পাহাড় এবং সে
মূল ক্যাম্প পাহাড়ের
পাদদেশে রেখে যখন ওপরে উঠতে হয় তখন বোঝা যায় উঠে আসাটা আসলে কঠিন। বরং নেমে যাওয়া সহজ। বলা যায়, তখন প্রচেষ্টাহীন ক্রমবর্ধমান পতোন্মুখ গতি সামলানোই মুশকিল। সে তো আর পীচঢালা পথ হেঁটে ওপরে ওঠা
নয়! পাহাড়ের গা বেয়ে শক্ত মাটির পাথুরে পথ। ট্র্যাক ধরে একবার যদি পাহাড়ের উঁচুতে চলে যাও, জেনে রেখো, সে কখনো নিরাশ করে না। কিছু থাকেই।
শীর্ষ বিন্দুতেই পাওয়া যায় অবারিত সমস্তটা, যখন পায়ের নিচে শুয়ে পৃথিবী আর ওপরে
আকাশ খুলে যাওয়া।
জীবনের পথ এমনই ভাবছিল প্রিয়াঙ্কা, আকাশ আর
পৃথিবীর মাঝখানে বসে। অরণ্য-পাহাড়ে আজ জ্যোৎস্না নেই। পাহাড়ের ঠিক চূড়োতে নয়, মাঝামাঝি একলা কটেজের বারান্দায় গাঢ় অন্ধকারে দুটো চেয়ার
পাশাপাশি। একটিতে সন্ধ্যের পর থেকে রাত্রির নির্জনতায় সে বসে। আরেকটি চেয়ার অন্তহীন অপেক্ষায় পড়ে আছে। টেবিলের ওপর আলোগোছে ঘুমিয়ে আইফোন। সাইলেন্ট মোডে। এখানে জোনাকি জ্বলে না। প্রকান্ড সব পাহাড় আর
সুদীর্ঘ গাছগুলোর ওপর একের পর এক কালো রঙের পরত ধীর লয়ে বুলিয়ে যাচ্ছে আকাশ। কালো ক্যানভাসের অচেনা আঁধারে ভিজে যাচ্ছে সে। কোথাও কেউ
নেই। যেখানে মানুষ শেষ সেখানেই যে পাহাড়ের শুরু! দূরে ঝর্ণা দেখেছিল বিকেলে। ঝর্ণার কুলকুল অত দূর এসে পৌঁছবে
ধারণাই করতে পারেনি। তা সে কোনোদিনই কিছু ধারণা করে
উঠতে পারে না। তার আগেই যা হওয়ার হয়ে টয়ে সে অবশ আলথালু বসে থাকে। সবটুকু আবার হয়েও ওঠে না।
না-হওয়ার ভিড়ই বেশি। তার ধারণাগুলোও ম্রিয়মান। চোখের সামনে রাত পাহাড়ের যে স্থির
চিত্র দেখতে পাচ্ছে সেখানে শীতল জলের ছিটে এসে পড়ে। সমস্ত শরীর শিরশিরিয়ে অজানা স্রোত বয়ে যায় বড় পাথর ছুঁয়ে
আর ছোট পাথর ডুবিয়ে।
ডিনার করে মেয়ে ঘুমিয়ে
পড়েছে। হিটার অন করাতে বেশ আরামদায়ক ঘরের তাপমাত্রা। মেয়ের পাশে ঘুমিয়ে মেয়ের
বাবা। প্রিয়াঙ্কার রাত কাটে নির্ঘুম। প্রতীক্ষার অপাপবিদ্ধ চোখে সে তাকিয়ে দেখছে অথচ দেখাতেও কত রকম ভুলভাল
হয়ে যায়। থর্নটনের পাহাড়ে বসে যদি মনে হয় এক্ষুনি ম্যাকলাস্কির পাহাড়ের পাকদণ্ডী বেয়ে সুকুদা নেমে যাবে, সে তো
ভ্রান্তিই! তখন হাওয়া উঠলেই এ মন সজনে পাতার চেয়েও হালকা হয়ে যায়, ভরশূন্য হয়ে পড়ে
আর কী অনায়াসে ছুটি হয়ে যায় প্রাণ!
জীবন ক্রমশ প্রস্তুরীভূত। অত সহজে ছুটির ভরন্ত ভালোবাসার আশ্লেষ মেলে
কই? প্রচন্ড সামাজিক হৈ হট্টগোলে কোথায় আর
সুকুদার বুকে মাথা এলিয়ে দেওয়া! শুধু শীতই রইল। হাওয়ার কাঁপন শুধু ঠাণ্ডা বাড়িয়েছে
বহুগুণ। ঘাড়ের কাছে জ্যাকেটের সূক্ষ্ম ফাঁক গলে, অদৃশ্য সুতো বেয়ে শীত বুক পর্যন্ত
নেমে গেলে জুবুথুবু প্রিয়াঙ্কা ভালো করে গলায় মাফলার জড়িয়ে নেয়। হাতে পরে নেয় খুলে
রাখা গ্লাভস। উঠে আসার জন্য কিংবা নেমে যাওয়ার জন্য যে পথ
সেখানে ঘুটঘুটে আঁধার। দু’তিনটে জায়গায়
সেন্সর লাইট আছে। কেউ এলে আপনাতেই জ্বলে। কিছু পরে নিভে যায়। যেন বুকের ভেতর এক জাদুর
মোমবাতি! সে এলো তো জ্বলে উঠল। তার প্রস্থান
মানে আলো ডুবে যাওয়া।
ক্ষীণকায়া চাঁদ। নক্ষত্রচূর্ণ
নিয়ে আকাশ উপুড় হয়ে আছে। হঠাৎ তাকিয়ে দেখে, কালপুরুষ সামনে এসে
দাঁড়িয়ে। মুখ তুলে দেখতে হচ্ছে না। আকাশের পথ বেয়ে নিরভিমান কালপুরুষ নেমে এসেছে। মুগ্ধতায় পলক পড়ে
না। এ কি সম্ভব? জানে না সে কিছুই। কালপুরুষ কেমন অস্পস্ট হঠাৎ। হয়তো আকাশে মেঘ
ছেয়েছে কিংবা কক্ষপথ বেয়ে পৃথিবী আরেকটু ঘুরে গেছে। বাতাসে মিশে যায় প্রিয়াঙ্কার
এলোমেলো উষ্ণ নিঃশ্বাস।
ঠিক এই মুহূর্তে কেন সে এমন আগল খুলে বসে আছে? মুঠোফোনে যে আসত, সে ফিরে গেছে।
ভাই ইশরাত, আপনার লেখাটি পড়লাম। একটা মুডকে ধরেছেন আর ধরার জন্য বেছে নিয়েছেন কয়েকটি রূপকল্প। এই রূপকল্পগুলি ফুটে আছে স্ফটিকের দ্যূতি নিয়ে
উত্তরমুছুনআপনি মূলত কবি বোঝা যায়, গল্পের পাড়ায় বেড়াতে এসেছেন।
ভাই ইশরাত, আপনার লেখাটি পড়লাম। একটা মুডকে ধরেছেন আর ধরার জন্য বেছে নিয়েছেন কয়েকটি রূপকল্প। এই রূপকল্পগুলি ফুটে আছে স্ফটিকের দ্যূতি নিয়ে
উত্তরমুছুনআপনি মূলত কবি বোঝা যায়, গল্পের পাড়ায় বেড়াতে এসেছেন।
এই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনএই মন্তব্যটি লেখক দ্বারা সরানো হয়েছে।
উত্তরমুছুনধন্যবাদ, দাদা! শুভেচ্ছা নিরন্তর!
উত্তরমুছুনধন্যবাদ, দাদা! শুভেচ্ছা নিরন্তর!
উত্তরমুছুন