার। ধর্মের ভিত্তিতে নয়, বস্তু বিশ্বের নব ব্যাখ্যান, বিচিত্র বিদ্যা ও বিশ্বায়নের ঔদার্যে, সমাজের প্রবহমান ভাব ও ভাবনার দ্বন্দ্ব ও গ্রহণ বা খারিজের মধ্যে দিয়ে তৈরী হলো এ শতাব্দীর শেষে এসে পাশাপাশি বাস করা অতি ব্যস্ত মানুষের মধ্যে অসীম দূরত্ব। বন্ধুত্ব প্রগাঢ় হলো অবিশ্বাস ও নিঃসঙ্গতার সঙ্গে। বেদিশা বিপন্ন ব্যাধিকেন্দ্রে নিজেকে চিহ্নিত করলো মানুষ।
আশির কবি নৃসিংহমুরারি দে নব্বই দশকের মাঝামাঝি এসে এমন একটি কবিতা লিখলেন, যেটি মানুষের অবস্থানকে সুচিহ্নিত করলো এভাবেই, যার সূত্রপাত এই নব্বই দশকেই। যখন একই বাড়ির প্রতিটি ভোগ্যপণ্য বাড়ির গণরুচি বা বাড়ির প্রভাবশালী ব্যক্তির ইচ্ছেয় নিয়ন্ত্রিত নয়। বাড়ির সাবান, পারফিউম, এমন কি মুক্ত বাজারে সদ্য জন্ম নেওয়া সেলফোনটিও আলাদা আলাদা। অশোক মিত্র কমিশন ও তৎকালীন এই বঙ্গের সরকার যতই মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ বলে নব্বই দশকের সমাজ বাস্তবতায় ভয়ঙ্কর অভিঘাত হানুন না কেন, তাঁরা সেই ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে মধ্য মেধার ভুল মূল্যবোধের শিক্ষা থেকে অটোমেশন ও কমপিউটারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত কামান দাগতে শুরু করলেন। তাঁরা বুঝলেন না, সত্তর দশকে যে সরকার শিশু, আশির দশকে কিশোর ও নব্বই দশকে পূর্ণ যুবকের ভূমিকায় সেই সরকারের শিকড় আলগা হতে আরম্ভ করেছে, কারণ সময়ের বিপুল পরিবর্তন, বাজার ও চাহিদাকে পাল্টানো কারোর দ্বারাই সম্ভব নয়। যাইহোক নৃসিংহমুরারি দে’র সেই সময়ের নিরিখে অতি প্রাসংগিক কবিতাটি উল্লেখ করে আমি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে যাবো, কেন এবং কেনই বা, নিরীক্ষামূলক নতুন সম্ভাবনাময় কবিতার প্রয়োজন হয়ে পড়লো এই নব্বইয়ে এসে, কেনই বা বিভিন্ন গোষ্ঠীও ছায়া ও ছাতার বাইরে দাঁড়িয়ে কতিপয় তরুণ কবির মনে হলো প্রচলিত আবহমান কবিতার ধারামুক্তির প্রয়োজন, সেই ঘোলা জলে মৎসশিকার আর নয়...
এর কারণও আছে। আছে সময়ের অনিয়ন্ত্রিত অভিঘাত। আশির দশকটিতে যখন ভেঙে পড়ছে পূর্ব ইউরোপের বোরখা ঢাকা সমাজতন্ত্র, ভাঙছে বার্লিন প্রাচীর, রোমানিয়ার রুখা-সুখা মাটি কাদা হচ্ছে নররক্তে এবং যীশুর মহিমাকীর্তন শব্দ, যুগপৎ অনুষঙ্গে। ইস্কনের সাধুসন্তরা মস্কোভার আকাশ উদ্দীপ্ত করছে গ্লাসনস্ত এবং টেকো-জিহোভার অসীম বৈপ্লবিক সৌজন্যে। বিভিন্ন দেশে জাতি দাঙ্গা। মধ্যপ্রাচ্যে তেলের খনি অবাধে লুঠ করার জন্য বিদেশি পুঁজি ও ডলারকে অগ্নিমূল্য দেবার জন্য সুপরিকল্পিত ভাবে ধর্মভিত্তিক গৃহযুদ্ধ লাগিয়ে অস্ত্র বিক্রির দেদার বাজার তৈরী করা। অর্থমন্ত্রী মনমোহন সিংহের উদার অর্থনীতির অভ্যুত্থান। নব্বইয়ের