সুবর্ণমৃগী
লিপিকা ঘোষ
নতুন প্ল্যাটফর্ম। টিকিট-ঘর আর সংলগ্ন লাইন দাঁড়ানোর জায়গাটির মাথা থেকে টিনের ছাউনি উপড়ে নতুন ঢালাই-ছাদ। স্টেশনটার হাল ফিরল এতদিনে। সুবর্ণমৃগী... স্টেশনের নাম সুবর্ণমৃগী। মেয়েটির নাম যেন কী ? সুবর্ণমৃগী হল্ট থেকে স্টেশন হয়ে উঠল ক্রমে। প্রায় সব ট্রেনই এখন এখানে জিরোয়।
হুইসলের সঙ্গে আঁচল ওড়া একলা বিকেলগুলো মনে পড়ছে ওর। এখানে মোবাইলে এক দাগও টাওয়ার থাকে না।
দূর থেকে একটা কলরব যেন শুনতে পেত ‘সুবর্ণমৃগীই-ই-ই-ই তোমাকে খুঁজছি আমরা’। ও কি সোনার হরিণী? ব্যাধেরা হন্যে হয়ে খুঁজছে?
শহর থেকে অনেকটা দূর-গ্রাম।পঞ্চায়েত অফিসে সদ্য চাকরি। তখন প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এই হল্টেই ওঠা নামা। খুব অসুবিধে হতো। পা হড়কে যেত। সবজি-ওয়ালি চাচী-নানীদের হাত ধরে ওঠে নামে।
একদিন ফিরতি বিকেল। হঠাৎ কালবৈশাখী। দৌড়ে টিকিট ঘরে আশ্রয়। জনা কয়েক। ঝড়... ঝড়... তুমুল। পুরো স্টেশনটা-ই না উড়ে যায়! না, এ স্টেশন উড়ে গেলে চলবে না। এখানে সুবর্ণমৃগীর খোঁজ মেলে। তারপর হঠাৎ, পোকা। কালো কালো বিদঘুটে পোকা আর পোকা। টিনের চালার ফুটোগুলো বেয়ে নেমে আসছে। বাইরে ঝড় আর টিকিট-ঘরে শুধু পোকা। গা বেয়ে মাথা বেয়ে শাড়ি বেয়ে ছেয়ে যাচ্ছে। ছুটে বেরোয় ঘর থেকে। সুবর্ণমৃগী আতঙ্কে দিশাহারা। ঝড় ওর মেরুন পাড় ওর আঁচলের সাদা উড়িয়ে নিয়ে যেতে চায়। বৃষ্টি নামল। অঝোরে ভিজতে থাকা মেয়েটাকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বসায় এক সবজি-ওয়ালি চাচী। ‘অই গো, ভয় পেইয়েছে গো সুনার বাছাডা। ও পুকাগুলোন কিছুডি বুইলবে না, হুই যে গাছখান, ওখেনে বাস উয়াদের। বাতাস উঠলিই উড়ে আসে টিকিট-ঘরে’।
হুইসল এলো। ভিজে শাড়ি জড়িয়ে গেছে পায়ের গোছে। এক সবজি-ওয়ালি নানীর হাত ধরে কোনো রকমে ট্রেনে উঠল।
প্রায় বছর পাঁচেক পর এই স্টেশনে আজ আবার এসে দাঁড়িয়েছে ও । মাঝে আর একদিনও আসেনি। ঘুর পথে অফিস যেত। এখন বদলি নিয়ে পদ্মাপাড়ের অন্য এক গ্রামে। সেথায় পদ্মার পানি, সেথায় পদ্মার ভাঙ্গন। সে গ্রামের নাম রূপনগর, পাশেই বুঝি পড়শীর বাস।
আজ ও এসেছে সেই সুবর্ণমৃগীর খোঁজে।
সেই সব সবজি-ওয়ালি চাচী-নানীরা ধারে কাছে কেউ নেই। এখন ট্রেনে উঠতে আর অসুবিধে নেই যদিও। উঁচু প্ল্যাটফর্ম।
দূর থেকে হুইসল আসছে। এক্ষুনি স্টেশনটা ছেড়ে যাবে ও। কোথায় সুবর্ণমৃগী, কোথায়? হারিয়ে গেছে! ট্রেনে চেপে বসল ও। দিশেহারা। কই সোনার হরিণী, কই! গতি নিচ্ছে ট্রেন। হঠাৎ একটা পোকা, সেই কালো বিদঘুটে পোকা। উড়ে এসে বসল ওর গলার ঠিক নিচে বড় কালো তিলের ওপর...
