সাহানার
অষ্টপ্রহর
সাহানা আজ রাতে একটু সেজেছেন, গায়ে বিদেশী পারফিউম লাগিয়ে
সুন্দর একটা স্লিপিং গাউন পরে বিছানায় শুয়ে স্বামীর জন্যে অপেক্ষা করছেন। ওনার স্বামী
কমলাক্ষ চৌধুরী হাইকোর্টের নাম করা ব্যারিস্টার। দামিও বটে। এক একটা অ্যাপিয়ারেন্সে
যা ওনার ফি — সে যাকগে! রাত বারোটার সময় উনি একতলার চেম্বার থেকে ওপরে উঠলেন। এবার
টানা সকাল আটটা পর্যন্ত ঘুম। পর্যাপ্ত ঘুম আর বিশ্রাম না নিলে পরের দিনের কাজকর্ম ঠিকঠাক
করা যায় না। মস্তিস্ককে সচল রাখতে এই নিশ্ছিদ্র ঘুম তাঁর একান্ত দরকার।
কিন্তু
সাহানা দেবীই বা কী করেন? স্বামীর সঙ্গে নিভৃতে দুটো কথা বলার এই তো সময়। শোওয়া এবং
নাসিকা গর্জন সহ গভীর ঘুমে তলিয়ে যাবার আগে এই সামান্য সময়টুকু। তাই সাহানা বলেন,
‘এই শুনছো?’ — উত্তর নেই। এবার গায়ে একটু ঠেলা
মেরে আবার বলেন, ‘এই শোনো না’ — কী? — ‘এ দিকে না ফিরলে কী করে বলব?’ –‘শুনছি তো, যা বলার বলে ফেল’, কমলাক্ষর নিদ্রাজড়িত উত্তর’।
— ‘এই, কনক চাঁপার গন্ধ পাচ্ছ? —‘সাইড টেবিলে প্লেটে জল দিয়ে ভিজিয়ে রেখেছি, কী অপূর্ব
গন্ধ না?’ — ‘হ্যাঁ গন্ধটা বেড়ে বটে’, — কমলাক্ষর দায়সারা জবাব। — ‘বেড়ে কথাটাই মনে
এলো! ফুলের গন্ধ আবার বেড়ে হয় না কি? তা ছাড়া, কেমন দখিনা বাতাস, জানলা দিয়ে চাঁদের
আলো মেঝেতে ছড়িয়ে পড়ে কেমন মায়াময়…।’ - ‘হ্যাঁ হ্যাঁ, সব দেখেছি, এখন আমায় একটু শান্তিতে
ঘুমোতে দাও।’ কমলাক্ষর গলায় হান্ড্রেড পার্সেন্ট বিরক্তি। নাছোড়বান্দা সাহানা তবু অনুরোধ
করে, ‘চলো না, একটু বারান্দায় গিয়ে বসি! ঘুম তো বারোমাস তিনশো পঁয়ষট্টি দিন আছেই, একদিন
আমার জন্যে একটু জাগতে পারো না? তোমার চোখে আমি কি এতই পুরনো হয়ে গেলাম?’ —‘ওঃ সানু,
দিনকে দিন তোমার বয়স বাড়ছে না কমছে?’
ক্ষোভে দুঃখে
সাহানার চোখ ভিজে যায়। অথচ অসামান্যা সুন্দরী বলেই সেই কোন ছোট বয়সে সে এ বাড়ির বউ
হয়ে এসেছিল। বাবা মা কলেজের গণ্ডিটুকু পেরনোর সময় দেয়নি। আর সদ্য আইন পাশ করা তার মহামহিম
স্বামীটি সবে আদালতে যাওয়া শুরু করেছিলেন। স্বামীর মুখশ্রী সুন্দর না হলেও শরীরটা ছিল
দেখার মত, ছ’ফিট লম্বা, ছিপছিপে পেটানো গড়ন। উচ্চবিত্ত পরিবারের এক মাত্র সন্তান। উত্তরাধিকার
সূত্রে বেশ কিছু সম্পত্তির অধিকার ছেলেতেই বর্তাবে, তাই সাহানার বাবা মা বিন্দুমাত্র দেরি না করে মেয়েকে
গোত্রান্তরিত করে দিয়েছেলেন। তারপর কত বছর কেটে গেল। একমাত্র ছেলে ডাক্তার হয়েছে, আর
বউমাও সুন্দরী, বিদুষী, স্বভাবটিও ভারী সুন্দর। মেয়ে নেই বলে সেই তার মেয়ের মতো। সোহাগ,
শাসন দুটোই পাশাপাশি চলে।
সাহানা ঘুমন্ত স্বামীর দিকে তাকিয়ে ভাবেন, আমি কি ওর চোখে
দেখতে কুৎসিত হয়ে গেছি? ওজনটা অনেক, প্রায় পঁচাত্তর কে.জি.। কিন্তু সবাই যে এখনও বলে,
খুব সুন্দর মুখখানা! এখনকার মেয়েগুলোকে দেখ, টিঙটিঙে শরীর নিয়ে ফুরফুরে প্রজাপতিটির
মতো চারিদিকে ঘুরঘুর করে বেড়াচ্ছে! ওই তো ওনার দু’দুটো জুনিয়ার– সাজ দেখে কে বলবে যে
ওরা বিয়েওলা! নেই সিঁথিতে সিঁদুরের ছোয়া, নেই হাতে শাঁখা পলা। সবসময় দেখ মুখে ফটর ফটর
ইংরিজীর খই ফুটছে। দু চোখের বিষ!
সে সব গুণ আমার বৌমারও আছে, তবে ও বেশ সরল। সবসময় ‘মাম্মি
মাম্মি’ করে অস্থির। বৌমা তো একদিন আমাকে বলেই ফেললো, ‘মাম্মি তুমি এত সুন্দরী, কিন্তু
সব চাপা পড়ে যাচ্ছে তোমার ওবিজিটির জন্যে, তুমি ডায়েটিং শুরু করে দাও। বাড়িতেই একজন
ফিমেল ট্রেইনার এসে তোমাকে ফ্রিহ্যান্ড ব্যায়াম করাবে, আর ম্যাসাজ। আমি আমার জিম থেকে
একটা ডায়েট চার্ট করে নিয়ে আসবো তোমার জন্যে। স্ট্রিক্টলি ফলো করতে হবে কিন্তু। ছ’মাসেই
দেখবে অনেকটা ঝরেছ। বাপিও তখন তোমার দিকে কেমন
করে চায়, দেখো।’
‘তবে রে, বলে সাহানা বৌমার দিকে কপট রাগের দৃষ্টি হেনেছিলেন,
কথাটায় পাত্তা দেননি। আজ এই মোহময় রাতে, স্বামীর এই রিফিউজাল, তাঁকে একটা সিদ্ধান্তে
পৌঁছে দিল। মনে মনে প্রতিজ্ঞা করলেন, ‘আর ফাঁকি নয়, অক্ষরে অক্ষরে সব কিছু মেনে ছ’মাসের
মধ্যে পনের কেজি ওজন কমাবোই কমাবো’। সকালে বউমাকে মিনমিন করে আগের রাতের প্রতিজ্ঞার
কথা জানাতেই বউমার চোখ চকচক করে উঠলো, আর সন্ধ্যেবেলাতেই হাতে একটা ডায়েট চার্ট ধরিয়ে
দিল। বললো, ‘মাম্মি, স্টার্ট ফ্রম টুমরো’ ঘাড় নেড়ে শাহানা সম্মতি জানালেন।
টুমরো মানে রবিবার। প্রবল উৎসাহে সাহানা সাত সকালে স্নান,
পুজো সেরে ডাইনিং টেবিলে গিয়ে বসেন। রান্নার বৌটি ‘কাকিমা চা’ বলে, এককাপ ধোঁয়াওঠা
লিকার চা আর দুটো ক্রিমক্র্যাকার বিস্কিট নিয়ে সামনে রাখে, সাহানার মেজাজ যায় বিগড়ে।
বাড়িতে কত সুস্বাদু ক্রিসপি বিস্কিট, আর তার জন্যে কিনা বিস্বাদ ছাতার মাথা ক্রিমক্র্যাকার!