যুবক শৈশব দেখেছে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে না ওঠা ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলের বাইরে, বাংলামাধ্যম স্কুলে গিয়ে অমল শৈশব। রেডিওই তখন একমাত্র বিনোদন। তখনো গ্রাম শহর মফস্বল ভরে আছে স্থানীয় গ্রন্থাগারে। তখনো টিকে আছে বিস্ময় নামক সেই বিস্মিত শব্দ, প্রান্তর পৃথিবী আর জনশূন্য আকাশের নিচে। তখনো সমাজে আর্থিক মানদণ্ড দিয়ে বন্ধুত্বের মেরুকরণে প্রভাবরহিত, সামাজিকতা। নব্বইয়ের যুবকের মধ্যে তাই কাঁটাতারহীন এক অদৃশ্য সীমারেখা। একটা দ্বন্দ্ব, দ্বিধা, মূল্যবোধের টানাপোড়েন। নব্বইয়ের আগে কিছুটা ভেঙে পড়া একান্নবর্তী পরিবার ছিলো, তখনো। সেখানে ধীরে ধীরে বন্ধ কারখানার জমি দখল করে,পুকুর বুজিয়ে আস্তে আস্তে জায়গা করে নিলো ফ্ল্যাট কালচার। ধর্মের ভিত্তিতে নয়, বস্তু বিশ্বের নব ব্যাখ্যান, বিচিত্র বিদ্যা ও বিশ্বায়নের ঔদার্যে, সমাজের প্রবহমান ভাব ও ভাবনার দ্বন্দ্ব ও গ্রহণ বা খারিজের মধ্যে দিয়ে তৈরী হলো এ শতাব্দীর শেষে এসে পাশাপাশি বাস করা অতি ব্যস্ত মানুষের মধ্যে অসীম দূরত্ব। বন্ধুত্ব প্রগাঢ় হলো অবিশ্বাস ও নিঃসঙ্গতার সঙ্গে। বেদিশা বিপন্ন ব্যাধিকেন্দ্রে নিজেকে চিহ্নিত করলো মানুষ।
আশির কবি নৃসিংহমুরারি দে নব্বই দশকের মাঝামাঝি এসে এমন একটি কবিতা লিখলেন, যেটি মানুষের অবস্থানকে সুচিহ্নিত করলো এভাবেই, যার সূত্রপাত এই নব্বই দশকেই। যখন একই বাড়ির প্রতিটি ভোগ্যপণ্য বাড়ির গণরুচি বা বাড়ির প্রভাবশালী ব্যক্তির ইচ্ছেয় নিয়ন্ত্রিত নয়। বাড়ির সাবান, পারফিউম, এমন কি মুক্ত বাজারে সদ্য জন্ম নেওয়া সেলফোনটিও আলাদা আলাদা। অশোক মিত্র কমিশন ও তৎকালীন এই বঙ্গের সরকার যতই মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধ বলে নব্বই দশকের সমাজ বাস্তবতায় ভয়ঙ্কর অভিঘাত হানুন না কেন, তাঁরা সেই ভুল থেকে শিক্ষা না নিয়ে মধ্য মেধার ভুল মূল্যবোধের শিক্ষা থেকে অটোমেশন ও কমপিউটারের বিরুদ্ধে সম্মিলিত কামান দাগতে শুরু করলেন। তাঁরা বুঝলেন না, সত্তর দশকে যে সরকার শিশু, আশির দশকে কিশোর ও নব্বই দশকে পূর্ণ যুবকের ভূমিকায় সেই সরকারের শিকড় আলগা হতে আরম্ভ করেছে, কারণ সময়ের বিপুল পরিবর্তন, বাজার ও চাহিদাকে পাল্টানো কারোর দ্বারাই সম্ভব নয়। যাইহোক নৃসিংহমুরারি দে’র সেই সময়ের নিরিখে অতি প্রাসংগিক কবিতাটি উল্লেখ করে আমি দ্বিতীয় পরিচ্ছেদে যাবো, কেন এবং কেনই বা, নিরীক্ষামূলক নতুন সম্ভাবনাময় কবিতার প্রয়োজন হয়ে পড়লো এই নব্বইয়ে এসে, কেনই বা বিভিন্ন গোষ্ঠীও ছায়া ও ছাতার বাইরে দাঁড়িয়ে কতিপয় তরুণ কবির মনে হলো প্রচলিত আবহমান কবিতার ধারামুক্তির প্রয়োজন, সেই ঘোলা জলে মৎসশিকার আর নয়...