নতুন প্ল্যাটফর্ম। টিকিট-ঘর আর সংলগ্ন লাইন দাঁড়ানোর জায়গাটির মাথা থেকে টিনের ছাউনি উপড়ে নতুন ঢালাই-ছাদ। স্টেশনটার হাল ফিরল এতদিনে। সুবর্ণমৃগী... স্টেশনের নাম সুবর্ণমৃগী। মেয়েটির নাম যেন কী ? সুবর্ণমৃগী হল্ট থেকে স্টেশন হয়ে উঠল ক্রমে। প্রায় সব ট্রেনই এখন এখানে জিরোয়।
হুইসলের সঙ্গে আঁচল ওড়া একলা বিকেলগুলো মনে পড়ছে ওর। এখানে মোবাইলে এক দাগও টাওয়ার থাকে না।
দূর থেকে একটা কলরব যেন শুনতে পেত ‘সুবর্ণমৃগীই-ই-ই-ই তোমাকে খুঁজছি আমরা’। ও কি সোনার হরিণী? ব্যাধেরা হন্যে হয়ে খুঁজছে?
শহর থেকে অনেকটা দূর-গ্রাম।পঞ্চায়েত অফিসে সদ্য চাকরি। তখন প্ল্যাটফর্ম ছিল না। এই হল্টেই ওঠা নামা। খুব অসুবিধে হতো। পা হড়কে যেত। সবজি-ওয়ালি চাচী-নানীদের হাত ধরে ওঠে নামে।
একদিন ফিরতি বিকেল। হঠাৎ কালবৈশাখী। দৌড়ে টিকিট ঘরে আশ্রয়। জনা কয়েক। ঝড়... ঝড়... তুমুল। পুরো স্টেশনটা-ই না উড়ে যায়! না, এ স্টেশন উড়ে গেলে চলবে না। এখানে সুবর্ণমৃগীর খোঁজ মেলে। তারপর হঠাৎ, পোকা। কালো কালো বিদঘুটে পোকা আর পোকা। টিনের চালার ফুটোগুলো বেয়ে নেমে আসছে। বাইরে ঝড় আর টিকিট-ঘরে শুধু পোকা। গা বেয়ে মাথা বেয়ে শাড়ি বেয়ে ছেয়ে যাচ্ছে। ছুটে বেরোয় ঘর থেকে। সুবর্ণমৃগী আতঙ্কে দিশাহারা। ঝড় ওর মেরুন পাড় ওর আঁচলের সাদা উড়িয়ে নিয়ে যেতে চায়। বৃষ্টি নামল। অঝোরে ভিজতে থাকা মেয়েটাকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বসায় এক সবজি-ওয়ালি চাচী। ‘অই গো, ভয় পেইয়েছে গো সুনার বাছাডা। ও পুকাগুলোন কিছুডি বুইলবে না, হুই যে গাছখান, ওখেনে বাস উয়াদের। বাতাস উঠলিই উড়ে আসে টিকিট-ঘরে’।
হুইসল এলো। ভিজে শাড়ি জড়িয়ে গেছে পায়ের গোছে। এক সবজি-ওয়ালি নানীর হাত ধরে কোনো রকমে ট্রেনে উঠল।
প্রায় বছর পাঁচেক পর এই স্টেশনে আজ আবার এসে দাঁড়িয়েছে ও । মাঝে আর একদিনও আসেনি। ঘুর পথে অফিস যেত। এখন বদলি নিয়ে পদ্মাপাড়ের অন্য এক গ্রামে। সেথায় পদ্মার পানি, সেথায় পদ্মার ভাঙ্গন। সে গ্রামের নাম রূপনগর, পাশেই বুঝি পড়শীর বাস।
আজ ও এসেছে সেই সুবর্ণমৃগীর খোঁজে।
সেই সব সবজি-ওয়ালি চাচী-নানীরা ধারে কাছে কেউ নেই। এখন ট্রেনে উঠতে আর অসুবিধে নেই যদিও। উঁচু প্ল্যাটফর্ম।
দূর থেকে হুইসল আসছে। এক্ষুনি স্টেশনটা ছেড়ে যাবে ও। কোথায় সুবর্ণমৃগী, কোথায়? হারিয়ে গেছে! ট্রেনে চেপে বসল ও। দিশেহারা। কই সোনার হরিণী, কই! গতি নিচ্ছে ট্রেন। হঠাৎ একটা পোকা, সেই কালো বিদঘুটে পোকা। উড়ে এসে বসল ওর গলার ঠিক নিচে বড় কালো তিলের ওপর...
খুব খুব ভালো হয়েছে।
উত্তরমুছুন