কালিমাটি অনলাইন

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

দশম বর্ষ / একাদশ সংখ্যা / ১১০

দ্বাদশ বর্ষ / চতুর্থ সংখ্যা / ১২৪

শুক্রবার, ১৫ জানুয়ারী, ২০২১

অনিল করমেল

 

 প্রতিবেশী সাহিত্য

 

অনিল করমেলের কবিতা

                        

(অনুবাদ : মিতা দাশ)




 

কবি পরিচিতি: কবি অনিল করমেলের জন্ম ২রা মার্চ ১৯৬৫ সালে মধ্যপ্রদেশের ছিঁদওরায়। তিনি শিক্ষাক্ষেত্রে হিন্দীতে অনার্স সহ স্নাতক এবং কমার্সে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন। পেশায় তিনি সিনিয়ার অডিট অফিসার। তাঁর ইতিমধ্যে দুটি কবিতা সংকলন প্রকাশিত হয়েছে  - ‘ঈশ্বর কে নাম পর’, ‘বাকী বচে কুছ লোগ’। সাহিত্যে অবদানের জন্য সম্মানিত হয়েছেন মধ্যপ্রদেশ সাহিত্য সম্মানে (দুষ্যংতকুমার সম্মান)।   

 

 

কান্না

 

বাবা বললেন

কেঁদো না

কাঁদলে পূর্বপুরুষেরা রাগ করেন

 

মা বলল

মন খুলে কাঁদবি

কাঁদলে সব দুঃখ ঝরে যায়

 

আমি মাযের গলা জড়িয়ে

ডুকরে ডুকরে কাঁদলাম

 

হাসলাম বাবার সামনে

বাবা আমার হাসিকে আমার কান্না বুঝলেন।

 

                   

বালিশ

 

 আমার ক্লান্তি

এই বালিশের ভেজা ভেজা ভাব

আর বালিশের উপরে চোখের জলের দাগে

গেঁথে রয়েছে আমার ভাঙা স্বপ্নের টুকরো

 

তার ভেতরে মাঝে মাঝে

ফেলে আসা রাত্রির কান্না শোনা যায়।

 

 

তোমার মৌনতা

 

তোমার মৌনতায় অনেক শব্দ রয়েছে

সেইগুলি খরগোশের মত দৌড়োতে থাকে

আর আমি সেই সব শব্দগুলি

তোমার হাসির দুর্বায় খুঁজতে থাকি।

 

 

উপস্থিতি

 

চলে গেলেই যে চলে যায় তা কিন্তু নয়

তুমি কিছুই জানতে পারো না

সে কিন্তু আমার সঙ্গেই থাকে

 

খুশির সময় তুমি হঠাৎ

ওর কথা মনে পড়তেই চুপ হয়ে যাও

মন খারাপের অনেক দৃশ্যে ওর উপস্থিতি বেশ বোঝা যায়

 

কখনো রেলের বগিতে, ওষুধের দোকানে, সিনেমা হলে

কোনো রাস্তায়, কোনো মোড়ে, কোনো সিগ্নালে  

কোনো পার্কের পাস দিয়ে যাওয়ার পথে

পেন লাইটার বই ফুল পাখি গাছ বা বৃষ্টি দেখে

কারো মুখের হাসিতে বা পিঠ ও হাত দেখে

কখনো নিস্তব্ধতায় ডুবে থাকা দুপুরে,

হিম হয়ে আসা সূর্যাস্তে

বা হঠাৎ ভাঙা ঘুমের পর

তার কথা মনে পড়ে

 

সে তোমার সকল ইন্দ্রিয়তে মিশে গেছে  

তোমার শিরায় শিরায় দৌড়ায়

আর তোমায় চুমুক কেটে গিলতে থাকে

কোনো দুঃখের সময় তুমি ওকে দেখতে পাও

তোমায় সে ধৈর্য ধরতে বলছে  

হাড়ে যথেষ্ট ক্যালসিয়ামের মত

সে তোমার ভেতরেই উপস্থিত রয়েছে।

 

            

দেবতাদের ঘুমোতে দাও  

 

মানুষদের বেশি দরকার যখন দেবতার

ওরা ঘুমিয়ে ছিলেন নিজেদের বিশ্রামাগারে

 

কথিত প্রতিনিধিরা নির্লজ্জ্ব ভাবে

নিজেদের সাম্রাজ্য বিস্তারিত করবার তাগিদে মগ্ন ছিল

ওরা ভোটিং মেশিনগুলির কাছে গরুদের টেনে নিয়ে এসেছিলো

ওরা বলছিল

আমাদের ‘সোনে কি চিড়িয়া’ বলা হত এই দেশকে

সেই দেশে এখন আচ্ছে দিন এসেছে

এখন কেউ দলিত থাকবে আর না কেউ গরিব

 

নারীরা লজ্জাবোধ নিয়ে ঘুরছিল

বাচ্চারা এখন ফুটপাথে, প্ল্যাটফর্মে, হোটেলে কাজ করছিল

এখনো ভ্রূণ পরীক্ষা করছিল ধান্ধাবাজেরা  

বেকার যুবকদের বিহীপ দল গরু বিক্রি করার কাজ দিয়েছিল

সংখ্যালঘুদের হত্যা করা হচ্ছিল

গরিব দুঃখীদের হোলি জ্বালিয়ে

ধনীরা দীপাবলী পালন করছিল

 

দেবতারা নিশ্চিন্তে গভীর নিদ্রায় লীন

 

দেবতারা চিন্তাহীন নিদ্রায় লীন থাকবে

ওদের নাম করে তান্ডব চলছিল

ওদের হাত থেকে আমাদেরকেই রক্ষা করতে হবে এই পৃথিবীকে

আমাদেরই তৈরি করতে হবে প্রেম ভালোবাসা

ক্ষুধার্তদের দেবতারা খাওয়াতে পারবে না রুটি

 

ওরা ঘুম থেকে উঠলে ওদের চাহিদা

আমরা কি করে করব পূরণ

 

ওদের ঘুমোতে দাও বন্ধুরা

ওরা কোথাও থাকুক না কেন

এই পৃথিবীতে আর উনাদের

আমাদের কোন দরকার নেই।

            

 

 

 


2 কমেন্টস্:

  1. কাজল দা ধন্যবাদ , অনুবাদ প্রকাশিত করার জন্য

    উত্তরমুছুন
  2. কাজল দা খুব ভালো লাগল। অপূর্ব,খুব ভালো অনুবাদ মনে হলো।
    বিমল চক্রবর্তী জামশেদপুর।

    উত্তরমুছুন