“আপনার বাড়িতে ফ্রিজ আছে / বিদেশী রঙিন
টিভি আছে / এবং এন্তার ভিডিও ক্যাসেট আছে / আপনার
অনেক লকার আছে / ভল্ট ও আছে, / আপনার এয়ারকন্ডিশন্ড গাড়ি আছে,
/ উলেন কার্পেট এবং জাজিম আছে / আপনার পাঁচটা বিলিতি কুকুর আছে / বাথরুমে ইলেক্ট্রিক শাওয়ার আছে / আচ্ছা বেশ তো! / আপনি
কোথায় আছেন আপনার বাড়িতে?”
সচেতন প্রস্তুতিপর্ব
কোনো দশকই যখন স্বয়ম্ভু নয়, তখন নব্বইয়েরও আছে বিভিন্ন ভাবে প্রস্তুতিপর্ব। তিরিশের কবিরা সমবেত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রভাব থেকে নিজেদের বাঁচাবার জন্য। সমাজবাদী সাহিত্যাদর্শের বিশ্বাসও ফ্যাশন যূথবদ্ধ করেছিল চল্লিশের কতিপয় কবিদের। পঞ্চাশের কবিদের ঐরকম কোনো উত্তুঙ্গ প্রতিবন্ধক বা বিশেষ সাহিত্যাদর্শে বিশ্বাস ছিলো না - ভাসমান তাঁরা একত্রিত হয়েছিলেন আত্মস্বীকৃতির তাগিদে স্রেফ বন্ধুত্বের টানে, হয়তো সাধারণ্যে লুপ্ত না হওয়ার প্রতিষেধক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এই রাস্তা। যদিও এদের মধ্যে অনেকেরই ছিলো দিলীপকুমার গুপ্তের মতো উদার সহায়ক এবং বুদ্ধদেব বসুর মতো বৎসল অনুগ্রাহক, সর্বোপরি মিডিয়া জগতের চূড়ামণি সংস্থার মতো পরিপালক ও দুর্গ। সত্যি, পঞ্চাশের অনেক কবিই সম্পূর্ণ দোহন করে নিয়েছিলো সমকালীন সমস্ত কামধেনুগুলিকে। যার দেখানো পথ অনুসরণ করেছে নব্বই দশকের অনেক কবি। আবার ষাটের হাংরি আন্দোলন (১৯৬১ ), শাস্ত্রবিরোধী (১৯৬৬), নিমসাহিত্য (১৯৬৭) থেকে গণতন্ত্র ও চাকর সাহিত্য বিরোধী আন্দোলন থেকে ছাঁচ ভেঙে ফেলো (১৯৭৩) থেকে থার্ড লিটারেচার (১৯৮৪), যার পরোক্ষ প্রভাবে সম্পূর্ণ ভাবে ধারাবদ্ধ আবহমানের গতানুগতিক লেখনীর দমবন্ধ করা পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য নিঃশর্ত আনন্দে ভাষা মুক্তি ও ভাবনা নিয়ে নতুন নিরীক্ষামূলক লেখার কথা ভাবলেন আশির কবিরা। স্বদেশী ও বিদেশি আন্দোলন, কবিতা কেন্দ্রিক প্রচুর পড়াশুনো ও অন্বেষণ, অনুবাদ,অনুবাদের মাধ্যমে ছাঁচ ভাঙা প্রকরণগুলোকে নিয়ে সাহসিক কাজগুলোর কথা নতুন ভাবে ভাবতে শুরু করলেন আশির অনেক কবি। এবং তার কিছু প্রভাব পড়লো নব্বইয়ের কতিপয় কবির মধ্যে, যাদের মধ্যে অন্তত কবিতা লিখে করে খাবার কোনো বাসনা ছিলো না।
নব্বইয়ের এই নব্য পথের অভিযাত্রী যারা, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সমান্তরাল আবহমানের দ্যুতি কঠিন বৈদগ্ধ্যের ধ্রুপদ প্রজ্ঞানময় উপলব্ধির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন নিছক দার্শনিকতা বর্জিত বিচিত্রমুখী মরমিতার নির্ণয়কাজ। এক সম্ভাবনাময় কবিতার চলাচল। আসলে পঞ্চাশের স্মার্ট সাংবাদিক ও সহজ ছন্দের তরলতায় বিশ্বাসী তাদের সমকালীন অনেক