বৌমা তাহ’লে সব কিনেই রেখেছে? না না মেজাজ হারালে চলবে না — সাহানা মনে মনে নিজেকে
শান্ত করেন। তেতো চা গলাধঃকরণ করে নিউজপেপার খুলে বসেন। যাকগে, খেতেন তো লুচি তরকারি
আর মিষ্টি। কিন্তু রান্নাঘর থেকে আলুরদমের তরকারি রান্নার ঘন্ধটা যে ভালোই বেরোচ্ছে!
নিয়ম অনুযায়ী রবিবারে পরিবারের সকলে একসংগে খেতে বসে,
ব্রেকফাস্ট থেকে ডিনার পর্যন্ত। সেই অনুযায়ী সবাই সকাল সাড়ে নটা নাগাদ খাবার টেবিলে
জড়ো হয়। রাঁধুনি সকলের সামনে ধোঁয়া ওঠা গরম লুচি তরকারির প্লেট রেখে যায়। সব শেষে সাহানার
সামনে রেখে যায় কি-না, সুগার ফ্রী দেওয়া এক বাটি গরম দুধ, আর ওটস। বিনা মেঘে বজ্রপাতের
মতো জল খাবার দেখে আঁতকে ওঠেন সাহানা। বউমার দিকে কড়া চোখে তাকিয়ে দেখেন, জিম স্যাভি
বৌমা ইচ্ছাকৃত ভাবে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে! মুখ ভর্তি লুচি তরকারি। সপ্তাহে একদিনই তিনি
ডায়েট ভঙ্গ করে সব কিছু ভক্ষণ করেন কিনা! সাহানা মনে মনে বলেন, ‘আমি কি প্রলয় নেত্য
শুরু করে দেব?’ কিন্তু কে যেন মনের অন্য প্রান্ত
থেকে বলে ওঠে, ‘সাহানা, তুমি এতেই হার মানবে? সারা জীবনের অপরিমিত খাওয়ার ফল ভোগ তো
তোমায় করতেই হবে। নাও শুরু করে দাও।’ ভূতগ্রস্তের মতো সাহানা ওটস দিয়েই অগত্যা প্রাতরাশ
সারেন।
রবিবার ছেলে
জমিয়ে বাজার করে। মাকে বললো, ‘মা বাজারে ভালো গলদা চিংড়ি পেলে আনবো না কি, আর রাত্তিরের
জন্যে মাটন?’ ‘তোর যা ভালো লাগে তাই কর, বাবু’, বলে সটান নিজের ঘরে চলে যান। ছেলে আর
বৌমার নীরব সহাস্য দৃষ্টি বিনিময় হয়। কমলাক্ষ বউমাকে জিজ্ঞেস করেন, ‘কী হলো? উনি মেজাজ
দেখিয়ে ঘরে চলে গেলেন?’ বউমা কৃত্তিকা বলে, ‘কিছু না বাবা, আজ থেকে মা ডায়েটিং শুরু করেছেন। জিম থেকে ট্রেনার এসে
সপ্তাহে তিনদিন ব্যায়াম করিয়ে যাবে। —‘হুঁ, বাঁচলে বাঁচি’, বলে কমলাক্ষ চেয়ার ছেড়ে
উঠে পড়েন, চলে যান সোজা চেম্বারে। কৃত্তিকার মনটা যেন কেমন করে ওঠে। একটা প্লেটে একটা
লুচি আর সামান্য তরকারী নিয়ে সাহানার ঘরে ঢুকে দেখে, সাহানা খাটে দু’পা ঝুলিয়ে বসে
উদাস চোখে তাকিয়ে আছেন! অভিমানিনীর দু’চোখ টলটলে জলে ভরা। কৃত্তিকা শাশুড়ীর পাশে বসে
বলে, ‘মা, প্রথমদিন অতটা মানতে হবে না।’ ফুঁপিয়ে উঠে সাহানা বলেন, ‘না থাক। তোমরা খাও’।
—‘তা বললে কি চলে? এই নিন, আমি আপনাকে খাইয়ে দিচ্ছি’। বলে জোর করে লুচিতরকারি সাহানার
মুখে পুরে দেয়। ব্যাস, সঙ্গে সঙ্গে সাহানা দ্রুত লুচিটা চিবিয়ে খেয়ে ফেলেন। বার দুএক
