তুমিগুলান
এক
রবীন্দ্রসদন
মেট্রো স্টেশন থেকে পনেরো মিনিটও লাগল না সিকিম হাউস পৌঁছতে। হাত যদিও তেমন পাকা নয়
তোমার স্টিয়ারিংএ। তাও মনে তখন আমার উথাল পাথাল স্বপ্ন - তোমার গন্ধ আমার কণ্ঠে আমার হৃদয়
টেনে আনে। ভাবছি, স্বপ্নে ছোঁড়া শূন্যে উল ফিরে আসবে কি পরের
শীতে তোমাকে পুলওভার বানিয়ে দিতে!
কিন্তু স্বপ্নটা একটু
ইভ্যানেসেণ্ট ছিল। আমার বেশিরভাগ
ঝুরো আলাপ উদ্বায়ী হয়। কিন্তু
যতক্ষণ থাকে,
আমি চেটে
পুটে স্বাদ নিই। ওটাই তো অন্ধের যষ্টি। তোমার উৎসাহ ফুরিয়ে গেল, আর আমিও তোমায় ব্লক করে
দিলাম।
দুই
অবশ্য এই ঝুরো আলাপগুলো ওটার থেকে ভালো, যেটায় তুমি এলে শুধুই ছন্দের অন্ত্যমিল
খোঁজার ছলে কিছু শারীরিক খেলার অভিপ্রায়ে। তাই বাস ছেড়ে ট্যাক্সিতে ওঠো।
গোলপার্ক পেরিয়ে
ঢাকুরিয়া লেকে ঢোকো। ভাইকে হসপিটালে দেখতে নিজের বদলে
পিসিকে পাঠাও। তারপর সুযোগ বুঝে চট করে তর্ক করো যার সমাধান খুঁজতে আমাকে কিনা যেতে হতো তোমার একলা ঘরে! ভাগ্যিস সেদিন মা আলু কিনতে পাঠালো
আমাকে,
আর আমি ফেরালাম আমার সম্বিতকে। ভাগ্যিস তোমার ছুঁতে চাওয়া
আঙুলগুলো আমি ভেঙে ফেলেছিলাম ঝুরো আলাপে। ভাগ্যিস তুমি আজ
হয়তো বাড়ির বদলে ফেরো
সোনাগাছিতে। ওঁদের কাছে আমি ঋণী।
তিন
ক্লাস
ইলেভেন থেকে ওদের প্রেম। কিন্তু প্রেমটা ঠিক প্রেমের মতো করে করে না ওরা। তায়
আবার ডিসটেণ্ট রিলেশানশিপ। কখনো পরস্পরের মোবাইল স্ক্রিনে ভেসে ওঠে কখনো ১ নং
প্ল্যাটফর্মে তাদের পুরনো প্রেমের ঠেকে, যেখানে ওরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মশার
কামড় খেয়েও ঝগড়া করতো, কিন্তু
তর্জনীতে তর্জনীতে মিলন না ঘটিয়ে ওরা কিছুতেই
বিদায় নিত না। শেষে কোনোরকমে ঝগড়াটা শেষ করতো। সেই ঠেকেই একদিন হঠাৎ মেয়েটি জানতে পারল, তাদের এই ঝগড়া এবার চিরস্থায়ী করতে হবে, কারণ ছেলের মা পাত্রী দেখতে শুরু করে দিয়েছেন। মেয়ে
যতই নিপুণা হোক
সুদর্শনা হোক প্রেম বিবাহ কিছুতেই তিনি মানবেন না। মেয়েটি আগে থেকেই জানত এরকম
একটা প্রেক্ষাপটের আগমনবার্তা, কারণ
ফেসবুকের পাসওয়ার্ড দুজনে দুজনের নামে রেখেছিল। সেখানে বার্তাবাক্সে সেই পাত্রীর
সাথে তার ঝুরোগল্প শুরু হয়ে গেছিল। অগত্যা মেয়েটি একটি টেডি বিয়ার গিফট করে চলে
এলো ছেলেটিকে, কারণ সেদিন
ছিল তার জন্মদিন।
চার
হাওড়া
ব্রিজে আমরা অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রইলাম। আর হাওয়া আমাদের আরও কিছুক্ষণ
থাকার সমর্থনে আরও বেশি পাগল হয়ে
উঠল। গঙ্গার বুকে একটি ভাসমান লঞ্চ ভাড়া
করে কেউ পার্টি দিচ্ছিল তার আত্মীয় পরিজনদের। আমি হঠাৎ তোমাকে বলে উঠলাম, এমনটাই হবে আমাদের রিসেপশান পার্টির ভেন্যু। তুমিও রাজি। কিন্তু ইচ্ছেরা
পাজি, চাওয়াগুলো যে অযথাই অবুঝ তা আমরা বারবার ভুলে যাই। তাই মায়ার মুখে আমিও দিলাম
আগুন। কিন্তু আগুন আর নিভল কই? নিজেকে প্রতিবার ভেঙে ফেলে জুড়ে ফেলি। কিন্তু একদিন যদি আর জোড়া না
লাগি? সেই ঝুরো আমিগুলো সব
অপমান-অপেক্ষা-উপেক্ষা ভুলে ভেসে উঠব আগামীর কোনো সংখ্যায়।
Chomotkaar...
উত্তরমুছুনChomotkaar...
উত্তরমুছুন