কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

সোমবার, ১৪ জুন, ২০২১

মুনিরা চৌধুরী

 

কবিতার কালিমাটি ১০৭


মৃতের মাতৃমঙ্গল

 

(৫)

 

সবুজ-সন্ত্রাসের অধিকার অপন করেছো

নিজের মতো করে

নিজের ভেতরে…

রক্তের পাশে ঝলসানো হৃৎপিণ্ড

এলোমেলো চাঁদের মাংস আর

আগুন-লাগা রক্তজবার যৌবন বাড়িয়ে দিয়েছো বহুবর্ষ।

কে তুমি মহাকাল, ১৯১৭…

বঙ্গোপসাগর ছুঁয়ে চাওয়া নিম্মচাপ আজ বড়ই প্রবল…

কেনো এক বসন্তদিনে শুনেছিলাম, রাজপুত্র আসবে ঘোড়া-টানা-গাড়িতে করে…

সেই রাজপুত্র কোনোদিন আসেনি

প্রিয় রাক্ষস এসেছে, যার জন্ম হয়েছে আমার করোটী থেকে

 

(৬)

 

স্বপ্নেরও হাত আছে, চোখ আছে, ঠোঁট আছে…

দু’বছর আগের সেই শিউলি-ফোটা ভোরেরও অবয়ব ছিল

আজ গোপন পাঁজর খুলে দেখলাম

আমার জীবনের সেই একটা মাত্র ভোরের মুখখানা কেমন শুকনো শুকনো লাগছে…

আমি সঙ্গপনে ঠাকুর মা’র পিতলের কৌটা থেকে শরৎকাল বের করে নিয়ে আসি

স্বর্গের শিশির দিয়ে ধুয়ে দেই ভোরের দুইচোখ, মথুরা বৃন্দাবনের ঘুমসমগ্র।

 

(৭)

 

আজ এই পূর্ণিমার রাতে

পূর্বপুরুষের নিঃশ্বাস ফেটে যাচ্ছে গলিত কফিনের ভেতর

কাগজের পরতে নড়ে উঠছে জিরাফের মাথা, গোপন রক্তপ্রবাহ

প্রশ্ন নিয়ে দাঁড়িয়ে-থাকা সাদা কাগজের মুখ মিলিয়ে যাচ্ছে গহীন কুয়াশায়।

 

স্থির দাঁড়িয়ে থাকি

গ্রহণ করি কুয়াশার কামড়…

 

একসময় সূর্য উঠে

কষ্টিপাথরের গন্ধ ফেটে পড়ে গর্ভবতী মায়ের জঠরে

জবাই-হওয়া শব্দের গলা বেয়ে সাদা রক্ত ঝরছে তো ঝরছে…

অবশিষ্ট তারা ফাঁসির জন্য ছটফট করে।

শব্দের ফাঁসি দেবো বলে

কাগজ কলমের বদলে বিস্মৃতির মেহেকানন্দা নদী নিয়ে আসি

শব্দের বদলে ঝুলে পড়ে ঈশ্বরের গলা।

 

(৮)

 

আমার ডায়রিতে একটুও জায়গা নেই

ব্লেড দিয়ে কাটা-রাত আর নার্ভ থেকে ঝরা-রক্ত চারদিকে।

কিছু রক্ত আবার পুড়ছে। কাটা-মাংস হতে শূকরের আর্তচিৎকার ভাসমান…

ছিলে-তোলা চাঁদের খোসা ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে…

 

ডায়রিতে আছে হরিণের মাথা, কাক ও পেন্সিল, আমার প্রেমিকের কলিজা ও পাতিহাড়

মৃত ঈশ্বরের কবর ও চিতা পাশাপাশি

আজ একপাল মৃত পাখি উড়ে এসেছে ব্যাবিলন থেকে, আরও একবার আত্মাহুতি দেবে বলে।

আমি ডায়রির ভেতর লুকিয়ে পড়েছি

ছায়া ও শব্দের ছাইদানীর ভেতর ছাই হচ্ছি, ছাই।

 


2 কমেন্টস্: