প্রতিবেশী সাহিত্য
রুপার্ট ব্রুক-এর কবিতা
(অনুবাদ : বাণী চক্রবর্তী)
কবি পরিচিতি : রুপার্ট ব্রুক ১৮৮৭ সালের ৩ আগষ্ট জন্মগ্রহণ করেন। ইংল্যান্ডের
অভিজাত ঘরে তার জন্ম হয় এবং রাগবি স্কুল ও ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় তিনি ব্রিটিশ নৌ বিভাগে অফিসার ছিলেন। এইজন্য তার কবিতায় ‘দ
সোলজার’, ‘পিস’, ‘দ ডেড’-এর মত ওয়ার সনেট রয়েছে।
অত্যন্ত রূপবান ছিলেন এই সৈনিক কবি।
মাত্র ২৭ বছর বয়সে ২৩ শে এপ্রিল, ১৯১৫তে মশার কামড় থেকে ইনফেকশন হয়ে তিনি মারা যান।
গ্রীক আইল্যান্ড স্কাইরোসে তিনি শায়িত আছেন।
বিচ্ছিন্ন
আজ রাত মেঘাচ্ছন্ন
চাঁদ-বিহীন আকাশ।
আমি সময় থেকে, ডেক থেকে
বিচ্ছিন্ন হয়ে জানালায় উঁকি দিয়ে
বন্ধুদের দেখছি... টেবিলে, তাসের
আড্ডায়
অথবা দরোজায় কেউ অন্ধকার থেকে
বেড়িয়ে আসছে। কিন্তু কেউ
আমাকে দেখতে পাচ্ছে না!
আমার তাদের কথা ভাবা উচিত ছিলো
এক সপ্তাহের যুদ্ধে তারা অবহেলিত
ও
দুঃখী। তাদের শক্তির অহংকার
ওজন এবং টানটান সুন্দর শরীরের
সমকামিতার আনন্দ শীঘ্রই
টুকরো টুকরো হয়ে যাবে
আবেগময় চুমুও এলোমেলো!
শুধুমাত্র আমি তাদের সব্বাইকে
দেখতে পাবো… ল্যাম্পলাইটে চলে যাওয়া
রঙিন ছায়ার মতো।
পাতলা ফিল্মের কাঁচের মতো।
একটু বুদবুদ হালকা ঢেউয়ের ওপর
স্থিমিত আলোর মতো…
যা কী-না রাতে ফসফরাস ছড়ায়!
অনিত্য বস্তুর মতো,
আশ্চর্য অশরীরির মতো
এরা শীঘ্রই মৃত হবে...
অন্যদের সাথে মিশে যাবে... এ, ও,
অথবা আমি!
উত্তরাধিকার
বিউগল বাজাও... এই ঐশ্বর্য্যময় মৃত্যুর
জন্য।
বৃদ্ধদের মতো নিঃসঙ্গ এবং অসহায় এ
পৃথিবীতে আর নেই... কিন্তু মৃত্যু
তাদের
সোনার চেয়েও বিরল মূল্যবান
এই উপহার প্রদান করে!
এটাই পৃথিবীর পথের সমাপ্তি!
যৌবনের লাল মিষ্টি সুরার মাদকতা
কর্মজীবনের বিশাল আনন্দ হতাশা পেরিয়ে
সে বৃদ্ধাবস্থা... তাঁরা অমরত্ব পেয়েছে
সন্তানে!
বাজাও বিউগল বাজাও...
তাঁরা আমাদের এনেছেন ধরিত্রীতে
এ মৃত্যুর পরিক্রমায় সামিল হতে।
পবিত্রতা, ব্যর্থতা, কষ্ট এবং ভালোবাসা
ও সম্মান ফিরে এসেছে, পৃথিবীর রাজা
হয়ে তার প্রজাদের রাজকীয় মূল্য প্রদান
করছে!
মহানুভবতা আবার আমাদের মাঝে
জেগে উঠেছে… আমরা পূর্ব পুরুষদের
উত্তরাধিকার পেয়ে গেছি!
ফিরে চাওয়া
তোমার বাহুতে এখনো শান্তি আছে
গভীর রাতের সড়কের মত!
এবং তোমার ভাবনা যেন... অন্ধকার ঘরে
সবুজ পাতা… চাঁদবিহীন আকাশে গভীর
ঘন মেঘ!
তোমার ভালোবাসা প্রবাহিত হয়েছে,
সংক্রমিত হয়েছে… প্রবেশ করেছে
অনির্বচনীয় প্রশস্ত আকাশে
মুক্ত বিহঙ্গের মতো! তোমার স্বর্গীয়
মুখে
কোনো চিহ্ন পড়েনি। তোমার ছেলেমানুষীতে
পেয়েছি মিষ্টি শব্দের পর মধুর নৈশব্দ্য!
তুমিই সেই আলো যা রাতের অন্ধকার
আবছা করে দেয়।
ইচ্ছেগুলো প্রাক-সূর্যোদয়ের মতো।
দিনের আনন্দ শুরু হয়নি... গাছগুলোর
একে অপরের সাথে ফিসফিসানি
শোনা যায় নিথর বাতাসের শান্ত নীরবতায়।
তোমার চুলে চুলে অভিজ্ঞতা আর
দীর্ঘ যন্ত্রণার ইতিহাস।
তোমার নেমে আসা পোশাকে কী অদ্ভুত
পেলবতা।
তুমি যখন ভাবনায় ডুবে থাকতে…
যে ছোট্ট জগত তোমার জানা
অনেক অচেতনতা বিলীন হ'ত তাতে।
তুমিই সে বন্দর যেখানে
ঢেউ এবং জোয়ারভাটা নেই
সব সঙ্গীত থেমে আছে নীরবে।
ও মা! তোমার স্থির শান্তির বক্ষস্থল
যেখানে ভালোবাসা মূর্ছিত হয়ে আছে
অশেষ গভীর… কখনো জানিনি!
আমি ফিরে আসবো…
ফিরে আসবো… খুঁজে নেবো।
প্রশান্ত স্থির জলভূমিকে
হাঁটু গেড়ে বসবো তোমার পাশে
নিঃশব্দে মাথা নীচু করে দেবো
কোনো কথা নয় -- তুমি শুধু দেখবে
অতন্দ্র প্রহরীর মতো
আমি ঘুমাবো -- আমি ঘুমাবো!
ভালোলাগায় সিক্ত করা অনুবাদ। অনুবাদককে মহাশুভেচ্ছা। কবির বিদেহী আত্মা স্বর্গবাসী হোক ♦ সাসু, নিউইয়র্ক (salemsuleri.ss@gmail.com)
উত্তরমুছুন