লুচির টুকরো খাওয়ার পর প্লেট খালি, কিন্তু ইডিওমোটর রিঅ্যাকশনের জেরে সাহানা আবার মুখটা
হাঁ করেন পরের গ্রাসটির জন্যে। এরপর বৌমা জল আর প্রেসারের ওষুধ খাইয়ে চলে যায়।
লোভে লোভ বাড়ে।
রবিবারে জল খাবার খাওয়ার পর সকলের জন্য মিষ্টি বরাদ্দ থাকে। সাহানা ঘর থেকে বেরিয়ে
চুপি চুপি ফ্রিজের সামনে এসে দাঁড়ান। আস্তে আস্তে ফ্রিজ খুলে রসগোল্লার হাঁড়িতে হাত
দিতে যাবেন, এমন সময় রাঁধুনি সুবালা পিছন থেকে এসে বলে, ‘ও কাকিমা, কী খুঁজছ বল, আমি
বের করে দিচ্ছি।’ পিত্তি চটতে সাহানার দেরী হয় না। বলেন, ‘এই তুই নিজের কাজ কর না, আমি ঠান্ডা জল নিতে এসেছি
— যা এখান থেকে।’ মনে মনে সুবালা বলে, ‘হুঁ,
আমি কিছু বুঝি না, তুমি লুকিয়ে লুকিয়ে মিষ্টি খেতে এসেছিলে। কী নোলা রে বাবা, নইলে ওই লাশ!’ সুবালা সরে যেতেই, সাহানা ঝটপট
একটা রসগোল্লা মুখে পুরতেই গলায় ঘন রস আটকে গিয়ে বিপুল কেলেঙ্কারি। রস আটকে নিঃশ্বাস নিতে পারছেন না। চোখ বড়ো বড় করে টেবিল
চাপড়ে সুবালাকে ডাকছেন। সুবালা এসে দেখে কাকিমার অবস্থা সঙ্গীন। তাড়াতাড়ি গলায় হাত
ঢুকিয়ে আঙুল দিয়ে রসগোল্লার টুকরো বের করে আস্তে আস্তে এক গ্লাস জল খাইয়ে দ্যায়। বিষম
খেয়ে তাঁর দু চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে। লজ্জায় সটান ঘরে ঢুকে তাড়া্তাড়ি বিছানায় শুয়ে
পড়েন সাহানা।
বেলা একটা।
সকলে আবার খাবার টেবিলে হাজির। সকলের পাতে পোস্তর বড়া, ডাল, বেগুনি আর তেল-কই। সাহানার
সামনে এককাপ ভাত, চিকেন স্টু, স্যালাড আর টক
দই। চুপচাপ খেয়ে, কাউকে কিছু না বলে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়েন সাহানা। ঘরে এসে দু গ্লাস
জল খেয়ে শুয়ে পড়েন — কিন্তু খালি পেটে ভাত ঘুম কোথায়? খবরের কাগজ আর কাঁহাতক আর পড়া
যায়! রোগা হওয়ার প্রচেষ্টার ভবিষ্যৎ ভাবতে
ভাবতে চোখের ওপর হাত দিয়ে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়েন সাহানা।
বিকেল পাঁচটায়
বৌমা কৃত্তিকা একপ্লেট ফল নিয়ে শাশুড়িকে ডেকে তোলে। উঃ দুচোখের বিষ ঐ আপেল আর শশা।
ম্যাগো, এগুলো গিলতে হবে নাকি! কিন্তু বউমার কাছে ছাড়ানছুড়ুন নেই। সে এক এক করে সব
ফল খাইয়ে দেয়। সাহানা মনে মনে ভাবেন, একদিনেই আমার এক কে.জি. ওজন কমে গেলো নিশ্চই।
কাল থেকে আবার ট্রেনার আসবে,ব্যায়াম করাতে। বউমা আবার দুটো মাক্সি কিনে এনেছে, আর ম্যাসাজ
অয়েল। সাহানা এক ফাঁকে ঘরের দরজা বন্ধ করে একটা ম্যাক্সি পরে দেখেন, সেটা তার গায়ে
