সমকালীন ছোটগল্প |
দালাল
উড়িষ্যা থেকে অন্ধ্রপ্রদেশে ট্রেন ঢুকতেই হুড়মুড় করে রাত নামল। যে-যার বার্থে শুয়ে পড়তেই টিটি এলো। একজন এ-বার্থ সে-বার্থ ছুটোছুটি করছে।
-এই দালাল, এই এসি কামরায় কেন রে?
বাসদেও টিকিট ও রেলের অনুমতি কাগজ দেখালো। সেকেন্ড বার্থ থেকে মুখ বার করে একজন কমেন্ট করল,
-এই হারামজাদা শুয়োরের বাচ্চাগুলো আমাদের পেটের ভাত মারছে। আমাদের প্র্যাকটিস খতম। পেশেণ্টগুলো সব ড্রেনআউট হয়ে সাউথে চলে যাচ্ছে। এই তুই কোথাকার বাস্টার্ড দালাল রে?
-আমি ঘোড়াবান্ধার লোক বঠি। জান ন? সেই মহাভারতের কালে দুর্যোধন যখন পাণ্ডবদিগে ছুঁচের ডগায় এককণা মাটি দিলেক নাই? তখন এই ঘোড়াবান্ধার ভুঁইয়ে ভাত রাইন্ধত উয়ারা। সেই ভুঁইয়ে আমার বাস। এখনও গায়ে পাণ্ডবদের ভাতের মাড় চেপ চেপ করে। আমি ঠগ জুয়াচোর লই গো।
লোকটি বার্থ থেকে নামল। বাসদেওয়ের কলার ধরে ঝাঁকাতে লাগল।
-যুধিষ্টিরের অঔলাদ, শালা চোর, দালাল। ভুলিয়ে ভালিয়ে পেশেণ্টদের এক্সপ্লয়েট করিস, টাকা হড়পাস, তোদের আমি চিনি না!
টিটি এগিয়ে এলো, ছেড়ে দিন ডাক্তারবাবু। এই কামরা ভর্তি ওর পেশেণ্ট। ঝামেলা পাকাতে দেবেন না। টিটির মুখে লোকটির পরিচয় শুনে বার্থ থেকে বেশ কয়েকজন লোক নামল। একজন মুখ খুলল, বাসদেও পেশেণ্টপিছু মাত্র দুহাজার করে নেয় আর আমরা পালাপালি করে ওর খাবার যোগান দিই।
-দশটা পেশেণ্ট হলেই তো বিশহাজার! এই ইডিয়েট ইললিটারেটটার এতো কামানোর কী যোগ্যতা আছে বলুন তো টিটি সাহেব?
বাসদেও বলতে শুরু করল, বিহার বাঙাল উড়িষ্যাতে সবচেয়ে বড় এক্সপ্লয়টার কমিউনিটি হলেন তো আপনারা। আপনারা খুনি লুটেরা। ইচ্ছে করে কেস খারাপ করেন আর সেই মুমূর্ষুজনদের কুড়িয়ে বাড়িয়ে নিয়ে যাই সাউথে, যেখানে মানবিকতা আছে।
হঠাৎ ওর ভাষা ও বুলির পরিবর্তনে টিটি ও ডাক্তার হাঁ করে ওর দিকে তাকিয়ে রইল। হাফপ্যান্ট পরা কাঁচা-পাকা দাড়ি কুলির মত পাগড়িপরা বাসদেও বলতে লাগলো, সেবা কি তা তো জানেন না! আমার খুনে সেবা আছে, তাই এই কাজ করি। অথচ আপনারা হিপোক্রাট শপথ নিয়েছেন, কিন্তু সেবা নয় সেবার দালাল হয়েছেন। ওই যে পনেরো নম্বর সিটের মহিলাকে কলকাতার বিখ্যাত দুটো হাসপাতালে বলে দিয়েছিল হাড়ে এমন অষ্টিওপরেসিস হয়েছে, দশদিনের মধ্যে পাঁচলাখ যোগাড় করুন নয় ইনসিয়রেন্স। অপারেশন হবে। সাউথের হসপিটাল বলে দিল ভিটামিনের অভাব, ওসব কিছু না। উনি এখন চেকআপে যাচ্ছেন। এমনি করে বেয়াল্লিশ নম্বরের কিডনি কাটতে যাচ্ছিলেন, কারো ব্রেন অপারেশন করতেন, কারো বাইপাস হার্ট অপারেশন করতেন, অন্কলোজির পেশেণ্ট খারাপ করেন, কারো রেনাল ফেলিয়োর। এই কামরাতেই আপনাদের অকর্মণ্যতা আর লোভের শিকার রয়েছে। ওদের কাছে কেস হিস্ট্রি জানতে চা্ন?
আশেপাশে ভীড়। অল্প আলোয় অনেকের চোখ চকচক করতে লাগল, মুখ কঠিন হাত মুঠো। টিটি কেটে পড়ার তালে। একজন এগিয়ে এল সামনে। কলার ধরে বলল, আমাদের মধ্যে তিনজন এমন আছে যারা বাসদেওকে টাকা দিতে অক্ষম। ও হাসপাতলের সেক্রেটারিকে বলে বিনে পয়সায় চিকিত্সার ব্যবস্থা করবে। ওকে নিয়ে একটাও কথা বলেছে কি?...
ভালো লাগল। প্রকৃত সমস্যার কথাই উঠে এসেছে।
উত্তরমুছুনগল্প নয়,সত্যি
উত্তরমুছুন