বন্ধুদের চেয়ে এরা কবিতাকে আদ্যন্ত ভালোবেসেছিলো নতুন ভাবে উৎস চেতনাকে চিহ্নিত করে, অসীম সসীমের দ্বন্দ্বহীন, ইমেজহীন অভেদ অখণ্ডতায় তুলে ধরার জন্য। ধারণা বা concept থেকে চেতনা কোথায় আলাদা, তা বোঝা যায় নব্বইয়ের এই সমস্ত কবিতা থেকে। জীবন যাপনে without গিমিক, ধারণা পাল্টায় বারংবার, কিন্তু চেতনার মধ্যে সমস্ত অনুভূতির অবিমিশ্র রসধারাকে সমাজ নিরীক্ষক না হয়ে দিশাহীন বহু রৈখিকতায় বাজিয়ে তোলা, বড়ো নিসর্গের মধ্যে জায়মান চেতনা- শ্রমণের তৃষা নিয়ে যে মানসভ্রমণ ও কাল্পনিক অভিজ্ঞতার চলাচল বিস্তৃত ও ব্যাপ্তিতে মহাজাগতিক ইন্ধনে আনন্দঘন বা বিষাদিত রসনিঃস্রাবক হয়েও জ্যান্ত ব্যঞ্জনায় কখনো রক্ত মাংসের প্রাকার পেরিয়ে অন্তস্পর্শী, তা দেখা গেলো কতিপয় এই কবিদের মধ্যে। পরবর্তীকালে সমালোচক তাদের মধ্যে পেয়েছেন আধুনিকতার কয়েনেজ কখনো... কখনো আবার নতুনচেতনাশ্রয়ী অতিচেতনার গুণাবলীও কেউ কেউ দেখেছেন তাদের কবিতায়। কিন্তু সর্বার্থেই অনেক বৈশিষ্ট নিয়েই এরা নিরীক্ষামূলক আবহমানের নতুন কুশলী। যারা আবার নতুন করে পড়তে শুরু করলেন জেমস জয়েস, কাফকা, রিচার্ড বাখের, ইলিউশন। রবার্ট এম পিরসিগ-এর লেখা, ‘zen and the Art of Motor cycle Maintenance’। নতুন ভাবে আরেকবার এই নব্য পথযাত্রীর কেউ কেউ পড়ে ফেললেন ওসওয়াল্ড স্পেঙলারের ‘দ্য ডিক্লাইন অফ দ্য ওয়েস্ট’ বইটি। কারণ ষাটের দশকে বাংলা ভাষায় সবচেয়ে প্রভাবশালী কবিতা আন্দোলনটির প্রেক্ষাপট তৈরী হবার পেছনে এই বইটির অবদান অস্বীকার করা যায় না। নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য সমস্ত কিছুই কাজে লেগে যায় কখনো না কখনো... এই নবসিঞ্চিত রসধারায় সিক্ত কবিরা বুঝলেন।
কোনো দশকই যখন স্বয়ম্ভু নয়, তখন নব্বইয়েরও আছে বিভিন্ন ভাবে প্রস্তুতিপর্ব। তিরিশের কবিরা সমবেত হয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথের প্রভাব থেকে নিজেদের বাঁচাবার জন্য। সমাজবাদী সাহিত্যাদর্শের বিশ্বাসও ফ্যাশন যূথবদ্ধ করেছিল চল্লিশের কতিপয় কবিদের। পঞ্চাশের কবিদের ঐরকম কোনো উত্তুঙ্গ প্রতিবন্ধক বা বিশেষ সাহিত্যাদর্শে বিশ্বাস ছিলো না - ভাসমান তাঁরা একত্রিত হয়েছিলেন আত্মস্বীকৃতির তাগিদে স্রেফ বন্ধুত্বের টানে, হয়তো সাধারণ্যে লুপ্ত না হওয়ার প্রতিষেধক হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এই রাস্তা। যদিও এদের মধ্যে অনেকেরই ছিলো দিলীপকুমার গুপ্তের মতো উদার সহায়ক এবং বুদ্ধদেব বসুর মতো বৎসল অনুগ্রাহক, সর্বোপরি মিডিয়া জগতের চূড়ামণি সংস্থার মতো পরিপালক ও দুর্গ। সত্যি, পঞ্চাশের অনেক কবিই সম্পূর্ণ দোহন করে নিয়েছিলো সমকালীন সমস্ত কামধেনুগুলিকে। যার দেখানো পথ অনুসরণ করেছে নব্বই দশকের অনেক কবি। আবার ষাটের হাংরি আন্দোলন (১৯৬১ ), শাস্ত্রবিরোধী (১৯৬৬), নিমসাহিত্য (১৯৬৭) থেকে গণতন্ত্র ও চাকর সাহিত্য বিরোধী আন্দোলন থেকে ছাঁচ ভেঙে ফেলো (১৯৭৩) থেকে থার্ড লিটারেচার (১৯৮৪), যার পরোক্ষ প্রভাবে সম্পূর্ণ ভাবে ধারাবদ্ধ আবহমানের গতানুগতিক লেখনীর দমবন্ধ করা পরিবেশ থেকে বাঁচার জন্য নিঃশর্ত আনন্দে ভাষা মুক্তি ও ভাবনা নিয়ে নতুন নিরীক্ষামূলক লেখার কথা ভাবলেন আশির কবিরা। স্বদেশী ও বিদেশি আন্দোলন, কবিতা কেন্দ্রিক প্রচুর পড়াশুনো ও অন্বেষণ, অনুবাদ,অনুবাদের মাধ্যমে ছাঁচ ভাঙা প্রকরণগুলোকে নিয়ে সাহসিক কাজগুলোর কথা নতুন ভাবে ভাবতে শুরু করলেন আশির অনেক কবি। এবং তার কিছু প্রভাব পড়লো নব্বইয়ের কতিপয় কবির মধ্যে, যাদের মধ্যে অন্তত কবিতা লিখে করে খাবার কোনো বাসনা ছিলো না।
নব্বইয়ের এই নব্য পথের অভিযাত্রী যারা, তাদের মধ্যে কেউ কেউ সমান্তরাল আবহমানের দ্যুতি কঠিন বৈদগ্ধ্যের ধ্রুপদ প্রজ্ঞানময় উপলব্ধির সঙ্গে মিশিয়ে দিলেন নিছক দার্শনিকতা বর্জিত বিচিত্রমুখী মরমিতার নির্ণয়কাজ। এক সম্ভাবনাময় কবিতার চলাচল। আসলে পঞ্চাশের স্মার্ট সাংবাদিক ও সহজ ছন্দের তরলতায় বিশ্বাসী তাদের সমকালীন অনেক বন্ধুদের চেয়ে এরা কবিতাকে আদ্যন্ত ভালোবেসেছিলো নতুন ভাবে উৎস চেতনাকে চিহ্নিত করে, অসীম সসীমের দ্বন্দ্বহীন, ইমেজহীন অভেদ অখণ্ডতায় তুলে ধরার জন্য। ধারণা বা concept থেকে চেতনা কোথায় আলাদা, তা বোঝা যায় নব্বইয়ের এই সমস্ত কবিতা থেকে। জীবন যাপনে without গিমিক, ধারণা পাল্টায় বারংবার, কিন্তু চেতনার মধ্যে সমস্ত অনুভূতির অবিমিশ্র রসধারাকে সমাজ নিরীক্ষক না হয়ে দিশাহীন বহু রৈখিকতায় বাজিয়ে তোলা, বড়ো নিসর্গের মধ্যে জায়মান চেতনা- শ্রমণের তৃষা নিয়ে যে মানসভ্রমণ ও কাল্পনিক অভিজ্ঞতার চলাচল বিস্তৃত ও ব্যাপ্তিতে মহাজাগতিক ইন্ধনে আনন্দঘন বা বিষাদিত রসনিঃস্রাবক হয়েও জ্যান্ত ব্যঞ্জনায় কখনো রক্ত মাংসের প্রাকার পেরিয়ে অন্তস্পর্শী, তা দেখা গেলো কতিপয় এই কবিদের মধ্যে। পরবর্তীকালে সমালোচক তাদের মধ্যে পেয়েছেন আধুনিকতার কয়েনেজ কখনো... কখনো আবার নতুনচেতনাশ্রয়ী অতিচেতনার গুণাবলীও কেউ কেউ দেখেছেন তাদের কবিতায়। কিন্তু সর্বার্থেই অনেক বৈশিষ্ট নিয়েই এরা নিরীক্ষামূলক আবহমানের নতুন কুশলী। যারা আবার নতুন করে পড়তে শুরু করলেন জেমস জয়েস, কাফকা, রিচার্ড বাখের, ইলিউশন। রবার্ট এম পিরসিগ-এর লেখা, ‘zen and the Art of Motor cycle Maintenance’। নতুন ভাবে আরেকবার এই নব্য পথযাত্রীর কেউ কেউ পড়ে ফেললেন ওসওয়াল্ড স্পেঙলারের ‘দ্য ডিক্লাইন অফ দ্য ওয়েস্ট’ বইটি। কারণ ষাটের দশকে বাংলা ভাষায় সবচেয়ে প্রভাবশালী কবিতা আন্দোলনটির প্রেক্ষাপট তৈরী হবার পেছনে এই বইটির অবদান অস্বীকার করা যায় না। নিজেকে প্রস্তুত করার জন্য সমস্ত কিছুই কাজে লেগে যায় কখনো না কখনো... এই নবসিঞ্চিত রসধারায় সিক্ত কবিরা বুঝলেন।
