কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

শনিবার, ২৫ জুন, ২০১৬

সোনালি বেগম

হাই রোমিও


সৃষ্টির অনাবৃত সুখ প্রকৃতির অপ্রতিরোধ্য সুর নতুন দৃষ্টির স্বচ্ছতায় দৃঢ় প্রতিজ্ঞ অরুণাভ দত্তকখনও বিক্ষুব্ধ মন পারিপার্শ্বিক নানান ঘটনায় বিচলিতমনুষ্যত্বের অপমান সহ্য করতে না পারার কষ্ট অন্তরের টানাপোড়েন তাকে ভাবায়সে আজ প্রকৃতির সান্নিধ্য পেতে চাইছেশাণিত বিদ্রুপ পেয়ে পেয়ে আজ সে ভারাক্রান্ত। তার দোষটা কোথায়! সে শম্পাকে গভীরভাবে ভালোবেসেছেমনপ্রাণ উৎসর্গীকৃত ধূসর জীবনধারায় প্রদীপের আলো জ্বালিয়েছেসেদিন মনতোষকাকু তাকে কটাক্ষ করে বলেছেন, ‘রোমিও, কাজ নেই কম্ম নেই আমাদের বাড়ির আশেপাশে ঘুর-ঘুর করছ কেন?’ আজ স্নেহাশিষ জেঠু বলেছেন, ‘বাবা অরুণাভ, রোমিও হয়ে আর কত মেয়ে নাচাবে?’ অরুণাভ বুঝতে পারছে না, কী করবে সে! শম্পার আগে ছবি, তারও  আগে সবিতা, তারও আগে কী পরে, ধ্যাৎ নামগুলো সব ধীরে ধীরে ধূসর হয়ে যাচ্ছে দোষটা কি তার একার! ওদের কি কোনো দায়িত্ব নেই! এই যে সেদিন সবিতাকে নিয়ে কত কত কবিতা লিখে ফেসবুক ইনবক্স, হোয়াটস অ্যাপে দেওয়া চলল! সে এক জয়ধ্বনি-ঘোষিত এপিসোডতাদের প্রেম গলে গলে ঝরণার জল হয়ে প্রবাহিত হলোতাতে কত নদী নালা জন্ম নিলসমুদ্র জলোচ্ছ্বাসে মেতে উঠল 

‘কে প্রথম কাছে এসেছি / কে প্রথম চেয়ে দেখেছি / ...কে প্রথম ভালোবেসেছি / তুমি না আমি?'...

হঠাৎ একদিন সাবিতা ‘গুড বাই’ বলে চিরসখ্যতার অঙ্গীকার ছেড়ে চলে গেলভরা বসন্তে শুকনো পাতা ঝরে ঝরে পড়লকত দিন কত রাত নাওয়া-খাওয়া ছেড়ে অবশেষে অরুণাভ ছবির দেখা পেল। উত্তাল হয়ে উঠল তার প্রেমছবিকে সে বলল যে তার পূর্ব প্রেমিকা চিরদিনের মতো ছেড়ে চলে গেছে সেই সুদূর আমেরিকা। ছবিই এখন তার ধ্যানজ্ঞানকোনো বিষ বাষ্পের নি:শ্বাস নয়, রজনীগন্ধা স্তবকে-স্তবকে  ফেসবুক ইনবক্স, হোয়াটসঅ্যাপ ভরে উঠলচুম্বনে-চুম্বনে ধরাতল কেঁপে উঠলআমি যামিনী তুমি শশী হে’। অরুণাভ স্বীকার করল যে তার আগের প্রেমিকাটি একটি  পিশাচ মেয়ে ছিল।  মিথ্যা-প্রেমমন্ত্রে দীক্ষিত। সেই পুরনো প্রেমের কবিতাগুলোকে ছবির ফেসবুক ইনবক্স, হোয়াটসঅ্যাপে রিনিউ করিয়ে নিলনির্দ্বিধায় তারা লিখতে থাকল ‘আই লাভ ইউ’, ‘আই মিস ইউ’ ইত্যাদি ইত্যাদিলাল গোলাপের স্তবকে শুভ সকালের সূচনা হতে থাকল। তারপর সব শেষ বাতাসে সানাই বেজে উঠলসবিতার মতো ছবিরও বিয়ে হয়ে গেল যথারীতি নিয়মকানুন মেনে পাঁজি দেখে অগ্নিসাক্ষী রেখে একজন সরল সাদাসিধে ব্রাহ্মণ ছেলের সঙ্গে

আবার অরুণাভ একা হয়ে গেল বুকটা খালি খালি রাত্রির অন্ধকারচিরকাল গলার টুঁটি টিপে স্তব্ধ করে দেওয়ার চক্রান্ত চলল তার সঙ্গেএবার সে সাবধানি পদক্ষেপে এগিয়ে চললপ্রতিজ্ঞা করল যে কোনো অন্ধ শক্তির উন্মাদনায় মেতে উঠবে না সে। কিন্তু... কিন্তু... করে আবার, আবার ঐ ঘটনাগুলো পর পর ঘটে যেতে থাকল

পাড়ায় ‘অরুণাভ’ নামটা সকলে ভুলতে বসেছেউসকো-খুসকো চুলের আড়ালে দু'একটা রূপোলি চমক এসেছে তার। চশমার মোটা কাচপাজামা পাঞ্জাবী চপ্পল পরে অলিতে গলিতে ঘোরে সেআত্মহত্যার স্বপ্ন অবশ্য এখনও দেখেনিঅশান্ত প্লাবনে সারাবেলা কেটে যায় তারমহাশূন্যের অমেয় আলোকধারার সন্ধান করে। ইন্টারনেট নিয়মিত সার্চ করেহঠাৎ একদিন ফেসবুক ইনবক্সে একটি মেসেজ ভেসে উঠল, ‘হাই  রোমিও, আমি তোমার প্রথম প্রেম সবিতা, দারু মৃতকল্প!’ বিষণ্ণ চিত্রে বেঁচে থাকার নিজের হারানো অধিকার খোঁজার চেষ্টা করতে থাকল অরুণা    
  
       








0 কমেন্টস্:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন