সম্পাদকীয়
বেশ কিছুদিন আগে সাহিত্যের একটি বিতর্ক সভায় আমন্ত্রিত বক্তা রূপে উপস্থিত ছিলাম। বিতর্কের বিষয় ছিল – ‘ইদানীং কি বাংলা সাহিত্যের বইয়ের বাজার সঙ্কুচিত হয়ে আসছে?’ এটা যে সময়ের কথা বলছি, সে সময়ে আমাদের যাবতীয় সাহিত্য উদ্যোগ এবং উদ্দীপনা ছিল মুদ্রিত বই ও পত্র-পত্রিকাকে কেন্দ্র করে। তখনও ইন্টারনেটের সঙ্গে আমাদের আদৌ কোনো পরিচয় হয়নি। আর তাই স্বভাবিক কারণেই ইন্টারনেটের মাধ্যমে বাংলা ভাষায় প্রকাশিত কোনো পত্র-পত্রিকা বা বই পড়ার কোনো সুযোগও ছিল না। অথচ অনুষ্ঠানের উদ্যোক্তারা কেন যে সেই মুদ্রণের একচেটিয়া রাজত্বকালে বাংলা সাহিত্যের বইয়ের বাজারের মন্দা সম্পর্কে আশঙ্কিত হয়ে পড়েছিলেন, তা সত্যিই বিতর্কেরই বিষয়! আমার যাঁরা সহবক্তা ছিলেন, তাঁদের মধ্যে অনেকেই এই ব্যাপারে সহমত ছিলেন যে, বাংলা বই আগের মতো এখন আর কেউ পড়ে না। এবং এই না পড়ার পক্ষে দুটি যুক্তি তাঁরা উপস্থাপিত করেছিলেন। প্রথমত, এখনকার সাহিত্যিকদের কলম আগেকার সাহিত্যিকদের মতো শক্তিশালী নয়। দ্বিতীয়ত, এখনকার ছেলেমেয়েরা বাংলা ভাষা মাধ্যমে পড়াশোনা করছে না।
এই বিতর্ক সভায় আমরা যারা এই ভাবনার বিরোধীপক্ষ ছিলাম, তারা দ্বিতীয় যুক্তিকে স্বীকার করে নিলেও প্রথম যুক্তির তীব্র বিরোধীতা করেছিলাম। আমার নিজেরও সরাসরি বক্তব্য ছিল যে, যে যুগের কথা বলা হচ্ছে, সে যুগের প্রায় অনেকেই তুমুল সাহিত্য প্রতিভার অধিকারী ছিলেন, এতে কোনো দ্বিমত নেই। তাঁরা যা সৃষ্টি করে গেছেন, তা কোনো কালসীমায় আবদ্ধ থাকতে পারে না, যুগের পর যুগ তাঁদের লেখা বই পড়া হবে, আর তাই বইয়ের নতুন নতুন সংস্করণও মুদ্রিত ও প্রকাশিত হবে। সেইসঙ্গে সমকালীন সাহিত্যিকদের সাহিত্য প্রতিভাও যে কোনো অংশেই কম নয়, এই সত্যও অস্বীকার করার উপায় নেই। তাঁরা যথেষ্ঠ ক্ষমতাবান কলমের অধিকারী। তাঁরাও লিখছেন এবং লিখে যাবেন, তাঁদের বই মুদ্রিত ও প্রকাশিত হচ্ছে এবং হতেও থাকবে। অর্থাৎ এই যুক্তিতে বাংলা বইয়ের বাজারের সঙ্কুচিত হবার কোনো সঙ্গত কারণ নেই। বিশেষত আমরা প্রতি বছরই দেখছি, বাংলাদেশে এবং এদেশের পশ্চিমবঙ্গ ও পশ্চিমবঙ্গের বাইরে বিভিন্ন রাজ্যে বিশাল সব বইমেলার আয়োজন হচ্ছে। অসংখ্য নতুন বইয়ের মুদ্রণ ও পুরনো বইয়ের পুনর্মুদ্রণ হচ্ছে। সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ছে সেইসব বই। এবং শুধুমাত্র তো বাণিজ্যিক প্রকাশনাই নয়, লিটল ম্যাগাজিনের বিপুল আয়োজনও আছে তার পাশাপাশি। সুতরাং আশঙ্কার তেমন কোনো কারণ নেই। আর বাংলা সাহিত্যের সমৃদ্ধির সুবর্ণ সময়ে আমরা এই ধরনের দুশ্চিন্তাকে প্রশ্রয়ই বা কেন দেব! তবে দ্বিতীয় যে যুক্তিটি রাখা হয়েছিল, বাংলা ভাষা মাধ্যমে পঠন-পাঠন হচ্ছে না বর্তমান প্রজন্মের, তা অস্বীকার করার উপায় নেই। এবং সেজন্য কিছুটা চিন্তিত হতেই হয়। সত্যিই তো, এই প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যদি বাংলা ভাষাটাই ঠিকঠাক না শেখে, তাহলে তারা বাংলা বই পড়বে কীভাবে?