নিরীক্ষামূলক আবহমানের নতুন
নব্বই দশকের বহু পথগামী কবিতার ব্যাপক বৈচিত্র্যের মধ্যে বেশ কিছু কবি নিজেদের মতো করে আনন্দদায়ক লেখার আর্জে নিবিড় মননে একক নির্জন পথে লিখে গেলেন কবিতাকে কোনো প্রত্যাশা পূরণের চাঁদমারি না ভেবে। আধুনিক কবিতার নির্দিষ্ট বিষয় তাদের ছিলো না। বিষয়হীন বা নির্দিষ্ট বিষয়মুক্ত, শব্দ ব্যবহারে সংস্কারমুক্ত, যুক্তিফাটলের শূন্যতা থেকে বহু স্তরীয় আলো ফেলে কবিতাকে এরা বাজিয়ে তুললেন গোপন মুদ্রায়। তাদের সবাইকে ধরার মতো স্পেস এই লেখায় নেই, কেবল কিছু কবিতার বৈশিষ্ট থেকে তাদের বিশিষ্টতাকে উদাহরণ হিসেবে এখানে তুলে ধরছি --
নব্বই দশকের বহু পথগামী কবিতার ব্যাপক বৈচিত্র্যের মধ্যে বেশ কিছু কবি নিজেদের মতো করে আনন্দদায়ক লেখার আর্জে নিবিড় মননে একক নির্জন পথে লিখে গেলেন কবিতাকে কোনো প্রত্যাশা পূরণের চাঁদমারি না ভেবে। আধুনিক কবিতার নির্দিষ্ট বিষয় তাদের ছিলো না। বিষয়হীন বা নির্দিষ্ট বিষয়মুক্ত, শব্দ ব্যবহারে সংস্কারমুক্ত, যুক্তিফাটলের শূন্যতা থেকে বহু স্তরীয় আলো ফেলে কবিতাকে এরা বাজিয়ে তুললেন গোপন মুদ্রায়। তাদের সবাইকে ধরার মতো স্পেস এই লেখায় নেই, কেবল কিছু কবিতার বৈশিষ্ট থেকে তাদের বিশিষ্টতাকে উদাহরণ হিসেবে এখানে তুলে ধরছি --
“প্রথম ও দ্বিতীয় কবিতাটি নিজের মতো করে লিখলেও দিনের তৃতীয় কবিতাটি আমি / এমন ভাবে লিখি যাতে প্রতিবেশীদের অসুবিধা
না হয়” (সুমিতেশ সরকার)
“রঙেতে ভাঙন এলো, শৈলী এলো / উর্বরা
নারীকে দেখো / বিষণ্ন মনের ডালে বিবিধ পটুয়া / আড়ানার রাগে অই অনুরাগ ঝরে...”
(অনিকেত পাত্র)
“বরফের ফেরিওয়ালা থেকে বাষ্পের চালক, মাঝে
দিনকয়েক / আমার চাকরি, হাটে হাঁড়ি না ভাঙলে তেষ্টা মেটে না,
শুধু / চন্দ্রবিন্দুর ঘাড় থেকে নামিয়ে আনা রম্যরচনা, আর ঢেলে দেওয়া / ক্রেতা সুরক্ষার নীচে” (অনিন্দ্য রায়)
“দোল পূর্ণিমার কাছাকাছি যে চাঁদে জড়ুলচিহ্ন ফুটে ওঠে
তা থেকে রক্তক্ষরণ হলে / সমস্ত বাতাবি
লেবুর বন এক হলুদ গন্ধে ভরে যায়” (শুভাশিস গঙ্গোপাধ্যায়)
“কোথাও হিসেবে বাড়ছে রেস্তোরাঁর
পাশে। আর এই বিকেল সেরে নিতে / কিছুটা জঙ্গল দাঁড়িয়ে আছে সুতো কেটে চলে যাওয়া
ঘুড়ির বদলে” (অতনু বন্দ্যোপাধ্যায়)
“নামটি মুছে ফেললাম / বাঘটি দিব্বি নাকে নাক ঘষছে /
নাম জুড়ে দেবার পরও / বাঘটি ডোরাকাটা
থাকছে না আর” (রিমি দে)
“অতিরিক্ত আলো করি ধারাবাহিক ঢেউ দি, ডানাপোড়া
ছাই নিয়ে ঢেউ খাওয়া পাখি কি প্রমাণ রাখিলো সে কাদম্বরী?”