সেঁটে বসেছে, ছিঃ ছিঃ কি বিচ্ছিরি দেখতে লাগছে।
ঠিক একটা জালার মতো। সঙ্গে সঙ্গে ম্যাক্সিটা খুলে ফেলেন,বেশ কষ্ট হয় খুলতে। আবার শাড়ি
পরার পালা। ইতিমধ্যে মনে একটা প্রতিজ্ঞা এসে হাজির, ‘রোগা হতেই হবে’।
সন্ধেয় আবার
সেই র-চা আর বিস্কিট। কমলাক্ষ চা খাওয়ার জন্য চেম্বার থেকে বেরিয়ে ওপরে উঠে আসেন, ঘরে ঢুকে বলেন, ‘সানু ম্যাডাম, তোমাকে একটু কেমন রোগা রোগা লাগছে কেন বলো তো?’ সাহানা, তবে
রে দ্যাখাবো মজা, এমনই মনোভাবের দৃষ্টি ছুঁড়লেন স্বামীর দিকে। ওরে বাবারে! আবার শুরু
হলো পেট চুঁইচুঁই। রাত ন’টায় বৌমা আবার একবাটি সবজি সেদ্ধ আর দু’টো ব্রাউন ব্রেড দিয়ে
গেলো। যাওয়ার আগে, গায়ে হাত বুলিয়ে বলে গেল, ‘প্লিজ,খেয়ে নিও মাম্মি’। না জানি কোন
অদৃশ্য শত্রুর উদ্দ্যেশ্যে সাহানা মনে মনে শাপশাপান্ত করতে করতে খাবারটা খেয়ে নিলেন। অতঃপর
দুটো ওষুধ খেয়ে ঘরের আলো নিভিয়ে দিয়ে শুয়ে
পড়লেন। আশা করেছিলেন, কেউ না কেউ এসে তার এই সকাল সকাল আলো নিভিয়ে শুয়ে পড়া নিয়ে একবার
অন্তত খোঁজ করতে ঘরে আসবেই। কোথায় কী! স্বামী, নিজের পেটের ছেলে, এমন কি বউমাকেও চরম
শত্রু বলে মনে হল। শোয়ার আগে বাসি কনক চাঁপার
ফুল হতাশায় ফেলে দিলেন।
রাতে ডিনার
টেবিল থেকে ছেলে, বউমা, এমন কি কমলাক্ষবাবুর হাসি, কথাবার্তার আওয়াজ শুনতে পেলেন। কেউ
তাঁর অনুপস্থিতির অভাব টের পাচ্ছে না। নীরব কান্নায় সাহানার বালিশ ভিজে যায়। কিছুক্ষণ
পর সারা বাড়ি নিস্তব্ধ হয়ে গেল। বরাবরই কমলাক্ষ
রবিবার রাতে একটু মাত্রাছাড়া পান করেন। তিনি ঘরে ঢুকে দ্যাখেন, বিছানাটা জ্যোৎস্নায়
ভেসে যাচ্ছে। হাউস কোট ছেড়ে স্ত্রীকে সপাটে জড়িয়ে ধরেন। কত দিন, কত দিন পর স্ত্রীর
ঠোঁটে গভীর চুম্বন এঁকে দ্যান। স্ত্রীকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে সোহাগে পিষ্ট করে কানে কানে
বলেন, ‘তুমি যেমন, সেই তোমাকেই আমি ভালোবাসি। আমি ব্যারিষ্টার, বুঝি কেন তুমি রোগা
হওয়ার চেষ্টায় মেতেছো। এসবের কোন দরকার নেই। আবার বলছি, তুমি যেমন আছো তেমনি থাকো,
প্রথম দিনের মতো, আজও একমেবাদ্বিতীয়ম্ প্রেয়সী হয়ে আমার মনের মাঝখানটিতেই আছো। আমরণ
তুমিই আমার প্রেম, বলে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দেন সাহানার শরীর। প্রথিতযশা ব্যারিস্টারের
বিচার ফল ঘোষিত হয় — ‘কাল থেকে নো ডায়েট নাথিং’। সাহানা আপীল করেন না!
এক নিশ্বাসে পড়ে ফেললাম। এমনই লেখার জাদু।
উত্তরমুছুন