কিন্তু তত্ত্বের সঙ্গে তথ্যের একটা অসংগতিও লক্ষ্য করছি আমরা সাম্প্রতিক সময়ে। আমাদের প্রাত্যহিক জীবনে ইন্টারনেট অনুপ্রবেশ করার পর ই-পত্রিকা এবং ই-বই যেভাবে প্রতিদিনই আমাদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে ও আমাদের পাঠমুখিন করে তুলেছে, তাতে অন্তত বাংলা সাহিত্যের কোনো সংকট নজরে পড়ছে না। তবে যাঁরা বাংলা বই প্রকাশনার সঙ্গে যুক্ত আছেন, তাঁরাই সঠিক ভাবে বলতে পারবেন, বাংলা ই-বই ক্রমশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠার জন্য মুদ্রিত বইয়ের কোনো সংকট ঘনিয়ে এসেছে কিনা! আমরা অবশ্য সম সময়ের পরিপ্রেক্ষিতে দুটি প্রকাশনাকেই সাদরে গ্রহণ করেছি আমাদের জীবনে। যেমন আমরা আমাদের প্রকাশনী থেকে একই সঙ্গে প্রকাশ করছি মুদ্রিত পত্রিকা ‘কালিমাটি’ এবং ইন্টারনেট পত্রিকা ‘কালিমাটি অনলাইন’। আমাদের ‘কালিমাটি প্রকাশনী’ থেকে ইতিমধ্যে ২৮টি মুদ্রিত বই প্রকাশ করেছি, আবার অদূর ভবিষ্যতে ই-বই প্রকাশেরও পরিকল্পনা করেছি। বিশেষত বর্তমান প্রজন্মের অনেক ছেলেমেয়ে বাংলা ভাষা মাধ্যমে তাদের ‘অ্যাকাডেমিক’ পড়াশোনা না করা সত্ত্বেও বাংলা সাহিত্য পড়ার জন্য বাংলা ভাষা আগ্রহের সঙ্গে আত্মস্থ করেছে এবং নিজেরাও কবিতা ও গদ্য নির্মাণ করছে। সুতরাং আমরা আশাবাদী এবং আমরা স্বপ্নবিলাসী।
প্রকাশিত হলো ‘কালিমাটি অনলাইন’ ব্লগজিনের ১৪তম সংখ্যা। প্রসঙ্গত আবার জানাই, ‘কালিমাটি অনলাইন’ একটি সংখ্যা আমরা ‘স্বদেশ সেন সংখ্যা’ রূপে প্রকাশের পরিকল্পনা করেছি। প্রিয় পাঠক-পাঠিকাদের কাছে নিবেদন, আপনারা এই সংখ্যার জন্য লেখা পাঠাতে পারেন। এই প্রসঙ্গে আরও জানাই, গত ২০১২ সালে ‘কালিমাটি’ পত্রিকার পক্ষ থেকে আমরা একটি ওয়েবসাইট শুরু করেছি ‘সংকলিত স্বদেশ সেন’। স্বদেশ সেনের লেখা কবিতা ও গদ্য, তাঁর সাক্ষাৎকার, ছবি, তাঁর ওপর লেখা বিভিন্ন জনের আলোচনা ইত্যাদি সব কিছুই সংগৃহীত আছে। আপনাদের লেখা প্রস্তুতির জন্য এই ওয়েবসাইটটি উপযোগী হতে পারে। আপনারা লগ অন করতে পারেন : www.swadeshsenkalimati.weebly.com
এই সংখ্যার ‘স্লাইড শো’তে যে পাঁচটি ছবি আছে, তা কোনো সিরিজের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং এখানে শিল্পী একটি নারী জীবনকে সময়ের সামঞ্জস্যে সাজিয়েছেন। যেমন প্রথম ছবিটির শিরোনাম Alone(একাকীত্ব), দ্বিতীয় ছবি Echo (প্রতিধ্বনি), তৃতীয় ছবি Widow (বৈধব্য), চতুর্থ Soul mate (আত্মজন) এবং পঞ্চম ছবির শিরোনাম Incomplete (অসম্পূর্ণতা)। অর্থাৎ নারী জীবনের একাকীত্ব, অসংলগ্নতা, প্রাপ্তি, মৃত্যুবোধ, বাঁচার আকাঙ্ক্ষা, বিভিন্ন টানাপোড়েন ইত্যাদি মিলেমিশে ছড়িয়ে আছে এই ছবিগুলিতে। এই অনন্য ছবিগুলির শিল্পী রূপক। রূপককে আমাদের আন্তরিক অভিনন্দন জানাই।
আমাদের সঙ্গে যোগাযোগের ই-মেল ঠিকানা :
kalimationline100@gmail.com / kajalsen1952@gmail.com
প্রয়োজনে দূরভাষে যোগাযোগ করতে পারেন :
0657-2757506 / 09835544675
অথবা সরাসরি ডাকযোগে যোগাযোগ :
Kajal Sen,
Flat 301, Parvati Condominium,
Phase 2, 50 Pramathanagar Main Road,
Pramathanagar, Jamshedpur 831002, Jharkhand, India
Osamanyo creativity..... bishesh kore chitroguli osamanyo. .... darooon sob lekha.... :)
উত্তরমুছুন