(কল্যাণী লাহিড়ী)
“গুহা সর্বগ্রাসী এক তাপঘর, / সেও কাঁপে ততোধিক তাপে ও দহনে” (দেবাশিস কুন্ডু)
“এবং একজন শিকারীর মৃত্যু হলে সারাদিন বরফ পড়তে থাকে
/ থমথমে শহর” (সুবীর সরকার)
“আমার আত্মার একটুকরো রুটি / চাঁদের জলে ভেজাও /
খাদের ধারে সে বড় ভাসছে” (রাজর্ষি চট্টোপাধ্যায়)
“বিস্মৃতপ্রায় একটি ক্ষুরের বিভঙ্গের আড়ালে যে দহন /
আমি খুঁজে বেড়াচ্ছি তারই বিবৃতি” (শৌভিক দে সরকার)
“বন্ধু বিক্রীর দিনে / শরবত বাজার ভর্তি আলো / কোনও
ঘুম দৃশ্য হতে থাকে” (শৌভিক দত্ত)
“কলকাতা থেকে সমুদ্রের দিকে যেতে কমবেশি এক রাত লেগে
যায়, / না
কি আরও কম, জানো?” (কৌশিক চক্রবর্তী)
“দৈনিক কাগজে বাজার দর নামের যে কলামটা নিয়ম করে বের
করা হয়, সেই কাটা পোনা ও গিনি সোনার প্রাত্যহিক ক্রয়মূল্যের মধ্যে,
কোনো কোনো কবি- সাহিত্যিকের ডেইলি রেটটাও দেওয়া নেই কেন?” (কৌশিক চট্টোপাধ্যায়)
“থকথকে আলোর সস ছড়িয়ে আমাকে চিবোতে থাকে খুব ক্ষিদে
পাওয়া গর্তগুলো” (অরণ্যা
সরকার)
“সন্ধ্যার সমুদ্রের চূড়া বয়ে নিয়ে যাচ্ছে কম্পিত
শেষস্বর, / ঘুমন্ত দারুভূত কালাগ্নিরুদ্রকে। দূর ভক্তাগাজনের
গ্রামে / ডিগর শিশুরা তড়িঘড়ি কাঠগুঁড়ির চাঁদ উঠিয়েছে”। (শুভাশিস
মন্ডল)
এই উদাহরণ যেমন সমস্তের নিরবচ্ছিন্ন অন্বেষণ নয়, এমন কি ‘নিরীক্ষামূলক আবহমানের নতুন’ নামক এই স্বতন্ত্র নব্বইয়ের কবিদের মাত্র একটি পংক্তি উদ্ধার করেই যেমন তাদের লেখালিখির সামগ্রিক অমোঘ গন্তব্য, চিরছায়ারৌদ্রের সঞ্জীবনী কার্যকারণের পূর্ণ ব্যঞ্জনাগর্ভ উপস্থাপনার মৌলিক কৌশলকে বা কবি ব্যক্তিত্বের সমস্ত মেধা, শ্রম, অতন্দ্রতা, অনুশীলন ও নিষ্ঠাকে যেমন তুলে ধরে না, তেমনি এঁরা কেন বহুরৈখিক সূক্ষ্মতায় ভাবনা সংস্থানের ও ভাষায় কিংবা দৃষ্টিভঙ্গির বিশেষত্বে আধুনিক অনেক আবহমানের কবিদের চেয়ে আলাদা, তার প্রমাণ ও পরিকল্পনার স্থান হয়তো এই প্রবন্ধটিও নয়। এই উদাহরণের বাইরে নব্বইয়ের এই ধারার অনেক কবি নীরবে কাজ করে চলেছেন, যাঁরা বাংলা কবিতার প্রেক্ষাপটে স্বতন্ত্র নব্বইয়ের চরাচরপ্লাবী আলোয় উদ্ভাসিত। আয়ুষ্মান ও অনুশীলনশীল এখনো। তাদের কবিতায় কোনো গোষ্ঠীর ছত্রছায়া নেই। নেই কোনো একমাত্র ইজমে আটকে থাকার প্রবণতা। আগুনের বিস্ফোরণ নেই, তাপ আছে, জলের প্লাবন নেই। আদ্রতা আছে, দুঃখ বিলাসিতা নেই। শ্রমণের প্রশস্ত ছায়া আছে। একটা শতাব্দীর শেষের মুখে যে বদলগুলো সমাজের আত্মার গভীরতা থেকে উৎসারিত তার অন্তর্নিহিত ‘টোটাল পোয়েট্রি কন্টেন্ট’ নিয়ে সে নতুন সম্ভাবনার দিকে চেয়ে থাকে অভিযাত্রী হয়ে।
