জিপসি
ডেল্টা ঢুকে পড়েছে পশ্চিমবঙ্গে। হুগলীতে হাওড়াতে এক এক জনের শরীরে বসে ভাবছে আর ভাবছে।
কীভাবে পুজোর সময় ঘুরতে থাকা মানুষের শরীরে দুঃখের বেশে ঢুকে পড়া যায়। অষ্টমীর দিন
পনেরঘন্টা কাজ করা মরবিড মানুষটাকে কীভাবে একটু ঝাঁকিয়ে দেওয়া যায়। কীভাবে অঞ্জলির শরীরে
রাত জেগে বসে ছড়িয়ে দেওয়া যায় তার ক্লান্তি, না পাওয়াগুলো তার বাচ্চাকাচ্চাদের গায়ে। অঞ্জলি
যখন দশ বাড়ি খেটে রাত জেগে বাচ্চাদের নিয়ে ঠাকুর দেখতে বের হয় তখন সমস্ত প্যান্ডেলের আলো
জমা হয় ওর চোখে। সেই আলো জ্বালিয়েই; নিভিয়ে দেওয়ার মধ্যে অন্য ধরনের একটা অধিকারবোধ
বা মেগালোম্যানিয়া কাজ করে।
এছাড়াও সেইসব সুন্দরী মেয়েদের জন্যে, প্রিভিলেজপ্রাপ্ত মেয়েদের জন্যে মন কেমন করে, যাদের
দেখতে আমি কখনো ম্যাডক্স স্কোয়ার যাব না। বলা ভাল; তাদের স্ট্রেইট চুলে, গাদোয়াল শাড়িতে, ঝাঁ
চকচকে মুখে হাসির আড়ালে হরিণের মত লুকিয়ে বেড়াতে থাকবে ডেল্টা। আমি কখনো তাদের ডিয়ার
ভাবতে যাব না।
আমরা তো লুকিয়ে থাকব বলে ঘরের আসেপাশে কোথাও কোনো নির্জন দ্বীপের সন্ধানে যাই। যেখানে
ভাঙাচোরা ঝাউবন। শহরের লোকজন দেখলেই চুতিয়া বানায়… ভাল করে নুন গুলে দেয় মাছের
ঝোলে, সাগরপাড়ে মাছ ধরে, ফটোগ্রাফি কম্পিটিশনের জন্যে আমাদের ছবি তুলতে দেয় এবং দূর থেকে দয়ার দৃষ্টিতে দেখে।
পুজোর আনাগোনা শুরু হয়েছে। ত্রিভুজ দ্বীপে যেতে গিয়ে কিছু হলুদ ঘেয়ো কাশফুল দেখি। আমার মত
রুগ্ন, লোকের খোঁটা খাওয়া একলা রোডের ধারে, কড়া রোদের নিচে ডিপ্রেশড হয়ে বসে থাকে।
আকাশি আকাশ দেখি, সাদা সাদা মেঘের দল। এদের কোনো বন্ধু নেই, কথা বলার লোক নেই,
পলিটিকাল ভিউ নেই। শুধু দূর থেকে রূপনারায়ণ নদীর ঘোলা জলে কীকরে মুখ লুকাবে তাই ভাবে।
পুজোর গান চলে না, চলে ৯০এর গোবিন্দার ‘সারকায়লো খাটিয়া’। খাট সরাতে মশারি টাঙাতেও
একটা সঙ্গীর সাহচর্য লাগে। সিরিয়ালসি? কুড়েমির লিমিট আছে একটা!
এসব ভাবতে ভাবতে আমরা তিনজন তিনকোণাতে বসে থাকি। উঁচুতে জামান কারণ সেই গাড়ির
চালক বা বাহন। দুটো পাগলের মত বকে যাওয়া মানুষকে সে ভাবছে ‘সঙ্গ দিচ্ছি’। আসলে দিচ্ছে না,
বিরক্ত করছে। সব্বাই ন্যাকার মত নিজেকে দরকারি ভাবতে ভালবাসে। ডানদিকে জয় ভাবছেন, তার
কোমর ব্যথা হওয়ার কারণ। স্লিপ ডিস্ক নাকি কাউকে ভালবাসলে এই ধরনের রোগ অবসম্ভাবি!
রেসপন্সিবিলিটি নাকি ভারী যে কোনো কাজ করতে গেলেই এমন হয়...
আমি চালিয়েছি মেঘমল্লার। বৃষ্টি আসবে বলে। এই ভাদ্র মাসের প্রায় চল্লিশ ছুঁই ছুঁই গরম। যে আজকাল
কিচ্ছু পারে না, কোনো নর্মাল কাজও যার দ্বারা সম্ভব হয় না, বিছানা থেকে ওঠাই দায় হয়েছে তার; সে
নাকি দায়িত্ব নিয়েছে বৃষ্টি নামাবার! হাইস্যকর! তবুও হাসি একটা ক্রিয়াধাতু। মানুষ হাপিত্যেশ করে
বসে আছে এই সময় হেসে ওঠার জন্যে। সুতরাং আরো একটু হেসে উঠুন আপনমনে। অন্তত এই
ভেবে হেসে উঠুন যে এ আবার ক্যামন ধারা গল্পের ছিরি…
ছিরিছিরি হাওয়ার মধ্যে দিয়ে আরো ওইদিকে; তিনটে বিন্দু এগিয়ে চলেছে ত্রিভুজের পথে। ওদের পাত্তা
দেওয়ার মত কেউ নেই। তিনদিক জল মাঝখানে স্থল বেষ্টিত একটা জায়গা। যাকে দূর থেকে, দূরত্ব
থেকে দেখা ভাল। এই ছবিটা হোটেলের জেলের মত জানলার কাঁচে; পুজোর গন্ধের মত লেগে
থাকে।
কিন্তু আমরা তো অনেকদিন হয়ে গেল কোনো গন্ধ পাই না, মুখে কোনো স্বাদ ও পাই না...
Sajhbatir lekha sob somay bhalo lage. Ebr o laglo.
উত্তরমুছুনShare korlam.
উত্তরমুছুনবেশ অন্য রকমের লেখা...ভালো লাগলো.....
উত্তরমুছুনBristi hok trivujer upor
উত্তরমুছুনমন খারাপ করা লেখা।
উত্তরমুছুন