এই উদাহরণ যেমন সমস্তের নিরবচ্ছিন্ন অন্বেষণ নয়, এমন কি ‘নিরীক্ষামূলক আবহমানের নতুন’ নামক এই স্বতন্ত্র নব্বইয়ের কবিদের মাত্র একটি পংক্তি উদ্ধার করেই যেমন তাদের লেখালিখির সামগ্রিক অমোঘ গন্তব্য, চিরছায়ারৌদ্রের সঞ্জীবনী কার্যকারণের পূর্ণ ব্যঞ্জনাগর্ভ উপস্থাপনার মৌলিক কৌশলকে বা কবি ব্যক্তিত্বের সমস্ত মেধা, শ্রম, অতন্দ্রতা, অনুশীলন ও নিষ্ঠাকে যেমন তুলে ধরে না, তেমনি এঁরা কেন বহুরৈখিক সূক্ষ্মতায় ভাবনা সংস্থানের ও ভাষায় কিংবা দৃষ্টিভঙ্গির বিশেষত্বে আধুনিক অনেক আবহমানের কবিদের চেয়ে আলাদা, তার প্রমাণ ও পরিকল্পনার স্থান হয়তো এই প্রবন্ধটিও নয়। এই উদাহরণের বাইরে নব্বইয়ের এই ধারার অনেক কবি নীরবে কাজ করে চলেছেন, যাঁরা বাংলা কবিতার প্রেক্ষাপটে স্বতন্ত্র নব্বইয়ের চরাচরপ্লাবী আলোয় উদ্ভাসিত। আয়ুষ্মান ও অনুশীলনশীল এখনো। তাদের কবিতায় কোনো গোষ্ঠীর ছত্রছায়া নেই। নেই কোনো একমাত্র ইজমে আটকে থাকার প্রবণতা। আগুনের বিস্ফোরণ নেই, তাপ আছে, জলের প্লাবন নেই। আদ্রতা আছে, দুঃখ বিলাসিতা নেই। শ্রমণের প্রশস্ত ছায়া আছে। একটা শতাব্দীর শেষের মুখে যে বদলগুলো সমাজের আত্মার গভীরতা থেকে উৎসারিত তার অন্তর্নিহিত ‘টোটাল পোয়েট্রি কন্টেন্ট’ নিয়ে সে নতুন সম্ভাবনার দিকে চেয়ে থাকে অভিযাত্রী হয়ে।
হয়তো নতুনের দুঃখ নেই, হয়তো অসম্পূর্ণ, হয়তো এই
অবিমিশ্র অনুভব নির্যাসের অনুবাদক বলেই
পদে পদে অনিশ্চয়! এই অসম্পূর্ণতা তার গ্রহণ বর্জনের ভেতর দিয়ে অনেক দূরের নির্জনতায়
আত্মীকৃত এক নিজস্ব ক্ষরিত আলো। বস্তুত, আধুনিক
লেখনীর পৌনঃপুনিক স্থিতাবস্থা ভাঙে অতি বৈতনিক বিষয়ী কবির লজ্জাবশত, মৃত শব্দের সংখ্যাগরিষ্ঠ ভাবনার মূলে... এই স্বতন্ত্র নব্বই...
প্রদীপের গদ্য থেকে সবসময়ই আমরা একটি গভীর এবং ব্যাপ্ত জলাশয় পাই । অবগাহন করি ।
উত্তরমুছুনভাল লাগলো ,প্রদীপ। তবে '৯০ নিয়ে যতই পড়ি না কেন, মনেহয় কোথাও যেন একটা অতৃপ্তি অপূর্ণতা রয়ে গেল।
উত্তরমুছুনমনে পড়ে যাচ্ছে প্রদীপের পাখিময় সত্তা যা আমাকে কবিতা লেখায় এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। এভাবেই নব্বইয়ের কাছে উত্তরসূরী হয়ে উঠৈছিলাম।
উত্তরমুছুনরাস্তা শেষ তবু ভ্রমণ রয়েছে, তোর মত কয়েকজন পথিকের জন্যই লিখেছিলাম প্রদীপ। খুব ভাল লাগল।
উত্তরমুছুন